আজিজ মির্জা যখন “রাজু বান গায়া জে্টেলম্যান” (১৯৯২ সালের মুভি, শাহরুখ খানের প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত নয়, কিন্তু প্রথম সাইন করা সিনেমা) বাান তখন নায়ক নিয়েছিলেন শাহরুখ খানকে। কে শাহরুখ খান? আজিজ মির্জা এর আগে টিভি সিরিয়াল বানাতেন। "সার্কাস" এবং "ফৌজি" নামক টিভি সিরিয়াল দুটিতে শাহরুখ খান ছিলেন। তার নিজের সিনেমাতেও শাহরুখ খানকে সাইন করালেন এবং যথারীতি বিপদে পরলেন। কারন নায়িকা পাওয়া যাচ্ছেনা। কোন নায়িকা এত বাজে চেহারার (!) নায়কের সাথে অভিনয় করতে রাজি নন। অনেক কষ্টে জুহি চাওলাকে পাওয়া গেল তাও তিনি শুরুতে কয়েকবার না করে দিয়েছিলেন। সিনেমার শুটিং শুরু হল। প্রথম কয়েকটা প্রিন্ট দেখে শাহরুখ খান মন খারাপ করে চলে গেলেন। কারন, এত বাজে চেহারার নায়কের সিনেমা কেউ দেখবেনা। আজিজ মির্জার নিজের উপর আস্থা অনেক। তিনি বললেন, আগে দেখই না। এরপর ছবি রিলিজ পেল। ছবি হিট হল। একই সময়ে তার আরও দুটি সিনেমা, “দিল আসনা হ্যায়” ফ্লপ করলেও “দিওয়ানা" হিট করল। দু জায়গাতেই নায়িকা দিভ্যা ভারতী। নবাগত নায়কদের সাথে তিনি কাজ করেন।
তবে তখনও শাহরুখ খানের অবস্থা পাকাপোক্ত নয়। তিনি সুযোগ খুঁজতে লাগলেন। পেয়ে গেলেন বাজীগর। “ডর” ছবিতে অভিনয় নিয়ে আমির খানের সাথে ইয়াশ চোপরাদের ঝামেলা হল। তাই সেখানেও গেলেন শাহরুখ খান। এই প্রথম একটা সিনেমা এমন হল যে নায়কের থেকে ভিলেনের কদর বেশি। সানি দেওল খেঁপে গেলেন। তিনি নায়ক কিন্তু সবাই শাহরুখ খানের কথা বলে। “I love you KKKKKKKiran”- শাহরুখের অভিনীত নেগেতিভ রোলটা কিন্তু স্ক্রিপ্টে তোতলামি ছিলনা। শাহরুখ খান নিজে এটা বের করেন আর বলেন যে এরকম রোলে ইউনিক একটা ব্যাপার হিসেবে কাজ করবে এটা। কাজ করল। শাহরুখ খানের নেগেটিভ ক্যারেক্টর আরেকটা ছিল "আনজাম" সিনেমাতে। ছবি ফ্লপ করলেও শাহরুখ সেরা ভিলেনের পুরষ্কার পান।
শাহরুখ খানের ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া সিনেমার নাম “দিল ওয়ালে দুলহানাইয়া লে জায়েঙ্গে”। হিন্দি সিনেমাগুলার মধ্যে এটাই আমার সব থেকে প্রিয়। “রাজ” চরিত্রটার প্রেমে পরেনি এমন মেয়ে ঐসময় খুঁজে পাওয়া যেতনা। শাহরুখ খানের থেকে ভাল সম্ভবত এই রোল কেউ করতেও পারতনা। একটা হিট ডায়লগ ছিল, “বড়ি বড়ি দেশমে ছোটি ছোটি বাতি হোতি রেহতি হ্যায়”। একটা মজার ব্যাপার হচ্ছে এই সিনেমাতেও শুরুতে আমির খান আর দিভ্যা ভারতীর করার কথা ছিল। এবার আমির খানের সাথে ঝগড়া হল আদিত্য চোপড়ার। ১৯৯৪ সালের এপ্রিল মাসে মারা গেলেন দিভ্যা ভারতী। “সিমরান” হয়ে চলে আসলেন কাজল।
বলিউড কিং সেই শাহরুখ খান ঢাকা আসছেন। ঢাকা আসার আগে বেশ বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছে। কারন তিনি শাকিব খানের সাথে স্টেজ পারফর্ম করবেন না। শাকিব খানের জবাবটা খুবই হাস্যকর। তার নাকি সময় নেই শাহরুখ খানের সাথে পারফর্ম করার। অথচ এর আগে তিনি বেশ প্র্যাকটিস করছিলেন হিন্দি গানের সাথে। অনেকে এখানে আমাদের দেশকে অপমানের গন্ধ খুজছেন আমার কাছে অবশ্য সেরকম মনে হয়না। ব্যাপারটা আমি একটু বুঝিয়ে বলি। বিশ্বকাপ নিয়ে যে এ্যাড বানানো হচ্ছে সেখানে শচীন, মুরালিধরনের সাথে আছেন সাকিব আল হাসান। শচীন বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যান, মুরালি বিশ্বের সেরা স্পিনার এদের সাথে আছেন আমাদের বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। কিন্তু শাহরুখ খানের সামনে আমরা কিভাবে আমাদের সেরা নায়ক শাকিব খান – এ কথা বলে এক স্টেজে তুলি। শাকিব খান কি আজ পর্যন্ত একটাও মৌলিক সিনেমা করেছে? তিনি এখন বলছেন শাহরুখ খানের সাথে পারফর্ম করার সময় তার নেই। কিন্তু শাহরুখ খানের অভিনীত সিনেমাগুলার বাংলা ভার্সনে তিনি ঠিকই অভিনয় করেন। “ডর” আর “ডন” দুটো ছবিই বানানো হচ্ছে আর সেগুলাতে অভিনয় করার টাইম তার ঠিকই আছে। এখন কোন মুখে আমরা শাকিব খানকে শাহরুখ খানের সামনে ঠেলে পাঠাই? শাহরুখ শাকিব খানের সিনেমা দেখতে গেলেই দেখবেন তার নিজের সিনেমা গুলারই কপি অথবা অন্য কোন বলিউডের সিনেমা গুলার কপি!! শাকিব খান কোন দিক দিয়েই বা একজন আন্তর্জাতিক তারকা হলেন?? যোগ্যতা কি এতই সোজা?
