খাবার খেতে আমরা সবাই ভালবাসি, আর সেই খাবারটা যদি হয় প্রসিদ্ধ তাহলেতো কথাই নেই। আমরা বাংলাদেশীরা প্রচন্ড রসনা বিলাসি, আমরা খাবারের পিছনে যত খরচ করে থাকি তত খরচ মনে হয় দুনিয়ার অন্য কোন দেশের মানুষ করেনা। আমরা খেতে যেমন ভালবাসি তেমন মানুষকে খাওয়াতেও ভালবাসি। আমাদের দেশের এক এক জায়গা এক এক খাবারের জন্য বিখ্যাত, আজ আপনাদের তেমনি কিছু ঐতিহ্যবাহী খাবার সম্পর্কে জানবো
গুঠিয়ার সন্দেশ:
বরিশাল সদর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরের বানারীপাড়া উপজেলার একটি ইউনিয়ন গুঠিয়া। এখানে আপনি কেন যাবেন? সেটা বরিশালে এলেই টের পাবেন। অথবা ভোজনরসিক হলে আপনার জানাই আছে। কারণ গুঠিয়া আর সুস্বাদু সন্দেশ যেন একাকার। কেউ কেউ বলেন, বরিশালের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হলো গুঠিয়ার সন্দেশ। স্বাদে ও গুণে অনন্য এ সন্দেশে লেগে থাকে গরুর দুধের টাটকা ঘ্রাণ।
তাই বরিশালে আসা পর্যটকরা গুঠিয়ার সন্দেশ নিয়েই বাড়ি ফিরেন। গুঠিয়া সন্দেশের প্রধান বিক্রেতা বাংলাদেশ মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের স্বত্ত্বাধিকারী পরিমল ভদ্র জানান, গুঠিয়া সন্দেশের রেসিপি এসেছে পশ্চিম বঙ্গের নদীয়া অঞ্চল থেকে। আমার কাকা সতীশ ভদ্র আমাদের এ দোকানেই ছিলেন। এরপর বিএম কলেজের সামনে দোকান দেন। কাকার (সতীশ ভদ্র) মুখে শুনেছি, পাকিস্তান আমলে তিনি পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া এলাকায় এক কারিগরের কাছে তিনি এর রেসিপি শিখে নেন।
পরে ১৯৬২ সালে তিনি দেশে এসে নতুন ধরণের এই সন্দেশ তৈরি শুরু করেন। অচিরেই এই সন্দেশের খ্যাতি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে গুঠিয়া ছাড়াও বরিশাল নগরীর বেশ কয়েকটি শো’রুমে এই সন্দেশ পাওয়া যায়।
ভাঁপা পিঠা:
ভাঁপা পিঠা দেশের একটি ঐতিহ্যবাহী পিঠা যা প্রধানত শীত মৌসুমে প্রস্তুত ও খাওয়া হয়। এটি প্রধানত চালের গুড়া দিয়ে জলীয় বাষ্পের আঁচে তৈরি করা হয়। মিষ্টি করার জন্য দেয়া হয় গুড়।
স্বাদ বৃদ্ধির জন্য নারকেলের শাঁস দেয়া হয়। ঐতিহ্যগতভাবে একটি গ্রামীণ নাশতা হলেও এটি শহরে বহুল প্রচলিত হয়েছে। রাস্তাঘাটে এমন কি রেস্তরাঁতে আজকাল ভাঁপা পিঠা পাওয়া যায়।
