Fan is Mortal ছিল আমার স্কুল এর গল্প। Zics and Physics are not made for each other ভার্সিটির গল্প। মাঝখান দিয়ে আমার ঢাকা কলেজের জীবন যে স্মৃতির পাতায় কই হারায় গেল তা খুঁজে পেতে বেশ সময় লাগল।
আমি যখন এসএসসি দেই তখন ছিল আওয়ামী সরকার। আর যখন ঢাকা কলেজ-এ ভর্তি হইলাম তখন আসল বিএনপি সরকার। বিএনপি সরকার আসার পর প্রথম কার্য দিবসেই আমাদের প্রথম ক্লাস। এর আগে অনেক ঢাকা কলেজ এর মারপিট এর কাহিনী শুনেছিলাম ঐখানে গিয়ে প্রথম দিনই মারপিট এর মধ্যে পরলাম। স্কুল লাইফে স্কুল ড্রেস পরতে হত কলেজ লাইফে সেটা পড়তে হবেনা পৃথিবীতে এর থেকে সুখের ব্যাপার আর আছে বলে আমার মনে হল না। কলেজ যাওয়ার জন্য বাচ্চা পোলাপাইনদের মত নতুন নতুন জামা কাপড় কিনলাম। ১০০০ টাকা দিয়া স্যান্ডেল কিনলাম। এরপর ঢাকা কলেজ এর প্রথম দিনের মারপিটে যখন কলেজ থেকে পালাতে গেলাম তখন আমার ১০০০ টাকার স্যান্ডেলটা ছিড়ে গেল। বড়ই দুঃখের ব্যাপার।
ঢাকা কলেজ-এ সেকশন ছিল ৩ টা। আমার ধারনা অনেক ছেলেপেলেই জানত না তারা নিজেরা কোন সেকশন। কারন গভঃ ল্যাব এ আমরা যারা ছিলাম তাদের প্রধান কাজ ছিল ক্রিকেট খেলা। ১০ টার সময় কলেজ এ গিয়েই বাস্কেটবল কোর্ট এ শুরু হয়ে যেত ক্রিকেট। সারা দিন ঐখানেই খেলা চলত। ক্লাসে যে একবারেই কেউ যেত না তা না। আরিফা সুলতানা নামক এক ম্যাডাম ছিলেন। কলেজ পড়া পোলাপান সবই বেয়াদপ। এমনিতে ক্লাস না করলেও আরিফা সুলতানা ম্যাডাম থাকলেই ক্লাস ভরে যেত। তা ম্যাডাম যে খুব ভাল পড়ান সেইজন্য কিন্তু না। ম্যাডাম যদি এ সেকশন-এ ক্লাস নিত তাহলে এ সেকশন-এ ছাত্র থাকত ১৮০। বি সেকশন-এ ৩০ আর সি সেকশন এ-২০।
গভঃ ল্যাব এ থেকে আসার কারনে আমাদের ফাপরবাজি একটু বেশি হত। প্রথম ২-৪ দিন আমরা ক্লাস করতাম তখন একবার এক স্যার বলল গভঃ ল্যাব থেকে কারা কারা এসেছে তারা দাঁড়াও? অর্ধেকই গভ ল্যাব কিন্তু সবাই পিছনে বসছে দেখে স্যার বেশ মন খারাপ করলেন। জামাত স্যার নামক একজন স্যার ছিলেন যিনি দেখতে পুড়াই জয়সুরিয়া এর মত। তিনি একবার এক ছেলেকে থাপ্পড় মারার ভঙ্গি করেছিলেন দেখে মনে হইল জয়সুরিয়া তার স্লো লেফট আর্ম বোলিং করছে
শয়তানি বান্দরামি করে অবশেষে ফার্স্ট ইয়ার ফাইনাল চলে আসল। পুরা ফার্স্ট ইয়ার ফাইনালটা হল বিশ্বকাপ ২০০২ এর সময়। এমনিতেই সবাই খেলা পাগল। তাই পড়ালেখার অবস্থা পুরাই বারোটা। ফার্স্ট ইয়ার ফাইনালে শেষ হওয়ার পর সবার বাসায় কলেজ কতৃপক্ষ চিঠি পাঠাল। খুবি বাহারি অবস্থা, অন্য সব কলেজ গুলাতে এ্যাটেন্ডেন্স চাওয়া হয়েছিল ৭৫%, ঢাকা কলেজ চেয়েছিল ২০% পার্সেন্ট কিন্তু বেশির ভাগ ছেলে পেলের তাও নাই। আর আমার