বাংলাদেশ বনাম হল্যান্ড খেলা দেখতে গেলে অনেক কিছুর হিসাব করার দরকার আছে। প্রথম ব্যাপার হল চিটাগাং স্টেডিয়ামটা কোথায় সেটা আমি জানিনা। আর খেলা দেখতে গেলে খুব বেশি সময় নষ্ট করার উপায় নাই। তবে দুটি রাত বাঁচানোরও উপায় নাই। তাই সোমবার খেলা রোববার রাতে বের হলাম। উদ্দেশ্য চট্টগ্রাম। কোন জায়গায় যেতে পূর্ব প্রস্তুতি লাগে। আমার পূর্ব, উত্তর, দক্ষিন, পশ্চিম কোন প্রস্তুতি নাই। এক বন্ধু বাসের টিকেট কেটে রেখেছে। অন্তিম মূহুর্তের বেশ কিছু আগে গিয়ে দেখি বন্ধুকে বাইরে যেতে হবে। আমি তার বাসায় বন্ধু বাইরে। বন্ধুর মা আপ্যায়নে কোন ত্রুটি রাখছেনা কিন্তু বন্ধু যে আমাকে রেখে চলে গেল আর আসছেনা। সে অন্তিম মুহুর্তে এল। এখন তাহলে শুরু হবে অভিযান চট্টগ্রাম। বাংলাদেশ বনাম নেদারল্যান্ড। গো টাইগার্স।
বাসে উঠার সময়েই জানতাম আরো কিছু মানুষ পাব যারা খেলা দেখতে যাবে। অনেকে সরাসরি জার্সি পরে উঠেছে। ছোট বেলায় আম্মা সব সময় ঘুমানোর আগে বলত যা বাথরুম করে আয়। ছোট বেলায় মানুষ বিছানায় আকাম করে ফেলে। তবে আমার মনে হয় বড় বেলাতেও কিছু কিছু জায়গায় আম্মার কথা শোনা দরকার। কারন এই ব্যাপারটা সব সময় ঘটবে যে বাসে উঠার আগে কিছু হবেনা। বাস চলার পরেই ব্লাডারে প্রবল বেগ অনুভব হবে। সময়ের সাথে সমানুপাতিক সম্পর্কে সেই বেগের পরিমান বাড়তে থাকবে। আজকেও তার ব্যতিক্রম হলনা। এর মধ্যে বাসের ড্রাইভার কি জানি হিন্দি গান ছেড়ে রেখেছে। ঢিল দে দে ঢিল দে দে ভাইয়া। কিন্তু ঢিলা দিমু কিভাবে!! যাক কোনরকমে রিকোয়েস্ট করে সেই যাত্রা রক্ষা পেলাম।
যেই বন্ধুর সাথে যাচ্ছি সে আর আমি খালি খেলা দেখবোনা। আমাদের সাথে চট্টগ্রামে আরও কিছু মানুষ যোগ হবে। বন্ধুর ভাইও থাকবে। অনেকে প্রথম বিশ্বকাপের খেলা দেখবে তাই উচ্ছ্বাসটা অনেক বেশি। বাস পৌছাল ভোর ৫ টায়। অচেনা জায়গা চেনা হওয়ার কারন ফেসবুকের "৩২ টা থাপ্পড় দিয়া ১ টা দাঁত ফালাইয়া দিমু" ফ্যান পেজের অন্যতম সদস্য ইসমাইল। এই ১৪০০০ সদস্যের ফ্যান পেজে মাঝে মাঝেই আমি হাবিজাবি স্ট্যাটাস দেই আর আমার ব্লগের লেখা শেয়ার করি। ইসমাইল প্রাণশক্তিতে ভরপুর এবং বেশ ভাল এক ছেলে। সারারাত সে ঘুমায়নি শুধুমাত্র এই কারনে যে আমি ভোর পাঁচটায় আসব। সে আমাদেরকে তার মামার হোটেলে নিয়ে গেল ফ্রেশ হওয়ার জন্য। সেখানে হাত মুখ ধুলাম। তারপর মোবাইল দিয়ে ফেসবুকে ঢুকে জানলাম আমার দুলাভাই যার হসপিটালিটি বক্সে বসে খেলা দেখার কথা তিনি আসতে পারছেননা। প্লেনে আসার কথা জিএমজি ফ্লাইট ক্যানসেল টেকনিকাল সমস্যার কারনে। তার টিকেটটা চট্টগ্রামেই আছে। আমি যেন সেটা কালেক্ট করে নেই। টিকেট যোগাড় করে নিলাম। টিকিটের উপর টিকেটের মূল্য লেখা ২৮০০০/- টাকা। নিজেকে সেই মুহুর্তে পৃথিবীর সব থেকে ভাগ্যবান ব্যক্তি মনে হল। সকালের নাস্তা আলিফ নামক এক হোটেলে খাওয়ার পর বের হয়ে বিশাল আকৃতির এক বাঘ পেলাম। সেই বাঘকে জড়িয়ে ছবি তুললাম। