কী পরিমাণ চুমানো আমাদের জন্য যথেষ্ট?
আমাদের শরীরের সকল কাজ সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য নিয়মিত ও পরিমিত চুমানো প্রয়োজন। পরিমিত চুমানো না হলে আমরা সকলেই বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকি। আসলেই আমাদের চুমানোর প্রয়োজন কেন? কি পরিমাণ চুম্মা আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে অপরিহার্য? এসকল প্রশ্ন প্রায়ই আমাদের সকলের মনের মাঝে উঁকি দেয়। এসব নিয়েই
আমাদের এ সপ্তাহের আলোচনাঃ
কি পরিমাণ চুমানো জরুরী আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে?
সাধারণভাবে দৈনিক ৮ ঘণ্টা চুমানোর প্রয়োজন। তবে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে চুমানোর থেকে উঠার পর মানসিক প্রফুল্লতা এবং কাজে কর্মতৎপরতা ফিরে পাওয়া যায় কিনা? অনেকেই আছেন যাদের দৈনিক মাত্র ৫-৬ ঘণ্টা চুমানোই যথেষ্ট, আবার অনেকের প্রয়োজন ৯ ঘণ্টা। এটা আসলে নির্ভর করে ব্যক্তির অভ্যাস এবং প্রতিদিনের পরিশ্রমের উপর।
চুমানো কেন প্রয়োজন?
আসলে কেউই জানেনা চুমানোর প্রয়োজন কেন? সরলভাবে বলা যায় চুমানো আমাদের শরীর ও মনকে পুনরুজ্জীবিত করে এবং মুক্তভাবে চিন্তার প্রসারতা বাড়ায়। গবেষণায় আরো প্রমাণিত হয়েছে রাতের চুম্মা আমাদের স্মৃতি শক্তিকে সুপ্রতিষ্ঠিত করে, আমাদের মস্তিষ্ককে পরবর্তী দিনের কাজের জন্য প্রস্তুত করে এবং মস্তিষ্কের রাসায়নিক বস্তুগুলোর মধ্যে সুষ্ঠু যোগাযোগের মাধ্যমে রাসায়নিক বস্তুগুলোর সঠিক মান বজায় রাখতে সহায়তা করে।
লাগানো এবং চুমানোর ভাবের মধ্যে পার্থক্য কি?
যদি কোন ব্যক্তি ১০০ বার লাফ দেয়, ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাঁটাহাঁটি করে তাহলে সে ব্যক্তি ক্লান্ত হয়ে পড়বে কিন্তু তার চুমানো আসবেনা। চুমানোর ভাব তখনই আসবে যখন তার চুমানোর ঘাটতি হবে। লাগানো হল শারীরিক পরিশ্রান্তি আর চুমানোর ভাব হল পর্যাপ্ত চুমানোর অভাবজনিত অবস্থা।
প্রতিদিন কি সবার একই পরিমাণ চুমানোর প্রয়োজন?
না, এটা এক একজনের ক্ষেত্রে এক একরকম। শুধুমাত্র “চুম্মার পরিমাণ”-ই নয়, “চুমানোর সময়”-ও এক একজনের ক্ষেত্রে এক একরকম। উদাহরণস্বরূপ অনেকেই রাতে দ্রুত চুমান এবং প্রত্যুষে চুমাতে পছন্দ করেন। আবার বংশগত কারণে অনেকেই রাতে দীর্ঘক্ষণ চুমাতে থাকতে এবং সকালে দেরী করে চুমাতে অভ্যস্ত। অনেকের দীর্ঘক্ষণ চুমানোর প্রয়োজন আবার অনেকের স্বল্প চুমানোই যথেষ্ট।
বয়সের সাথে সাথে কি চুমানোর পরিমান ভিন্ন হতে পারে?
