তপু অনেক সময় নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে । সে ঘুড়ি উড়ায় না কিন্তু দু পক্ষের এই প্রতিযোগিতা তার পছন্দ । কারণ দিনের এই একমাত্র সময়ে সে রিমি কে দেখতে পায় । এটা রিমি হয়তো জানেনা , হয়তো না জানার ভান করে , তারপরেও রিমি প্রতিদিন বিকেলে দোতালা বাসাটার ছাঁদে আসে । তারা দুজন একই ভার্সিটি তে পড়ে , পথ চলতে হয়তো দু একবার একজন আরেকজনের চোখের দিকে তাকায়, তারপর যে যার মতো চলে যায় । বড্ড যান্ত্রিক এই ঢাকা শহরে আবেগের কোন মূল্য নেই ।
বিকেলের আলো কমতে থাকলে রিমি আকাশে টিকে থাকা অবশিষ্ট ঘুড়িগুলোর প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে । তবে সে ঠিকই দেখে গলির শেষ মাথায় সেই ছেলেটি প্রতিদিনের মত দাড়িয়ে আছে । রিমি প্রতিদিনের মতো দেখেও না দেখার ভান করে ।
" দ্যাখ আপু , সেই ছেলেটা আজকেও ঠায় দাড়িয়ে ! " পাশ থেকে রিমির ছোট বোন সিমরান বলে উঠে ।
" তা নিয়ে ভেবে তোর মাথা ব্যাথা করতে হবেনা । " - রিমি সিমরান কে ধমকে দেয় । রিমির ধমক খেয়ে সিমরান মন খারাপ করে । সে ছাঁদ থেকে নেমে চলে যায় । রিমি তখনো অজানা কারণে ছাঁদে দাঁড়িয়ে থাকে । রিমির মনে পরস্পর বিরোধী চিন্তাধারা কাজ করে । শেষ পর্যন্ত আবেগ ও যুক্তির যুদ্ধে আবেগের জয় হয় । রিমি একটি নীল সাদা ঘুড়ি হাতে তুলে নেয় ।
তপু রিমির দিকে তাকিয়ে থাকে । এভাবে তাকিয়ে থাকাটা বড্ড বিচ্ছিরি লাগে তারপরেও তপু তাকিয়ে থাকে । তপু জানে রিমি তাকে দেখেছে । হয়তো এখনি রিমি ধমকে দেবে , পাড়ার মুরুব্বী দের কাছে তপুর নামে নালিশ দিবে । তপু সাহসে ভর করে দাঁড়ায় । বিকেলের আলো কমে আসার সাথে সাথে রাস্তায় মানুষের সংখ্যাও কমে আসে । হঠাৎ তপুর পায়ের কাছে একটা ঘুড়ি এসে পরে । নীল ও সাদা রঙে রাঙানো সেই ঘুড়ির সাথে একটি সাদা কাগজ আটকে আছে । তপু অবাক হয়ে ঘুড়ি ও কাগজটি কুঁড়িয়ে নেয় ।
রিমি তপুর দিকে তাকিয়ে থাকে । সে যেন তপুর মুখের ভাব পড়তে পারে । রিমি তপুর মুখের হাসি দেখে বুঝতে পারে কাল বিকেলে তপু তার দেয়া ঘুড়িটি উরাবে । রিমি দেখল তপু দুহাত নেড়ে বিদায় জানাচ্ছে । রিমি হাসিমুখে ছোট্ট করে মাথা ঝাঁকিয়ে সায় দিলো । যখন সন্ধ্যা নামে তখন রিমি ও তপুর চোখে নূতন স্বপ্ন । হয়তো তা সাময়িক , তবুও ।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৩৭