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে হারার পর উত্তেজিত জনতা আমার বাঘের হাওয়া ছেড়ে দিয়েছিল। সেই বাঘ এখন স্বগৌরবে দাঁড়িয়ে। নিজেরাই নিজেদের শ্রদ্ধা ফিরিয়ে এনেছে ।
(বিশ্বকাপ ট্রফিটি ছুয়ে দেখার সুযোগ ছিল। পাশে দাঁড়িয়ে মনে মনে বললাম, সাকিব, দেখতো এটাকে একেবারে আমাদের করে ফেলা যায় কিনা)
চিটাগাং স্টেডিয়ামে ঢুকার গেট গুলা খুঁজে পেতে বেশ সমস্যা হল। বন্ধু-বান্ধব বাকিরা ইস্ট গ্যালারীতে ঢুকিয়ে আমি যদি ঘড়ির কাটার বিপরীত দিকে যেতাম তাহলে গ্র্যান্ড স্ট্যান্ড পাওয়া যায়। আমি গেলাম ঘড়ির কাটার দিকে এবং সম্পূর্ণ উলটা জায়গায় চলে গেলাম। অনেকটা উইন্ডোজ পিকচার এন্ড ফ্যাক্স ভিওয়ারে ছবি বাঁকা আসার পর ঠিক করতে গিয়ে ভুল রোটেশনে যদি পুরাটা উলটে যায় তাহলে যে অবস্থা আমার অবস্থা হয়েছে সেরকম। অগ্যতা পুরা ঘুরে যখন গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডে গেলাম ততক্ষন এম্বুলেন্সের আওয়াজ। সিকিউরিটি আসছে। তার পিছনে বাংলাদেশের বাস। বাসের দিকে তাকালাম। একজনকেই ভাল মত হাই দিলাম। ইমরুল কায়েস। কারন সে সবার আগে বসেছিল। হাই ফেরত পেলাম কিনা জানিনা তবে তার হাসিমুখটা ভাল লাগছিল। হসপিটাল বক্সে সম্ভবত আমাকে কেউ আশা করছেনা। সারারাত জার্নি করে বিদ্ধস্ত অবস্থায় ছেড়া স্যান্ডেল পড়ে হাজির হয়েছি। আমাকে আটকানোর পথ নেই কারন আমার হাতে টিকেট। তবে যারা সেটা দেখে আমাকে ঢুকাবে তারা মনে হল তেমন খুশি হতে পারছেনা। গেলাম। তিনতলাতে আমার বক্স। খুঁজে পেলাম। আমাকে টিকিট নিয়ে কি জানি একটা গলায় পড়িয়ে দিল। বক্সে ঢুকেই দেখি সামনেই সাকিব আল হাসান আর মুশফিক রহিম প্র্যাক্টিজিং। বক্সের খাবার আসে ফাইভ স্টার হোটেল থেকে। ফ্রিজ ভরা পেপসি আর পানি। চা, কফি, লেইস চিপস, কেক, বিস্কুট সাজানো যত খুশি খাও। কিছুটা মজা পেলাম। এর আগে ভারত-বাংলাদেশ খেলায় ভীড়ের চোটে খাবারই কিনতে পারিনি। আয়ারল্যান্ডের সাথে খেলায় মারামারি করতে হয়েছিল। আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের দিন তো খাবার কিনে এনে আর খাওয়ার মত অবস্থা ছিলনা। আফসুস। আমার দুলাভাই যে আমাকে টিকেট দিয়েছেন তিনি একবার একটি তথ্য দিয়েছিলেন যে পেপসি কোম্পানি কেন একসময় খারাপ গিয়েছিল। কারন আমি তখন ঘোষনা করেছিলাম নো সফট ড্রিঙ্কস এনি মোর। আজকে ঢুকার সাথে সাথে দুলাভাইয়ের ফোন। এরপর যতবার সে ফোন করেছে ততবার একটাই কথা। কয়টা পেপসি শেষ করেছ? আমাদের বক্সের পাশে একটা মেয়েকে দেখলাম এবং দেখে খুব চেনা চেনা লাগল। কিন্তু অনেক কষ্টেও বুঝে পেলাম না কার সাথে তার চেহারায় মিল আছে। মেয়েটার কথা একটু পরে বলি।
খেলা শুরু হল। টস দেখলাম জাতীয় সঙ্গীত গাইলাম। তবে আজ শুরু থেকেই মনটা ফুরফুরে। কারন আমার মনে হয়না নেদারল্যান্ড বাংলাদেশের সাথে কুলিয়ে উঠতে পারবে। এর কারন আছে। নেদারল্যান্ডের খেলা আগে যা দেখেছি সবাই বটম হ্যান্ডে খেলে এবং এভাবে ভারতের সাথে তারা বিশাল বিশাল ছক্কা মেরেছে সব বটম হ্যান্ডে। কিন্তু বাংলাদেশের স্পিনারদের সাথে সারাক্ষন বটম হ্যান্ডে খেলা সম্ভব না। আর পিচটাও সেরকম না। এটা এমন পিচ যেখানে রান করতে হলে আপনার প্রতিভার থেকে পরিশ্রমের মূল্য বেশি। হয়েছেও কিন্তু তাই। হল্যান্ডের ক্যাপ্টেন ম্যাচ শেষে বলেছে তারা অনেক বেশি ডট বল দিয়েছে। কারন ঐযে সফট হ্যান্ডে খেলে সিঙ্গেল নেওয়ার চেস্টাটা কম ছিল। আর এই পিচে টাইমিং করা কঠিন। দ্বিতীয় যেই আউটটা বল হরিযন্টালি না গিয়ে ভার্টিকালি গেল (রাজ্জাকের বলে মুশফিকের ক্যাচ) সেটার কারন অনেকটা এটাই। পিচে টাইমিং করা কঠিন। বটম হ্যান্ডে বল চলে গেল উপরে। ভারতের যুবরাজ নেদারল্যান্ডের সাথে ৫ উইকেট পেয়েছিল এ কারনেই।
হস্পিটাল বক্সে আমি তখন পেপসি খাচ্ছি। শুধু আমি খাইলে ব্যাপারটা চক্ষুলজ্জার ব্যাপার তাই অন্যদের উৎসাহ দিচ্ছি। হল্যান্ডের উইকেট পরলে বলি, চলেন ভাই পেপসি খাই। হল্যান্ড উইকেট না পরলে বলি, দূর আউট হয়না ক্যান!! চলেন সবাই পেপসি খাই। ওয়াইড হলে, দূর ওয়াইড বল, চলেন সবাই পেপসি খাই। প্লেয়ারদের জন্য ড্রিঙ্কস বিরতি। ভাইসব, খালি প্লেয়াররা খাব আমরা না এটা কেমন ব্যাপার!! চলেন সবাই পেপসি খাই। বেশি পেপসি খাওয়ার কারনে বেশি বাথরুমে জেতে হয়। বাথরুমে গিয়ে দেখি লেখক কলামিস্ট আনিসুল হক। তার সাথে আমার পরিচয় আছে। মানে এটা আলাদা ব্যাপার যে সে আমাকে চিনেনা কিন্তু আমি তাকে চিনি। ব্লগে আমার রম্য অনেকে পছন্দ করে। আনিসুল হকের " গণতান্ত্রিক ফ্যান্টাসী " আর জাফর ইকবালের "দেশের বাইরে দেশ" এই দুইটা বই পড়ার কারনেই রম্যের প্রতি আমার আগ্রহ এত বেশি। আনিসুল হকের সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করল। কিন্তু কোন পরিচয়ে আগাই? সেরা পরিচয় হতে পারে আপনিও টাইগারদের জয় দেখতে এসেছেন, আমিও। তাকে আমার বন্ধু অনিক ইকবালের কথা বললাম। আনিসুল হক কয়েক মাস আগে