বগুড়ার দই:
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রসিদ্ধ সব খাবারের মতো বগুড়ার দই যেকোনো প্রান্তে এক নামে যে কেউ চেনেন। সারাদেশে এর সুনাম আজ অবধি রয়েছে। বগুড়ার দই এখন ঢাকায় পাওয়া যায়। তবে স্বাদের মধ্যে বিস্তর ফারাক আছে। ঐতিহ্যবাহী বগুড়ার দইয়ের প্রসার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এত বেশি ব্র্যান্ড চলে এসেছে যে বাইরের কেউ সহজে আসল বগুড়ার দই চিনতে ভুল করেন, ফলে অনেকেরই বগুড়ার দই নিয়ে ভুল ধারণা চলে আসে।
বগুড়ার মিষ্টি ব্যবসায়ী দেবাশীষ ঘোষ জানান, বগুড়ার দই নকলের ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে। এখন বহু ব্র্যান্ড আছে এগুলোর কোনটা আসল আর কোনটা নকল তা বোঝা দায়।
উল্লেখযোগ্য কয়েকটি আসল দইয়ের প্রতিষ্ঠান হলো : হোটেল আকবরিয়ার দই, হোটেল শ্যামলীর দই, সেলিম হোটেলের দই, রফাতের দই, মহররম আলীর দই, বগুড়া দইঘরের দই, গৌরিগোপাল দধি ভাণ্ডারের দই-এগুলোই বেশ নামকরা। তার পরও সংশয়ে থাকতে হয় এটা আসল দই তো? দেশের প্রসিদ্ধ সব মিষ্টি দ্রব্যাদির জায়গায় এখন নকলের হাট বসেছে। এর মধ্য দিয়েই টিকে আছে দেশময় প্রসিদ্ধ বগুড়ার দই।
নাটোরের কাঁচাগোল্লা:
নাটোরের কাঁচাগোল্লা শুধু একটি মিষ্টির নামই নয়, একটি ইতিহাসেরও নাম। কাঁচাগোল্লা গোল নয়, লম্বা নয়, আবার কাঁচাও নয়। তবুও নাম তার কাঁচাগোল্লা। এই নামেই পরিচিতি দেশ-বিদেশে। আনুমানিক আড়াইশ বছর পূর্বেও নাটোরের কাঁচাগোল্লার কথা ইতিহাসে পাওয়া যায়। সুপ্রাচীন কাল থেকে মিষ্টি রসিকদের রসনা তৃপ্ত করে আসছে এই মিষ্টি।
তবে ১৭৫৭ সাল থেকে এই মিষ্টি ব্যাপকভাবে পরিচিতি লাভ করে। কাঁচাগোল্লা সৃষ্টির রয়েছে চমৎকার ইতিহাস। জনশ্রুতি আছে নিতান্ত দায়ে পড়েই নাকি তৈরি হয়েছিল এই মিষ্টি। শহরের লালবাজারের মধুসূদন পালের দোকান ছিল নাটোরের প্রসিদ্ধ মিষ্টির দোকান। দোকানে বেশ কয়েকটি বড় বড় চুলা ছিল। মধুসূদন এসব চুলায় দেড় থেকে দু’মণ ছানা দিয়ে রসগোল্লা, পানতোয়া, চমচম, কালো জাম প্রভৃতি মিষ্টি তৈরি করতেন। দোকানে কাজ করতেন দশ পনেরজন কর্মচারী। হঠাৎ একদিন মিষ্টির দোকানের কারিগর আসেনি। মধুসূদনের তো মাথায় হাত। এত ছানা এখন কী হবে?
