বিশ্বকাপের আগে জেনে নিন কিছু পরিসংখ্যান। প্রতিটি ম্যাচ আমার নিজের চোখে দেখা বিধায় এই পরিসংখ্যান বানাতে সুবিধা হয়েছে। আর ইন্টারনেটে ক্লিক করলে সব হাতের নাগালেই পাওয়া যায়। খালি পড়ার মত করে সাজিয়ে নেওয়া। বাংলাদেশ ১৯৯৯, ২০০৩ আর ২০০৭ এই ৩ টি বিশ্বকাপে অংশগ্রহন করেছিল। এবার জানা যাক বাকি পরিসংখ্যান। এর বাইরে কারও কিছু জানার থাকলে জানাবেন। এখানের কোন পরিসংখ্যান ভুল থাকলে সেটাও বলে দিবেন।
• বাংলাদেশ একমাত্র টেস্ট প্লেয়িং দেশ যাদের মাঠে এখনও পর্যন্ত বিশ্বকাপের কোন খেলা অনুষ্ঠিত হয়নি। তবে ২০১১ বিশ্বকাপে দুটি ভেনুতে ৮ টি ম্যাচ হবে।
• এখন পর্যন্ত তিনটি বিশ্বকাপে অংশগ্রহন করা বাংলাদেশ ম্যাচ খেলছে ২০ টি এবং জয় পেয়েছে ৫ টি, একটি অমীমাংসিত মানে সফলতা ২৬ দশমিক ৩১। ২০০৩ সালে কানাডা আর ২০০৭ সালে আয়ারল্যান্ড এ দুটি দল নন-টেস্ট প্লেয়িং দেশ বাংলাদেশকে হারিয়েছে। বাংলাদেশ জয় পেয়েছে পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিন আফ্রিকার মত বড় দল্গূলোর পাশাপাশি স্কটল্যান্ড এবং বারমুডার সাথে।
• বাংলাদেশের পক্ষে সব থেকে বেশি ম্যাচ খেলেছেন মোহাম্মদ রফিক (১৭টি)
• বর্তমান খেলোয়ারদের মধ্যে বেশি ম্যাচ খেলেছেন মোহাম্মদ আশরাফুল (১৪ টি)
• বিশ্বকাপে মোহাম্মদ আশরাফুলের গড়টা তুলনামুলকভাবে ভাল। (১৪ ম্যাচে প্রায় ২৯)
• ব্যাটিঙ্গে সব থেকে বেশি গড় মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর। ৪ ম্যাচে দুবার অপরাজিত থেকে ২ টি ফিফটি করে তিনি করেন ১৪০ রান যার গড় হল ৭০
• বাংলাদেশের পক্ষে এখন পর্যন্ত অর্ধশত রানের ইনিংস খেলেছেন ৬ জন ব্যাটসম্যান মোট নয়বার। নান্নু, আশরাফুল, আর সাকিব করেছেন দুটি করে মোট ছয়টি। এর বাদে মুশফিক রহিম, মেহরাব হোসেন অপি আর তামিম ইকবাল একবার করে অর্ধশত রান করেছেন। এই নয়টি অর্ধশত রানের মধ্যে গত বিশ্বকাপে ভারতের বিরুদ্ধেই হয়েছে তিনটি।
• সব থেকে বেশি স্ট্রাইকরেট আফতাব আহমেদের 84.76 কিন্তু ৯ ম্যাচে তার গড় মাত্র 14.22। আশরাফুল দ্বিতীয় সেরা স্ট্রাইক রেট 76.94।
• সব থেকে বেশি শূন্য রানে আউট হওয়া ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ রফিক। তিনবার।
• বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস মোহাম্মদ আশরাফুলের ৮৭ বিপক্ষ দক্ষিন আফ্রিকা।
• মোট ৩৬ জন ব্যাটসম্যান এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের হয়ে ব্যাট করেছেন যারা সব মিলিয়ে চার মেরেছেন ২৪৬ বার ছয় মেরেছেন ২৮ বার। সব থেকে বেশি চার মারা ব্যাটসম্যান আশরাফুল ৩৫ বার তামিম ইকবাল ২৫ বার। ছয় মারা ব্যাটসম্যান টেল এন্ডারেই বেশি। মাশরাফি আর রফিক দুইজনেই ৪ টি করে ছয় মেরেছেন।
