somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এইতো জীবন।

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শুনেন চাকরি তো আপনি করতে আসছেন। কিন্তু কথা হল আপনার মধ্যে স্পেশাল কি আছে বলুন?

স্যার আমি সিলেক্ট হওয়ার পর এইসব কথা বলা হচ্ছে কেন আমি ঠিক বুঝতে পারছিনা।

এইসব কথা বলার কারন আপনার না বোঝার কারন নাই। চাকরি তে প্রথম ২০ জনের ঢাকা পোস্টিং। আর আপনি ১০০ জনের মধ্যেও নাই। কিন্তু আপনাকে প্রথম ২০ জনের মধ্যে রাখার ব্যবস্থা করেছি। আর আপনি যদি ২০ মিনিট ও না দিতে পারেন।

মিঃ হাসান প্রাইভেট কোম্পানির বড় অফিসার। কর্পোরেট জগতের এই ধরনের অফিসারদের জাকজমক দেখা যায়। বউ আর একমাত্র বাচ্চা নিয়ে সুখি পরিবার। কর্পোরেট লাইনের অনেক কিছুর সম্পর্কেই তার অজানা ছিল এক সময়। তবে তিনি একটা জিনিষ খুব ভাল পারেন। যে কোন পরিস্থিতিতে খুব তাড়াতাড়ি সব কিছু শিখে ফেলতে। খুব ছোটবেলা থেকেই এ ব্যাপারে দক্ষ। কর্পোরেট জগতে একটা কথা খুব মানেন। এখানে পার্মানেন্ট বন্ধু বা শত্রু বলে কিছু নেই।

হাসান সাহেবের বউ মিসেস হাসান ও কর্পোরেট লাইনের। তিনি আরেক কম্পানিতে অবশ্য। হাসান সাহেবের বন্ধু বান্ধব বলতে তার আরেক কলিগ রশীদ সাহেব। রশীদ সাহেব হাশি খুশি মানুষ। হাসান সাহেবর রশীদ সাহেব বাদে তেমন বন্ধু বান্ধব নেই।

হাসান সাহেব অফিসে ঢুকে সবার আগে যে কাজটি করেন সেটা হল পিয়ন কে ডাকেন আর তার বাড়ির খবর নেন। জামাল কি খবর তোমার? তোমাকে না কয়েকদিন বললাম আমার বাসার কাজের লোক চলে গেছে একটা জোগাড় করে দাও। জামাল চুপ থাকে। এর আগে এক কাজের মেয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই কাজের মেয়ে পড়ে থাকেনি। সাধারনত কাজের লোকদের বেতন কম দিলে থাকেনা। এই কাজের মেয়ের না থাকার কারন ছিল বেতন অনেক বাড়িয়ে দেওয়া। এই অদ্ভুত ব্যাপারটা যে কি। জামাল, তোমাকে আরো একটা কাজের কথা বলেছিলাম, তোমার দেখি এখন কিছুই মনে থাকেনা যাই হোক পানি দাও। পানি খেয়ে নেই।
পানি খেয়ে হাসান সাহেব কাজ শুরু করলেন।

দুপুরে লাঞ্চ এর পর তিনি এইচ আর ডিপার্ট্মেন্ট এ খবর নিতে গেলেন। ঐখানেই রশীদ সাহেব বসেন। রশীদ সাহেব হাসান কে বললেন, আমি ঢাকার ২০ জনের মধ্যে ১৮ জন সিলেক্ট করে ফেলেছি। তোমার জন্য দুইজন কে নিতে পারলাম না। একজন ছেলে খুব ব্রাইট ছিল। আর হা এই মেয়েটার কাগজের রেকর্ড খুব ভাল। হাসান সাহেব বললেন, আমাদের লাইনে চেহারা অনেক বড় ব্যাপার। আর হা আমাদের সুবিধাও দেখতে হবে। তুমি কি আমার গাড়ীটা দেখেছ? হেড লাইট আর বাম্পার ছাড়া গাড়ী কোন কাজের গাড়ী না। গাড়ীর সৌন্দর্য হেডলাইট আর বাম্পার এ। এই জিনিস আমি ধোলাইখাল থেকে আনিনা। রশীদ সাহেব হেসে ফেললেন। হা হা হা, এইসব কথা তোমার থেকে ভাল আর কেউ বলতে পারেনা। যাই হোক আমি গেলাম। রাতে আমার কাজ আছে। তার আগে বাসা হয়ে যাব। আমার ছোটটার প্রতি মাসে একটা লেগো সেট না হলে হয় না। তাকে একটা লেগো সেট কিনে দিব।

হাসান সাহেব অফিস থেকে বের হলেন। গাড়িতে করে বাসায় আসার সময় ফোন বেজে উঠল। ড্রাইভার আড়ি পেতে শোনার চেস্টা করল। হাসান সাহেব নিচু স্বরে বলছেন, আরে কিযে বলেন আপনি। শুনেন আমাদের লাইন এ একটা বড় ব্যাপার কি জানেন? সোশাল ভ্যালু। এইটা ছাড়া টিকা বড় দ্বায়। আপনি আটটার মধ্যে আসার চেস্টা করবেন। আর কোন ভয় পাওয়ার কিছু নেই। দরকার হলে আমি নরমাল মোবাইল নিয়ে আসব যেটাতে ক্যামেরাই থাকবেনা। শুনুন মানুষের সব থেকে বড় ব্যাপার হল ট্রাস্ট। দুইজন মানষের মধ্যে এটা খুব জরুরী। …..

