পলার মায়ের ভাষ্য অনুযায়ী পলার বয়স সাড়ে পাঁচ। দয়া করে এটা নিয়ে কেউ সন্দেহ প্রকাশ করবেননা পলার মা ক্ষেপে যেতে পারেন। পলার মাকে ক্ষেপানো বুদ্ধিমানের কাজ হবেনা। পলার মা পলাকে নিয়ে উদায়নে ভর্তি করাতে আসলেন। প্রশ্ন উঠতে পারে উদায়ন কি। জেনে অবাক হবেননা উদায়নে ভর্তি হতে হলে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হয়, অবাক তখন হবেন যখন জানবেন উদায়ন কোন স্কুলের নাম নয়, এটা কোচিং সেন্টারের নাম। ১ বছর আগের পলার মা পলাকে নিয়ে এসেছিলেন ভর্তি পরীক্ষা দেওয়াতে খুব বেশি লাভ হয়নি। উদায়ন কোচিং সেন্টারে ভর্তি হওয়ার জন্য আরেকটা কোচিং করা লাগে সেন্টারের নাম রেইনবো কোচিং সেন্টার। পলার মার ভাগ্য ভাল পলাকে উদায়নে নেওয়া হল।
পলার মা কোচিং সেন্টারে খালি পলাকে নেননা। তাদের কাজের মেয়ে উন্তিকেও নেন। উন্তির বয়শ দশ টশ হবে। পলার ব্যাগটা এতই ভারী থাকে যে সেটা উন্তিকেই নিতে হয়। পলার মার একটা জিনিষ আবার পছন্দ হচ্ছেনা ইদানিং। দেখা যাচ্ছে উন্তি পড়ালেখা শিখে ফেলছে পলার বই পত্র দেখেই। পলার মা ভালই অবাক এবং এ ব্যাপারে সে মাঝেই মাঝেই সবাক। কাজের মেয়ে তার মেয়ের থেকে ভাল পারে। পলার উদায়নে কোচিং শুরু হল। কিছু মেয়ে তার থেকে বয়সে বড় কিছু মেয়ে ছোট। ছেলেগুলাও তেমনি। পলার সামনের জানুয়ারী ভর্তি পরীক্ষা দিবে। এ গ্রেড বি গ্রেড এর স্কুলে। পলার মায়ের এ গ্রেড এর স্কুল চাইই চাই।
পলার বাসার অবস্থা কাহিল। পলার নিজের অবস্থাও কাহিল। এই কাহিল শব্দ ছাড়া বাসায় আর তেমন কোন শব্দ উচ্চারিত হয়না। পলাকে কার্টুন দেখতে দেওয়া হচ্ছেনা। পলার মায়ের কাজ হল খালি কোচিংএর জিনিস পত্র ফটোকপি করা আর সেটা পলাকে মুখস্থ করানো। দিন যায়, পলার পড়ালেখা যায় বেড়ে। এমন সময় ভর্তি পরীক্ষাও চলে আসে। পলার মায়ের অবস্থা খারাপ। উপর তলায় থাকে রিমঝিম এর মা। রিমঝিম পরীক্ষা দিচ্ছে। এখন পলা যদি না টিকে তাহলে কিভাবে হবে!!
পলার বয়স ছয় হল আর ভর্তি পরীক্ষা হল। পলা সব পাড়ল। তাকে অনেক পড়ালেখা করানো হয়েছে না পারার কোন কারন নেই। পলার বাবা মা নিশ্চিত হলেন পলা সব পেরেছে। কিভাবে?? প্রশ্নটা কিনতে পাওয়া যায়। সেটা কিনে এনে বাসায় এসে পলাকে আবার পরীক্ষা দেওয়া হয়েছে। পলা সব পেরেছে।
রেজাল্ট দেওয়ার দিন আসল। পলার রোল ১১৭৯। রোল নেই। পলা টিকেনায়। পলাকে হেভি ডলা দেওয়া হল। অনেক মারধর করা হল। পলা বারবার বলল আমাকে মেরোনা কে শুনে কার কথা। তা মারধোর করার কারন ছিল অবশ্য। সেটা জানা যাক। স্কুলে নাকি অবৈধ উপায়ে ভর্তি করানো যায়। রিমঝিমকে ২ লাখ টাকা দিয়ে ভর্তি করানো হল। পলার বাবা তৎবির কররা চেস্টা করেছেন। কিন্তু পলা যে নম্বর অনেক কম পেয়েছে! কত কম? মোট চার পাতার প্রশ্ন পলা মাঝখানের দু পাতা এনসার করেনি। ছোট মানুষ এই ভুল করতেই পারে কিন্তু পলার মা সেটা শুনবেন কেন! পলাকে আবার ডলা দেওয়া হল।
পলা বি গ্রেডের স্কুল এ ভর্তি হল। নয়মাস পর সেখানে সে ফার্স্ট হল কিন্তু পলার মায়ের এ গ্রেড্র স্কুলে ভর্তি করানো চাই। আবার ভর্তি পরীক্ষা। ফর্ম কিনা হল কিন্তু এবার ফর্মে ৭৯ থাকায় আবার কিনা হল। ৭৯ টাই অপয়া। এবার পরীক্ষা দেওয়ার সময় পলাকে বুঝিয়ে দেওয়া হল যেন সে সবগুলো পাতা ভাল ভাবে এন্সার করে। পলা করল। কিন্তু একজন লোকের একটা তরমুজ খেতে পাঁচ মিনিট লাগলে পাঁচজনের কতক্ষন লাগবে সেটাতে এসে পলা থমকে গেল। পলার ভয়াবহ খিচুনি শুরু হল। পলা মনে আল্লাহ আল্লাহ করতে লাগল। তখন পলার মনে হেল কে যেন তাকে বলে দিল, ছোট্ট পলা। লিখে ফেল পাঁচ মিনিট। পলার ভয় পাওয়ার কথা কিন্তু পলার কেন জানি মনে হল যে বলল ঠিকি বলল। পলা লিখল পাঁচ মিনিট।
পলার এ গ্রেড স্কুলে হওয়ে গেল। আবার প্রথম শ্রেনী। প্রথম শ্রেনীর বার্ষিক পরীক্ষায় পলা ফার্স্ট হল। রিমঝিম ক্লাস টু থেকে থ্রি তে উঠার সময় ফেল করল। তারা দুইজনেই এখন ক্লাস টু তে পড়ে।
এর অনেক বছর পরের কথা। পলা কোন একটা বইয়ে পড়ল কেউ যদি খুব চেস্টা করে আল্লাহ সব সময় তার সাথে থাকে। পলার থেকে ভাল এটা আর কেউ জানেনা। পলার ধারনা আল্লাহ কাউকে বলে দিয়েছিল যে পলাকে এসে বলে যায় পাঁচজন ব্যাক্তি পাঁচটা তরমুজ খায় পাঁচ মিনিটে।