তারেক যে দোকানে মোবাইলের কাজ করে যে দোকানের নামটা দিলাম না। উঠতি বয়সী ছেলেপেলে এমনিতেই খারাপ। তার উপর দোকানের ঠিকানা দিলে মেমরী কার্ড ভরার জন্য এখনি চলে যায় কিনা। তারেককে অবশ্য এভাবে ভুল বোঝার সুযোগ নেই। ভদ্র ছেলে। সে মোবাইল সারায়। মোবাইল সারানোর ডিপ্লোমা করেছে সে। দোকানে ঢুকে ওই প্রান্তেই বসে সে। অন্য জায়গায় দোকানের মালিক সোবহান সাহেবের ছেলে রিয়াজ। রিয়াজে অন্যের মেমরী কার্ডে গান ভরে দেয়। পর্ন জিনিস পত্রও ভরে দেয়। ১ গিগা ২৫০ টাকা। ২ গিগা ৪০০ টাকা।
তবে তারেকের সেদিকে তেমন মাথা ব্যাথা নেই। সে আপন মনে মোবাইল সারানোর কাজ করে। কাজটাকে অনেকে খাট চোখে দেখতে পারেন কিন্তু উপার্জন খারাপ হয় না। সৎ পথে মেহনতের সাথে যা করা যায়। আর তারেকের মতে সে এখন যে অবস্থানে আছে ভালই আছে। গ্রামে লেখাপড়া করে যতটুকু আগানো যায় সে এগিয়েছে। শহরে খুব বেশিদূর আগানো সম্ভব হয় নি। কয়েক বছর আগে শহরে সে থাকতে এসেছিল। শুরুতে আপন চাচার বাসায়। তারেকে বাবা গ্রামের স্বল্পশিক্ষিত লোক হলেও তার চাচা অনেক বড়লোক। অবশ্য বড়লোকের সাথে টাকা পয়সা বিষয়টা জড়িত। তাই সেখানে বিন্যাসের একটা সমস্যা হয়ে গিয়েছিল। তারেকে চাচাতো বোন দু’জন আর ভাই একজন কখনই তেমন ভাল ব্যবহার করতনা। বাইরের লোকজনের সামনে কখনই বলতনা আপন চাচাতো ভাই। চাচীও খুব অপমান করতেন। বাংলা সিনেমায় যেমন দেখা যায় ঠিক তেমন না কিন্তু কেউ পছন্দ না করলে ব্যাপারটা বোঝা কঠিন কিছুনা। অপমানের জ্বালা সহ্য করেছে অনেক। তারেকের চাচাতো ভাই অবশ্য অপমান কম করত। মানে চেস্টা করত তারেক যাতে তাদের সাথে থাকতে পারে। তারেকের চাচাতো বোন শারিকার কাছ থেকেই সব থেকে খারাপ ব্যবহার গুলা আসত। গেয়ো, অশিক্ষিত থকে শুরু করে সব কিছুই তাকে শুনতে হত। শারিকার মোবাইল চুরি যায় একবার। কাজের লোকদের সাথে তারেককেও জেরা করা হয়। সেটাই ছিল তারেকের শেষ অপমান সহ্য করা। তারেক এরপর বের হয়ে আসে ঐ বাসা থেকে। তারেকের নিজ বাবা মার কাছে খবর যায় তারেক নিজে বেয়াদবী করে বের হয়ে গেছে।
তারেকের বেশি কস্ট সেখানেই লাগে যে বাবা মা ভুল বুঝেন। তারেক চাচাতো ভাইটা কিছুটা ভাল এ কারনে বলা যায় যে সেই একমাত্র যে এসে তারেককে বলে গিয়েছিল তারেক জানি কিছু মনে না করে। তারেক কতটুকু মনে রেখেছে বলা অবশ্য কঠিন। তবে তারেক খুব অবাক হল যে চাচার বাসা থেকে আজ তলব এসেছে। কি জন্য? তারেক খুব একটা বুঝতে পারলনা। দোকানের পিক সময়ে কাজ ছেড়ে যাওয়া যায় না। তারপরেও তারেক বাধ্য হয় গেল।
চাচার বাসায় গিয়ে তারেক বেশ অবাক হল যে চাচী আজ তার সাথে ভাল ব্যবহার করার চেস্টা করছেন। নাস্তাপানী দিয়েছেন। আবার বলছেন রাতে খেয়ে যেতে। চাচাও যথাসময়ে চলে আসলেন। কিছু হালকা অপ্রাসঙ্গিক কথাবার্তার পরে যা হল,
তারেক, আমি দুঃখিত ২ বছর আগের ঘটনার জন্য।
চাচা আপনি কি বলছেন!! আমার সেগুলো কিছু মনে নেই।
তারেক আমি তোমার জন্য বিদেশে একটা চাকরী জোগাড় করে রেখেছি। সেটা দুবাইতে। তুমি মোবাইলের ইঞ্জিনিয়ার। চাকরীটা বেশ ভাল বাংলাদেশে যত টাকা কামাই কর দুবাইতে তার থেকে অনেক বেশি ইনকাম করতে পারবে।
তারেক কি বলবে বুঝতে পারলনা। একবার চাচা আর একবার চাচীর দিকে তাকাল। চাচা বলে গেলেন,
