"প্রেয়সীর আগমনে"
প্রেয়সী , আমার গ্রামে তুমি এস,
হেমন্তের নরম বিকেলে।
যখন ,আমি বসে থাকি নির্জন মাঠে;
ধান ক্ষেতের পাশে,আঁল ঘেঁষে; ছোট্ট গাছটির নীচে।
আমার পেছনে থাকে, একটি মাঝারি বন।
এখানকার সমস্ত নিরবতা ,ভেঙ্গে খান খান করে দেয়,
শালিক আর পেচকের বিরামহীন কিচির মিচির।
কিন্তু ; ভাঙ্গেনা আমার মৌনতা!
আমি শব্দহীন কথা বলি ; ঘুঘু আর কাঠবিড়ালীর সাথে হেসে;
আমার থেকে একটু দুরে, কেটে নিয়ে যাওয়া ধান ক্ষেতের উচ্ছিস্ঠ খায় তারা।
ভাগাভাগি করে শালিক ,পেঁচক , ঘুঘু;
আর দোয়েল চুড়ুইয়ের সাথে।
প্রেয়সী, আমার গ্রামে তুমি এস, হেমন্তের নরম বিকেলে।
তোমার আগমনী বার্তা ; আমি আগেই জানিয়ে রাখব এখানকার প্রকৃতিকে।
খেজুর গাছের সারি ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকবে, তোমারই দুপাশে,
তোমাকে অভিবাদন জানাবে বলে।
বাতাসের একটু ধাক্কায় ধানগাছ গুলো মাথা নোয়াবে,
তোমাকে সম্মান করবে বলে।
তুমি এস মাঠের পশ্চিম থেকে; সূর্যটাকে পিঠ করে,
বিকেলের সোনালী আলোর ছটা ঠিকরে পডবে,
তোমার মাথা থেকে পা পর্যন্ত।
আর তখন তোমাকে মনে হবে,
যেন গ্রীকদের দেবী, নেমে আসছে সূর্যের পেট থেকে।
তুমি এস ধীরে , নূপুর পায়ে।
তোমার তিনগুন ছায়া থাকবে, তোমারই সামনে নত;
তাকে অনুসরন করে এস।
আর বসো ঠিক আমার পাশেই; আমি মোটেও চমকাব না,
কারণ , আমিতো ছিলাম তোমারই প্রতীক্ষাতে।
সমস্ত দিনের শেষে পশ্চিমে সন্ধ্যা নামবে ধীরে,
শ্রান্ত সব পাখি ঘরে ফিরবে মৃদু আলোতে।
দিনের পৃথিবী বিশ্রামে যায় গৌধুলীর রাঙা আলোয়,
রাতের পৃথিবী প্রস্তুত হয় নিশাচারী সবে জাগিয়ে।
চিকন সবুজ সাপটির অলস চাহনীতে পতঙ্গ সজাগ হয়;
আড়ামোড়া ভেঙ্গে ক্ষিপ্র পা ফেলে এগোয় সন্ধ্যা শিয়াল।
তুমি জাগবে আর আমিও, তোলপাড় ওঠবে ধমনীতে,শিরায়;
পূর্বাকাশে আগুন জ্বালিয়ে, এসময় উঠতে থাকবে পূর্নিমার পূর্ন চাঁদ;
আমরা তখনও উঠবনা মাঠ ছেড়ে।
তোমার নত চোখ খুঁজবে আমার আমিকে;
ঘাঁসের কঁচি ডগা পুলকিত হবে তোমার আঙ্গুলের মৃদু আঁচড়ে।
ঝিঁঝি পোকার একটানা ডাক নেশা ধরাবে দুজনকে;
এ কী হল আজ ! দুজনের?
তোমার থেকে তুমি আর আমার থেকে আমি বেরিয়ে;
ভেসে চলেছি চারপাশে, গাছের পাতায়;
কখনও শূন্য হতে মহাশূন্যে, আবার মূহুর্তে জোনাকির সাথে মিশে আলো হয়ে।
আমরা এগিয়ে যাব মাঝারি বনের আরো গভীরে;
পূর্নিমার চাঁদ এবার আলো ছড়াবে ঠিক মাথার উপর।
তেঁতুল পাতার ফাঁক গলে জোৎসনা পড়বে গায়ে;
ঘাসের মাদুরের উপর দুজন বসব মুখামুখি।
আর অপলক তাকিয়ে থাকব তোমার দিকে;
অনেক সেকেন্ড , অনেক মিনিট, অনেক ঘন্টা।
হয়ত অনন্ত কাল ধরে !
সেলিম মাহমুদ
লন্ডন ।