এ্যাটেন্ডেন্স ১৭%। এর থেকে ভয়াবহ ব্যাপার হল ফার্স্ট ইয়ার ফাইনাল এর রেসাল্ট দেওয়া হয়েছে। মার্কশীট যেন গার্জিয়ান রা দেখে নেন । মার্কশীট এর যে ভয়াবহ অবস্থা তাতে আমার বাপ মা আমাকে ত্যাজ্য পুত্র ঘোষনা করার আগেই আমিই তাদের ত্যাজ্য করে দিব কিনা ভাবছি। শুধু আমার যে এই অবস্থা তা না। পুরা ২০০-৩০০ ছেলের এক অবস্থা। এমন সময় একটা মজার জিনিস আবিষ্কার করা হল। মার্কশীট এর পিছিনটা সেকেন্ড ইয়ার এর ফাইনাল এর জন্য বরাদ্দ কিন্তু সেখান-এ কোনো লেখাই নাই। ব্যাস নিলখেত গিয়ে ২০০ কপি ঐটা বানানো হল। ঢাকা কলেজ এর চেয়ারম্যান তখন কবীর স্যার। আমার বাসার ৪ তালায় তিনি থাকেন। আমি তো তাকে দেখলেই ভয় পাই। পোলাপাইন কোথেকে জানি তার একটা সীল যোগাড় করল। এইবার যে যার মত মার্কস বসাও। ফিজিক্স এ পাইসিলাম ৭৫ এ ৫৭ তাই ঐটা নিয়া চিন্তা নাই। রসায়ন এ রস আহরন করার জন্য ৩১ কে বানাইলাম ৬১। গনিত এ সব সময় ভাল এই ধারনা ভুল প্রমান করে পাইসিলাম ৭৫ এ ৩৩। অঙ্কে তো আর কেউ এমনি এমনি ভাল হয় না। অনেক প্র্যাকটিস করলেই না পরীক্ষায় ভাল করা সম্ভব। সারা দিন ক্রিকেট খেললে আর এম আইআরসি তে (তখন ফেসবুক ছিল না) চ্যাট করলে তো আর ভাল করা সম্ভব না। ৩৩ কে করলাম ৫৩। একটু কম রাখলাম সততা বলেও তো একটা কথা আছে । শুধু আমি না। সবাই এই কাজ করল তবে একজন একটু বেশি করে ফেলল। তার মনেই নাই যে পরীক্ষা ৭৫ এ হয়। সে ফিজিক্স এ ৯৪, রসায়ন এ ৯৬ দিয়ে রেখেছিল। বাসায় ঐ মার্কশীট দেখানোর পর কি অবস্থা হয়েছিল কে জানে!!
সেকেন্ড ইয়ার থেকে ঠিক করলাম ক্লাস করব। কারন নাইলে নাকি ইন্টার মিডিয়েট এর এডমিট কার্ড দিবেনা। সারারাত তো ইন্টারনেট নিয়েই বসে থাকি। ৫ টায় ঘুমায় সকাল ৮ টার ক্লাস করতে গেলাম। ক্লাস নিচ্ছেন আরিফা সুলতানা কাজেই ক্লাস এ ছাত্র ভরা। ওর মধ্যেই আমি ঘুমায় গেলাম। হটাৎ কে এক নারী কন্ঠ বলে ঊঠল, একি জোহরা!! তোমাকে অনাবৃত করেছে কে? চমকায় উটলাম। কে এই জোহরা? কই সে থাকে ?কেন তার এই অবস্থা? কিছুই বুঝলাম না। রক্তাক্ত প্রান্তর নামক বইটার সাথে তখনো পরিচয় হয়নি। ম্যাডাম ঐটাই পড়াচ্ছিলেন।
চতুর্থ বিষয় পরিসংখ্যান। তেলাপোকা হাত দিয়ে ধরার ভয়ে বায়োলোজি নেওয়া হয়নাই। নিলে ইন্টার মিডিয়েট আর পাস করতে পারতাম না (যেই বড় বই)। পরিসংখ্যান ক্লাস করতে গেলাম। স্যার একজন করে নাম ডাকে আর ধমকায়। কেউ মাত্র ১২ দিন ক্লাসে এসেছে, কেউ ৭ দিন। এইভাবে আমার নাম আসার পর স্যার হতভম্ব হয়ে গেল!! আজকেই প্রথম! আমি মনে মনে বললাম আজকেই শেষ।