এই চিন্তায় অস্থির তিনি। নষ্টের হাত থেকে রক্ষা পেতে ছানাতে তিনি চিনির রস ঢেলে জ্বাল দিয়ে নামিয়ে রাখতে বলেন। এরপর মুখে দিয়ে দেখা যায় ওই চিনিমেশানো ছানার দারুণ স্বাদ হয়েছে। নতুন মিষ্টির নাম কী রাখা হবে এ নিয়ে শুরু হয় চিন্তা ভাবনা।
যেহেতু চিনির রসে ডোবানোর পূর্বে ছানাকে কিছুই করতে হয়নি অর্থাৎ কাঁচা ছানাই চিনির রসে ঢালা হয়েছে, কিন্তু রসগোল্লার ছানাকে তেলে ভেজে চিনির রসে ডোবানো হয়। তাই তার নাম করণ হয়ে যায় কাঁচাগোল্লা।
কোথায় পাবেন ভালো কাঁচাগোল্লা : নাটোর শহরের নির্দিষ্ট কিছু দোকান ছাড়া এই মিষ্টি কিনলে ঠকতে পারেন। লালবাজারের মধুসূদন পালের দোকান, নীচা বাজারের কুণ্ডু মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, অনুকূল দধি ও মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, ষ্টেশন বাজারের নয়ন ও সকাল-সন্ধ্যাতেই খাঁটি কাঁচাগোল্লা পাওয়া যায়। ভ্রাম্যমান হকারদের কাছ থেকে কাঁচাগোল্লা কিনলে প্রতারিত হওয়া সম্ভাবনাই বেশি। হকাররা দামও যেমন বেশি নিতে পারে আবার নকল কাঁচাগোল্লা দিতে পারে।
পুরান ঢাকার বাকরখানি:
ঢাকার খাবারের সুনাম সর্বজনবিদিত। আদিকাল থেকেই ঢাকাবাসী ছিল খাদ্যরসিক এবং ভোজনবিলাসী। তাই ঢাকার নানা ঐতিহ্যবাহী খাবারের নাম আজো লোকমুখে শোনা যায়। এর মধ্যে অন্যতম বাকরখানি। ঐতিহ্যবাহী বাকরখানি আজো তার সুনাম-সুখ্যাতি ধরে রেখেছে। আর এর প্রচলন পুরান ঢাকায় এখনো সর্বাধিক।
একসময় ঢাকাবাসীর প্রধান খাবার ছিল রুটি। সকাল ও রাত দুই বেলাতেই শিরমাল, চাপাতি, নান, বোগদাদি, কাকচা, ফুলচা, নানকাতিয়া, বাকরখানি ইত্যাদি রুটি খেত। বাকরখানি ছিল এক নম্বরে। ঢাকার বাকরখানি সারাদেশে সর্বাধিক প্রসিদ্ধ ছিল। তখন উপঢৌকন হিসেবে এ রুটি পাঠানো হতো ভারত উপমহাদেশের নানা অঞ্চলে। বর্তমানেও বাকরখানির কদর একটুও কমেনি, বরং বেড়েছে।
বাকরখানি ময়দা দিয়ে তৈরি রুটি জাতীয় খাবার বিশেষ। এটি বাংলাদেশের পুরান ঢাকাবাসীদের সকালের নাস্তা হিসাবে একটি অতি প্রিয় খাবার। ময়দার খামির থেকে রুটি বানিয়ে তা মচমচে বা খাস্তা করে ভেজে বাকরখানি তৈরি করা হয়। ছোট-বড় বিভিন্ন আকারের বাকরখানি পাওয়া যায় পুরান ঢাকায়। বাকরখানিতে সাধারণত ময়দার সঙ্গে স্বাদবর্ধক আর কিছু দেয়া হয় না। জানা যায় চট্টগ্রাম অঞ্চলের বাকরখানি রসালো ও সুমিষ্ট। জনশ্রুতি অনুসারে, জমিদার আগা বাকের তথা আগা বাকির খাঁর নামানুসারে এই রুটির নামকরণ করা হয়েছে।