আইওয়াতে ছিলেন (আমেরিকা)। আমার বন্ধুর সাথে তার খাতির সেখানেই। অনিকের ফেসবুকে তাকে কমেন্ট করতে দেখি। আনিসুল হকও চিনলেন। ব্যাস এত টুকুই। তার কলামে আমার জায়গা হবেনা। কিন্তু তাকে যে আমি বিশেষ পছন্দ করি আমার লেখাতে সেটা বলতেই পারি। কোন কিছুই যায় আসেনা সে আমার লেখা পড়ল কি না পড়ল। যাই হোক বাথরুম থেকে ফিরে এসে দেখি , ইয়েস আরেকটা আউট। ভাইসব, চলেন পেপসি খাই। ছোট বেলায় একটা স্বপ্ন খুব দেখতাম, বিশাল একটা পাইপের এক মাথা আমার মুখে। আরেক মাথা সুইমিং পুলে। সুইমিং পুল ভরা পেপসি। বয়স অনেক বেশি কম ছিল বিধায় সুইপিং পুলের আশে পাশের স্বল্পবসনা নারীদের কথা ভাবা হয়নি।
সিধুকে নিয়ে অনেকেই প্ল্যাকার্ড এনেছিলেন। বেশির ভাগই বাজেয়াপ্ত করা হয়। একটা খালি টিভিতে দেখেছিলাম। সিধু- ক্লাউন অফ ক্রিকেট। বাংলাদেশ একটা বাজে ক্রিকেট দেশ, তারা কোন ম্যাচ জিততে পারেনা, কিছু খেলতে পারেনা, এই কথাটা একবার বলা যেতে পারে। বারবার এটা নিয়ে বলার কিছু নেই। কেউ যদি সত্যি সত্যি সমলোচনা করতে চায় সে কথাটা একবার বলবে। কিন্তু ভদ্রভাবে বলবে। আমরাও জানি শক্তির বিচারে অস্ট্রেলিয়া এবং ইন্ডিয়ার থেকে আমরা কত পিছিয়ে। কিন্তু তার মানে এটা না যে আমাদের ক্রিকেট খেলার অধিকার নাই। ক্লাসে ফার্স্ট একজনই হয়। কিন্তু একজন ছাত্র নিয়ে একটা বিদ্যালয় হয়না। আইসিসির এটা বোঝা উচিত। সিধুর আরো অনেক কিছুই বুঝা উচিত। সিধুর কথা মানা যেত যদি কিছু কিছু সময়ে সে বাংলাদেশের প্রশংসা করত। ইংল্যান্ডের সাথে খেলাটা আমাদের জন্য যত গুরুত্বপূর্ন ইংল্যান্ডের জন্যও ততটা ছিল। এর আগে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে যে কয়টা আপসেট হয়েছে কোনতাতে বড়দল গুলার বাঁচা মরার লড়াই ছিলনা। কিন্তু এটা ইংল্যান্ডের জন্য ছিল। কোন অবস্থাতেই তারা এটা হারতে চায়নি। সিধু কি বলে? ইংলযান্ড ২৬০ করলে বাংলাদেশ কখনও পারতনা। ব্যাপারটা যেন এমন যে ইংল্যান্ড আসলে ২৬০ করতে পারত ইচ্ছা করে ২২৫ করেছে। তাতো না। আমরা বাধ্য করেছি যাতে তারা এর থেকে বেশি করতে না পারে। এখন এই কথাটাও তো বলা যায় যে বাংলাদেশ ৫০০ রান করলে পৃথিবীর কোন দেশের সাধ্য নেই আমাদের সাথে জিতে। এখন এটা কি কোন কথা? তাহলে সিধুর যুক্তি গুলা কেমন হল? সিধু কেন বাংলাদেশকে দেখতে পারেনা এ মর্মে খুব বেশি কিছু আমার বলার নাই। তবে টনি গ্রেগ সিধুর মুখে ভাল চপেটঘাত করেছেন। সরাসরি কথোপকথন দিয়ে দিচ্ছি।
Tony Greig : There has been lot of complaint on how ICC has decided to reduce the WC teams to 10, especially from the Canada coach.
