মুসা ই কি প্রথম বাংলাদেশি?
ঘরকুনো বাংগালির মানুষ হওয়া নিয়ে রবীন্দ্রনাথ অনেক খোঁচা মারা কথা বলেছেন। “তৈলঢালা স্নিগ্ধ তনু, নিদ্রারসে ভরা” টাইপের কথাবার্তা বলে বাংগালির চরিত্রের বারোটা বাজিয়েছেন। এতে হয়ত সে যুগে কিছুটা সত্যতা ছিল। তবে এ যুগের বাংগালি হয়ত ততটা নিদ্রারসে ভরা নয়। বাধানো হুকা যতনে মাজা কিংবা, মলিন তাস সজোরে ভাজা ছাড়াও বাংগালি এখন আরো কিছু করে। ছড়িয়ে পরেছে তারা সারা দুনিয়ায়। আমি নিজে খুবই আশাবাদী আমাদের জাতি নিয়ে। অনেক ব্যর্থতা আছে, অনেক অপূর্ণতা আছে। সাময়িক সমস্যা নিয়ে আমরা জেরবার থাকি। বিদ্যুত, পানি, রাজনীতি এগুলো নিয়ে ক্যাচাল করতে থাকি। কিন্তু প্রতিদিনের হট্টগোল থেকে সরে যদি একটু দশক হিসাবে দেখি তাহলে দেখব যে আমরা এগুচ্ছি। আশির দশক, তারপর নব্বই এর দশক এভাবে দেখলে আমরা এগুচ্ছিই বটে। এই যে ব্লগ লিখছি এটা কি আমাদের বাবারা ভাবতে পেরেছিলেন?
যাই হোক এখনো বাঙ্গালির অনেক কাজ বাকি। তার মধ্যে একটা হল এভারেস্ট জয়। আমরা এমনিতেই সমতলের মানুষ। পাহাড় পর্বত ঠিক আমাদের জিনিস নয়। মুজতবা আলী বলেছিলেন যে মাটির ঢিবি দেখলেই নাকি আমরা পাহাড় পাহাড় বলে চিৎকার করে উঠি। তাছাড়া ভাটির দেশের কৃষিকাজ করে আমরা মানুষ। দৈহিক গঠন, পরিবেশ, খাদ্যাভ্যাস এসব দিক থেকেও আমরা ঠিক পাহাড়িদের মত নই। পাহাড়ের চূড়ায় উঠার চেয়ে তীর হারা ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেয়া আমাদের জন্য সহজ।
তো সেই এভারেস্ট জয়ও আমরা করতে চাই। কিন্তু কাজটা এত সোজা নয়। পাহাড় সম্বন্ধে আমাদের যাদের অভিজ্ঞতা নেই আমরা কল্পনাও করতে পারব না ঊনত্রিশ হাজার ফুট (২৯০২৯ ফুট, ৮৮৪৮ মিটার) বলতে কি বোঝায়। যেখানে তাপমাত্রা শুন্যেরো প্রায় বিশ ডিগ্রি নিচে থাকে। সে পাহাড়ের পথে পথে থাকে আলগা বরফের মৃত্যুফাঁদ আর তুষার ঝড়ের বিভীষিকা। এর পরে আছে উচ্চতা জনিত রোগগুলো (আলটিচ্যিউড সিকনেস)। ৭০ ভাগ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পেরোতে হয় সে রহস্যময় পথ। কত জন যে প্রাণ হারিয়েছে আজ পর্যন্ত তার লেখাজোকা নেই।
নেপালিরা এভারেস্টকে বলে সাগর মাথা। তিব্বতীরা বলে কমুলাংমা। তৎকালীন বৃটিশ আমলের রয়্যাল জিওগ্রাফিক্যাল সার্ভের বাংগালি অফিসার রাধানাথ শিকদার প্রথম এভারেস্ট এর উচ্চতা মেপে ঠিক করেন যে এভারেস্ট ই পৃথিবীর উচ্চতম শৃংগ। কিন্তু শৃংগটির নাম দেয়া হয় তার বস জর্জ এভারেস্ট এর নামে।
আমরা সবাই জানি যে নিউজিল্যান্ড এর স্যার এডমন্ড হিলারি ও নেপালি শেরপা তেনজিং নোরগে ১৯৫৩ সালে প্রথম এভারেস্ট জয় করেন। হিলারি এছাড়াও আরো অনেক অভিযানে ছিলেন। যেমন নৌকায় করে গংগার উৎসমূল থেকে মোহনায় যাওয়া, দক্ষিন মেরুর কেন্দ্রে যাওয়া ইত্যাদি। আরেক পর্বতারোহী আপ্পা শেরপা কিছুদিন আগে ঊনিশ বারের মত এভারেস্ট এ উঠে রেকর্ড করেছেন। শেরপারা হিমালয়ের পাদদেশে থাকে। তাদের আদিবাস তিব্বতের উচু পাহাড়ি এলাকায়। তারা বড় হয় সে পরিবেশে। সেই বরফে মোড়া বিপদসংকুল পরিবেশে ঘোরাঘুরি তাদের জন্য ডালভাত।
এবার আসি বাংগালিদের কথায়। ভারতীয় সাবমেরিন কমান্ডার সত্যব্রত দাম প্রথম বাঙ্গালি হিসাবে এভারেস্ট জয় করেন। কিন্তু কোন বাংলাদেশি আজ পর্যন্ত তা করে উঠতে পারেনি। এক্ষেত্রেই আসছে আমার বন্ধু মুসা ইব্রাহিম এর নাম।