প্রী-টেস্ট পরীক্ষার ডেট ধুম করে দিয়ে দিল। এইবার রসায়ন নামক সাবজেক্ট এক লাইন ও পড়িনাই। পরীক্ষা হলে গিয়ে আমার সামনে পাইলাম ইশতিয়াক (জেনেটিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ঢাবি থেকে পাস করে এখন ইংল্যান্ড থেকে ডিগ্রি নিয়ে এখন মনে হয় নর্থ-সাউথের টিচার), পিছনে আবু সালেহ (এর সাথে যোগাযোগ নাই), যে সাইজে ছোট দেখে তাকে বলতাম বাবু সালেহ। আবু সালেহ কে জানি কি একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলাম আবু সালেহ ইমোশোনাল হয়ে গেল। ভাই আমি কাউকে কিছু দেখাই না ভাই, স্যার যদি দেখে ফেলে ভাই............... পরীক্ষার মধ্যে এগুলা না বলে সেই সময়ে দুইটা প্রশ্নের উত্তর বলে ফেললে পাস করতে পারি। ৫০ এ ১৭ দরকার। সে তার ইমোশোনাল কথাবার্তা বলেই যাচ্ছে। পরীক্ষা ১ পাতা লিখে বের হয়ে আসলাম। রেজাল্ট দেওয়ার পর বাসায় বললাম রসায়ন এ যা অ্যানসার করেছিলাম তার থেকে ২ কম পেয়েছি। ঐটা আর বলিনাই যে ৪ আনসার করে ২ পেয়েছি। মিথ্যা কথা বলা কেমন দেখায়!! এইবার একটা মজার কথা বলি। গভ ল্যাব, ঢাকা কলেজ, ঢাবি পদার্থবিজ্ঞান (বর্তমানে বিশ্বের ২৩ নম্বর ভার্সিটিতে পিএইচডি রত) সব জায়গাতেই ফার্স্ট হওয়া অংশুমান জামান ওই পরীক্ষাই দেয় নি। কারনটা হচ্ছে প্রি-টেস্ট টা এমন ধুম করে হয়েছিল কেউই প্রিপেয়ারড হওয়ার টাইম পায়নায়।
ঢাকা কলেজ যে একটা ছেলে পুরাপুরি নস্ট করে দিতে পারে সেটা আমি চোখের সামনে থেকেই দেখে আসছি। একটা অনুরোধ সবার প্রতি। মানে যারা এবার এসএসসি দিয়ে ঢাকা কলেজ এ ভর্তি হচ্ছে। এই লেখাকে ফলো করার দরকার নাই। পড়ালেখার বিকল্প কিছু নাই। ছাত্রদের জন্য পড়ালেখার থেকে গুরুত্বপূর্ণ আর কিছু হতে পারেনা।
তবে আমরা এত আকাম করলেও আসল জায়গায় ঠিকি ছিলাম। জিপিএ ফার্স্ট ব্যাচ আমরা। পুরা বাংলাদেশ এ ২০ জন ফাইভ (আমাদের সময় গোল্ডেন এর ঝামেলা ছিলনা) পাওয়া এর মধ্যে একমাত্র ঢাকা কলেজ থেকেই ২ জন পায় । নটরডেম থেকে একজন। যদিও নটরডেম এর সাথে তুলনা চলেনা। এভারেজ-এ ওরা অনেক এগিয়ে। নকল মার্কশীট বাসায় দেখানোর দল থেকেই এখন অনেকে বুয়েট, ঢাবি এর টিচার। বাইরে পি এইচ ডি করতে চ্চলে গিয়েছে অনেকে। অনেকে মেডিক্যাল থেকে পাস করা ডাক্তার। জিআরই এর মত পরীক্ষায় ১৪৫০ তুলছে অনেকেই। অনেকে এমবিএ করে ভাল চাকরি করছে। এইসব ব্যাপার এমনি এমনি হয়নায়। অনেকেই নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে পরে ঠিকি লেখা পড়া করেছে। এক ভুল তো আর বার বার করা যায় না। ঢাকা কলেজ এর জীবন যে অনেক আগের কথা। গভ ল্যাব স্কুলের মোটো ছিল শিখার জন্য এসো , সেবার জন্য বেরিয়ে যাও। আর ঢাকা কলেজ এর মোটো হচ্ছে নিজেকে জানো (Know Thyself)।
মাঝে মাঝে যে নিজেকে জানাটা খুব জরুরি।