Sidhu : But its the truth, will you watch and play these kind of games against minnows.
Tony Greig : Well, its a world cup for your information.
Sidhu : So So So
Greig : This is not an Asia Cup or something you know.
Sidhu : I think the ICC should organise two pools before the world cup, where teams which are doing well should be promoted to the world cup and teams which arent should be demoted.
Greig : Well then according to the last world cup, India should not even be here."
Sidhu was apparently pissed off with this and lost it today during the post match discussion!
আরো কিছু কথা আমার বলার ছিল। এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বোলিং পারফর্মেন্স ভারতের থেকে ঢের ভাল ছিল। আয়ারল্যান্ডের সাথে বোলাররা দারুন বল করে জিতিয়েছে। ভারত ৩৩৮ রান করেও জিততে পারেনা। আমরা ৫৮ রানে অলআউট হয়েছি এটা যদি বাচ্চাদের ক্রিকেট হয় তাহলে দক্ষিন আফ্রিকার সাথে ভারত ২৯ রানে ৮ টা না ৯ টা উইকেট হারিয়েছে সেটা কি? তোমরা না হয় ক্রিকেটের খুব বড় কিছু। আর ৫ খেলা শেষে বাংলাদেশের পয়েন্ট ৬ ভারতের ৭। এমন কোন হাতি ঘোড়া পার্থক্য হয়নি এখনও। যদিও জানি ভারত বাংলাদেশের থেকে ভাল দল। কিন্তু আমাদের টাইগারদেরকে কটাক্ষ করার কিছু নেই। এক হতে পারে যে সিধু গত বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কাছ থেকে হারার যন্ত্রনা ভুলতে পারছেনা। আর না হয় সিধুর বউ সিধুরে ছেড়ে বাংলাদেশে চলে আসছে। এরকম হতে পারে। হিটলারের বাবা ইহুদীদের জারজ সন্তান ছিল দেখেই তো হিটলার ইহুদী দেখতে পারতনা।
বাংলাদেশ ব্যাট করতে নামার সাথে সাথে তামিম ইকবাল আউট হল। ভাল বল? নাকি তামিমের ঐই জায়গায় দূর্বলতা? তামিমকেই সেটা খুঁজে বের করে নিতে হবে। বাংলাদেশ ম্যাচটা যত সহজে জিতেছে বলে মনে হচ্ছে ইমরুল কায়েস সেভাবে না খেললে এটা বোঝা যেতনা। এইটা ফ্রী-স্ট্রোক খেলার মত পিচ না। এখানে যারা শুরুতে সারভাইভ করবে শেষ পর্যন্ত তাদের উইকেট ধরে রাখা জরুরি। জুনায়েদ সিদ্দিকী ভাল খেলছিল। ক্রিকেটে একটা কথা আছে, যখন মারবা জোরে মারবা। আইপিএল খেলার সময় জয়সুরিয়া আশরাফুলকেও বলেছিল। জুনায়েদ সিদ্দিকী এত বাইরের বল যদি মারতেই হয় জোরেই মার। শট তো অর্ধেক খেলার জিনিসনা। সে যতক্ষন খেলছিল ভাল খেলছিল। পুল শটগুলা সুন্দর ছিল। সে যদি মনযোগ দেয় অনেক বড় বড় ইনিংস তার কাছ থেকে বাংলাদেশ পাবে। শাহরিয়ার নাফিসের একটা জিনিস আমার খুব ভাল