somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাকতাল। (হালকা লেখা)

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১০ রাত ৯:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ঢাবি পদার্থবিজ্ঞান জীবনের প্রথমদিকের কথা। গল্পটার সাথে আমি জড়িত না আসলে। ভার্সিটিতে সবসময় বন্ধুদের সার্কেল থাকে। আমার কথা আলাদা। আমি অনেকটা যে কোন নিউক্লিয়ার মডেল এর শেষ কক্ষপথের ইলেক্ট্রনের মত। এদের সুবিধা, এরা সমযোজী বন্ধনের সময় সব সার্কেলেই থাকে। এদের অসুবিধা, আয়নিক বন্ধনের সময় এদের একা থাকতে হয়। তাতে অবশ্য খুব সমস্যা নাই।কারন সবসময় আমার মত ভ্যালেন্স বন্ডে থাকা লোনলি ইলেক্ট্রন কেউ না কেউ হয়।



( ইমোশোনাল হিরোজদের এই ছবি ২০০৬ সালে কক্সবাজারে তোলা। ইমোশনাল সুপারহিরো আসলে একটা ক্রিকেট টিম এর নাম। আইপিএল এর মত আমাদের ফিজিক্স এ পিসিএল হইতো। ১৪ টা দলের মধ্যে একটা দল ছিল এটা। আমি অবশ্য এই দলে খেলিনাই)


যাই হোক গল্পে ফিরে আসি। ফিরোজ, নিঝু, তমাল, মিথুন, গালিব আর মেহেদি মিলে এরকম একটা সার্কেল। তাদের সার্কেলের নাম ইমোশনাল সুপার হিরোজ। তারা সবাই ইমোশনাল। ফার্স্ট ইয়ার এ তখনো মেহেদির আবির্ভাব ঘটেনায়। বলা বাহুল্য আমি আর অংশুমানও এই সার্কেলের অংশ। তবে সেটা অনেকটা আইসিসিতে জিম্বাবুয়ে আর বাংলাদেশ এর যে অবস্থা সেরকম। প্র্যাক্টিকাল গ্রুপ “এ” দেখা গেল “এ” গ্রুপে পরেছে নিঝু, গালিব আর তমাল আর সি গ্রুপে মিথুন এবং ফিরোজ। মিথুন। ফিরোজ বন্ধু বিরহে কাতর। তাদের এ গ্রুপে যেতে হবে। নিঝু তমাল আর গালিব এর সাথে। নওরীন ম্যাডাম তখন সি গ্রুপ এর ল্যাব টিচার। তারা গিয়ে নওরীন ম্যাডাম কে গিয়ে বলল, ম্যাডাম আমরা ৫ জন একসাথে মেস এ থাকি। মালিবাগ মেস। আমাদের একসাথে থাকাটা খুবই জরুরি। আসা যাওয়ার সুবিধার্তে। বলা বাহুল্য তারা ৫ জন কোন ভাবেই মেস এ থাকেনা। তমাল থাকে রামপুরা, নিঝু রাজারবাগ, ফিরোজ বনশ্রী, গালিব উত্তরা খিলখেত, মিথুন মিরপুর। ৫ জন ঢাকা শহরের পাঁচ প্রান্তে। কিন্তু ইয়ে দোস্তি হাম নেহি ছোরেঙ্গে - কাজেই তাদের একসাথে থাকতে হবে। ম্যাডামও তাদের বেশ সহযোগিতা করলেন নাহ নাহ একসাথে অবশ্যই থাকা উচিত। ফিরোজ আর মিথুনকে “এ” গ্রুপ এ দেওয়া হল। সমস্যা শুরু হল পরে। নওরীন ম্যাডামের সাথে যখনি দেখা হয় তখনি ম্যাডাম জিজ্ঞেস করেন মেস লাইফ কেমন যাচ্ছে? রান্না বান্নায় কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা। এর মধ্যে একদিন প্যাচ লাইগা গেল। সবকিছু মনে নাই কিন্তু মিথুন কিছু একটাতে দেরী করায় সঅম্ভবত তাকে জিজ্ঞেস করা হল এত দেরী ক্যান। মিথুন বলে ফেলল মিরপুর এ যেই জ্যাম। নওরীন ম্যাডাম ছিলেন। তিনি বললেন, তোমরা না মালিবাগ এ থাক??!! মিথুন জিব্বায় কামড় দিয়ে বলল, ইয়ে ম্যাডাম আমার ছোট চাচা অসুস্থ তাই একটু মিরপুর গিয়েছিলাম। মিথ্যা কথা বলার সমস্যা হল আরো কিছু মিথ্যা কথা বলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়। কয়েকদিন পর ফিরোজের সাথে ম্যাডামের দেখা। ম্যাডাম ফিরোজকে দেখেই বললেন, আই শোন তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে। ফিরজ় অত্যন্ত বিনয়ী। গলায় মধু না ধেলে কথাই বলেনা। উচ্চাঙ্গ সংগীত গাওয়ার মত করে বলল, ম্যাডাম কিছু বলবেন? হা শুন তোমরা যে ৫ জন একসাথে থাক? কেমন লাগছে থাকতে। জ্বি ম্যাডাম খুবই ভাল ঢাকা শহরে এরকম মেস আর হয়না। এত ভাল পরিবেশ এত ভাল ব্যবস্থা। ম্যাডাম বললেন, রান্না করে কে? জ্বি ম্যাডাম একজন বুয়া থাকেন তার রান্না মানে মায়ের রান্না। এরপর ম্যাডাম দিলেন প্যাচ লাগায়, শুন আমার এক ভাইগ্না আছে ঢাকা শহরে নতুন, থাকার জায়গা পাচ্ছেনা, তাকে কি তোমাদের সাথে রাখা যায়? বজ্রপাত আঘাতের অনুভুতি বুঝতে পারল ফিরোজ। জ্বি ম্যাডাম আসলে ব্যাপারটা কি। ঐ মেসে ৫ জনের বেশি কোনভাবেই থাকা যায় না। ম্যাডাম বললেন, এটা আবার কেমন কথা ৪ জনের সেট হয়, ২ জনের হয়, ৫ জন থাকা গেলে ৬ জন যাবেনা কেন? ফিরোজ বলল, জ্বি ম্যাডাম ঠিক বলেছেন। ব্যাপারটা ঐতাই। মেস মালিক বলেছিল কোনভাবেই ৪ জনের বেশি না। আমরা অনেক হাতে পায়ে ধরে ৫ জন থাকি। আরেকজন নেওয়াই যাবেনা। ইমোশনাল সুপার হিরোজরা কোনভাবে এ যাত্রায় বেঁচে গেল।



