আমি এমন একজনকে নিয়ে লিখতে যাচ্ছি যার সাথে আমার কোন ব্যাক্তিগত সম্পর্ক নেই। যার নাম আমি ভুলে গেছি তাই নাম দিলাম মোসলে উদ্দীন। ৪-৫ বছর আগে টিভিতে আমি তাকে দেখেছিলাম। আসুন ঘটনাটা সংক্ষেপে বলে ফেলি।
মোসলে উদ্দীন আর তার ভাই দুইজন ব্যাবসায়ী। পাকিস্তানের দুই প্রান্তে তাদের ব্যাবসা সম্প্রসারিত। খুব বড় ইন্ডাস্ট্রীর মালিক না। ছোটখাট ব্যাবসা। এমন এক সময় পাকিস্তানে ঝামেলা লাগল। বেয়াদব বেঈমান বাঙ্গালীরা বিদ্রোহ ঘোষনা করল। দেশপ্রেমিক মিলিটারি বাহিনী দেশ রক্ষায় এগিয়ে আসল। পাকিস্তানে বসে মোসলে উদ্দীনের পরিবার ভাই মা সবাই মোসলে উদ্দীনকে নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেল। তারা বার বার তাকে বলল তাড়াতাড়ি পশ্চিম পাকিস্তান চলে আসার জন্য।
আল্লাহ দেখার জন্য চোখ দিয়েছেন চিন্তা করার জন্য বিবেক। দেশ রক্ষার জন্য সাধারন মানুষ মারার দরকার নাই। দেশ রক্ষার জন্য নিজের দেশের মেয়েদের রেপ করার দরকার নাই। একটা দেশের অবস্থা কোথায় গেলে ৫০ ভাগের বেশি মানুষ বিদ্রোহ করতে পারে। মোসলে উদ্দীন দেখলেন। একজন মুসলমানের প্রথম কাজ জালিম শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষনা করা। ৭ কোটি বাঙ্গালির সাথে একজন পশ্চিম পাকিস্তানি চলে আসল। মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে অস্ত্র হাতে নিলেন। লড়লেন মিলিটারি বাহিনীর বিরুদ্ধে।
দেশ স্বাধীন হল। মোসলে উদ্দীন একমাত্র পশ্চিম পাকিস্তানী মুক্তিযোদ্ধা। দেশ স্বাধীনের ২-৩ বছর পর তিনি পাকিস্তানে গেলেন। তার ভাই, তার নিজের মা তার মুখে থুতু দিল। বেঈমান বেঈমান বলে তাকে দূরে তাড়িয়ে দিল। তিনি বারবার বলতে লাগলেন আমি যা করেছি ঠিকই করেছি। তোমারা জাননা সেখানকার অবস্থা কি ছিল। আমি জানি। কোন লাভ হয়নি। তিনি দেশে এলেন। যুদ্ধ বিগ্রহে ক্ষত কিন্তু স্বাধীন দেশে থাকার জন্য মোহাম্মদপুরে বঙ্গবন্ধুশেখ মুজিবুর রহমান তাকে একটা বাড়ি দিলেন।
এরপরের ঘটনা আমি তেমন একটা জানিনা। খালি জানি কোনভাবে তিনি সেই বাড়ির দখল পাননাই। যেহেতু শেখমুজিব মারা যাওয়ার ২০ বছর পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারেনি তাই তিনি কোনভাবেই বাড়ির দখল পাননাই। ১৯৯৬ সালের পর থেকে তিনি চেস্টা করেন শেখ হাসিনার সাথে দেখা করার। দেখা করতে গিয়ে তিনি ধমক খেলেন। বাড়ি আর পেলেননা। সম্ভবত শেখ হাসিনা পর্যন্ত যেতেই পারেননি।
জাতি হিসেবে আমরা অকৃতজ্ঞ। যেই পপ সম্রাট বাংলাদেশ বাংলাদেশ বলে আমেরিকার সাধারন জনগনের কাছে আমাদের কথা শুনিয়েছিলেন জীবদ্দশায় তাকে আমরা আনতে পারলাম না। যেই সাইমন ড্রিং ছাড়া ২৫ শে মার্চের ঘটনা বিশ্ববাসী জানতে পারতনা তাকে আমরা দেশ থেকে তাড়িয়ে দেই।
স্বাধীনতা জাতি হিসেবে আমাদের সর্বোচ্চ অর্জন। কষ্ট লাগে যখন কোন কিছুতে এই অর্জনে কলঙ্ক আসে। মোসলে উদ্দীনের মত লোক যখন একবারের জন্য হলেও চিন্তা করবে কেন আমি বাংলাদেশের হয়ে যুদ্ধ করলাম একজন বাংলাদেশি হিসেবে আমার জন্য এর থেকে লজ্জার আর কিছু নেই।
মোসলে উদ্দীনের আসল নাম ভুলে গেছি। লোকটা এখন কই আছে জানিনা। কেউ জেনে থাকলে জানাবেন।