১৯৭১ সম্পর্কে পাকিস্তানি বর্তমান প্রজন্ম মোটামুটি তিন রকমে। সব থেকে সাধাসিধা প্রজন্ম জানে ৭১ এ কিছু একটা গন্ডগোল হয়েছিল কিন্তু সে ব্যাপারে তাদের তেমন কোন আগ্রহ নাই। দ্বিতীয় কিন্তু খুব কম সংখ্যক অবশ্য আছে যারা এতটুকু জানে যে হা একটা অন্যায় বাংলাদেশিদের সাথে হয়েছিল।শেষ একটা প্রজন্ম খুবি চমতকার। তারা মনে করে আমরা গাদ্দার কাফির, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনি বাংলাদেশ এ এসে কোনো খুন হত্যা ধর্ষন কিছু করেনি তারা ঢাকা এর রাস্তায় রুচি চানাচুর খাইতেসিল আমরা বাঙ্গালিরা ইন্ডিয়ানদের সাথে নিয়ে তাদের তাড়াইসি।
ফেসবুকে আই জাস্ট হেট পাকিস্তান ফর দা জেনোসাইড অফ ১৯৭১ গ্রুপটাতে প্রায়ই মারামারি লাগে। সেই মারমারিতে অংশ নিতে গিয়ে আমি ইতিমধ্যে আমার জনপ্রিয় ফেসবুক একাউন্ট খুইয়েছি (আরো কারন ছিল)। বড়ই আফসুস এর ব্যাপার। পাকিস্তান বর্তমান প্রজন্মদের ব্যাপারে জানার অনেকগুলা কারনের একটা হচ্ছে এই মারমারি আমি খালি ফেসবুক এই করিনাই। যখন যেখানে পাইসি করসি। ইউটিউব এ রশীদ মিনহাস নামে সার্চ দিলে একটা ভিডিও আসবে। পাকিস্তানিদের আপলোড করা ভিডিও তে রশিদ মিনহাস কে খুব বড় করে দেখানো আর আমাদের মতিউর রহমান কে গাদ্দার কাফির এইভাবে সম্বোধন করা। খুবি বিরক্তিকর একটা ব্যাপার। সেখানে অনেক তর্ক টর্ক করসি। পাকিস্তানিদের ১৯৭১ এর বিভিন্ন ওয়েবসাইট পেপার কাটিং দেখালে তাদের একটাই কথা এইসব হইল ইন্ডিয়ান ষড়যন্ত্র, তাদের অপপ্রচার। আমি তখন বলে দিয়ে আসছি, তোমাদের বউরা প্রেগনেন্ট হইলে সেটাও কি ইন্ডিয়ানদের ষড়যন্ত্র এর কারনে হয়!! আজব!
ইউটিউব এ যেইসব পাকিস্তানিদের সাথে মারমারি করতাম তাদের থেকে মোহাম্মাদি বেগম একটু ভিন্ন। কিছু পাকিস্তানিরা ছিল হাস্যকর ইংলিশ তাদের কে সেইভাবে জবাব দেওয়া যেত কিছু পাকিস্তানি আছে ইতিহাস কিছুই জানেনা। মোহাম্মদি বেগম এর সাথে দেখলাম কথায় পেরে উঠা বেশ কঠিন। তার ইংলিশ চমতকার। ইতিহাসের নাড়ি নক্ষত্র জানা আর সব থেকে বড় ব্যাপার হল তার কথা বলার কৌশল গুলাও দারুন। সে বাংলাদেশ সম্পর্কে সব জানে যেখানে আমি পাকিস্তান নিয়ে সেই তুলনায় অনেক কম জানি। সে বিডিয়ার বিদ্রোহ নিয়ে আমাকে আমাকে খোঁচা মারে আমি আবার তালেবান নিয়ে খোঁচা মারি। এরপর আমি মুইতারাম মাই (পাকিস্তানি এক মহিলা যাকে রাস্তায় টেনে এনে প্রকাশ্যে ধর্ষন করা