somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালোর সাথে যেন ভালোটাই হয়।

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ১২:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সেন্টমার্টিন এর কাহিনী। ২ বছর আগের কথা। স্টাডি ট্যুর এ আমরা ৩৬ জন ছেলে ১৮ জন মেয়ে তখন বান্দরবান কক্সবাজার হয়ে সেন্টমার্টিন এর ছেড়া দ্বীপ যাচ্ছি। ছেড়া দ্বীপ এর কাছাকাছি পৌছানোর পর নিয়ম হল নৌকা করে বাকিটা পথ যাওয়া হয়। কয়েকজন সাতারে পটু হওয়ায় আগেই লাফ দিল। তারা বাকিটা পথ সাতার কেটে যাবে। মাহবুব জাতীয় পর্যায়ের সুইমার। অন্য কয়েকজন জাতীয় পর্যায়ের না হইলে, যেহেতু সাতার জানে, তাই সুইমার। ফিরোজ এর বন্ধুবাৎসল্যতা খুব ভাল। বন্ধুদের জন্য সে প্রায়ই নিবেদিত প্রান। ট্রলার থেকে মেহেদি লাফ দিলো কারন সে সাতার কেটে যাবে। সেটা দেখে ফিরোজ ও "মেহেদি আমার বন্ধু, মেহেদি আমার বন্ধু" বলতে বলতে লাফ দিল। লাফ দেওয়ার সময় সম্ভবত তার মনে নাই যে সে সাতার পারেনা। ব্যাপারটা আমরাও তখনও বুঝিনাই। কে জানি হটাৎ মনে করায় দিল যে ফিরোজ সাতার জানেনা। ফিরোজ এরও তখন মনে পড়ল সে সাতার জানেনা। ব্যাস। তাড়াতাড়ি ট্রলার থেকে দড়ি ফিক্কা মারা হইল। অনেক কষ্টে সাতার না জেনেও পানিতে লাফ দেওয়া ফিরোজকে ট্রলার এ তোলা হল।

ট্রলার এ আসার সময় ট্রলারওয়ালা বলে দিয়েছিল ট্রলার এ একটা জায়গাতে হাত না দিতে। (ঐ জায়গাটা কি জন্য জানি গরম থাকে) তমাল এর সেই কথা খেয়াল নাই তাই হাতটা পুড়ে গেল। ভাল পোড়া পুরল। তমাল "মাগো বাবাগো" বলতে বলতে যখন ডাঙ্গায় নামল তখন আমাদের কোকিলকন্ঠী স্বল্পবুদ্ধি সুমনা তাকে জিজ্ঞেস করল, তমাল এইখানে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন মানি ত্রান্সফার আছে কিনা। সে হোটেল থেকে টাকা আনতে ভুলে গেহে তার কাছে ডাব খাওয়ার টাকা নাই। তমাল দাতে দাতে চেপে চিৎকার দিল, হা আমি একটা ফার্মেসি খুঁইজা পাইলাম না আর তুই ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন খুঁজস।

সেন্টমার্টিন আসার আগে অবশ্য আমরা বান্দরবানে বেশ মজা করলাম। পূর্নিমা রাতে ব্রীজ এর নিচে নৌকায় বসে গিটারে সুরের ছন্দ তোলার কোন তুলনা হয়না। বলা বাহুল্য ১৮ টা মেয়েকে এক নৌকা থেকে আরেক নৌকাতে যেতে সাহায্য করার ডিফিকাল্ট, রেস্পন্সেবল কাজটা আমি করলাম। খুবই সৎ ভাবে প্রতিটা মেয়ের হাত ধরে তাদেরকে নৌকায় তুলতে সাহায্য করলাম। বান্দরবানে কোথায় জানি যাওয়ার সময় চান্দের গাড়িতে (বান্দরবানের ওই বিশেষ গাড়িটাকে চান্দের গাড়ি বলে) রকেটের গতিতে যাচ্ছি ঠিক তখনই সুমনা বলে উঠল, জিকো এই যায়গার নাম ১ কিলোমিটার। মানে কি? মানে আবার কি একজায়গায় পরিস্কার লেখা আসে জায়গার নাম এক কিলোমিটার। ঐটা যে চিম্বুক পাহাড়ে যেতে এক কিলোমিটার বাকি আছে সেটা তাকে বলাটা খুব গুরুত্বপূর্ন কিছু মনে করলাম না। বান্দরবান এ শৈলকুপাতে গিয়ে সবার কি হল জানিনা একজনের উপর আরেকজন আছাড় খাওয়া শুরু করল। আছাড় খাওয়াতে সুমনা অভিজ্ঞতায় ভরপুর। তাই সে নিঝুকে বলল আমাকে একটু ধর তো আমি নিচে নামব। নিঝু সুমনাকে ধরবে যাতে সুমনা না পড়ে যায়। কিম আশ্চর্যম। কারন ধরনী দ্বিধা হল না, সুমনা আছাড় খেয়ে পরে গেল। সুবোধ বালক নিঝুর হাত তখনও ধরা। সুমনা চিৎকার দিল, "এখন আর ধরে কি হবে"!!