তোমার বাবার সাথে আমার কথা হয়েছে। সে সুত্র ধরেই আমি তোমাকে প্রস্তাব দিচ্ছি। তুমি শারিকাকে বিয়ে কর। তোমাদের পুরা দায়িত্ব আমি নিচ্ছি। তোমাদের ভবিষ্যতে যাতে সমস্যা না হয়। সে দায়িত্ব আমাদের।
তারেক কিছুক্ষন চিন্তা করল। তারপর তারেক বলল, আমি কি শারিকার সাথে কথা বলতে পারি? আমি আপনাদের সব সমস্যার সমাধান করে দিচ্ছি।
তারেকের চাচা বলল, শারিকা কয়েকদিন হাসপাতালে ছিল। তার শরীর দূর্বল। সে খুব বেশি মানুষের সাথে দেখাও করনা। তবে তুমি যাতে কথা বলতে পার সে ব্যবস্থা করছি।
তারেক আর শারিকা বারান্দায় কথা বলছে…………। তারেক বলল,
শারিকা। তোমাদের বাসায় আমি যে কয়দিন ছিলাম। তাতে যেই লোকটার সাথে আমার সব থেকে বেশি খাতির হয়েছিল সে হল তোমাদের ড্রাইভার হারুন। তোমাদের বাসা ছেড়ে যাওয়ার পর একমাত্র তার সাথেই আমার যোগাযোগ থাকত। আমি তোমাদের ব্যাপারে কোন কিছু জানতে চাইতাম না কিন্তু সে আমাকে জানাত। তুমি হাসপাতালে কেন ছিলা আমি জানি। আবার এটাও জানি তোমাদের সোসাইটিতে এটা কোন ব্যাপার না।
শারিকা চুপ করে থাকল।
আমি যেই দোকানে কাজ করি। সেখানে রিয়াজ ভাই নামক একজন আছেন। তার সাথে কয়েকজনের কানেকশন আছে। বাংলাদেশের আজে বাজে অনেক ভিডিও তার কাছে প্রথম আসে। সেটা ভিডিও করা হয় রিয়াজ ভাইয়ের ক্যামেরা দিয়েই। তোমার বয়ফ্রেন্ড যে ছিল, সে রিয়াজ ভাইয়েরই বন্ধু। তুমি একা না। আরো ৪-৫ জন মেয়ের সাথে তার ভিডিও আমি দেখেছিলাম। তোমারটা আমি নষ্ট করে দিয়েছি। কাজেই অন্যদের গুলার কথা শুনে সুইসাইড করা লাগবেনা। তোমারটার আর কোন কপি ছিলনা। কারন "র" কপি গুলা রিয়াজ ভাইয়ের কাছেই আসে প্রথম।
শারিকা চমকিয়ে উঠল। তারেক বলে গেল,
আরেকটা জিনিষ জেনে রেখ। তোমার মোবাইলটা এ বাসার কেউ চুরি করেনি। সেটা তোমার বয়ফ্রেন্ডের কাজ ছিল। সেই ওটা পরে সারাতে আমাদের দোকানেই দিয়ে যায়। আমি নিজেই সেটা ঠিক ঠাক করে দেই।
কিছু কিছু মানুষ থাকে যারা যে কোন অবস্থায় নিজের সুবিধা ছাড়া কিছু বুঝেনা। তোমাকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। তোমার বাবাও সেরকম একজন। তিনি আমাকে দুবাইতে চাকুরী দিতে চান যাতে আমি তোমাকে বিয়ে করি। তুমি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ আমাকে বিয়ে করার প্রয়োজন আর নেই। অবশ্য তোমাদের বাসায় কয়েকদিন থেকে আমিও অনেকটা তোমাদের মতই হয়ে গেছি। আমি যেখানে কাজ করি সেখানে প্রতিদিন এত এত মেয়ের সর্বনাশ হচ্ছে। কিন্তু আমার কিছুই করার নেই। নিজের চাকরির কথা চিন্তা করা ছাড়া। আর রিয়াজ ভাইকে থামালেই সব থেমে যাবেনা। তারেক দম নেওয়ার জন্য সময় নিল, তারপর বলল, আমি গেলাম।
তারেক নিচে নেমে কারো সাথে কথা না বলে সোজা দোকানে চলে গেল। কয়েকদিন পর তার অবস্থার কিছু পরিবর্তন আসল। সে ওই দোকান ছেড়ে একটা টেলিকমুনিকেশন কোম্পানিতে চাকরী পেল। খুব বড় চাকরী না। কিন্তু তার সামনে দিয়ে কেউ পর্নের রমরমা ব্যাবসা তো আর করেনা। শারিকার বিদেশে থাকা একটা ছেলের সাথে বিয়ে হয়ে গেছে। বিয়ের আগে সে তারেকের সাথে দেখা করে আগের খারাপ ব্যবহার করার জন্য অনেক মাফ টাফ চাওয়ার চেস্টা করেছে। তারেক খুব বেশি পাত্তা দেয়নি।
কারো উপর ভক্তি শ্রদ্ধা চলে গেলে সেটা ফিরিয়ে আনা কঠিন।