বাংলা ভাষায় ব্লগ লিখলেও স্বীকার করতে দ্বিধা নেই নিজ ভাষার প্রতি আমার দখল কম। নিজ ভাষা না জানা মোটেও বাহাদুরির কোন ব্যাপারনা উপরন্তু এটা অনেক লজ্জার একটা ব্যাপার। কারণ যে নিজ ভাষা জানেনা সে আসলে পৃথিবীর কোন ভাষাই জানেনা। তাই সবসময় শেখার চেস্টা করি। সামনে মাতৃভাষা দিবস এবং সে বিষয়ে ব্লগে লিখতে চাই তাই বাংলা ভাষার উৎপত্তি সহ নানা ব্যাপার জানার জন্য বিভিন্ন বইয়ের আশ্রয় নিয়েছি। এই বই গুলো আগে পড়িনি তাই বলতে বাধ্য হচ্ছি অনেক কিছু অজানা রয়ে গিয়েছিল।
তবে আপাতত আমি বাংলাভাষার বিভিন্ন উপভাষার উদাহরন নিয়ে একটা কিছু সংগ্রহ করেছি। এর প্রথম অংশটুকু গ্রিয়ারসেন ১৯০৩ সালে "লিনগুইস্টিক সার্ভে অফ ইন্ডিয়া" নামক বইয়ে দিয়েছিলেন। সেখান থেকে সংগ্রহ করে হুমায়ুন আজাদ তার বইয়ে দিয়েছেন। সেখান থেকে উপভাষার উদাহরনগুলো নেওয়ার পর আমার মনে হল এই তালিকা চাইলে দীর্ঘ করা যায়। প্রয়োজনীয় উপাত্ত সংগ্রহ করা আমার জন্য কঠিন হয়নি কারণ ফেসবুকের জনপ্রিয় পেজ ৩২টা থাপ্পড় দিয়া ১টা দাঁত ফালাইয়া দিমু এর মেম্বাররা। তারা এই তালিকা সংগ্রহে সাহায্য করেছেন স্ট্যাটাসে কমেন্ট করে। কাজেই তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ। চাকমা সম্প্রদায়ের একজনও সেখানে সাহায্য করেছেন। আমাদের মাঝে এত বৈচিত্র থাকলেও আমাদের প্রধান পরিচয় আমরা সবাই বাংলাদেশি। দেশ আমাদের সবার। রাষ্ট্র আমাদের সবার।
সাধুঃ কোন এক ব্যক্তির দুটি পুত্র ছিল। (১৯০৩ এর আগে)
কোলকাতাঃ একজনের দুই ছেলে ছিল। (১৯০৩ এর আগে)
হাওড়াঃ কোন লোকের দুটি ছেলে ছিল। (১৯০৩ এর আগে)
মেদেনীপুরঃ এক লোক্কার দুট্টা পো থাইল। (১৯০৩ এর আগে)
বগুড়াঃ একঝনের দুই ব্যাটা ছৈল আছিল। (১৯০৩ এর আগে)
পাবনাঃ কোন মানুষের দুই ছাওয়াল ছিল। (১৯০৩ এর আগে)
মাণিকগঞ্জঃ য়্যাক জনের দুইডী ছাওয়াল আছিলো। (১৯০৩ এর আগে)
ময়মনসিংহঃ একজনের দুই পুৎ আছিল্। (১৯০৩ এর আগে)
নোয়াখালিঃ একজন মাইন্সের দুগা হোলা আছিল্। (১৯০৩ এর আগে)
এই পর্যন্ত বই থেকে নেওয়া। ফেসবুকের স্ট্যাটাসের কমেন্ট থেকে যা যা সংগৃহিত হয়েছে তা দেওয়া হল। এখানে কিছু ভুল থাকতে পারে হয়ত কারণ অনেকে ইংরেজী হরফে কমেন্ট করেছিলেন আর আমি বাংলাতে লিখেছি। ভুল থাকলে সেটা ঠিক করে দেওয়ার জন্য ব্লগ থেকেও সাহায্য আসতে পারে।
কুমিল্লাঃ এক ব্যাডার দুইডা পুত আসিল।
চট্টগ্রামঃ উগগা মাইনষুর দুয়া ফুয়া আসিল্।
কিশোরগঞ্জঃ এক ব্যাডার দুগা ছ্যাড়া আসিন।
সিলেটঃ এখ ব্যাটার দুইটা ফুয়া আছিল।
লক্ষীপুরঃ ওগ্গা ব্যাডার দুগা হোলা আসিল্।
বরিশালঃ এইগ্গা ব্যাডার দুগগা ফোলা আসিলো/ এক ব্যাডার দুইডা ছেমরা আল্লেহ
ব্রাক্ষনবাড়িয়াঃ একজন ব্যাডার দুইডা পুত/পোলা আছিল।
সিরাজগঞ্জঃ একখান লোকের দুইখান ছাওয়াল আছিল।
টাঙ্গাইলঃ এক লোকের দুইটা পোলা আছিলো।
গাজীপুরঃ ঐ ব্যাডার দুইডা ছ্যাড়া আছিল।
ঢাকাইয়াঃ এক হালার দুইডা পোলা ভি আছিল।
খুলনাঃ এট্টা লোকের দু'ডো ছেলে ছিলো।
সাতক্ষীরাঃ এক বিটার দুজন ছাবাল ছেল।
ফেনীঃ এগ্গা ব্যাডার দুগা হোলা আসিল্।
ভোলাঃ একজণ মাইনসের দুইডা পোলা আছিল।
দিনাজপুরঃ একটা মানসের দুটো সোল আসিল্।
যশোরঃ এক বিটার ২ খান ছাওয়াল ছিল।
ঠাকুওরগাওঃ এডা লোকের দুডা ছুয়া ছিল।
বিক্রমপুরঃ এক ব্যাটার দুইডা পোলা আসিল।
জামালপুরঃ আক মাইসের দুইডা পোলা আসিল।
রাজশাহীঃ একটা লোকের দুটা ছেলে ছিল।
ফরিদপুরঃ ওই লুকের দুডা ছাওল্ আছলো।
নড়াইলঃ এক বিটার দুটো ছোয়াল ছিল।
কিশোরগঞ্জ: একজনের দুই ফুত্ আছিলো।
নরসিংদীঃ একটা বেডার দুই ছেরা আছিল।
ঢাকা : এক ব্যাডার দুইডা পোলা আছিলো।
কুষ্টিয়াঃ একটা লোকের দুইডি ছেলি ছিল।
চাঁদপুরঃ একটা ব্যাডার আছিল দুইডা ফুৎ।
নওগাঃ তার দুইটা চেঙ্গরা ছেল।
চাপাইনবাবগঞ্জঃ একজনের দুটা ছেলে ছেল।
বগুড়াঃ একজুনের দুকনা ছোল আছলো।
পাবনাঃ কোন মাইনষের দুই ছাওয়াল ছিলে।
কক্সবাজারঃ উগগো মাইনষুর দু'য়ো পুয়া আইসসিল।
চাকমা সম্প্রদায়ের একজন কমেন্ট করেছিলেন সেখানে তবে চাকমা উপভাষা না। সেটা একটি স্বতন্ত্র ভাষা। সেটা তাই আলাদা ভাবে দিলাম।
চাকমাঃ ইগ্যো মাইনঝর দিবে ফুও অ্যালো।
শেষ করি একজনের মজার একটা কমেন্ট দিয়ে। রেডিওর আর-জে রা কিভাবে বলবেঃ
একজন ইয়ো ইয়ো ম্যানের দুইটা ও ও সন ছিল।