কাশেম স্যারের কাছে মডেল টেস্ট দিতে গিয়ে সমস্যা হত। বাংলা বানানে ভুল করে দিয়ে আসতাম। মুমূর্ষু হবে নাকি মূমুর্ষূ হবে সেটা নিয়ে ঝামেলা হত। কুৎঝটিকা মানে কি জানিনা কিন্তু সেটার বানান ঠিক হওয়াই চাই। নামতা মুখস্থ রাখতে হবে। এ ছাড়া গতি নাই। আমার আম্মার ভাষ্য অনুযায়ী শ্বাসটাও ঠিক মত নেওয়া যাবেনা। সেটাও তারা যখন বলবে তখন। পরিবারের কাজিন গোষ্ঠীর মধ্যে প্রতিযোগিতা না থাকলেও তাদের বাবা মাদের মধ্যে থাকে। অমুকের ছেলের ঐখানে হইসে তমুকের সেখানে হওয়াই চাই। এর মধ্যে পিষ্ট আমার কচি মনের বিশাল দেহ। ৬ বছর বয়সে নিজেকে কল্পনা করতে পারছিনা আসলে আর পারলেও দেহ ছোট ছিল ভাবতে পারছিনা। দিনরাত খালি পড়া পড়া আর পড়া। যতদূর মনে পড়ে পরীক্ষা দেওয়ার আগে পানি পড়াও খাওয়ানো হয়েছিল। ছেলে জানি সুস্থমত পরীক্ষা দিতে পারে।
অঙ্কে যোগ-বিয়োগ গুন ভাগ কি করতাম মনে নাই। তবে একটা খুব কনফিউশন জিনিশ ছিল। ১ টা ডিম সিদ্ধ করতে ১০ মিনিট লাগলে ৫ টা ডিম সিদ্ধ করতে কতক্ষন লাগে? গুনের অঙ্ক হওয়া উচিত। নামতা ঠা ঠা মুখস্থ। পাঁচ দশকে পঞ্চাশ। পাঁচ আর দশ ঘরের নামতা আমার খুবই প্রিয়। এই ঘরগুলার নামতাগুলি কবিতার মত হয় তাই। সাত ঘরের নামতার মত না। অবাক করা ব্যাপার হল অঙ্কের উত্তর নাকি দশ। ডিম গুলা নাকি একই সাথে সিদ্ধ করা হইতেসে। ব্যাপারটা কচি মন মানল না। ঘোরতর আপত্তি। অতঃপর চপেটাঘাত। ডিম গুলা এক সাথে সিদ্ধ হবে। সিদ্ধ ডিম তখন আর গলা দিয়ে নামেনা। পরীক্ষার জন্য আম্মা মানত করেছে। মায়েরা সিনেমার মতই ইমোশনাল। পরীক্ষার দিন রোজা রাখা হবে। গেলাম পরীক্ষা দিতে। ১৯৯০ সালের ডিসেম্বর মাস। গভঃ ল্যাব ভর্তি পরীক্ষা। পরীক্ষা দিয়ে বের হলাম। অঙ্ক একটা ছিল একজন একটা তরমুজ খায় ৫ মিনিটে পাঁচজন পাঁচটা তরমুজ খায় কয় মিনিটে। বিরাট ঝামেলা। “২৫ মিনিট” লিখতে যাব মনে পড়ল চপেটাঘাত। অতঃপর পাঁচ মিনিট। এলোমেলো শব্দ সাজিয়ে লিখতে সব পারা গেল। একটাতে বিরাট সমস্যা। আমার আগের একট পোস্টে বিষয়টা উল্লেখ আছে। সেখান থেকেই তুলে দেই।
না, স, হা, না, হে এইটা যে কি জিনিস বুঝিয়া উঠতে বড়ই বেগ পাহিতে হল। অনেক চিন্তা করিয়া নিজের সব উদ্ভাবনী শক্তি কাজে লাগাইয়া লিখিলাম নানাহাসেনা। পরীক্ষা হল থেকে বের হয়ে আম্মাকে বললাম যে আম্মা একটা প্রশ্ন যে একটু অন্যরকম। তা আম্মার আব্বা মানে আমার নানা যে হাসেন না সেটা আর আম্মা ভাল ভাবে নিবে কিভাবে!! গাধা কোথাকার ঐটা কি লিখসিস? ঐটা তো হাসনাহেনা।
আম্মার কান্না কান্না অবস্থা। তার ছেলে শেষ। তার ছেলের কোন গতি নাই।
এবার একটু অন্য প্রসঙ্গে যাই। যেটার সাথে এখনকার এই পোস্টের সামান্য সম্পর্ক আছে।