লাগে। সিরিয়াসনেস। আশরাফুলের মত ট্যালেন্টেড না সে। কিন্তু আশরাফুলের থেকে অনেক সিনসিয়ার। যেটা সে পারে সেটা যত্ন করে করে দিয়ে আসে। তা বাংলাদেশ জাতীয় দলের জন্য হোক। গাজী ট্যাঙ্কের জন্য হোক। অথবা ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টের হয়ে খেলার জন্য হোক। এতদিন পরে ব্যাটিং এ নেমে শুরুতে জড়তা ছিল। তবে সেটা সে কাটিয়েছে। তার কাছ থেকে ইনশাল্লাহ সামনে ভাল কিছুই পাবে। সে আউট হওয়ার পর সাকিব কষ্ট করে নামতে গেল কেন কে জানে!! ১০ রান লাগত শাফিউলকে পাঠায় দিলেই হইত। ২ টা বল লাগত। যাই হোক তখন আমি বক্স থেকে বের হলাম। আমার মত বিশাল দেহী একজনের সাথে ধাক্কা খেলাম। ঐ মিয়া দেখেননা, বলার সাথে সাথে দেখি আকরাম খান। সে পাশের বক্সে যাচ্ছে। তার সাথে তামিম ইকবালের মা। (তামিম ব্যাটিং করার সময় তার মা খেলা দেখেন না। তাই মনে হয় পড়ে এসেছেন।) রহস্য পরিষ্কার। ঐ মেয়ে তাইলে তামিম ইকবালের বোন ছিল!! মাঝখানে বিশ্বকাপ ট্রফির সাথে ছবি তোলার সুযোগ ছিল। আমি তা তুলে আনলাম।
(ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে হারার পর আমার ব্যাঘ্র নিয়ে গিয়ে হাওয়া ছেড়ে দিয়েছিল। তাই চট্টগ্রামে বিশাল ব্যাঘ্রের গায়ে হাত বুলিয়ে দিলাম। চট্টগ্রামে যে সত্যিকারের ব্যাঘ্রকে পাওয়া গিয়েছিল)
রাতে ট্রেন জার্নিটা খুবই বিরক্তিকর ছিল। এত টায়ার্ড। কিন্তু বাংলাদেশ জিতলে সবই ভাল লাগে। চট্টগ্রামের মানুষজনের সাথে আনন্দ করতে করতে চট্টগ্রাম ছেড়ে ঢাকা আসলাম। তবে ঢাকায় শুনলাম আনন্দ করতে করতে রং মাখামাখি হয়েছে। একজনের চাকুরীর ইন্টার ভিউ ছিল তার গায়েও রঙ মাখা হয়েছে। হতে পারে এই চাকুরীটা লোকটার জীবন মরণের প্রশ্ন ছিল। আমাদের আনন্দ অন্যের বিষাদের কারন জানি না হয়।
এখন একটাই প্রার্থণা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়। জয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়। হবে হবে নিশ্চয়।
প্রথম ওয়েস্ট ইন্ডিজ আমার শেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ। জীবন ওয়েস্ট ইন্ডিজ আমার মরণ ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
একটি ওয়েস্ট ইন্ডিজ, সে তো জাগ্রত জনতা, সাদাদের কাছে বিষ্ময়, সে তো আমাদের মত কালাদের অহংকার।
একটি দিনের জন্য আমরা সবাই ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আমরা সবাই ওয়েস্ট ইন্ডিজ আমাদের এই বাংলার রাজত্বে, নইলে মোরা ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে মিলব কি শর্তে! আমরা সবাই ওয়েস্ট ইন্ডিজ।