“ তুই কি আমার তুমি হবি?- পর্ব ২
তুই কি আমার তুমি হবি- পর্ব ৩
তুই কি আমার তুমি হবি?- পর্ব ৪
বুয়েট এর টার্ম ফাইনাল, ব্যাপ্তির দিক দিয়া মহাকাব্য ( এইবার ত ৫০ দিন ব্যাপি এই মহাযজ্ঞ চল্লো)। আর একেক্টা পরীক্ষা যেন ছোটগল্প- শেষ হইয়াও হয় না শেষ , কী আজাইরা প্রশ্ন করছে, পার্শিয়াল পাবো কিনা, এমুন বালের মত ক্যাল্কুলেশন ভুল আমি কেম্নে করলাম,আরেক্টু সময় দিলেই আরেকটা গ্রেড তুইলা ফেলতাম-এই জাতীয় চিরন্তন ভ্যাদলা প্যাচালের ভীড়ে কখন যে ধাক্কা খাইসি ওর সাথে খেয়াল ই করি নাই । আমার আবার মুখের লাইসেন্স নাই, তার উপর পরীক্ষা ভালো দেই নাই,মেজাজ চ্রম বিলা ।মুখস্থ বুলির মত বাপ-মা তুইলা গালি দিতে যেই না মুখ তুলছি অম্নি দেখি ও ।
আমি কি বল্বো,তার আগেই শুরু হয়ে গেল-
“কীরে, পরীক্ষা খুব ভালো দিছিস বুঝলাম,তাই বলে রাস্তাঘাটে মানুষের গায়ে পড়ে এটা জানাইতে হবে?”
এক্টু আগেই মুখ থেকে প্রায় বের হয়ে যাওয়া গালিটা ম্যালা কষ্টে গিলে ফেলে বললাম-
“তরে কইসে,সবাইরে নিজের মত ভাব্লে হইব? সবাই তর মত আতেল না ।”
অবশ্য এই তথা কথিত আতেল মেয়েটা না থাকলে আমার বাবা-মার ইঞ্জিনিয়ার পোলার শখ সেই প্রথম টার্মেই ঘুইচা যাইত, সেইটা আমার থেকে ভাল আর কে জানে । এই যে কেবল ম্যাশিন-১ পরীক্ষায় আমি টাইনা-টুইনা উত্রায় যাবো,তার সিংহভাগ( নাকি সিংহীভাগ) কৃতিত্ত্ব এই মেয়েটার ।
“কেমন দিলি?পারছিস ত? দাগায়া দিসিলাম ত সবই”
জবাবে একটু আগেই লিখে আসা ইন্ডাক্সন মোটর স্টার্টিং এর উত্তরের থেকেও অপ্রাসংগিক ভাবে বল্লাম,
“আরে লিখছি লিখছি, টেনশন নিস কেন এত?”
৯৯ রানে নট আউট থেকে যাওয়া ব্যাটসম্যানের মত আক্ষেপের সুরে বলল-
“আচ্ছা নেব না,যাহ। ৮ নম্বর টা পুরা করছিস?আমার পুরা মিলে নাই ”
চামে দিয়া পার্ট নেবার সুযোগ কে হাতছাড়া করে, তাও আবার এই সাংঘাতিক রকম ভাল ছাত্রী সুন্দরীর সাম্নে।আমার ও ব্যতিক্রম হবার কোনো শখ নাই,তাই জোরসে বলি-
“এক্সাম স্ট্র্যাটেজী বৈলা এক্টা কথা আসে, জানিসনা ত, সারাদিন খালি আতেলের মত পড়লেই এইগুলান শিখা যায় না বুঝলি। লিমিটেড রিসোর্স এর মোস্ট ইফিসিয়েন্ট ব্যবহার নিশ্চিত করতে জানতে হয়। তুই কঠিন ম্যাথ করতে গেছিস ক্যান ? ৮ করলে নম্বর বেশী দিবে? আমি তো ৫,৬,৭ করসি একটা ত হবেই,আর ২টা তে পার্শিয়াল ১০ পাব, শিউর”
ওর অভিব্যক্তিহীন মুখশ্রী দেখে আমার ত আর খুশি তে ধরে নাহ। খুশিতে মনে মনে লাড্ডু খাইতে খাইতে ভাবি- দিছি টিচার ফাইটারের থোতা মুখ ভোতা কইরা
“থাক থাক, এখন দুঃখ কইরা লাভ নাই । বুঝলি তো না, চাইলেই আমি ফোর পাইতে পারি,শুধু আমি তোদের মত এত আতেল না বলে রক্ষে, নাইলে তোরা বেইল পাইতি?”