আমাদের কি আন্তর্জাতিক তারকা নেই? আছেন। আমাদের রুনা লায়লা আছেন। একজন ভারতীয় খুশবুন্ত সিং যার সম্পর্কে বলেছিলেন, "আমাদের রুনা লায়লা দিয়ে দাও, আমরা তোমাদের ফারাক্কা বাধ দিয়ে দিচ্ছি”। আমাদের ব্যান্ড মাইলসের গান হিন্দি সিনেমাতে কপি হয়েছে। কিন্তু শাকিব খান কি কোন অবস্থাতে রিপ্রজেন্ট করার মত কিছু?
শাহরুখ খান বাংলাদেশে আসার কারনে আমি যে খুশিতে আবেগ আপ্লুত তাও নয়। আমি এখন একটা ঘটনা বলছি এটা আমি একজনের কাছে শুনেছি। এবং এটা শোনার পর শাহরুখ খানের প্রতি ভক্তি শ্রদ্ধা একটু কমে গিয়েছিল। আজ থেকে ১২-১৩ বছর আগে এক বাংলাদেশি আমেরিকাতে শাহরুখ খানকে পান। খুশিতে গদগদ হয়ে হাত মিলান। শাহরুখ খান জিজ্ঞেস করেন, "তোমার দেশ কই"? "বাংলাদেশ" শোনার পর শাহরুখ খান মুখ ঘোরানো অনীহার একটা এক্সপ্রেশন দেন এবং আমি শাহরুখ খানের মুভি গুলো দেখার কারনে কল্পনা করতে পারি সেটা কেমন এক্সপ্রেশন। হতে পারে কোন কারনে শাহরুখের হয়ত মন মেজাজ খারাপ ছিল। শাহরুখ হলেও সে মানুষ। আমি গোসল না করলে বডি স্প্রে না মাখলে যদি আমার গা থকে গন্ধ আসে শাহরুখ খানের গা থেকেও আসবে। সিনেমায় না দেখালেও ব্যাক্তি-গত জীবনে শাহরুখ খানও পাধ দেন এবং তার গুয়ে গন্ধ আছে।
তারপরেও আসুক শাহরুখ খান বাংলাদেশে। মাতিয়ে যাক তার অগনিত ভক্তদের। এবং আমি জানি তিনি মাতাবেন। সব শেষে বাংলাদেশিদের নিয়ে ভাল ভাল কথাও বলবেন। সেটা শুনে আমরা আবেগ আপ্লুত হতে পারি কিন্তু টাকা পেলে অনেক কিছুই করা যায়। শাহরুখ খান টাকার বিনিময়ে ধনীদের গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানেও নেচে গিয়ে আসেন।
শাহরুখ খানের প্রশংসনীয় কিছু ব্যাপার আছে। তিনি পরিশ্রমী এবং উদ্যমী। অনেক ঝামেলা হলেও তিনি তার প্রেমিকাকে বিয়ে করেছিলেন। কখনও শাহরুখ খান সম্পর্কে মেয়ে ঘটিত উলটা গসিপ শোনা যায়না। তার কৃতজ্ঞতা বোধ আছে। জুহি চাওলা তার প্রথম সিনেমায় রাজী হয়েছিলেন তাই জুহি চাওলার বিপদের সময় তিনি সব সময় পাশে থাকেন। তার পুরানো বন্ধু বান্ধবদের কাউকেই ভুলে যাননি। সব থেকে বড় ব্যাপার হল তিনি অনেক অনেক অনেক বড় একজন সুপার স্টার।
তবে শাহরুখ খানকে দেখার জন্য উতলা হয়ে নাই আমি। টিকিটের দাম ৩ হাজার , ৫ হাজার এগুলোকে কেউ কারন বললে ভুল মনে করবেন। এই টাকাটা আমি খরচ করব বিশ্বকাপ দেখার জন্য। আমার কাছে সাকিব আল হাসান, শাহরুখ খানের থেকে অনেক বড় স্টার। মিরপুরের খেলা গুলার টিকিট কিনতে হবে। সবুজের উপর লাল – এরকম গেঞ্জী কিনতে হবে আরো অনেক কিছু বাকি আছে। শাহরুখ খানকে দেখার জন্য যে টাকা লাগবে সেই টাকা দিয়ে কত বড় রয়েল টাইগারের পুতুল পাওয়া যাবে কারও জানা থাকলে জানাবেন। সেই জিনিসও একটা কিনতে চাই। দেখা হবে স্টেডিয়ামে, বাংলাদেশের জয়ের ক্ষনে।
* এটা আমার ব্যাক্তিগত ব্লগ, যারা শাহরুখ খানকে দেখার জন্য টিকিট কিনেছেন কোন অবস্থাতেই তাদের খাটো করছি না। সবারই অধিকার আছে নিজের নিজের পছন্দকে প্রাধান্য দেওয়ার।
* শাহরুখ খানের অনেক ছবি হলিউডের কপি যেমন বাজীগর - A kiss before dying (1991; staring Sean Young)