প্রত্যাগত
একটানা গরম পড়ার পর আজ সকালে উত্তর কোনে মেঘ ঘন হতে শুরু করেছে সেই সকাল থেকে। বরফ ঠান্ডা বাতাস থেমে থেমে বয়ে যাচ্ছে। কোন কারন ছাড়া পাখি গুলো আকাশে চক্কর খাচ্ছে, আনন্দে নাকি ঘোর বিপদের আশংকায় পাখিরা এমন করছে আবু মুসা তা বুঝতে পারছেনা। একটু দূরের মাঠে যে গরুগুলো ঘাস খাচ্ছিল তারা কিছু সময়ের জন্য অদ্ভুতভাবে ছোটাছুটি শেষে আবার খাওয়ায় মনযোগ দিয়েছে। উত্তর কোনের মেঘ আরো ঘন হয়ে এখন মাথার উপর স্হির হয়ে আছে; শুধু নেমে আসার অপেক্ষায়। হঠাৎ করে জোর বাতাস বইতে শুরু করল, বৃষ্টির সকল সমভাবনা সমাপ্তি টেনে মেঘমালা খন্ড খন্ড হয়ে এখন ছোটাছুটি শুরু করে দিয়েছে। আবু মুসার মন থেকে একটা চাপ বাস্পীভূত হয়ে উত্তরের বাতাসের সাথে মিশে ঘূর্ণি খেতে খেতে আম গাছের পাতায় কাঁপন ধরিয়ে পাকা ধানের শীষে ঢেউ খেলিয়ে দক্ষিনের বড় রাস্তা পেরিয়ে পাল পাড়ার গৃহ বধূর খোলা চুলে বিলি কেটে দিয়ে আবার সজনে গাছের কচি ডাল খানা মটকিয়ে আরো দক্ষিনে সরে যাচ্ছে। মনটা প্রসন্ন হতে শুরু করেছে আবু মুসার। কাল ভোররাতে বাড়ী ফেরার আগ মূহূর্ত পর্যন্ত যে স্বপ্ন তাকে মোহাচ্ছন্ন করে রেখেছিল তা আবার শুরু হয়েছে। হাঁটুজলা বিলটাকে পাশ কাটিয়ে ছোট খালটা আড়াআড়ি পার হয়ে আবু মুসা ধান ক্ষেতের কাছে চলে এসেছে। পাকা ধানের মৌ মৌ গন্ধ বিরাজমান স্বপ্নটাকে আরো তাতিঁয়ে দিচ্ছে। কালো আর নীলচে রং মেশানো ডোরা কাটা একটা বিষহীন চেলা সাপ আবু মুসার দিকে এক পলক তাকিয়ে নির্ভয়ে ধান ক্ষেতের মধ্য ঢুকে পড়ল। ধান ক্ষেতের দিকে তাকিয়ে আবু মুসার বুকটা ভরে ওঠে। এবারের ফলনটা অনেক বেশি। ধানের ভারে গাছগুলো একেবারে নুয়ে পড়েছে। চার পাশের সব ক্ষেতের ধান কাটা হয়ে গেছে। ফাঁকা মাঠে আবু মুসার ধানক্ষেতটাকে দূর থেকে দ্বীপের মত মনে হয়।
বিলের পশ্চিম ধারে প্রকাণ্ড দুটি আমগাছের পাশের একদাগে দুই বিঘা জমিটাই আবু মুসার। তার মায়ের রেখে যাওয়া একমাত্র সম্পত্তি। বিলের ধারে হওয়ার কারনে এ জমিতে বছরে একবার মাত্র ফসল হয় ।
ফসল কাটার বন্দোবস্ত করার চিন্তা করতে করতে আবু মুসা বাড়ীর পথ ধরেছে।
(চলবে)