রাতে ভাল ঘুম হয়নি তবে সকালে ভাল নাস্তা হল। বোনের বাসাতেই গোসল সেরে বের হলা স্টেডিয়ামের উদ্দেশ্য। যাত্রাপথে প্লাস্টিকের বাঘ কেনা হল। টাইগারদের খেলা। আগের দুটি খেলায় বাঘ নিয়ে যেতে পারিনি। আজকে গেলাম। স্টেডিয়াম ঢুকলাম। বাংলাদেশ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজের এর আগে দুটি ম্যাচ আমি স্টেডিয়াম বসে দেখেছি। একটা ১৯৯৯ তে। ব্রায়ান লারা ৪৪ বলে সেঞ্চুরি করে। সবাই লারা লারা করে চিৎকার করতে থাকে। কে জানত সেই দিনই আবার ফিরে আসবে!! লারা কার বলে আউট হন সে তথ্য জানিয়ে দেই। হাবিবুল বাশার সুমন মুলত ব্যাটসম্যান। ঐবার লারা সব বোলারকে ধুন্ধুমার পিটানোর পর আমিনুল ইসলাম বুলবুল উপায় না পায়ে সুমন ভাইকে বল দেন। সুমন ভাইয়ের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে উইকেট একটি। সেটা ব্রায়ান লারার। আরেকটা বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ দেখেছিলাম ২০০২ এ। অলক কাপালির ৯৩ বলে অপরাজিত ৮৯ কোন কাজে আসেনি। কারন আনোয়ার হোসেন ১০৭ বলে ৪২ করেন। তিনি ১০৭ বলে ৮২ করলে বাংলাদেশ হয়ত জিতত। মজার কথা আনোয়ার হোসেন সেই একটা ওয়ানডেই খেলেছিলেন। তাই তার গড় ৪২।
এবার আসি আজকের কথায়। খেলা শুরুর আগেই তামিম আউট। এই ব্যাপারটা আমার জানা ছিল পরপর দুটি খেলায় তামিম-জুনায়েদ ৫ ওভারে ৫০ তুলেছিল। আজকে পারবেনা বুঝেছিলাম। তবে তখনো বুঝিনি সামনে কি অপেক্ষা করছে। জুনায়েদ সিদ্দিকী এত তাড়াহুরা করতে লাগল কেন বুঝলাম না। ব্যাপারটা এমন না যে বাংলাদেশের ৫০ ওভারে ১২০০ রান করতে হবে!! এর বাইরে জুনায়েদের যদি বাথরুম চেপে থাকে সে সেখান থেকে ঘুরে এসে ধীরে সুস্থে খেলুক। মুশফিক রহিমের আউট দেখে বুঝলাম জাতিগত ভাবে আমাদের প্রেজেন্টস অফ মাইন্ডের বড় অভাব। কেউ হয়তবা হিউমার জিনিসটা খুব পছন্দ করে। কিন্তু হিউমার প্রয়োগ করার বা ব্যবহার করার সেন্সটা তার কাছে নাই। মরা বাড়ি গেলেও মানুষ হাসানোর চেস্টা করে হয়ত। মুশফিক রহিম যেই বলটি খেলল সেটা কোন ভাল বলও না খারাপ বলও না। লেগ সাইডে একটা ফিল্ডার। মুশফিক রহিম দেখে শুনে তার হাতে বলটা দিয়ে দিল। পৃথিবীর অনেক বাঘা বাঘা খেলোয়ার আছেন যারা শট চেক দ্যান। শচীন টেন্ডুলকার সব শট পারেন। কিন্তু তিনি ব্যাটিঙ্গে নামার সাথে সাথেই ইম্প্রোভাইজ করেননা। কারন প্রথাগত ক্রিকেট খেলে রান আসলে সেই জিনিসের দরকার হয় না। আরেকটা হল শট চেক দেওয়া। হুক শট খেলতে তিনি পারদর্শী কিন্তু ফিল্ডার থাকায় খেলবেননা। এই জিনিসগুলা বোঝার জন্য শচীন হওয়া লাগেনা যে কখন কোন শটটা খেলতে হবে। সাকিব যে বলটিতে আউট হলেন- গ্যালারী থেকেই খেয়াল করলাম বার বার সে মিড উইকে্টের দিকে তাকাচ্ছে। সাকিবের হাটু গেড়ে একটা শট আছে মিড উইকেটের উপর দিয়ে খেলে সে সেখানে রান পায়। সুলেমান বেনের বলে সে শটটি তিনি অর্ধেক খেলার পর মনে হল কে জানি পজ বাটনে চাপ দিয়েছে। ব্যাট আর নড়লনা। সাকিব বোল্ড।
এই যাওয়া আসার মাঝখানেই গেল সময়। আমরা দর্শকরা বুঝতে পারলামনা কি করব?? রাগ হব না হাসব। কত মানুষের কত আয়োজন নিয়ে আসা। কট টাকা প্য়সা খরচ করে আসা। আর এখন ডে নাইট ম্যাচ লাইট ছাড়াই শেষ হয়ে যাবে। তবে সবাই মনে হচ্ছে একটু বেশি আপসেট!! ইংরেজিতে একটা কথা আছে শিট হ্যাপেন্স। আজকে বাংলাদেশের জন্য দিনটি ছিল এরকমই। তবে উইন্ডিজ বাসে ইট মারা আর সাকিবের বাসায় আক্রমণ করার কোন মানে দেখছিনা। ৩-৪ জন স্টুপিড আর ৫-৬ টা ইটের কারনে পুরা দেশের ইমাজটা ধংস হয়ে গেল। ক্রিস গেইলের টুইটারে গিয়ে সরি বলে আসলেন অনেকে। তার অবশ্য জবাব নেই।
