বাংলাদেশ এর হয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রথম হাফ সেঞ্চুরি কে করে জানেন? আজহার হোসেন শান্টু। যিনি কিনা আবার বাংলাদেশ এর ওয়ানডে ইতিহাসের প্রথম সেঞ্চুরিয়ানের (মেহরাব হোসেন অপি) চাচা। শান্টু এর নাম নেওয়ার একটা কারন আছে। ১৯৯০ সালে আমাদের ক্রিকেট এর যে অবস্থা তাতে কেউ হাফ সেঞ্চুরি করবে তাও নিউজিল্যান্ড এর মত দলের বিরুদ্ধে ভাবাই কঠিন। তাও আবার মার্টিন ক্রো এর দল। সর্বকালের অন্যতম সেরা সৃজনশীল ক্যাপ্টেন। পিঞ্চহিটিং যার আবিষ্কার। ওয়ানডে ক্রিকেট এর ইতিহাসের প্রথম পিঞ্চহিটার ছিলেন বর্তমান নিউজিল্যান্ড দলের কোচ মার্ক গ্রেটব্যাচ। পরে জয়সুরিয়া আর কালুউথারানা যেটাকে পূর্নাঙ্গতা দেয়।
যাই হোক, আজহার হোসেন শান্টু নিউজিল্যান্ড এর সাথে ৫০ করার পর মার্টিন ক্রো আসলেন। তিনি নিপাট ভদ্রলোক। নিউজিল্যান্ড এর অন্যান্যদের মত না। ছোট দলের ছোট খেলোয়ারদের হাত না ধরলেও চলবে- এমন মনোভাব না।। মার্টিন ক্রো এসে বললেন, “ Well Done! That’s the way to play” (এই ঘটনাটা আজহার হোসেন শান্টুর একটা ইন্টার ভিউ থেকে পড়েছিলাম।)
যাই হোক আজকের বাংলাওয়াশ এর পর আরো অনেক কিছু মনে করার চেস্টা করছি। বাংলাদেশ এর প্রথম ওয়ানডে সিরিজ জয় জিম্বাবুয়ের সাথে। ২০০৫ সালের ৩১ শে জানুয়ারী। ৩০ শে জানুয়ারী আওয়ামী লীগ এর ডাকা হরতাল। তাও ওয়ান ব্যাঙ্ক ধানমন্ডি শাখায় লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। পশ্চিম গ্যালারীর টিকেট লাগবে। দূর থেকে দেখি রিকশায় করে ক্রিকেট এর সরঞ্জাম নিয়ে খালুদ মাসুদ পাইলট যাচ্ছেন। গলার সর্ব শক্তি দিয়ে চিৎকার দিলাম। পাইলট ভাই। পাইলট ভাই তাকালেন। হাত নাড়লেন। আমি বললাম, কালকে যাইতেসি স্টেডিয়ামে। পাইলট ভাই হাসিমুখে আবারও হাত নাড়লেন। বড় ভাল লাগল। আপন লোক তো আপন লোক। অন্যদেশের জয় অনেক দেখসি। আর না। এবার আমাদের সময়। টিকিট পাইনাই। পরের দিন ভোড় ৫ টা বেজে ৩০ মিনিট স্টেডিয়াম কাউন্টার এ গিয়ে দেখি আমার আগেও ২০ জন এসে বসে আসে। সবার আগে যিনি, তিনি রাত ২ টা থেকে সেখানে। টিকিট কাটলাম। বন্ধুরা মিলে খেলা দেখলাম। আফতাব আহমেদ এর ৮৪ এর মধ্যে চিগুম্বারার এক ওভারে ২৪ নেওয়া দেখলাম। স্টেডিয়ামে অশ্লীল শ্লোগান। বীর বাঙ্গালী প্যান্ট খুলো, জিম্বাবুয়ের (বীপ) ভরো। তাও বড় ভাল লাগল। আপন আপন লাগল। কে জানি চিগুম্বারাকে চিকন(বীপ) বলল। তাও ভাল লাগল। স্টেডিয়াম যায়গাটাই এমন। বাংলাদেশের জয় ব্যাপারটাই এমন।
