ট্রলার এ আসার সময় ট্রলারওয়ালা বলে দিয়েছিল ট্রলার এ একটা জায়গাতে হাত না দিতে। (ঐ জায়গাটা কি জন্য জানি গরম থাকে) তমাল এর সেই কথা খেয়াল নাই তাই হাতটা পুড়ে গেল। ভাল পোড়া পুরল। তমাল "মাগো বাবাগো" বলতে বলতে যখন ডাঙ্গায় নামল তখন আমাদের কোকিলকন্ঠী স্বল্পবুদ্ধি সুমনা তাকে জিজ্ঞেস করল, তমাল এইখানে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন মানি ত্রান্সফার আছে কিনা। সে হোটেল থেকে টাকা আনতে ভুলে গেহে তার কাছে ডাব খাওয়ার টাকা নাই। তমাল দাতে দাতে চেপে চিৎকার দিল, হা আমি একটা ফার্মেসি খুঁইজা পাইলাম না আর তুই ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন খুঁজস।
সেন্টমার্টিন আসার আগে অবশ্য আমরা বান্দরবানে বেশ মজা করলাম। পূর্নিমা রাতে ব্রীজ এর নিচে নৌকায় বসে গিটারে সুরের ছন্দ তোলার কোন তুলনা হয়না। বলা বাহুল্য ১৮ টা মেয়েকে এক নৌকা থেকে আরেক নৌকাতে যেতে সাহায্য করার ডিফিকাল্ট, রেস্পন্সেবল কাজটা আমি করলাম। খুবই সৎ ভাবে প্রতিটা মেয়ের হাত ধরে তাদেরকে নৌকায় তুলতে সাহায্য করলাম। বান্দরবানে কোথায় জানি যাওয়ার সময় চান্দের গাড়িতে (বান্দরবানের ওই বিশেষ গাড়িটাকে চান্দের গাড়ি বলে) রকেটের গতিতে যাচ্ছি ঠিক তখনই সুমনা বলে উঠল, জিকো এই যায়গার নাম ১ কিলোমিটার। মানে কি? মানে আবার কি একজায়গায় পরিস্কার লেখা আসে জায়গার নাম এক কিলোমিটার। ঐটা যে চিম্বুক পাহাড়ে যেতে এক কিলোমিটার বাকি আছে সেটা তাকে বলাটা খুব গুরুত্বপূর্ন কিছু মনে করলাম না। বান্দরবান এ শৈলকুপাতে গিয়ে সবার কি হল জানিনা একজনের উপর আরেকজন আছাড় খাওয়া শুরু করল। আছাড় খাওয়াতে সুমনা অভিজ্ঞতায় ভরপুর। তাই সে নিঝুকে বলল আমাকে একটু ধর তো আমি নিচে নামব। নিঝু সুমনাকে ধরবে যাতে সুমনা না পড়ে যায়। কিম আশ্চর্যম। কারন ধরনী দ্বিধা হল না, সুমনা আছাড় খেয়ে পরে গেল। সুবোধ বালক নিঝুর হাত তখনও ধরা। সুমনা চিৎকার দিল, "এখন আর ধরে কি হবে"!!
ফিরে আসি আবার সেন্টমার্টিন এ। স্টাডি ট্যুর এ আমাদের সাথে যাওয়া সাদাত স্যার কাকড়া দেখছিলেন একটা হোটেল এ বসে। দূর থেকে সুমনা বলল আই এগুলা কি ইলিশ মাছ না!! কই কাকড়া আর কই ইলিশ মাছ!!
আমাদের এই জটিল সমাজে সহজ সরল মানুষ খুব কম পাওয়া যায়। সুমনা হল আমার দেখা একজন অ্যাবসিলুট সরল একজন মানুষ। যার মধ্যে ১% প্যাচও নাই। দুনিয়ার মারপ্যাচ থেকে অনেক দূরেই তার বাস। পরশু দিন মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষায় পাশাপাশি সিট পড়েছিল পরীক্ষা হলের গম্ভীর পরিবেশ এ সুমনা হাই ডেসিবেল এ চিৎকার দিয়ে উঠল, জিকো আমি রাফনেস প্যারামিটার ভুলে গেসি ঐটা আমাকে দেখাও। যেইভাবে কথাটা বলল তাতে কার্জন হল না, কলাভবন এর লোকজনেরো জেনে যাওয়ার কথা যে সুমনা রাফনেস প্যারামিটার ভুলে গেসে। যাই হোক স্যার এসে সুমনাকে অন্য জায়গায় নিয়ে গেল।
আজকে উত্তরা থেকে বাসায় ফিরছি। কালকে রাতে একবন্ধুর বাসায় ছিলাম সেখান থেকে ফিরছিলাম। হটাৎ সুমনার ফোন। খাইসেরে আবার কি না কি বলে, আবার আকাশ থেকে পড়ে খেজুর গাছে আটকানো লাগে। সুমনা স্ট্যান্ডার্ড ব্যাঙ্ক এ চাকরী পাইসে। কিছু মানুষ থাকে যারা ভাব নিতে পারে না। দুঃখ কষ্ট আনন্দ কিছুই লুকায়তে পারেনা। সুমনা এই দলের। তার আনন্দ দেখে খুবই ভাল লাগল। বর্তমানকালে সত্যিকারের অনুভুতিটা বিরল।
খুব ভাল হইসে চাকরী পাইস এখনে এত লাফাইতে হবেনা। বেতন পাওয়ার পর ফুলগ্রীল চিকেন এর ব্যাবস্থা করবা। খেয়ে যাব।
তমালকে ফোন দিলাম। কিরে শুনসিস সুমনা চাকরী পাইসে। তমাল বলল, হা ওর আনন্দ দেখে খুবই ভাল লাগল।
সৎ মানুষের আনন্দ দেখেও খুব ভাল লাগে।
ভাল কথা, সুমনা এই বছর ডিপার্টমেন্ট এর পিকনিকেও আছাড়/ ডিগবাজী খেয়ে পড়ে গিয়েছিল।
সেটা অবশ্য এমন কোন ব্যাপার না। সৎ মানুষরা হোচট খাবে কিন্তু আবার সেখান থেকে ঘুরেও দাঁড়াবে। জগতে তারা সবসময়ই বিরল।