somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুঃখগাথা !!

১৬ ই মে, ২০১০ রাত ১২:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




মানুষের জীবনে কত রকম অধঃপতন হয়। কিন্তু আমাদের জীবনের অধঃপতনের যে ট্র্যাজেডী, এটা সহ্য করা খুব কঠিন। এখনো চিন্তা করলে বেশ কষ্ট লাগে যে কি দিনগুলোই না গিয়েছিল আর কি দিনই না এল। আস্তে আস্তে দৈর্ঘ্য-প্রস্থ-আয়তনে যেন অর্ধেক হয়ে গেলাম। আর যেভাবে দিনকাল যাচ্ছে, তাতে মনে হয় না এ জীবনের আয়ু আর খুব বেশি দিন বাকি আছে। এই তো সামান্য কথা বলতে বলতে আয়ুকাল আরো কিছু মনে হয় কমে গেল। ডানপাশ ঘিরে আরেকবার লাল বিল্ডিঙটা দেখলাম। আহা একসময় এ বিল্ডিং-এর ভিতরই বাস করতাম। ওহ- কি দিনগুলোই না ছিল। বিল্ডিং এর নাম কার্জন হল। লর্ড কার্জন নামে একজন এই বিল্ডিংয়ের প্রতিষ্ঠাতা। সেই ব্যক্তির পছন্দের রঙ লাল কেন কে জানে!!

যাই হোক আমি একসময় একজনের ব্যাগে করে প্রায় রোজই এখানে আসতাম। যে আমাকে নিয়ে আসত সে অবশ্য আমার ব্যাপারে খুব যত্নবান ছিলনা। প্রায়ই আমার গায়ের উপর বিভিন্ন দাগ টানত। উহ! কি যে ব্যাথা লাগত! কিন্তু কিছুই বলতে পারতাম না। কি করব বলেন- বই হয়ে জন্মানোতে অনেক সমস্যা। ও ভালো কথা আমার নাম কি জানেন? Fundamentals of physics. আমাকে বানানোতে Resnick, Halliday আর Walker –এর হাত রয়েছে। তবে যে উদ্দেশ্যে আমাকে বানানো হয়েছে তাতে আমার অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যত কোন উদ্দেশ্যই সফল হবে বলে মনে হচ্ছেনা। বর্তমান অবস্থার কথা বাদই দিলাম। যখন আমি রোজ কার্জন হলে আসতাম তখনকার কথাই ধরুন। আমাকে চ্ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করতে সে এতটুকু কার্পণ্য করত না। উহ আহ উহ.... এখনো মনে হয় কিভাবে দাগ কাটত আমার উপর। লাল কালি, নীল কালি, সবুজ কালি সবভাবেই দাগানো হত। যে দাগাত তার নাম ছিল মনে করেন মিস ‘y’। হ্যা, সে ছাত্রী ছিলো। কিন্তু কিভাবে জানি আমি হাত বদল হয়ে গেলাম। সম্পর্কে আমার খালাত ভাই Heat and Thermodynamics এর সাথে আমার অদল বদল হয় আরেকজনের সাথে। এইবার পরলাম এক ছাত্রের হাতে। তার প্রধান কাজ ছিলো টেবিলে আমাকে উপুর করে আমার উপর ধুমপান করা। আপনারা তো জানেনই গোল্ডলীফ সহ্য করা কতটা কঠিন। একদিন আবার খুব ব্যাথাও পেলাম। ছেলেটা চলতে চলতে রাস্তায় আমাকে সহ পড়ে গিয়েছিল। ছেলেটার একটা পা ভাঙল সেটাতে ব্যান্ডেজ করা হলো কিন্তু আমার কথা কেউ ভাবল না। সবাই ধরাধরি করে ছেলেটাকে নিয়ে গেল আর আমি রাস্তাতেই পড়ে থাকলাম। এত বড় একটা বই কারো চোখে পড়ল না কেন সেটাই আজব! অবশেষে একজন আমাকে তুলে নিল- অন্ধকার হয়ে আসছিল দেখে প্রথমে বুঝতে পারছিলাম না লোকটা কে। Yeah got it… বুঝতে পারলাম কে… Oh No!!! ভেলপুরী মামা। এ যে সেই ভেলপুরী মামা যাকে সবসময়ই কার্জন হলের গেইটে পাওয়া যায়। যে মেয়েটার হাতে আমি থাকতাম, সেও এখানে ভেলপুরী খেত, ছেলেটাও খেত। যাই হোক- লাল, নীল, সবুজ কালি সহ্য করলাম। গোল্ডলীফ এর ধোঁয়াও সহ্য করলাম। এখন শুরু হল আমার আয়তন কমা। ভেলপুরী মামা একটা ভেলপুরী বিক্রি করতে হলেও আমাকে ছেঁড়েন। দুটো হলেও ছেঁড়েন। আরো বেদনাদায়ক হলো ভেলপুরী খাওয়ার পর লোকজন হাত মোছার জন্যও আমাকে ছেঁড়ে। আরে বাবা আমার একটা ইজ্জত আছে তো, নাকি!! এইখানে তো নিদেনপক্ষে টিস্যুটা ব্যবহার করা যায়। যাই হোক এ জীবন আর বেশি বাকি নাই। এখনো মাঝে মাঝে তাকিয়ে থাকি কার্জন হলের দিকে। কি চমৎকার লাল রঙ! আমার কভারটা এখনো টিকে আছে, সেটার রঙও লাল। এজন্যই কবি বলেছেন- কার্জনের রাজ্যে পৃথিবী লালময়। কোন কবি বলেছেন, এটা অবশ্য জানিনা। পৃষ্ঠা ছেঁড়ার সাথে স্মৃতিশক্তি কমে যাচ্ছে। বোঝেন না! আমার জন্য দোয়া রাখবেন। :((
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১:১১
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×