somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সম্মানজনক পেশার সম্মান কি রাখা হচ্ছে?

১৩ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সম্মান জনক পেশা। বাংলাদেশে সম্মানজনক পেশাগুলো হিসেবে সাধারনত ধরা হয় ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার এবং শিক্ষকতা কে। এসব পেশার সম্মান কিছু মানুষের কারণে নষ্ট হচ্ছে। শুরু টা করি ডাক্তারি পেশায় যাওয়ার আগ্রহী অর্থাৎ মেডিকেল স্টুডেন্ট দের নিয়ে। সুযোগ্য শিক্ষার্থীদের সাথে অনেক অযোগ্য শিক্ষার্থীও মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার আশায় ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে। এ দেশে প্রশ্নপত্র 'Leak' হয়ে যাওয়ার পরেও প্রশাসনের উদাসীনতার কারণে কত অযোগ্য শিক্ষার্থীরাও মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছে তারও হিসাব নেই। আগের বছরের টাই বা ভুলি কেমনে? আর প্রাইভেট মেডিকেলের ভর্তি পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পারলেও ডোনেশন দিয়ে ভর্তি হওয়া যায় বেশ সহজেই। এসব শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা কম, অহংকার বেশি করে। আপনারা রাস্তায় প্রতিনিয়ত এ্যাপ্রন পরা কিছু ছেলে-মেয়ে দেখতেই পাবেন। একজন মেডিকেল কলেজের শিক্ষক আক্ষেপ করে তো একদিন তার শিক্ষার্থীদের বলেই ফেলেন,"তোমরা অনেকেই রাস্তায় এ্যাপ্রন পরে ঘোরাঘুরি কর! তোমরা জান তো গার্মেন্টস কর্মীরাও এই এ্যাপ্রন পরে?" সবাই চুপ। তবে আমার মতে এতে গার্মেন্টস কর্মীদেরও অবমাননা করা হয়, যাই হোক। প্রয়োজন ছাড়া এসব ছেলে-মেয়েদের এ্যাপ্রন পরার কি দরকার,তা আমি বুঝি না। এসব শিক্ষার্থীরা যখন কোনভাবে সেকেন্ড-থার্ড ইয়ারে ওঠে, তাহলে তো কথাই নেই! ডাক্তার হওয়ার আগেই এরা যে কোন জায়গায় নিজেদের ডাক্তার পরিচিতি দিতে থাকে, কিছু গাধা তো তাদের কথা শুনে রীতিমত পূজা শুরু করে দেয়! এরা ভবিষ্যতে কত মানুষ মারবে চিকিৎসার নামে,কে জানে! ...এ তো গেল স্টুডেন্টদের কথা,এখন বর্তমান ডাক্তারদের কথায় আসি। জীবনে আমরা কি কম ডাক্তার দেখাই? একজন গেল এক ডাক্তারের কাছে, তার সমস্যা হল প্যালপিটিশন,সে প্যালপিটিশনের কারণে এর আগে একাধিকবার ব্লাডপ্রেশার মেপে স্বাভাবিকই পেয়েছিল তা। প্যালপিটিশন,হার্টবিট বেড়ে যাওয়া অতিরিক্ত স্ট্রেস কিংবা টেনশনের কারণেও হতে পারে যা ঐ রোগীটির ছিল। রোগীটি তাই ভেবে একজন সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে গেল। প্রথমে ডাক্তারের অ্যাসিসট্যান্ট রোগীর ব্লাডপ্রেশার মাপলেন, এবং দেখলেন প্রেশার অনেক হাই। কিছুক্ষন পর ডাক্তার যখন রোগীটি কে দেখে ব্লাডপ্রেশার মাপলেন দেখা গেল প্রেশার অনেক হাই না,তবে একটু হাই। ডাক্তার এও বললেন, তার এ্যাসিসট্যান্ট প্রেশার মাপতে ভুল করে ফেলেছে। তিনি যদি দ্বিতীয়বার প্রেশারটি না মাপতেন তবে রোগী টি হাই ব্লাড প্রেশার এর ঔষধ পেত। তিনি কতগুলো সাইকিয়াট্রিক ড্রাগ এর সাথে একটি "Mild" ব্লাড প্রেশারের ঔষধ ও দিলেন। তবে অনেকেই এর পক্ষপাতী না। কারণ এটা অনেকেই বলেন যে, ব্লাডপ্রেশার এর ঔষধ এভাবে চট করে দেয়া উচিত না। এবার একজন অবসরপ্রাপ্ত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ এর কথা বলি যিনি তো তার ক্লিনিকে রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। ব্যবসা? কেন বললাম,তা বলছি। একজন রোগী,তার প্রবলেম ও ছিল হার্টবিট বেড়ে যাওয়া। তিনি এর জন্য একজন ডাক্তারের কাছে গেছিলেন,হৃদরোগের সমস্ত টেস্ট তিনি করেছিলেন যার প্রত্যেকটির রিপোর্ট নরমাল ছিল। তবুও তিনি নিজে শিওর হওয়ার জন্য একজন সম্মানিত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন,এবং গেলেন। তিনি তার আগের সকল টেস্টের রিপোর্ট নিয়েই গেলেন। ডাক্তার