আর বাংলাদেশ দলের উপরো খুব রাগ নেই আমার। ১৯৯২ সালে পাকিস্তান চ্যাম্পিয়ান হয়েছিল। কিন্তু লীগের ম্যাচে ইংল্যান্ডের সাথে ৭৩ এই গুটিয়ে যায়। বৃষ্টিতে অবশ্য ১ পয়েন্ট জোটে। তবে এই মার্চ মাসে আর বৃষ্টি পাব কই। একমাত্র ৭ রিকটার স্কেলের ভুমিকম্প হলেই হয়ত বাংলাদেশ নিস্তার পেত বা ১ টা পয়েন্ট পেত। বাংলাদেশের উপর রাগ নেই বরং আমাদের উচিত তাদের সমর্থন দিয়ে যাওয়া। বিশ্বকাপ এখন পর্যন্ত শেষ হয়ে যায়নি। সামনের ম্যাচগুলি জিতলেও হবে। দশম শ্রেনীর প্রি-টেস্ট পরীক্ষায় উচ্চতর গণিত পরীক্ষা খারাপ হয়েছিল আমার। পাস-ফেল নিয়া টানাটানি। বাসায় সেই কথা পরবর্তী পরীক্ষা গুলার আগে প্রতি নিয়ত আমাকে মনে করিয়ে দিতে কোন কৃপা করলনা। এর ফল ভাল হলনা। পরের পরীক্ষা গুলাও খারাপ হতে লাগল। এখন অঙ্কটা না হয় খারাপ হয়ে গিয়েছে ফিজিক্স তো অন্য নতুন পরীক্ষা। বাংলাদেশের ওয়ার্ল্ড কাপ ব্যাপারটাও তাই। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে খেলাটার সাথে অন্য কোন খেলার কোন সম্পর্ক নেই। কাজেই সব কিছু নতুন ভাবেই শুরু করা যায়। অংক পরীক্ষাটা না হয় খারাপ হয়েছে। কিন্তু তাই বলে ফিজিক্সে তো খারাপ করা চলবেনা। সেই সাহস আমাদের দলকে আমাদের দিতে হবে।
( ছবির এই বাঘটাকে অবশ্য বাঁচাইতে পারিনাই। খেলা শেষ হওয়ার পর উত্তেজিত জনতা আমার বাঘ কেড়ে নিয়ে হাওয়া ছেড়ে দিয়েছিল।)
একবার ভেবে দেখুন তো সাকিব আল হাসানের মনের অবস্থা কি?? তার বাসায় অ্যাটাক করা হয়েছে। আমাদের এত এত খেলার জয়ের মালিক সে। তাকে কি এখন নার্ভাস করে দেওয়ার সময়!! নাকি এটা বলার সময়- " মেঘ দেখে তুই করিস নাকো ভয়" - কারন মেঘের আড়ালেই সূর্য হাসে। মনে রাখবেন খারাপ সময় মানুষ সব থেকে বেশি নিঃসঙ্গতা অনুভব করে। সাকিব আমাদের অনেক ম্যাচ জিতিয়েছে। ইনশাল্লাহ এই বিশ্বকাপেই আরও জিতাবে। আমাদের উচিত তাকে সংগ দেওয়া।
সাকিব, তামিমদের কুশ পুত্তলিকার কি জানি শুনলাম?? ঢাবিতে নাকি পোড়ানো হবে!! আমি এটাও বুঝিনা যে আয়ারল্যান্ডের সাথে জিতার পর সারারাত ধরে আনন্দ করার কি ছিল আর এখন সাকিব তামিমদের কুশ পুত্তলিকা পোড়ানোরই বা কি আছে? ঢাবি হচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাপীঠ। বাংলাদেশের নানা জায়গা থেকে এখানে ছেলে মেয়েরা পড়তে আসে। তাদের সমর্থন যে অনেক বড় কিছু। তারা কেন পিছনে চলে যাচ্ছেন!!
আমাদের ভাল সময়ে তো আমরা সবাই একই সুরে থাকি। কিন্তু খারাপ সময়ে আমাদের আচরনই কিন্তু জাতি হিসেবে আমরা কতটা শক্ত চরিত্রের অধিকারী এর প্রমান দিবে। ক্রিকেটারদের বাসে ঢিল ছোড়া, কুশপুত্তলিকা দাহ্য করা কোন সিনসিয়ার মানুষদের কাজ হতে পারেনা। আমাদের ক্রিকেটারদের আমরা সিনসিয়ার হতে পরামর্শ দেওয়ার আগে আমরা নিজেরা যেন সিন্সিয়ারিটি আর ম্যাচুরিটি দেখাই।
তবে আমার মনে হয় বাংলাদেশের পরিস্থিতি বুঝে খেলা ব্যাটসম্যানদের অভাব আছে। সবাই স্ট্রোক খেলতে চায়। স্ট্রোক খেলা দোষের কিছুনা। কিন্তু কোন সময় কোন অবস্থায় কোন স্ট্রোকটা খেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে এটা বোঝার দরকার আছে। মরা বাড়িতে গিয়ে যেমন জোকস বলাটা ঠিক হবেনা।
ক্রিস গেইলকে স্যরি বলতে চাইলে এখানে দেখতে পারেন।