রাজধানীর চানখাঁরপুল পার হয়ে নাজিমুদ্দিন রোড। এ সড়কের দুই পাশে পর্যায়ক্রমে বয়েছে অনেকগুলো দোকান। এসব দোকানের বাকরখানিই মোড়কজাত করে শহরের অভিজাত এলাকা ধানমন্ডি, উত্তরা, বনানী, মিরপুর, গুলশানের ডিপার্টমেন্ট স্টোরে সরবরাহ করা হয়। চকবাজার, আমলিগোলা, নাজিরাবাজার, বংশাল, ইসলামবাগ, হাজারীবাগ, আবুল হাসনাত রোড, সিদ্দিকবাজার, বনগ্রাম, লক্ষ্মীবাজার, সূত্রাপুর, একরামপুর, নারিন্দা, দয়াগঞ্জ, গেন্ডারিয়াসহ পুরান ঢাকার প্রায় সব এলাকায় রয়েছে বাকরখানির দোকান।
সাধারণ বাকরখানি তৈরি হয় তিন রকমের- মিষ্টি, খাসতা ও মোলাম। পুরান ঢাকার বাসিন্দা গোলাম রহমান (৮৭) জানান, পঞ্চাশের দশক থেকেই তিনি এই বাকরখানি দেখে আসছেন। এই খাবারের চাহিদা এবং জনপ্রিয়তা তখন যেমন ছিল এখনো ঠিক তেমনই আছে, একটুও কমেনি। এখনকার নতুন প্রজন্মের এসব দোকানগুলোতে বিভিন্ন আকৃতি ও স্বাদের বাকরখানি পাওয়া যায়।
এগুলোর মধ্যে রয়েছে নারিকেল বাকরখানি, ঘিয়ের বাকরখানি, কাবাব বাকরখানি, চিনি বাকরখানি, ছানা বাকরখানি, নোনতা বাকরখানি, পনির বাকরখানি, মাংসের বাকরখা খাস্তা বাকরখানি অন্যতম। সাধারণ বাকরখানির প্রতিটির দাম দুই টাকা থেকে চার টাকা হলেও কাবাব, পনির বা মাংসে বানানো এ খাবারের দাম একটু বেশি। আগে ঢাকার বনেদি পরিবার নিজেদের বাড়িতেই বাকরখানি তৈরির আয়োজন ও কারিগর রাখত।
কুমিল্লার রসমালাইঃ
রসমালাইয়ের নাম বলতেই সবার আগে মনে হয় কুমিল্লার নাম। কুমিল্লা কান্দিরপাড় মনোহরপুরে রাজ রাজেশ্বরী কালী মন্দিরের সম্মুখে অবস্থিত মাতৃভান্ডার মিষ্টির দোকনে পাবেন সবচেয়ে উৎকৃষ্ট রসমলাই। বাইরের চাকচিক্যের চেয়ে স্বাদ এবং মানই এসব দোকানিদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কুমিল্লার রসমালাইয়ের নাম ভাঙ্গিয়ে অসংখ্য দোকান গড়ে উঠেছে, সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রেখেছে কুমিল্লার মাতৃভান্ডার এর রসমালাই বলে, আসলে এগুলো খাঁটি নয়। কুমিল্লার বিখ্যাত রসমালাই বিক্রেতা মাতৃভাণ্ডার তাদের ব্যবসার সুনাম রাখার জন্য কোথাও কোনো শাখা খুলেনি।
দরদামঃ মাতৃভান্ডারে ১ কেজি রসমলাইয়ের দাম ২৪০ টাকা আর ১ প্লেট রসমলাইয়ের দাম ৫০ টাকা। বিক্রেতারা জানায়, শুধু মাতৃভান্ডারেই প্রতিদিন গড়ে ৫/৬ মণ রসমলাই বিক্রি হয় যার অর্থ মূল্য প্রায় দেড় লাখ টাকা।
মুক্তাগাছার মণ্ডাঃ
কড়া আগুনে গরুর দুধ জ্বাল দিয়ে প্রথমে তৈরি করা হয় ছানা। একটি কাঠের পাত্রে রেখে গরম এ ছানা ঠাণ্ডা করা হয়। পানি ঝরে যাবার পর ছানার সঙ্গে পরিমাণমত চিনির সংমিশ্রণ ঘটানো হয়। এরপর প্রক্রিয়াজাত করে হাতে চ্যাপ্টা করে তৈরি করা হয় বিশেষ এক মিষ্টি। নাম মণ্ডা।