ইস্কাটন গার্ডেন অফিসার্স কোয়ার্টারে থাকতাম। একদিন বেশ অবাক করা কাহিনী শুনলাম। মুরাদ ভাইয়ের আব্বাকে নাকি জ্বীন এ ধরেছে। ব্যাপারটা কেমন? আঙ্কেল নাকি ফজরের নামাজ পড়তে মসজিদ যাচ্ছিলেন। গিয়ে দেখেন সেখানে জুম্মার নামাজের মত ভীড়। আঙ্কেল খুবই অবাক। নামাজে দাড়াবেন পিছ থেকে কে জানি ধাক্কা দিল। ঘুরে দেখেন ১০ ফিট লম্বা একজন লোক সাদা পোষাক পড়া। আঙ্কেল অজ্ঞান হয়ে যান। যেটা অনুমান করা হয় আঙ্কেল ভুল রাত ২টা কি ৩ টার দিকে মসজিদে জান। ফজরের নামাজের আযান দিতে মুয়াজ্জিন ঘুম থেকে উঠলে আঙ্কেলকে অজ্ঞান অবস্থায় মসজিদে পান। ব্যাপারটার লৌকিক অলৌকিক ব্যাখ্যায় না যাই। পুরান প্রসঙ্গে আসি।
৩ দিন হল ৯১ কেজি ওজনের দেহটাকে ঠিক করতে চাচ্ছি। আমি খেলা পাগল ছেলে। কলনীতে থাকার সময় ফুটবল ক্রিকেট খেলতাম। ফ্লাট বাড়িতে উঠে সেই জিনিস কম্পিউটার ছাড়া খেলার উপায় নাই। ভার্সিটি লাইফ প্রায় শেষ। নিজেদেরকে আকর্ষনীয় করে তোলার সুপ্ত বাসনা খালি মেয়েদের থাকবে ছেলেদের থাকবেনা কথাটা ভুল। সকালে রমনাতে দৌড়াতে যাই। আজকে ভোর ৫ টা বেজে ৫০ মিনিটে বাসা থেকে বের হলাম। ভিকারুন্নেসার সামনে গিয়ে আমার চক্ষু চড়ক-বট-গাছ। আলো ভাল মত ফুটেনায়। কিন্তু বিশাল সাড়ির মানুষ। কম করে হলেও ২০০-৩০০ মানুষ। ক্রিকেট খেলার টিকেট কাটার জন্য ছয়টার সময় স্টেডিয়াম কাউন্টারে গিয়েও এত ভীড় পাইনাই। আমার তখন ইস্কাটনের আঙ্কেল এর কথা মনে পড়ল। মুরাদ ভাইয়ের আব্বা। আমি ঘড়ির দিকে তাকালাম। নাহ ছয়টাই তো বাজে। আশে আশেপাশে ১০ ফিট উচ্চতার জ্বীন খোঁজার চেস্টা করলাম। তেমন কাউকে পেলাম না। পাঁচ ফুট ছয় ইঞ্চি উচ্চতার একজন মানুষ সামনে পেলাম তাও সন্দেহ হল জ্বীন না তো!! ইয়ে, এখানে কি হছে?? এত মানুষ কেন? ভিকারুন্নেসার প্রথম শ্রেনীর ভর্তি পরীক্ষার ফর্ম ছাড়া হচ্ছে। অনুমান করার চেস্টা করলাম প্রথম যে ব্যাক্তি সে কখন আসছে? জানলাম উনি ফজরের নামাজ এখানে এসে পড়েছেন। হাতে জায়নামাজ নিয়ে লাইনে দাড়িয়েছেন। ব্যাপারটা বিশ্বাস হলনা কিন্তু তার হাতে জায়নামাজ। দৌড়ে রমনা পার্ক গেলাম। পুরাটা চক্কর দিলাম। আশার সময় দেখলাম লাইন ডাবিল। ফখরুদ্দিনের ঐখান থেকে শুরু করে ঘুরে একেবারে ১ নম্বর গেটে চলে আসছে।
(ছবিটা আজকে ভোর ৬ টায় ভিকারুন্নেসার সামনে থেকে আমার মোবাইলে তোলা। লাইনটা শেষ মনে হলেও আসলে শেষ না। ওইখানে গ্যাপ হয়ে গেছে কিন্তু আরও অনেক মানুষ ছিল। ভোর ৬ টা নাহলে অবশ্য ছবি তোলা যেতনা। মেয়েদের এত ভীড় থাকত যে ছবি তুললে সবাই আবার ইভ-টিজার না মনে করে বসত)
বাচ্চাগুলার বাবাদের কষ্ট দেখে মনে কষ্ট পেলাম। অনেককেই নিরাশ হতে হবে। বাচ্চাগুলার কথা ভেবে আরও মনে কষ্ট পেলাম। সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রতিটি বাচ্চা সুস্থ স্বাভাবিক শিক্ষার দাবী রাখে। অসুস্থ প্রতিযোগিতা না। ছয় বছর বয়সেই তাকে জানিয়ে দেওয়া হবে ওই যে দেখ ওই মেয়েটা তোমার থেকে অনেক ভাল। ভালোর কোন শেষ নাই কিন্তু সবসময় তার থেকে ভাল