ক্রিকেট নিয়ে আমার আগ্রহের কোন শেষ নেই তাই ক্রিকেট নিয়ে যখন বাংলাদেশ ভারত চুক্তি করল তখন আমার কাছে তাদের কিছু কিছু ব্যাপার প্রকাশ পেল। ভারত নিজেদের লাভ ছাড়া যে বাংলাদেশকে খুব একটা পাত্তা দেয়না- এইসব ব্যাপার। বাংলাদেশ টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর আজ পর্যন্ত সে দেশে গিয়ে টেস্ট খেলতে পারেনি। যতদূর জানি ২০২০ পর্যন্ত এফটিপিতেও সেরকম কোন উল্লেখ নেই। কারন বাংলাদেশকে আমন্ত্রন জানালে নাকি দর্শক হবেনা। এটা একটা অনেক বড় অপমান। ফারাক্কা চুক্তি জাতীয় ব্যাপার না বুঝলেও এটা আমি বুঝি।
এবার আসুন ভারত বাংলাদেশের সাথে চুক্তিতে আর কোন জায়গায় ফাক-ফোকর রাখে। বিশ্বকাপের মোট ছয়টা খেলা বাংলাদেশে হওয়ার কথা ছিল। পাকিস্তান বাদ পড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের ভাগ্যে আরও দুটো খেলা পড়ে। একটা সেমিফাইনাল পাকিস্তানে হওয়ার কথা সেটা বাংলাদেশ পাওয়ার কথা, বাধ সাধে ভারত। তারা বলে তাহলে উদ্বোধনী তাদেরকে দিয়ে দিতে হবে। বাংলাদেশ ঠিক করে সেমিফাইনাল তারা আয়োজন করবেনা। তাদের চাই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। এখন সেমিফাইনাল ছেড়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান নেওয়ার কারন নিশ্চয়ই এটা যে- সে অনুষ্ঠান আমরা আমাদের মত করে করব।
তবে সম্প্রতি জানা গেল তা আর হচ্ছেনা। এই জিনিস পুরাপুরি ভারতীয় ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের হাত ধরে হবে। কারন আইসিসি মানে তো আর International Cricket Council না, ইহা মানে Indian Cricket Council. তারা যা চাবে তাই হবে। বাংলাদেশ সেমিফাইনাল আয়োজন ছেড়ে দিয়ে যেটা হল- আমাদের আমও গেল, ছালাও গেল, আমের আটি হিসেবে আমাদের মাঠে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে।
আমরা জানি আমাদের চলচিত্র কালচারটা ভারতীয়দের মত এত স্ট্রং না কিন্তু উদ্বোধনী অনুষ্ঠান রাঙ্গাতে চলচিত্র তারকা লাগেনা। আমাদের দেশীয় অনুষ্ঠান দিয়ে ভাল ভাবেই সেটা করা যায়। কনসার্টের জন্য আমাদের ব্যান্ডগুলা যথেষ্টই উন্নত মানের। আন্তর্জাতিক একটা অনুষ্ঠান আমরা চাইলেই করতে পারি। ঠিক আছে ভারতীয়দের সাথেও হয়ত করা যাবে কিন্তু সেখানে আমাদের প্রাধান্য অবশ্যই আমাদের বেশি হওয়া উচিত।
বাংলাদেশে একটা সমস্যা হল দূর্নীতি। এই জিনিসটার অংশনা- এমন লোক বাংলাদেশে নাই। কারন এসএসসি এর সার্টিফিকেট তুলতেও ২০ টাকা মিষ্টি খাইতে দেওয়া লাগে। তবে দেশের মাথা গুলা যখন এই কাজ করে তখন সেটা হয়ে যায় দেশ বিক্রি। সাধারন মানুষ ঘুষ খাইতে পারলেও দেশ বিক্রি করতে পারবেনা। কিন্তু উপরের দিকে যারা আছেন তারাই এর জন্য দায়ী। কারন তারা প্রতি নিয়তই দেশটাকেই বিক্রি করে দেন।
আজকে যে অনেকে হিন্দি সিনেমা দেখে সেটা তাদের দোষ না। ছোটবেলা থেকেই এই জিনিষটা সহজলভ্য ছিল তাই দেখা হয়। এই জিনিষটা ভারত খুব সুকৌশলে আমাদের মধ্যে ঢুকিয়ে দিচ্ছে তার কারন যে শুধু আমাদের চলচিত্রকে ধংস করার জন্য তা কিন্তু না। আমাদের চলচিত্র সমাজ চাইলে পারত ভারতীয় আগ্রাসন রোধ করতে কিন্তু তারা নিজেরাই বলিউডের সিনেমা কপি করা নিয়ে ব্যস্ত। ভারতীয় টিভিতে কিন্তু আমি বাংলাদেশী সিনেমা (কোলকাতা বাংলা চ্যানেল) প্রচারিত হতে দেখেছি একবার। ঠিক তখন আমি কিছু ব্যাপার বুঝলাম। আমাদের নাটক, সিনেমার প্রতি কোলকাতানদের আগ্রহ আছে। আমাদের মাইলস , এলআরবি এদের কনসার্টের জন্য তারাও পাগল। কিন্তু তারপরেও আমাদের কোন চ্যানেল তাদের দেশে প্রচারিত হয়না। তার প্রধান কারন তাতে আমাদের পন্য সমুহের বিপনন হবে সেই দেশে। ভারত এটার সুবিধাই নেয়।
হুমায়ুন আজাদ একবার বলেছিলান, "পাকিস্তানিদের আমি অবিশ্বাস করি। যখন তারা গোলাপ নিয়ে আসে তখনও"। বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল আর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান নিয়ে ভারতের এই কুটনৈতিক ব্যাপার দেখে আমার মনে হল, "ভারতীয়রা গোলাপের তোড়া নিয়েই আসবে, কিন্তু আমার বাগানটাই নিয়ে চলে যাবে"।
এত কিছুর পরেও কিছু করার নেই। বিশ্বকাপের উদ্বোধনী দেখা লাগবে। ভাল কথা কালকে থেকে কিন্তু খেলার টিকিট ছাড়ছে। আপনাদের গুলা যোগাড় করে নিয়েন। বাংলাদেশের খেলা কোন কোন দিন তা নিচের ফিক্সচার দেখে মিলিয়ে নিন।