• সব মিলিয়ে ২০০ এর বেশি রান করেছেন দুইজন ব্যাটসম্যান। আশরাফুল ২৮৭ এবং সাকিব আল হাসান ২০২।
• মিনহাজুল আবেদিন নান্নু তার সর্বোচ্চ ৬৮ রানের ইনিংসটা খেলতে যখন মাঠে নামেন তখন বাংলাদেশের দলীয় স্কোর ছিল ২৫/৫ বিপক্ষ স্কটল্যান্ড। পরবর্তিতে বাংলাদেশ ম্যাচটি জিতে যায়।
• ১৯৯৯ সালে মেহরাব হোসেন অপি আর নাইমুর রহমা দূর্জয়ের পঞ্চম উইকেটে ৮৫ রানের জুটিটাই এখন পর্যন্ত সেরা জুটি। গত বিশ্বকাপে মুশফিক রহিম আর সাকিব আল হাসানের ভারতের সাথে চতুর্থ উইকেট জুটিতে ৮৪ রানের জুটি দ্বিতীয় সেরা।
• এবার আসা যাক বোলিং-এ , এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে মোট ২১ জন বোলার বল করেছেন ১৭ বোলার উইকেট পেয়েছেন মোট উইকেটের সংখ্যা ৯৬। তালহা জুবায়ের, শাহাদাত হোসেন রাজিব, মোহাম্মদ আশরাফুল এবং নিয়ামুর রশীদ রাহুল বল করলেও কোন উইকেট পাননি।
• সব থেকে বেশি উইকেট নিয়েছেন আব্দুর রাজ্জাক ১৩ টি। মোহাম্মদ রফিক আর খালেদ মাহমুদ সুজন ১২ টি করে উইকেট পেয়েছেন। মাশরাফি মর্তুজা পেয়েছেন ১১ টি।
• ম্যাচে সেরা বোলিং মাশরাফি মর্তুজার ৩৮/৪ বনাম ভারত। ৩ এর বেশি উইকেট নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে ৯ বার তার মধ্যে তিনটাই ভারতের বিপক্ষে একই ম্যাচে।
• বোলিং এ সব থেকে ভাল এভারেজ এহসানুল হক সিজানের 17.00 তবে তিনি মাত্র একটি ম্যাচেই বল করেছিলেন। ১০ ওভারে ৩৪ রান দিয়ে পাওয়া দুটি উইকেট ছিল যথাক্রমে ব্রায়ান লারা আর শিভ নারায়ন চন্দরপালের। খেলাটি পন্ড হয়ে যাওয়ার কারনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ পয়েন্ট হারায় এবং কেনিয়া সুপার সিক্সে চলে যায়। (২০০৩)
• সব থেকে ভাল ইকোনোমিক রেট শফিউদ্দিন বাবুর। তিনিও একটি মাত্র ম্যাচ খেলেন এবং ৮ ওভারে ২৬ রান দিয়ে ইজাজ আহমেদের উইকেটটি নেন। ঐ খেলায় বাংলাদেশ পাকিস্তানের সাথে জয়লাভ করে।
• সব থেকে বেশি ক্যাচ ধরেছেন তামিম ইকবাল আর আফতাব আহমেদ ৬ টি করে। এটা একটা মজার স্ট্যাটিস্টিক্স। কারন তাদের থেকে বেশি ম্যাচ খেলেও এবং উইকেট কিপার হয়েও খালেদ মাসুদ পাইলট মাত্র ৪ টি ক্যাচ ধরেছেন। মুশফিক রহিমও ৯ ম্যাচে ক্যাচ ধরেছেন মাত্র ৩ টি। তামিম ইকবাল আর আফতাব ৯ টি করে ম্যাচই খেলেছেন।
• বাংলাদেশ স্পিন নির্ভর দল হলেও এখন পর্যন্ত স্ট্যাম্পিং করেছে দুটি। ১১ ম্যাচে খালেদ মাসুদ মাত্র দুবার স্ট্যাম্পিং করেন তাও অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে একই খেলায় এনামুল হক মনির বলে মার্ক ওয়াহ আর ব্রেন্ডন জুলিয়ান। মুশফিক রহিম ৯ ম্যাচে কিপিং করলেও কোন স্ট্যাম্পিং করেননি। মানে মোট ২০ খেলায় স্ট্যাম্পিং হয়েছে দুটি।