মাঝারি উচ্চতার, শক্ত গড়নের মুসা বেশ হাসিখুশি উচ্ছ্বল ধরনের মানুষ। তার স্বপ্ন এভারেস্ট এ উঠবে। দার্জিলিং এ মাউন্টেনিয়ারিং এর উপর দুমাসের ট্রেনিং ও করে ফেলল। (এ প্রসংগে বলে রাখি, এ ট্রেনিংটা খুবই সস্তা। মাত্র দুশ ডলারে একমাসের ট্রেনিং। থাকা খাওয়া সহ। যে কারুরই ইচ্ছা থাকলে এই ট্রেনিংটা করে নিতে পারেন)। কিন্তু শুধু ট্রেনিং করেই এই বিশাল কাজটি করা সম্ভব নয়। এর জন্য দরকার প্র্যাক্টিস। মুসা গত ছয় সাত বছর ধরে এই প্র্যাক্টিস করে আসছে। প্রথমে ছোট ছোট পাহাড় গুলোতে ওঠা। তার পর আরেকটু বড় পাহাড়। আরেকটু বড়। গত বছর (২০০৯ এর জুলাই মাসে) মুসা ও তার দল উঠেছিল অন্নপূর্না -৪ এ। এটি প্রায় ২৪৬৮৮ ফুট।
অন্নপুর্না ৪। দেখতে মনোহর হলেও আসলে ভয়ংকর
নেপালের তৃতীয় উচ্চতম শৃংগ। অন্নপূর্ণাতে উঠা ছিল তাদের জন্য শেষ পরীক্ষা।
অন্নপুর্না ৪ এর পথে। চারিদিকে বরফ। তার মাঝে সাহস নিয়ে এগিইয়ে যাওয়া
অন্নপুর্না ৪ এর চুড়ায় বাংলাদেশের পতাকা হাতে মুসা
চব্বিশ হাজার ফুট উঠার পর লক্ষ্য হল ঊনত্রিশ হাজারের এভারেস্ট। মুসা এবার যাত্রা করেছে সেই ভয়ংকর সুন্দর এভারেস্ট জয়ের লক্ষ্যে।
কিন্তু এত সহযে বিষয়টি হবার নয়। প্রথমত এভারেস্ট-এ ওঠা একটি বিশাল খরচ স্বাপেক্ষ ব্যপার। সরকারি ফি অত্যধিক বেশি। এছাড়া আছে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি, বিশেষ ধরনের তাবু ও পোষাক, শেরপা গাইড এবং কুলির খরচ, খাবার দাবার, বিশেষ ধরনের চুলা, আরো অনেক কিছু। সব মিলিয়ে এভারেস্ট এ ওঠার খরচ প্রায় চল্লিশ লাখ টাকার কাছাকাছি। এত টাকা জোগাড় করা ছিল একটা অসাধ্য ব্যাপার। কিন্তু যার মাথায় রয়েছে স্বপ্নের ঘোর, আর বুকে সাহসের আগুন সেকি অতশত ভাবে? কিছু স্পন্সর, বাকিটা ধার দেনা করে মুসা চলে এসেছে এভারেস্ট জয় করতে।গত ১০ এপ্রিল ও রওয়ানা হয়ে গেছে এভারেস্ট এর পথে। সাথে আছে শেরপা গাইড সোম তামাং। আরো রয়েছে জনা তিনেক শেরপা কুলি। সোম তামাং এর আগে প্রায় ছয়বার এভারেস্ট এ উঠেছে। অত্যন্ত অভিজ্ঞ এই শেরপার গাইডেন্স-এ মুসা হতে চলেছে প্রথম বাংলাদেশি এভারেস্ট বিজয়ী।
এভারেস্ট যাত্রার প্রাক্কালে মুসা (মাঝে) সোম তামাং(নীল টি শার্ট) ও অন্যরা
আমাদের ইতিহাসে যোগ হতে যাচ্ছে আরেকটি মাইল ফলক। আমরা হয়ত পাব আমাদের আরেক অভিযাত্রী নায়ককে। ৪৫ দিনের এই অমানুষিক অভিযাত্রার শেষে মুসা যখন বিজয়ী হয়ে ফিরে আসবে আমরা কি তখন রবীন্দ্রনাথের ছবির দিকে আরেকটু শ্লেষ ভরে হাসব? আশা করি ৪৫ দিন পরে আপনাদের সেই দারুন খুশির খবরটি দিতে পারব। আর হ্যা, সবাই মুসার জন্য শুভকামনা রাখবেন। দেশে ফেরার পর ওর সাহায্য লাগবে ধার দেনা গুলো শোধ করতে। আপনাদের হৃদয়ের প্রতিনিধি হয়ে মুসা হয়ত উড়িয়ে দেবে বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা পৃথিবীর সবচেয়ে উচু জায়গায়। নিজেদের প্রমাণ করার জন্য এগিয়ে যাব আরেক ধাপ।
বাংলাদেশের নাম নিয়ে মুসা যাচ্ছে তার স্বপ্নের যাত্রায়
জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা
বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন
আত্মপোলব্ধি......
আত্মপোলব্ধি......
একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন
জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !
হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।
আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।
আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন