গল্প-১
২০০১ সালের ঘটনা। তখন ইস্কাটন গার্ডেন অফিসার্স কোয়ার্টারে থাকি। কলোনিতে থাকার কিছু নিয়ম কানুন আছে। তার মধ্যে অন্যতম হল বিকালে ক্রিকেট অথবা ফুটবল খেলা। ক্রিকেট খেলায় ব্যাটিং করার সময় ৬ মারার থেকে বিনোদন আর কি হতে পারে? আমাদের আরো একটা বিনোদন ছিল কারন যেখানে থেকে ব্যাটিং করা হত তার সামনের বিল্ডিংটা ছিল ৫ তালা। ফোর আর সিক্স এর নিয়ম ছিল তিন তালায় লাগলে ফোর, পাঁচ তালায় লাগলে সিক্স। আর এর মধ্যে অঘটন হিসেবে কোনো বাসার গ্লাস ভাংলেই দৌড়ায় পালায় যাওয়া। তা গ্লাস ভাংতোও সেইভাবে- টাং, টাং, টুং , টাং সর্বশেষে ধিরিম। এর মধ্যে তিন তালার গ্লাস একটু বেশি ভাংতো দেখে আঙ্কেল ও বকাঝকা বেশি করতেন। কিন্তু একবার কি জানি হল আঙ্কেল এর বকাঝকা এর ডোজটা মনে হয় বেশি হয়ে গেছে। পোলাপাইন ও সব খেপে গেছে। তাই ঠিক করা হল এইবার প্ল্যান করেই গ্লাস ভাঙ্গা হবে। লোপ্পা লোপ্পা বল করা হইতেছে আর ট্রায়াল দেওয়া হইতেসে। সবাই ৪-৫ টা করে বল খেলতেছে কিন্তু তিন তালার গ্লাস আর ভাঙ্গেনা। মহা মুসিব্বত তো!! খেলার সময় তো অনেক ভাঙ্গে কিন্তু তখন আর ভাংতেসেই না। এর মধ্যে শুভ (ঢাবি ফিন্যান্স থেকে পাস করেছে এখন চাকরি করে) আসল। শুভ এর তিন নম্বর শটটাতে গ্লাস ভেঙ্গে গেল। তবে খুবি অবাক কর দেখা গেল সেটা তিন তালারটা ভাঙ্গে নায়। পাঁচ তালারটা ভাংছে তাও পাঁচ তালা শুভদের নিজেদেরি বাসা। কথায় আসেনা অন্যের জন্য কুয়া খুড়লে নিজেরি পড়া লাগে। ক্রিকেট খেলার সময় কোনো বাসার গ্লাস ভাংলে পরবর্তি পদক্ষেপ এর অংশ হল যত তাড়াতাড়ি পারো পালাও। সবাই মিলে পালান শুরু করল। তার মধ্যে শুভ ব্যাটটা মাটিতে ফেলেই পালাইতে লাগল। ব্যাটটা হাতে নিয়ে আমি পালাইলাম। সন্ধ্যার পর শুভ বাসায় গেল। বাচ্চা পোলাপাইন্-দের এটাই নিয়ম। আসরের আযান দিলে বের হবা মাগরিব দিলে ঢুকবা। শুভ এর আব্বার তখন বেশ মন খারাপ। শুভ কে বলল, “জিকোকে দেখলাম আমাদের বাসার গ্লাস ভেঙ্গে পালায় গেল। ছেলেটাকে তো বেশ ভাল মনে করতাম”। আফসুস বিরাট আফসুস।
গল্প -২
বায়োলোজি জিনিসটা আমার দুই চক্ষেরবিষ। যতই পড়তাম কিছুই মনে থাকত না। কোথাকার কোন কুনো ব্যাং তার আবার হাড্ডিগুড্ডি ১০০ রকমের। যাই হোক এস এস সি এর প্র্যাকটিকাল পরীক্ষার নিয়ম হচ্ছে প্লেট এ কিছু নমুনা থাকবে সেগুলা লিখে নিয়ে আসতে হবে। গিয়ে সেগুলার নাম লিখে আনলাম। পাশের ছেলের কাছে নিশ্চিত হলাম যে একটা ভুল লিখেছি। সেটা ঠিক করলাম। তারপর বাহাদুরি দেখাইতে গিয়ে সবার আগে স্যারকে বললাম স্যার শেষ। এরপর স্যার ভয়াবহ একট কাজ দিল। কুনোব্যাং কাটতে হবে। এই কাজ করি ক্যামনে!! পরের যেই ছেলে আমার থেকে একটু কম বাহাদুরি দেখাইল স্যার তাকে দিল টাকি মাছ কাটতে। যাই হোক কোনো রকমে কাইটা কুইটা ভাইভা দিতে গেলাম। স্যার জিজ্ঞেস করলেন, টাকি মাছের বৈজ্ঞানিক নাম কি? আমিও বললাম “Channa punctuates”। আমি যে এত বাহাদুরির কাজ করলাম সেটার মর্যাদা থাকল না। কারন এরপর যেই যায় তাকেই স্যার জিজ্ঞেস করেন টাকি মাছের বৈজ্ঞানিক নাম কি। পুরা ক্লাসের সবার মুখে তখন চান্না পাঙ্কট্যাটাস আর চান্না পাঙ্কট্যাটাস। সবাই আগের থেকেই পরে রাখতেসে কারন স্যার যে সবাইকে এটাই জিজ্ঞেস করতেসে। একজন এর মধ্যে একটু বেশি ই মনে হয় পরে ফেলল। কারন স্যার যখন তাকে জিজ্ঞেস করল তার নিজের নাম কি?? সে বলে "পান্না চাঙ্কট্যাটাস"!! আরেকজনের অবস্থা এর থেকেও খারাপ হল। কারন সে চান্না পাঙ্কট্যাটাস, চান্না পাঙ্কট্যাটাস বলতে বলতে গেল। তাকে স্যার কুনো ব্যাং যেটা কিনা আমারি কাটা সেটাতে ব্যাং এর কিডনি দেখায় বলে কি এইটা? ছাত্র বলল, চান্না পাঙ্কট্যাটাস। ঐটা ছাড়া যে তার মাথাতে আর কিছু নাই। আফসুস, বিরাট আফসুস।