রিপোর্টগুলো মনোযোগের সাথে দেখে মন্তব্য করলেন,"কোন সমস্যা তো দেখছি না।" ডাক্তার আগে রোগীর "Echocardiography" করালেন,এবং নরমাল পেলেন। তারপর তিনি রোগীকে সেই টেস্ট গুলোই করতে দিলেন, যেগুলো আগেই করা, এবং সেই রিপোর্ট তিনি একটু আগেই মনোযোগের সাথে দেখেছেন। তাকে তাই কথাটা বলা হলে তাঁর উত্তর হল "আমাদের এখানকার মেশিনগুলো অত্যন্ত ভাল!" রোগী চেম্বার থেকে হতাশ হয়ে বেরোলেন। বের হওয়ার পরও ডাক্তারের সহকারী(নাকি দালাল) রা পরামর্শ দিলেন "এখানেই টেস্টগুলো করাতে পারেন!" রোগীকে নিশ্চুপ দেখে তারা আর বেশী কিছু বলার সাহস পেলেন না। এবার কিছু ছোটখাট বিষয়ে বলি, কিছু মানুষ অনলাইন চ্যাটিং থেকে শুরু করে ফেসবুক পর্যন্ত নামের আগে ডাঃ পদবীটি ব্যবহার করে থাকে। তারা ডাক্তার কি না, সে বিষয়েও সন্দেহ আছে! আর যদি হয়েও থাকে, তবে নামের আগে ডাঃ লাগানোর প্রয়োজনীয়তা তো আমি দেখি না! নাকি তারা মেয়েদের আকৃষ্ট করতেই এসব করে? ....আমি মনে করি একজন সত্যিকারের ডাক্তার এই ডাঃ শব্দটা তার চেম্বার এবং প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেন। আর দেশে কত যে ভুয়া ডাক্তার অদ্ভুত সব কাল্পনিক ডিগ্রী ব্যবহার করে,সেসব পুরনো কথা হলেও মনে করলে হাসি পায়! B.H.S(UPPER), M.R.S এগুলো কি টাইপের ডিগ্রী তারাই বলতে পারবে!....একজন সত্যিকার ডাক্তার অসুস্থ্য রোগীদের সেবা করেন,তাতেই তিনি আনন্দ পান। নিজে অহংকার বাদ দিয়ে সহাস্যে রোগীদের সাথে বন্ধুর মতো কথা বলে তাদের সমস্যা ভালভাবে জেনে সেবা করেন।বলেন। এবং সবচে বড় কথা, সত্যিকারের ডাক্তার রা এমন ব্যাবসা করেন না। ইঞ্জিনিয়ারদের সম্পর্কে তেমন কিছু বলার নেই শুধু নামের আগে যারা অযথা "ইঞ্জিনিয়ার" পদবীটি ব্যবহার করেন তা ছাড়া। এবার আসি শিক্ষকতা পেশার ব্যাপারে। আমার মতে শিক্ষকতা হল উপরের সবগুলো পেশার মধ্যে সবচেয়ে সম্মানজনক পেশা। কারণ শিক্ষকদের কাছে শিক্ষা গ্রহন করেই তো সবাই এসব সম্মানিত পেশায় নিজেদের যুক্ত করতে পারছে। সব শিশুদের যদি জিজ্ঞেস করা হ্য়,"তুমি বড় হয়ে কি হতে চাও" উত্তরে বেশিরভাগ শিশুই বলবে ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার অথবা অন্য কোন কিছু। শিশুরা হয়তো বোঝে না এসব। কিন্তূু,আজকাল নতুন প্রজন্মের ছাত্র-ছাত্রীরাও কেউ শিক্ষক সহজে হতে চায় না। তাদের দোষ দিয়েই বা কি করব,অসংখ্য অসৎ শিক্ষকদের কারণেই এই পেশা তার মর্যাদা হারাচ্ছে। সৎ শিক্ষকদের বেতনে এখনো তাদের সংসার চলে না। অথচ, অসৎ শিক্ষকরা ঘুষ এর মাধ্যমে বেশ আরামদায়কভাবেই জীবন-যাপন করছে। দেশে অযোগ্য আর ভুয়া শিক্ষকের অভাব কম না। অনেক মানুষ শিক্ষকতা পেশার উপযুক্ত না হয়েও সুপারিশের মাধ্যমে চাকরি পাচ্ছে। আরে,কতনাম করা ভাল ভাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কাছে এমন অসংখ্য "কল" আসে যে, অমুক মন্ত্রি-এমপি আমার আত্মীয়। আমার ছেলেকে ভর্তি করেন! ওমা,এসব কি এদের সম্পত্তি? ভাল,এবং সৎ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষকদের হস্তক্ষেপ পড়লে তা অবশ্য সম্ভব হয়ে ওঠে না। এছাড়া, শিক্ষার্থীদের কুপ্রস্তাব দিয়ে মার্কস বাড়িয়ে দেয়ার প্রলোভন,শিক্ষার্থীদের লাঞ্চিত করার মাধ্যমে তারা এই সম্মানজনক পেশাকে কলঙ্কিত করছে। সবশেষে বলবো,একজন ডাক্তার সম্মান পান মানুষের সেবা করে। তিনি সম্মান কেড়ে নিতে চান না, অর্জন করেন। একজন প্রকৃত শিক্ষক তার শিক্ষার্থীদের জ্ঞান দান করেন, তাদের সাফল্যের মাধ্যমেই নিজের সাফল্য খুঁজে পান। আর ইঞ্জিনিয়াররা নিজেদের কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমেই সাফল্য অর্জন করেন। নামের আগে "ইঞ্জিনিয়ার" লাগিয়ে নয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ২:২১
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×