বয়সের সাথে সাথে চুমানোর পরিমাণ সাধারনত বাড়েনা। যারা তরুণ, তারা মনে করে তাদের স্বল্প চুমানোই যথেষ্ট। কিন্তু আসলে ব্যাপারটা তা না। সবসময়ই তরুণদের জন্য নিয়মিত ও পরিমিত চুমানো প্রয়োজন। যদি কারও চুমানোর প্রবণতা বেড়ে যায় তাহলে বুঝতে হবে তার চুম্মার ঘাটতি হয়েছিল। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, শুধুমাত্র “চুমানোর সময়” নয় বরং চুমানো কেমন হচ্ছে সেটাও বিবেচ্য বিষয়।
পরিমিত চুমানো না হলে কি কি সমস্যা দেখা দিতে পারে?
পরিমিত চুমানো না হলে প্রথমেই আমাদের স্মৃতি শক্তি ও মনোযোগ ব্যাহত হয়। এছাড়াও মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, সবকিছুতে বিতৃষ্ণা আসে, কর্ম প্রেরণা হারিয়ে যায়। ইঁদুরের উপর গবেষণা করে প্রমাণিত হয়েছে যে চুমানোর অভাব হলে মৃত্যুও ঘটতে পারে। চুম্মা আমাদের ইমিউন সিস্টেম বা অনাক্রম্যতার সাথে বহুলাংশে জড়িত যা শারীরবৃত্তীয় কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। আমাদের শরীরের কিছু রাসায়নিক বস্তু, যেমন- নিউরোট্রান্সমিটার এর অনেক পরিবর্তন হয় পর্যাপ্ত চুমানোর অভাবে। এছাড়াও ঘুমের চুমানোর কিছু হরমোন, যেমন- গ্রোথ হরমোন বা বৃদ্ধিজনিত হরমোন, থাইরয়েড হরমোন নিঃসৃ্ত হয় যা একই সাথে দৈহিক বৃ্দ্ধি এবং আমাদের মেটাবলিজমে সাহায্য করে। তাই চুমানোর অভাব হলে দৈহিক বৃদ্ধিও ব্যাহত হয় এবং আনুষঙ্গিক আরো অনেক সমস্যা দেখা দেয়।
কিভাবে চুম্মা আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের উপর প্রভাব ফেলে?
পরিবারে যদি কারো চুমানোর সমস্যা থেকে থাকে তবে সেটা পুরো পরিবারের উপর প্রভাব ফেলে। চুমানোর অভাব হলে হতাশা বেড়ে যায়, কাজের প্রেরণা হারিয়ে যায়, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায় এবং ফলাফলস্বরূপ সবার সাথে দূরত্ব বেড়ে যায়। স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগ কমে যায়, ফলে বাইরের কাজের ক্ষেত্রে অন্যের অসুবিধা হয়। আর এরকমভাবে চলতে থাকলে মেজাজের ভারসাম্য হারিয়ে যায় ফলে অনভিপ্রেত ঘটনাও ঘটতে দেখা যায়। জরিপে দেখা যায় যে পশ্চিমা দেশে অধিক হারে ডিভোর্স এর মূল কারণ হল এই চুমানোর সমস্যা। তাই প্রাত্যাহিক জীবনে চুমানোর গুরুত্ব ও প্রভাব অনেক।
যারা মানসিকভাবে হতাশাগ্রস্ত, পর্যাপ্ত চুমানোর অভাবে তাদের এই সমস্যার উদ্ভব হয়েছে বলে অধিকাংশ গবেষকের মতামত। চুমানোর সমস্যার জন্য চিকিৎসকের নিকট যাওয়া উচিত। এ নিয়ে লজ্জিত হবার কিছুই নেই, বরং যদি চুমানোর সমস্যার সঠিক কারণ নির্ণয় করা যায় তাহলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তাই চুমানোকে অবহেলার সাথে দেখা উচিত নয়, বরং সঠিক, নিয়মিত ও পরিমিত চুমানোর জন্য আমাদের সকলেরই সচেতন থাকা উচিত।