• বোলারদের মধে অনেক ম্যাচ খেলে ভাল এভারেজ আর ইকোনোমিক রেট মোটামুটি বলা যায় সৈয়দ রাসেলের। ৭ ম্যাচে এভারেজ 29.87 আর ইকোনোমিক রেট 3.85
• যে ৫ ট খেলায় বাংলাদেশের খেলোয়াররা ম্যান অফ দ্যা ম্যাচের পুরস্কার জিতেছেন তার মধ্যে দু’বার ব্যাটিং এর জন্য আশরাফুল, বোলিং এর জন্য একবার করে খালেদ মাহমুদ সুজন আর মাশরাফি মর্তুজা এবং অলরাউন্ড পারফর্মেন্সের জন্য একবার মিনহাজুল আবেদিন নান্নু।
• জিম্বাবুয়ে একমাত্র টেস্ট প্লেয়িং দেশ যাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ এখনও বিশ্বকাপে মুখোমুখি হয়নি। বাংলাদেশ আর জিম্বাবুয়ের সিডিংটা কাছাকাছি থাকে বলে তাদের একই গ্রুপে পরার সম্ভাবনা কম আবার দুটি দলই পরের রাউন্ডে উঠবে এরকম কখনো হয়নি।
• মোট ২০ টি ম্যাচে বাংলাদেশ ২০০ এর বেশি রান করেছে মাত্র দু’বার। দু’বারই প্রথমে ব্যাট করে এবং দু’টিতেই বাংলাদেশ জয়লাভ করে। পাকিস্তানের সাথে ২২৩ এবং দক্ষিন আফ্রিকার সাথে ২৫১।
• ২০০ এর বেশি রান মাত্র ২ বার হলেও ১০০ এর কমের কোন ইনিংস বাংলাদেশের নেই। সর্বনিম্ন দক্ষিন আফ্রিকার সাথে ১০৮। বারমুডা সাথে টার্গেট ৯৪ ছিল দেখে ৯৬ এর বেশি করা হয়নি। তবে সেটা ইনিংসের সমাপ্তি ছিলনা।
• স্কটল্যান্ডের সাথে ২৫ রানে ৫ উইকেট পড়ে যাওয়া বিপদের ম্যাচে নান্নুর ব্যাটিং এর সাথে আরেকটি জিনিস বাংলাদেশের পক্ষে গিয়েছিল। সেটা মিঃ এক্সট্রা। এক্সট্রা ছিল ৪৪। এর উপর ভর করেই বাংলাদেশ ১৮৩ রান করে ম্যাচটি জিতে নেয়। মজার ব্যপার হল পাকিস্তানের সাথে জয়ী হওয়া ম্যাচেও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহ ছিল এক্সট্রার। এক্সট্রা খাত থেকে রান আসে ৪০। স্কটল্যান্ডের ইনিংস শুরু করার আগে সবার ধারনা ছিল স্কটল্যান্ড ম্যাচ জিতে যাবে। তখন সুনীল গাভস্কার উপস্থাপকদের বলেন এই রান করে ১৯৮৩ বিশ্বকাপ আমরা জিতে নিয়েছিলাম। বাংলাদেশও চাইলে আজকের ম্যাচটা নিজেদের করে নিতে পারে।
• বোলিং এ বাংলাদেশের সেরা স্টাইকরেট কার এটা শুনলে মজা পেতে পারেন। সেটা সানোয়ার হোসেনের (৩০)। বোলিং স্ট্রাইকরেট মানে হল এই পরিমান বল করে একটা উইকেট পাওয়া। সানওয়ার হোসেন ছিলেন একজন ব্যাটসম্যান যে মাঝে মাঝে বল করে।
* ২০০৭ সালে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে জয়ের ব্যাপারে সুনীল গাভাস্কার ৯৯ দশ্-মিক ৯ ভাগ নিশ্চিত ছিলেন এমনটি তিনি স্পোর্টসসেন্টারে বলেছিলেন। তবে দশমিক ১ ভাগ টা শেষ পর্যন্ত সত্যি হয়।
এই লেখার একটা ইংরেজী ভার্সন আমি করেছি আর সেটা স্পোর্টসপালস পত্রিকার অনলাইন সংস্কারনে দেওয়া আছে।