অন্যদিন হলে এতক্ষণে নির্ঘাত ও হাসতে হাসতে আমার পিঠে দুই তিনটা থাপ্পড় বসাইত, নাইলে নিদেনপক্ষে কুত্তা-হারামী টাইপ কয়েকটা নিরামিষ গালি। কিন্তু আজ কি হলো,এখনো আমার পিঠ বা কর্ণকুহরে কোন অনুভূতি নাই।
একটু বিরক্তি নিয়াই বললাম-
“কিরে, একটু বেশী হয়া গেল না, আমি না হয় তোর মত টিচার ফাইটার নাহ, তাই বইলা আমাদের কি কিছু পারতে নাই, এত অবাক হবার কি আসে? ভাব তো দেইখা মনে হইতেছে ফেল করবি।মাইয়া মানুষের যত্তসব নখরা”
প্রলয়ংকারী ঝড়ের আগের মত সব এক অদ্ভুত নির্লিপ্ততা ওর চোখে-মুখে – এই ভাবতে ভাবতেই পিঠে আছড়ে পড়লো ওর রিখটার স্কেলে ৮ মাত্রার থাপ্পড়, আর মুখে অনবরত যে তুবড়ি ছুটলো তাতে আমি এই রুদ্রমূর্তি রমণীর সামনে ,আমার এক্সাম স্ট্র্যাটেজী সহ খড়কুটোর মত ভেসে গেলাম ।রাগে গজ-গজ করতে সে হেটে চলে যাবার আগে আরো যা যা ঘটলো তার সারাংশ এই যে- এক্সাম স্ট্র্যাটেজী বলে আমি যেটা নিয়া এতক্ষণ তাফালিং কইরা গেলাম, সেই ৮ নং প্রশ্নটা আসলে “কম্পলসারি” ছিল । পুরাই এক সেটের দফা-রফা।
যাবার সময় ওর চোখের কোণে অশ্রুর মত কি ঝিলিক দিল কি দিল না-এই নিয়ে মনস্থির করতে করতে দেখি আবার ফিরে এসেছে । টকটকে লাল হয়ে যাওয়া নাকের নিচে কয়েক ফোটা ঘাম জানান দিচ্ছে যে এই আবার এক পশলা ধেয়ে আসছে আমার দিকে।কিন্তু অবাক করে দিয়ে দেখি আমাকেই উলটা প্রশ্ন- “ তুই কি জীবনেও শুধ্রাবি নাহ? ভাবিস কী সারাক্ষণ?চুপ করে আছিস ক্যান? ল্যাগ খেয়ে জুনিয়রের সাথে ক্লাস কর,আমার কি?” বলেই হাটা শুরু করলো উলটা দিকে।
পরীক্ষায় ভরাডুবি না বরং আমার সামনের এই আবেগাপ্লুত, ক্রোধান্ধ ,অঘটনঘটনপটিয়সী এই সুন্দরীর জন্য আমার মনের কোন গহীনে যেন বাজছে ব্যাথার রাগীনি ।ও হেটে চলে যাচ্ছে।আমি দেখছি । পড়ন্ত বিকালের এই আলোতে যে ওকে দরকারের চাইতেও বেশী ই সুন্দর লাগে তা কি জানে এই রমণী ? ইচ্ছে করছে এক ছুটে যাই,হাতটা ধরে বলি “না, আমি শুধ্রাবো নাহ,অগোছালো এই আমি এর জন্য যদি একটা তুই থাকিস,তো আমি শুধ্রাবো নাহ। শয়নে স্বপনে,নিদ্রায়-জাগরণে,আকারে-ইংগিতে,ভাবে-ভংগিতে শুধুই তোকে ভাবি।” ইচ্ছা করে মনের সবটুকু ভালোবাসা উজাড় করে জিজ্ঞাস করি- “ তুই কি আমার তুমি হবি?”
বিঃদ্রঃ উপ্রোক্ত ঘটনা ৬০% সইত্য আর ৩৫% কল্পনা, বাকী ৫% ডাটা এরর ।