( খুব ইচ্ছে করল আমার একখান ছবি দিতে। কেউ কিছু মনে কইরেননা বা হাসাহাসি কইরেননা। তখন আবার একটু নাদুস নুদুস ছিলাম)
আমি ঢাবি পদার্থবিজ্ঞান ক্রিকেট টিমের ক্যাপ্টেন ছিলাম এক বছর। তবে তার আগের বছরটা আমার জন্য বেশ কষ্টের ছিল। ভাল ফর্মে ছিলাম। কিন্তু কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা হয়নি আমার। আব্বা জোর করে দেশের বাড়ি নিয়ে গেল। ফিজিক্স এপ্লাইড ফিজিক্স এর কাছে হেরে গেল। আর্টস/কমার্স গ্রুপ ফাইনাল দেখতে গেলাম। মার্কেটিং আর পাবলিক এ্যড এর খেলা। বাথরুমে যাব দেখি শাহরিয়ার নাফিস শুধু আন্ডার ওয়ার পরে দাঁড়িয়ে আছে। মানে প্যান্ট পড়ছিল আর কি। আমি বিব্রত বোধ করলাম স্যরি বললাম নক না করে ঢোকার জন্য। আবীর (শাহরিয়ার নাফিসের ডাক নাম) বলল, না না ইটস ওকে। আহা নিজেদের লোক কত ভাল লাগল। পাবলিক এ্যড ডিপার্টমেন্ট এ খেলে তারিক আজিজ। ফাইনালটা ভালই হল। মার্কেটিং জিতল।
ফেসবুকের আগের একাউন্টে আমার সব খেলোয়ারদের এ্যড করা ছিল। তবে কথা হত দু’জনের আস্থে। জুনায়েদ সিদ্দিকী আর পাইলট ভাই। পাইলট ভাই আপনা আদমী। সব থেকে গর্বের ব্যাপার একদিন তিনি নিজ থেকে এসে জিজ্ঞেস করলেন ভাই এ্যসেজ এর লেটেস্ট স্কোর কত। খুব ভাল লাগল। মালিঙ্গা, সাঙ্গাকারা, শোয়েব মালিক সহ আরও অনেকে ফেসবুক ফ্রেন্ড থাকলেও কখনও কথা হয়নি। এগুলা ফেক একাউন্ট না। ফেক একাউন্ট আমি খুব ভাল মত চিনি। সোহেল তানভীর রেগুলার ছবি আপলোড করতেন। আমার দেখা সব থেকে ভদ্র পাকিস্তানি খেলোয়ারদের মধ্যে একজন।
যাই হোক, আমার ভাল লাগার ব্যাপার হচ্ছে আমাদের খেলোয়ার, আমাদের বুকের ধন। ১৯৯৮ সালে সোনারগা হোটেলে গেলাম পাকিস্তানী আর ইন্ডিয়ান প্লেয়ারদের অটোগ্রাফ নিতে। আকিভ জাভেদ এর ভাব অসহ্য। আফ্রিদী আমার সুন্দর মেয়ে কাজিনদের দেখে আমাদের মাইক্রোওবাসে একখান পা রেখে মজা করতে চাইল। মুস্তাক আহমেদ এর অটোগ্রাফ নিলাম। সাইদ আনোয়ার তার বউয়ের সাথে ডিনার করার সময় চুপ চাপ গেলাম। রেস্ট্রিকটেড এরিয়া। অনেক সাহস করে বললাম আমার নাম কি। আমার নাম সে লিখলই না। আমার মামাতো বোনকে ঠিকি অটোগ্রাফ দিল টু সিফতে উইথ লাভ – সাঈদ আনোয়ার। বহুত কষ্ট পাইলাম মনে। শচীন টেন্ডুলকার মনে হয় অঞ্জু ভাবীর সাথে ফোনে কতাহ বলছিল তখন গেলাম। দিলেন অটোগ্রাফ। সোনারগা থেকে কাজিনরা ডলসোভিটায় গেলাম আইস্ক্রিম খাইতে। খুব অবাক করা ব্যাপার। সেখানে দাদা হাজির। সৌরভদা। খুব সাহস করে গিয়ে হিন্দিতে বললাম দাদা অটোগ্রাফ দেন। ওমা! বাংলায় কথা বলে। খেয়ালই নাই সে বাঙ্গালী। তারপরেও ভাব ভঙ্গি ভাল লাগল না। তবে আমার এক কাজিন অবশ্য বলেছিলেন শ্রীনাথ নাকি খুব ভাল মানুষ। খাইয়েছে।