হয়) এর উদাহরন আনায় ব্যাপারটা একটু সিরিয়াস হয়ে গেল। তারপর হাল্কা কথা বার্তায় একবার জিজ্ঞেস করলাম তোমার আমাদের উপর এত ক্ষোভ কেন? বাংলাদেশ আলাদা হওয়াটা আমাদের অধিকার। অনেক মুল্য দিয়েছি আমরা। তখন তার কথা শুনলাম। মোহাম্মাদি বেগম এর বয়স এখন ৬০ এর কাছাকাছি। যুদ্ধের সময় তারা যখন পাকিস্তান তাদের এর বাবা ছিলেন বাংলাদেশ এ। তার বাবাকে বাঙ্গালিরা ধরে নিয়ে যায় এবং হত্যা করে। এই কথা শোনার পর অবশ্য আর তর্ক করা যায় না।মুক্তিযুদ্ধে আমরা অনেক কিছু হারিয়েছি এবং যারা স্বজন হারিয়েছে তারা স্বজন হারানোর বেদনা জানে। যুদ্ধের উলটা পিঠের ঘটনা এটা। তার কথা কতটুকু ঠিক জানিনা কিন্তু আমি একটাই জবাব দিয়েছি তাহলে খালি চিন্তা কর আমাদের অবস্থা। এমন কোন লোক মনে হয় না ছিল যার চেনা জানা কাউকে তোমার মেরে যাওনি।
লিসা (আসল নাম ভুলে গেছি তবে এই জাতীয় নাম) আবার মোহাম্মদী বেগম এর ঠিক উলটা। তার কমেন্ট শুনলে মনে হত কিছু মানুষ থাকে খুব আসতে আসতে কথা বলে সেরকম একজন। লিসা এর সাথে বাংলাদেশ বা পাকিস্তান এর কোন সম্পর্কই নাই। সে থাকে কানাডা, দুই বাচ্চার মা। ছোটবেলা থেকেই অবশ্য সে জানত বাবা-মার পালিত কন্যা সে। বাবা- মা হোয়াট সে কিছুটা ডার্ক। তার ডেট অফ বার্থ ১৯৭১। ইতিহাস এ তার আগ্রহ, নিউমোরলজিতে বিশ্বাসি লিসা একদিন অবেক হয়ে দেখে তার জন্মসাল এর সময় একটা দেশের জন্ম হয়েছিল। তার বয়স যখন ১৩ তখন সে খুব অবাক হয়ে তার পালক বাবা মায়ের কাছে শুনল তার জন্মভুমি ঐ ৭১ সালে জন্ম হওয়া দেশটাতেই। লিসার পালক বাবা মা নিঃসন্তান দম্পত্তি ক্যাম্প থেকে তাকে ১৯৭২ সালেই নিয়ে আসে। বাব-মা কেউ ছিল না। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনি খুবই সরল মনে পবিত্র ভাবে কলেমা পড়ে লিসার বাবাকে মারে আর মাকে ধর্ষন করে পরে মাও মারা যায়। লিসা কোনভাবে উদ্ধার হয়ে ক্যাম্প এ আসে। অবশ্যই একা আসেনি কেউ একজন তাকে ক্যাম্প এ রেখে যায়। ১৩ বছর বয়স থেকেই মাঝে মাঝে তার বাবা-মার কথা মনে করে সে কেঁদে উঠে। ইন্টারনেট এ অনেক দেখেছে পাকিস্তানিদের বাংলাদসেহ এর উপর অত্যাচার এর ঘটনা। একদিন বাংলাদেশ এ আসার পরিকল্পনা তার। নিজ জন্মভুমি দেখতে। আমার সাথে শেষ কতাহ হয়েছে তাও প্রায় একবছর হয়ে গেল। জানিনা নিজ জন্মভুমি সে দেখে গিয়েছে কিনা।
জানিনা যুদ্ধ-বিগ্রহ কত রকমের বিষ্ময়ের জন্ম দেয়।