ফিরে আসি আবার সেন্টমার্টিন এ। স্টাডি ট্যুর এ আমাদের সাথে যাওয়া সাদাত স্যার কাকড়া দেখছিলেন একটা হোটেল এ বসে। দূর থেকে সুমনা বলল আই এগুলা কি ইলিশ মাছ না!! কই কাকড়া আর কই ইলিশ মাছ!!


আমাদের এই জটিল সমাজে সহজ সরল মানুষ খুব কম পাওয়া যায়। সুমনা হল আমার দেখা একজন অ্যাবসিলুট সরল একজন মানুষ। যার মধ্যে ১% প্যাচও নাই। দুনিয়ার মারপ্যাচ থেকে অনেক দূরেই তার বাস। পরশু দিন মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষায় পাশাপাশি সিট পড়েছিল পরীক্ষা হলের গম্ভীর পরিবেশ এ সুমনা হাই ডেসিবেল এ চিৎকার দিয়ে উঠল, জিকো আমি রাফনেস প্যারামিটার ভুলে গেসি ঐটা আমাকে দেখাও। যেইভাবে কথাটা বলল তাতে কার্জন হল না, কলাভবন এর লোকজনেরো জেনে যাওয়ার কথা যে সুমনা রাফনেস প্যারামিটার ভুলে গেসে। যাই হোক স্যার এসে সুমনাকে অন্য জায়গায় নিয়ে গেল।

আজকে উত্তরা থেকে বাসায় ফিরছি। কালকে রাতে একবন্ধুর বাসায় ছিলাম সেখান থেকে ফিরছিলাম। হটাৎ সুমনার ফোন। খাইসেরে আবার কি না কি বলে, আবার আকাশ থেকে পড়ে খেজুর গাছে আটকানো লাগে। সুমনা স্ট্যান্ডার্ড ব্যাঙ্ক এ চাকরী পাইসে। কিছু মানুষ থাকে যারা ভাব নিতে পারে না। দুঃখ কষ্ট আনন্দ কিছুই লুকায়তে পারেনা। সুমনা এই দলের। তার আনন্দ দেখে খুবই ভাল লাগল। বর্তমানকালে সত্যিকারের অনুভুতিটা বিরল।

খুব ভাল হইসে চাকরী পাইস এখনে এত লাফাইতে হবেনা। বেতন পাওয়ার পর ফুলগ্রীল চিকেন এর ব্যাবস্থা করবা। খেয়ে যাব।

তমালকে ফোন দিলাম। কিরে শুনসিস সুমনা চাকরী পাইসে। তমাল বলল, হা ওর আনন্দ দেখে খুবই ভাল লাগল।

সৎ মানুষের আনন্দ দেখেও খুব ভাল লাগে।

ভাল কথা, সুমনা এই বছর ডিপার্টমেন্ট এর পিকনিকেও আছাড়/ ডিগবাজী খেয়ে পড়ে গিয়েছিল।

সেটা অবশ্য এমন কোন ব্যাপার না। সৎ মানুষরা হোচট খাবে কিন্তু আবার সেখান থেকে ঘুরেও দাঁড়াবে। জগতে তারা সবসময়ই বিরল।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০১১ বিকাল ৪:৪২
৩৩টি মন্তব্য ৩৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×