তবে এগুলারে দিয়া আমি কি করমু! আমার এখন এদের থেকে বড় স্টার আছে। আহা সাকিব আল হাসান। জেমি সিডন্স তো বলেছেই পৃথিবীর কোন দেশেই এরকম প্লেয়ার নেই। কিরকম? শচীন কোন একটা খেলায় ২ রানে আউট হয়ে গেলেই তো ঐদিন তার ফাংশন শেষ। কিন্তু শাকিব হয় ব্যাটিং করে জিতাবে। নাহলে বোলিং করে। আহা তামিম ইকবাল। আহা মুশফিক। এরা হইল আপনা আদমী। ২০০২ সালের পাকিস্তান এর সাথে ওয়ানডে সিরিজে হাবা সুমন ভাই খেলতে পারেননাই। ক্লাব হাউজে বসে খেলা দেখছিলাম পাশেই ড্রেসিং রুম। সুমন ভাইরে দেইখাই চিতকুর দিলাম , সুমন ভাই, আঙ্গুলের অবস্থা কি? সুমন ভাই মধ্য আঙ্গুলী প্রদর্শন করে বলল এক সপ্তাহ লাগবে। না না, সে মোটেও ফাক ইউ বলে নায়। ঐ আঙ্গুলেই তার ফ্র্যাকচার ছিল।
১৯৯৮ সালেই কোন মেয়ে জানি “আফ্রিদি প্লিজ ম্যারি মি” লিখে নিয়ে গিয়েছিল স্টেডিয়ামে? আফ্রিদির থেকে বড় স্টার তো এখন আমাদেরই আছে। “সাকিব আল হাসান ম্যারি মি”, “তামিম ইকবাল ম্যারি মি” দেখিনা ক্যান। যাক না দেখলেও চলবে। টাইগাররা তাতে থেমে থাকবেনা, ইনশাল্লাহ। নারী আর জুয়ারী এমন কিছু তাদের বিরক্ত না করলেই আমরা খুশি।
স্টিফেন ফ্লেমিং একটা কথা খুব বলত, “ বাংলাদেশ যদি তাদের ভুল থেকে শিক্ষা না নেয় তাহলে পরের সিরিজ তাদের জন্য খুব ভাল হবেনা”। ভেটরীকে দেখলে মায়াই লাগে। এইসব তো আর সে এখন বলতে পারছেনা। ২ থেকে নেমে একেবারে ৭ এ চলে গেসে তার দল আইসিসি রাঙ্কিং এ।
ছোটবেলায় আমি সব সময় স্বপ্ন দেখতাম ক্রিকেটার হওয়ার। কিন্তু বাংলদেশে লেখাপড়া ছাড়া আর কোন কিছুরই ভবিষ্যত নাই – এরকম মনে করার কারনেই বাপ মা সরাসরি ঠ্যাং ভেঙ্গে ফেলার হুমকি দিত। যাক ব্যাপার না। ঐ স্বপ্ন না হোক। বাংলাদেশ একদিন বিশ্বকাপ জিতবে এই স্বপ্ন অবশ্যই পূরন হবে। কারন টাইগাররা যে টাইগারদের মত আচরন শুরু করে দিয়েছে।
আহা কাইল মিলসের লেগ স্ট্যাম্প উড়ে যাওয়ার দৃশ্যটা বারবার দেখছি। কি যে ভাল লাগছে। পৃথিবীতে এরকম সুন্দর দৃশ্য কমই আছে। উইকেট উড়ে গেল রুবেল হোসেন দৌড়াচ্ছে। সব খেলোয়ার তার পেছনে। সাকিবের দু হাত প্রসারিত। রুবেল হোসেন সাকিব কে প্রায় জড়িয়ে ধরল বলে। বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডারকে আলিঙ্গন করার কাজটা যে একটু আগেই রুবেল সেরে এসেছে।
গো টাইগারস।
ফুটনোটঃ এক পাকিস্তানি মেয়ে ফেসবুকের জনপ্রিয় ক্রিকেটের এই পেজ-এ Cricketainment এই কমেন্ট দিয়ে গেল। " Congrats Bangladesh!!!! U guys are awesomeness now!! ;D"। আহা কি যে ভাল লাগল।