মিসেস হাসানকে বাসায় দেখে হাসান সাহেব বেশ অবাক হলেন। তাদের একমাত্র ছেলে শাহান অবশ্য বাবা-মা কে এই সময়ে একসাথে দেখে খুব খুশি হল। শাহান হাসান সাহেবে মোবাইল হাতে নিল। শাহানের এটা একটা স্বভাব। বাবার দামী মোবাইলটার উপর তার দারুন দূর্বলতা। মাঝে মাঝেই ওটা হাতে নিয়ে সে ছবি তোলার চেস্টা করে। মিসেস হাসান আর হাসান সাহেব চা খেতে খেতে গল্প করছে দেখে শাহানও তার বাবা মা এর ছবি তুলে ফেলল। বাহ ছবিটা তো দারুন আসছে। মিসেস হাসান আর হাসান সাহেব দুইজনই দেখলেন। শাহান কে আদর করলেন। মিসেস হাসান বললেন, আমি নীল গাড়িটা নিয়ে বের হচ্ছি। আমার মিটিং আছে। হারুন কে তোমার না লাগলে ছুটি দিয়ে দাও। আজ আমার ড্রাইভ করতে ইচ্ছে করছে। হাসান সাহেব বললেন ঠিক আছে।

রাতের বেলা হাসান সাহেব নিজেই গাড়ি নিয়ে বের হলেন। নামকরা হোটেল রুম নম্বর সেই আগেরটাই। রুম এ ঢুকে তিনি শাওয়ার করে নিলেন। যার আসার কথা তার আসতে একটু দেরি হল। ১ ঘন্টা পড়। তিনি বের হলেন। গাড়ি পার্কিং এ গিয়ে দূরে তাকিয়ে বেশ চমকালেন। নীল গাড়িটা তার নিজের হাতেই কেনা। মিসেস হাসান যে এটাই ব্যবহার করেন। হাসান সাহেব হোতেল এ গেলেন আবার। মিসেস হাসান এর কোম্পানী টাও বেশ বড়। মিটিং বা সেমিনার থাকলে সেটার লোগো থাকার কথা। রিসেপশন এ গেলেন। রিসেপশন এ কড়াকড়ি থাকলেও হাসান সাহেবের কথা আলাদা। তিনি স্পেশাল গেস্ট। ঠিক তখন হাসান সাহেবের মোবাইলটাও বেজে উঠল। ফোন করেছে রশীদ সাহেবের ছেলে। পাপা ফোন ধরছেনা দেখে আঙ্কেল কে ফোন দিয়েছে। আজ তার জন্মদিন। পাপার লেগো নিয়ে আসার কথা। মা আর তাকে নিয়ে বাইরে খেতে যাওয়ার কথা!! হাসান সাহেব হ্যাপী বার্থডে বললেন। হটাৎ কি জানি মনে হল হাসান সাহেবের। তিনি রিসিপশন এ জিজ্ঞেস করলেন রশীদ সাহেবের নাম একোন রুম বুকিং আছে কিনা। হা ৩৩১ নম্বর। মিঃ এন্ড মিসেস রশীদ। হাসান সাহেব পার্কিং লট এ গেলেন। খুঁজে খুঁজে বের করলেন। রশীদ সাহেবের গাড়ীটা। গাড়ির ভিতর লেগোর সেটটা প্যাক করা। রশীদ সাহেব মোবাইলটাও গাড়ীর ভেতরে ফেলে গেছেন। সেটা তখনও একবার বাজল।


১ বছর পরের কথা।

প্রথম কথোপকথনের মেয়েটার চাকরী হয়েছিল যার নাম এখানে কোথাও উল্লেখ করা হয়নি।

হাসান সাহেবের নতুন মোবাইলটাও শাহান এর খুব পছন্দ। মাঝে মাঝেই এটা নিয়ে সে পাপা মাম্মির চা খাওয়ার ছবি তুলে আর আনন্দে হেসে উঠে।

রশীদ সাহেব আর হাসান সাহেব একই কোম্পানিতে আর নেই। কর্পোরেট লাইনে একটা কথা হাসান সাহেব সব সময় সবাইকে বলেন। কোন পার্মানেন্ট শত্রুতা বা বন্ধুত্ব বলে এখানে কিছু নাই। সম্ভবত নিজের কথাটাই তিনি রাখলেন। তবে তিনি নাকি তার নিজের গাড়ির হেডলাইট আর বাম্পারের কিছু হলে এখন থেকে ধোলাইখাল থেকেই নিয়ে আসেন। ব্র্যান্ড মেইনটেইন করাটা কঠিন হচ্ছে।


(এটা কাল্পনিক গল্প।)
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০১১ বিকাল ৩:১৭
৪৭টি মন্তব্য ৪৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×