ছোটবেলায় আমি বেইলিরোড কলোনিতে থাকতাম। কলোনতে থাকার কারনেই কিনা কোরবানীর ঈদ কত ভালভাবে উদযাপন করা যায় এটা আমি খুব ভাল ভাবে জানি। পাড়ার প্রথম গরু আসা কোনভাবেই বিয়ে বাড়িতে বর আসার থেকে কম উৎসাহ উদ্দীপনার ব্যাপার না। পুরা এলাকা নেমে যাবে সেই গরু দেখতে। গরুর মালিক নানাভাবে বুঝানোর চেস্টা করবেন গরুটা কিনতে কত কষ্ট হয়েছে। গরুর দাঁত কয়টা। হাটের অবস্থা কি? কেনাবেঁচা কেমন। কলনীতে একেকটা গরু আসত আর খুশিতে আমাদের মন ভরে যেত। হায় গরু গরু গরু এ মন জুড়ে। হায় গরু গরু গরু এ অন্তরে। এত গরু কেন হলে!! সব চেয়ে দামী গরুটাকে বিশেষ সম্মান দেওয়া হত। শান্ত গরু আদর বেশি পেত। আর রাগী গরুর কাছে যাওয়াটা বিশেষ বীরত্বের ব্যাপার ছিল।
গরুর হাট গুলাকে বলা হত বিরাট গরু ছাগলের হাট যদিও সেটার নাম হওয়া উচিত ছিল গরু ছাগলের বিরাট হাট। যাই হোক সব সাইজের গরু পাওয়া যায় হাটে। প্রথম হাটে গিয়েছিলাম ১৯৯৬ সালে। চাঙ্খারপুল হাট। গরু কিনতে গিয়ে গায়ে গোবর লাগার ঘটনাও সেই প্রথম। কাওরান বাজার হাট, কমলাপুর হাট, ফুলবাড়িয়া হাট ঘুড়ার অভিজ্ঞতা আছে। রাগী গরু, শান্ত গরু, পাজী গরু, বলদ গরু। কয়েকদিন আগে কই জানি পড়লাম (ইত্তেফাক এর ফান ম্যাগাজিন) গরু নাকি ইভটিজিং করেনা!! ডাহা মিত্থ্যা কথা। গরু খালি ইভটিজিং করেনা। ডাইরেক্ট রেপ করে। আমার পুরানো একটা পোস্ট থেকে একটা অংশ তুলে দেই। (পোস্টের নাম ছিল বেকায়দা)
গত বছরের কোরবানির গরু কিনার কাহিনী। হাট এ গিয়া ৪৫০০০ টাকা চাইল। কালো রঙের গরু কিনলাম ৩০,৫০০ দিয়ে। গরু এর চরিত্র আমার থেইকাও খারাপ। তাকে আনার সময় আশেপাশে যে কয়টা গরু পাইসে তার সব গুলার সাথে সে আকাম কুকাম করার চেস্টা করসে। এইরকম লম্পট গরু জীবনে দেখিনাই। এর মধ্যে মাঝপথে এক গরুর উপর সে উইঠা গেল। তাকে আর নামানোই যাইতেসেনা। যার গরুর উপর সে উঠসে সেই গরুর মালিক বেচারা ভদ্রলোক কাউকে কিছু বলতেও পারতেসেনা কিন্তু মুখ দেখে মনে হচ্ছে সহ্যও করতে পারতেসেন না। কি বলবেন? নিজের গরু রেপ হইলে তো আর বংশের উপর কলঙ্ক আসেনা কিন্তু তারপরেও নিঃসন্দেহে অপমানজ়নক ব্যাপার। আমার গরুর লোক এবং ওনার গরুর লোক চেস্টা করতেসে গরু-রেপ ঠেকাইতে। আশেপাশের রিকশার লোকজন দেখি বেশ উপভোগ করতেসে। একজন আমার গরুকে বলল, "তুইও পুরুষ ঐটাও পুরুষ, তাও এমন করস ক্যান" !! কথাটা তো ভাল বলসে!! গে-গরু (homo-sexual cow!!) কিনলাম নাকি!! গরু নিয়া আসতেসি, আমি সামনে, পিছনে গরুর দুই লোকের সাথে গরু। তখনও ঐ লোকের কথাটা মাথায় ঘুরতে লাগল, তুইও পুরুষ, ঐটাও পুরুষ। আমিও (লেখক) তো পুরুষ। আমার গরুর সামনে এখন আর কোনো গরু নাই। শালার পুত আবার আমারেই গরু না মনে করে!! গরুর লোকগুলারে বললাম, আই তোমরা গরু নিয়ে সামনে যাও। আমি পিছন পিছন আসতেসি। চরিত্র খারাপ মানুষ হোক আর গরু হোক ,কোনো কিছুতেই বিশ্বাস নাই। দুইটাই বেকায়দা।
অনেকদিন আগে বাংলা একটা সিনেমায় গরু নিয়ে একটা গান দেখেছিলাম। গরু তুই মানুষ হইলিনা। এত পড়াই এত শিখাই কিছুই বুঝলিনা। গানটা মনে পড়ল সিনেমা জগতের আরেক নাম কিং খান শাকিব খান এর কাহিনী পড়ে। সোর্স কালের কন্ঠ। শাকিব খান নাকি এবার ১০ লাখ টাকা দিয়ে গরু কিনবে। কালো গরু। গরু তুই মানুষ হইলিনা।
আসেন গরু নিয়ে আরও কিছু কথা জানি।
গরুর রক্তের গ্রুপ নাকি বি পজিটিভ। ঘটনাটা আসলে অন্য। বি পজিটিভ রক্তটা এতই পাওয়া যায় যে এটাকে গরুর রক্ত বলে।
Cow থেকে Coward আসেনায়। কাজেই কাউকে Coward বললে গরুজাতি তেমন মাইন্ড করেনা।
Holy Cow বা পবিত্র গরু হচ্ছে একটা এক্সপ্রেশন যেটা অবাক হলে আমেরিকানরা বলে থাকে।
সব শেষে আমাদের এক স্যার এর কথা বলি। তিনি একবার বলেছিলেন গরুগুলা আসলেই গরু। কারন তাদের কোরবানি দেওয়ার সময় তারা বাঁচার চেস্টা করেনা। আর গরু গুলা আসলেই গরু। একটা গরুর পাশে অন্য গরুকে কোরবানি দিলে আরেক গরু ঘাস চাবাইতে থাকে , একবারও চিন্তা করেনা সম্মিলিত ভাবে বাঁচার চেস্টা করার। সম্ভবত এ কারনেই মানুষ সর্ব শ্রেষ্ঠ জীব।
( এইরম একটা গরু এইবার কোরবানি দিমু ভাবসিলাম কিন্তু ফ্রিজে জায়গা নাই। তয় এইটা শাকিব খানের গরু হইতে পারে। আফসুস।)
যাই হোক। সামনে কোরবানি। সবাই দোয়া করবেন যাতে সুস্থমত একটা গরু কিনতে পারি। গরুর মাংস গরীবদের দিতে পারি। ইনশাল্লাহ ঈদ সবার ভাল যাবে। হাসিমুখে যাতে আমরা সবাই সবাইকে জিজ্ঞেস করতে পারি, আপনি কি গরু না ছাগল?