সরেজমিনে গিয়ে মণ্ডা তৈরির কলাকৌশলের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলানিউজকে এমন তথ্য জানান বর্তমানে মণ্ডা তৈরির অন্যতম কারিগর শ্রী রবীন্দ্র নাথ পাল ও রথীন্দ্র নাথ পাল। এ দুজন সুস্বাদু মণ্ডার স্বাপ্নিক ও প্রথম কারিগর গোপাল পালের পঞ্চম বংশধর। প্রক্রিয়াজাত করার পর দানাদার ও সামান্য আঠালো এ মণ্ডা মোড়ানো হয় ওয়েল পেপারে, বলেন রবীন্দ্র নাথ পাল।
ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় তৈরি হওয়ায় এ মিষ্টির নামের পাশে জড়িয়ে রয়েছে রাজা-জমিদারদের স্মৃতিবাহী মুক্তাগাছার নাম। ময়মনসিংহের মিষ্টির ঐতিহ্য এ মণ্ডা। যুগের পর যুগ ধরে এ মণ্ডা শুধু দেশে নয়, বিদেশেও সমাদৃত।
স্থানীয় বাসিন্দারা যখন কোথাও যান তখন উপহার হিসেবে এ মণ্ডা নিয়ে যান। আর বাইরের লোক ময়মনসিংহে এলে লোভনীয় মুক্তাগাছার মণ্ডার স্বাদ নিতে ভোলেন না। মুক্তাগাছায় জমিদারী পরগণায় রয়েছে সুপ্রাচীন ঐতিহ্য।
অনেক কিছুই কালপরিক্রমায় বিলুপ্তির পথে গেলেও দিনকে দিন ঐতিহ্য হিসেবে টিকে রয়েছে দেশ সেরা মিষ্টান্ন মণ্ডা। উপমহাদেশেও রয়েছে এর নাম ও পরিচিতি।
ময়মনসিংহ শহর থেকে মাত্র ১৬ কিলোমিটার দূরের উপজেলা মুক্তাগাছা। এ উপজেলা সদরের মাঝখানে রাজবাড়ির অদূরে এ মণ্ডা তৈরির কারখানা। নাম আদি ও অকৃত্রিম গোপাল পালের প্রসিদ্ধ মণ্ডার দোকান। এখন থেকে প্রায় ২শ’ বছর আগে ১৮২৪ সালে গোপাল পাল এক সন্ন্যাসীর কাছ থেকে স্বপ্নাদেশের মাধ্যমে এ মণ্ডা তৈরির নির্দেশনা ও ফর্মুলা পেয়েছিলেন।
পরবর্তীতে বংশ পরম্পরায় তার উত্তরসূরীরা মণ্ডা তৈরিকে পারিবারিক ব্যবসা হিসেবে নেন। মুক্তাগাছার জমিদার মহারাজা সূর্যকান্ত আচার্য্য চৌধুরী ওই সময়ে গোপাল পালের বানানো এ মণ্ডা খেয়ে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছিলেন।
মুক্তাগাছার মণ্ডা এক প্রকার সন্দেশ। চ্যাপ্টা আকৃতির এ মণ্ডা তৈরির ফর্মুলা এখন পর্যন্ত ওই পরিবারটির বাইরে যায়নি। এ মিষ্টান্ন তৈরির কৌশলও বেশ গোপনীয়। বৈশিষ্ট্য স্বতন্ত্র ও চমকপ্রদ। একেবারেই নরম এ মণ্ডা মুখে দিলেই মিলিয়ে যায়।
টাঙ্গাইলের চমচমঃ
টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির ঐতিহ্যবাহী এ মিষ্টি স্বাদে, গন্ধে ও তৃপ্তিতে অতুলনীয়। লালচে রঙের এই সুস্বাদু চমচমের উপরিভাগে চিনির আবরণ, ভেতরের অংশ রসাল নরম ও কিছুটা ফাঁপা। চমচমের গুণগত মান আর স্বাদ মূলত পানি, খাটি দুধ ও কারিগরের হাতের কৌসলের ওপরই নির্ভরশীল।