কাউকে এনে দেখানো হবে এই যে দেখে রাখ এ তোমার থেকে ভাল। কেউ যদি ভাল ছবি আঁকা পারে তাকে সেটার প্রশংসা করা হবেনা কারন তুমিতো টিকতেই পারনাই। আগ্রহ গুলাকে দুমড়ে মুচরে ফেলা হবে। ছোটবেলায় এক কবিতা লিখে বাসায় দেখিয়েছিলাম। খুব উচ্চমার্গীয় কবিতা না। মিথ্যা বলা মহাপাপ, এটা বলে আমার বাপ……. এই জাতীয়। পড়ালেখা ছেড়ে এইসব হাবিজাবি কি?! গল্পের বই কেন! টেক্সট বই পড়। যাই হোক চুরি চামারি করে গল্পের বই পড়েছি। ১৯৯৫ সালে যখন ক্লাস ফাইভে পড়ি তখন সাহস করে আমার উপর তলার অনু ভাইকে দিয়ে উম্মাদে লেখা পাঠালাম। কারন কিভাবে পাঠাতে হয় জানিনা। বয়স তখন ১১। উম্মাদ এখন কেউ পড়ে কিনা জানিনা তখন বেশ চলত। একদিন অনু ভাই আসল। তার হাতে উম্মাদ ৯০। আমার লেখা ছাপানো হয়েছে। রাসয়াত রহমান জিকোর লিখা। বাসায় বললাম উম্মাদের কথা। এটা আবার কি?? যাই হোক আমার আনন্দ আর ধরেনা। টুকটাক যখন সময় পাইতাম লিখতাম আর যাকে পাইতাম তাকেই দেখাতাম। সবাই মিচকি মিচকি হাসত। কি সব আবোল তাবোল লিখা। কিছুদিন আগে কানাডা থকে কে বন্ধুর মেসেজ। দোস্ত তোর খলিল সিরিজ পইড়া হাসতে হাসতে পইড়া গেসি। এইভাবে কিভাবে লিখিস? আমার তো এক লাইনও বের হয়না। মনে পড়ল এই বন্ধু বাংলায় সর্বোচ্চ নম্বর পেত। কিন্তু সেটা নম্বর পাওয়ার জন্যই। পিয়ার (peer) প্রেসারে পড়ে ভাল নম্বর পাওয়া যেতে পারে কিন্তু ব্যাপারটা তার কাছে উপভোগ্য ছিলনা। আমির খানের তারে জামিন পাড় এর কথা অনুযায়ী প্রত্যেকটা বাচ্চাই স্পেশাল। যার যার উপভোগ্য ব্যাপারটা করতে দিলেই হয়। কে কি মনে করে না করে জানিনা আমার ভাল লাগত লিখতে। কাউকে কিছু দেখতাম না কারন মানুষ হাসত কিন্তু আমি লিখতাম। সেই লেখাগুলা নাই। আমার ক্লাস নাইনে লিখা সাইন্স ফিকশান হারিয়ে গেছে। কিন্তু উপভোগ করাটা কমে নায়। লিখতে ভাল লাগে তাই লিখি। লিখেই যাই। ব্লগে আমার হিট কত কয়টা প্লাস কয়টা মাইনাস এগুলো নিয়েও ভাবার সময় নাই। এগুলো চিন্তা করলে আর লিখা আসবেনা। তাই খালি লিখা আর লিখা।
জাফর ইকবালের স্যারের প্রথম আলোর শেষ কলামে তিনি বলেছিলেন এখন আর কেউ গবেষক হতে চায় না। সবাই খালি চাকরির জন্য পড়ালেখা করে। আমার কথা হল সেরকম সুযোগটাই কই যে মানুষকে তার পছন্দের কাজটাকে উপভোগ করতে দেওয়া হবে। ছয় বছর বয়স থেকেই যে দাসত্বের কাজ করতে হয়। অঙ্ক করা কারো কাছে উপভোগ্য হলেও সেটা সে কখন করবে তা বাবা মা ঠিক করে দিবে। কারন আরবিতে কম পাওয়ার কারনে তার রোল ১০ থেকে ১৫ হয়ে যেতে পারে। (আরবিকে খাট করছিনা। এত ধৃষ্টতা নেই)
যেসব ব্লগার ভাই-বোনদের ছেলে মেয়েরা এবার ভর্তি পরীক্ষা দিবে সবাইকে শুভ কামনা। তবে সৎ চেস্টাটাই আসল। সেটা থাকলে এখন ব্যর্থ হলেও একদিন ঠিকি সফল হবে।
পুনশ্চঃ নানাহাসেনা লেখার পড়েও গভঃ ল্যাবে টিকেছিলাম। আমি ভাগ্যবান। আমার স্কুল লাইফটা দারুন ছিল।