২০০৫ সালের ডিজুস দুনিয়ার কথা মনে আছে? একটা কলেই যেখানে সব কাজ হয়ে যায়। মানে একটা কলের সমপরিমান টাকায় যতখুশি কথা বলা যায়। তখন বাংলাদেশ এর আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা মানে দীঘি-আবুল হায়াত-ঈশিতা সবার কাছেই ডিজুস থাকত। এমনকি তখন ডিজুস ভাড়াও পাওয়া যেত। পোলাপাইনের পড়ালেখা সব মাথায়। কেউ কাউকে লাইনে পাইলে আর কল ছাড়েনা। রোজার সময়। সবাই সারারাত কথা বলে সেহরী খেয়ে ঘুমাতে যেত। সেই সময়কার কথা। আমার এক বন্ধুর নাম মাহফুজ। ছেলে ভাল কিন্তু ডিজুস সিম ব্যাথায় কাতর। সবাই ডিজুসে কথা বলে কিন্তু সে ডিজুস সিম পাচ্ছেনা। ঐটার চাহিদা এতই যে দোকানে আর পাওয়া যায় না। কেউ ছাড়েনা। ঢাবিতে আসার জন একদিন সকাল আটটার বাস ধরতে হবে। মোহাম্মদপুর এর বাস। সে নির্ধারিত জায়গায় দাঁড়িয়ে বাস এর জন্য অপেক্ষা করছে। হটাত সে দেখে পায়ের নিচে একটা সিম। কেমন কেমন জানি সন্দেহ হল।হা ডিজুস সিম। তখন ডিজুস সিম গুলাতে একরকম ডিজাইন থাকত তাই মোবাইলে না দিয়েও বোঝা যেত। সে তো মহাখুশি। বাসে উঠল। তখনো সিমটা ভরা হয়নি। ভার্সিটিতে আসল (এই মাহফুজ পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র না)। তার ডিপার্টমেন্টে গিয়ে সবাইকে বলল জানিস আমি ডিজুস সিম পাইসি। খুশি আর ধরেনা। ডিজুস সিমটা মোবাইলে ভরা হল। এরপর যা ঘটল আমি জানি সেটা কেউ বিশ্বাস করবেনা। আমি নিজে শুনলেও করতাম না কিন্তু ঘটনাটা আমি জানি। ঘটনাটা সত্যি। সিম ভরার সাথে সাথেই একটা ম্যাসেজ আসল। ম্যাসেজ এ লেখা, “মাহফুজ ভাই আই লাভ ইউ”। চরম কাকতালীয় ব্যাপার। ঘটনা আমরা চিন্তা করে যেটা বুঝলাম মানে অনুমান করলাম- ডিজুস মেয়ের সাথে মাহফুজ নামক কারো সখ্যতা ছিল। মাহফুজ ভাই মেয়েকে প্রপোজ করসে মেয়ে ডিসিশন জানাইতে টাইম নিসে তাই মাহফুজ ভাই রেগে মেগে সিমটা ফালায় দিয়ে চলে গেসে। সেই সিম কিনা আমাদের মাহফুজ কুড়ায় পাইসে। সিম ভরতেই মেসেজ। মেসেজ এ লিখা মাহফুজ ভাই আই লাভ ইউ। সিমটা অন্য কেউ পাইতে পারত। তা না সিমটা পাইসে আবার আরেক মাহফুজ ভাই।


এটা অবশ্য ব্যাপারনা। পৃথিবীতে ছোটখাট কাকতালীয় ব্যাপার ঘটেই।


২৬টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×