প্রথমে দুধ থেকে ছানা তৈরী করে তারপর ছানাকে গোল করে মিষ্টির আকার দেওয়া হয়। কিছু সময় পর গোল আকারের ছানাগুলো ফুটন্ত কড়া চিনির সিরায় প্রায় ৪৫ মিনিট ভাজা হয়। ঠাণ্ডা হওয়ার পর গোল মিষ্টি ক্ষীরের মধ্যে গড়িয়ে তৈরী হয় চমচম।
খাঁটি মানের চমচম পাবেন টাঙ্গাইলের কালিবাড়ি বাজারের মিষ্টির দোকানগুলোতেও; খোকা ঘোষের জয়কালী মিষ্টান্ন ভান্ডার, গোপাল মিষ্টান্ন ভান্ডার এদের মধ্যে অন্যতম। প্রতি কেজি চমচম বর্তমানে বিক্রি হয় ২০০ টাকায়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখীঃ
ছানার তৈরি মিষ্টিটি চার কোনা, ক্ষুদ্রাকার ও শক্ত। এর ওপর জমাটবাঁধা চিনির প্রলেপ থাকে। খেতে খুবই সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। প্রতি কেজি ছানামুখী বিক্রি হয় ৪০০ থেকে ৪২০ টাকায়।
চলুন ছানামুখী তৈরির পদ্ধতিটি জেনে নিই
উপকরণঃ
১ কেজি দুধের ছানা,
চিনি ১ কাপ,
তেজপাতা ১ টি,
এলাচ ৫ টি,
আইসিং সুগার।
পদ্ধতিঃ
১। ছানা হয়ে গেলে তা ছেঁকে পানি ঝরতে রেখে দিন। তারপর ছানা ভালো করে মেখে চারকোণা আকারের মণ্ড তৈরি করে নিন। চাইলে গোল বা ইচ্ছে মতো অন্য আকারও দিতে পারেন।
২। ১ কাপ চিনি ও ২ কাপ পানিতে তেজপাতা ও এলাচ দিয়ে চিনির সিরা তৈরি করে নিন।
৩। সিরা সঠিক ভাবে ঘন হয়ে এলে চুলার আঁচ কমিয়ে, ছানার তৈরি মিষ্টিগুলো দিয়ে দিন।
৪। যখন ছানাগুলো উপরে ভেসে উঠবে তখন নামিয়ে আইসিং সুগারের ওপর গড়িয়ে রেখে দিন। ঠাণ্ডা হলে পরিবেশন করুন।
সাত লেয়ারের চাঃ
রং ধনুর সাত রং হয় কিন্তু এক কাপ চায়ে সাত রং ! গল্প নয় সত্যি; সাত লেয়ারের চা খেতে চান ? চলে আসুন শ্রীমঙ্গল রমেশ রামগৌড়ের নীলকন্ঠ চা স্টলে। শহরতলীর কালীঘাট সড়কে ১৪ বিজিবি’র ক্যান্টিনে নীলকন্ঠ স্টলের অবস্থান।
কৌশলের মাধ্যমে একাধিক স্তরের চা তিনি তৈরি করছেন। এ বিষয়টি সম্পূর্ণই তার চিন্তা-চেতনার ফসল। এসব চা তৈরি করতে কোন রাসায়নিক দ্রব্যাদি ব্যবহার করা হয় না। শুধুমাত্র ক্লোন টি এবং বিভিন্ন ধরনের মসলার সংমিশ্রনে তিনি এক গ্লাসে একাধিক স্তরের চা তৈরি করে থাকেন।
বর্তমানে তাঁর চা ক্যাবিনে সাত লেয়ারের চা ৭০ টাকা, ছয় লেয়ারের চা ৬০ টাকা,পাঁচ লেয়ারের চা ৫০ টাকা, চার লেয়ারের চা ৪০ টাকা, তিন লেয়ারের চা ২০ টাকা, দুই লেয়ারের চা ১০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। গ্রীন চা, আদা চা, লাল চা, লেবু চা পাঁচ টাকা করে। তবে দামের পার্থক্য যাই হোক না কেন, সব ক্ষেত্রেই তার তৈরী চায়ের স্বাদটি অসাধারণ।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:১৯