জাহান্নামে যাদেরকে কম শাস্তি দেয়া হবে
ঐ সমস্ত জাহান্নামী সম্পর্কে রাসূলুলাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যাদেরকে সব চেয়ে কম শাস্তি দেয়া হবে,
জাহান্নামে সবচেয়ে কম শাস্তি দেয়া হবে তাকে, যাকে এক জোড়া আগুনের চপ্পল পরানো হবে এবং তার ফিতা দুটোও হবে আগুনের তৈরী। এতেই তার মগজ এমনভাবে ফুটতে থাকবে, যেভাবে চুলোর উপরে ডেকচীতে পানি ফুটে। সে মনে করতে থাকবে, জাহান্নামে এর চেয়ে কঠিন আজাব আর কারো হয়না। (বুখারী, মুসলিম)
অন্য হাদীসে আছেঃ
জাহান্নামীদের মধ্যে সর্বপেক্ষা কম আজাব হবে আবু তালিবের। তাকে মাত্র এক জোড়া জুতা পরানো হবে, এতেই তার মগজ গলে গলে পড়তে থাকবে। (বুখারী)
জাহান্নামীদের আকার আকৃতির বিস্তৃতি ঘটিয়ে আজাব দেয়া হবে
পৃথিবীর মতো এতো সুন্দর চেহারা বা আকার আকৃতি জাহান্নামীদের থাকবে না। সেদিন তাদের চেহারাকে বিকৃত ও কুৎসিত করে দেয়া হবে। বলা হচ্ছে,
(অপরদিকে) যারা মন্দ কাজ করেছে, (তাদের) মন্দের প্রতিফল তেমন মন্দই হবে, অপমান তাদের আচ্ছন্ন করে ফেলবে; সেদিন আল্লাহর (আযাব) থেকে তাদের রক্ষাকারী কেউই থাকবে না, (তাদের চেহারা এমনি কালো হবে) যেন রাতের অন্ধকার ছিঁড়ে (তার) একটি টুক্রো তাদের মুখের ওপর ছেয়ে দেয়া হয়েছে, এরা হচ্ছে জাহান্নামের অধিবাসী, সেখানে তারা চিরদিন থাকবে। (সূরা ইউনুসঃ আয়াত ২৭)
অন্যত্র বলা হয়েছেঃ
(জাহান্নামের) আগুন তাদের মুখমন্ডল জ্বালিয়ে দেবে, তাতে (তাদের) চেহারা (জ্বলে) বীভৎস হয়ে যাবে। (সূরা মোমেনুনঃ আয়াত ১০৪)
হযরত আবদুলাহ ইবনে আমর (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, জাহান্নামী কোন ব্যক্তিকে যদি পৃথিবীতে ফেরত পাঠানো হতো তবে তার বীভৎস চেহারা দেখে এবং গায়ের দুর্গন্ধে পৃথিবীবাসী মারা যেতো। একথা বলে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন। (তারগীব ওয়া তারহীব)
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
নিশ্চয়ই (জাহান্নামে) কাফিরদের চামড়া বিয়াল্লিশ গজ পুরু হবে এবং এক একটি দাঁত উহুদ পাহাড়ের সমান হবে। জাহান্নামে একজন জাহান্নামী যে স্থান জুড়ে অবস্থান করবে তা মক্কা হতে মদীনার দূরত্বের সমান। (তিরমিযি)
অন্য হাদীসে আছে-
জাহান্নামে কাফিরদের দু'কাধের মধ্যবর্তী দূরত্ব হবে, একজন অশ্বারোহী তিনদিন পথ চলে যতোদূর যেতে পারে ততোটুকু। (মুসলিম)
জাহান্নামে কাফিরদের জিহবাকে এক থেকে দু ফারসাখ (তিন মাইল) দীর্ঘ করে দেয়া হবে যার উপর লোক চলাচল করবে। (তারগীব ওয়া তারহীব, আহমদ তিরমিযি)
রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন,
আমার উম্মতের কোন কোন ব্যক্তিকে জাহান্নামে এতো বিশাল আকৃতির করে দেয়া হবে যে, একাই সে জাহান্নামের একটি কোনকে পূর্ণ করে দেবে। (তারগীব ওয়া তারহীব)
জাহান্নামের শাস্তির যে ধরন, তা পুরোপুরি অনুভব করতে হলে দৈহিক আকার আকৃতির পরিবর্তনের প্রয়োজন, এটা স্বাভাবিক জ্ঞান ও বুদ্ধির দাবী। আকার আকৃতি যতো বড়ো হয় শাস্তির তীব্রতাও ততো বেশী অনুভূত হয়। যেমন একটি মশাকে কোন কঠিন শাস্তি দেয়া যায় না, কিন্তু একটি বিড়াল, ছাগল অথবা তার চেয়ে বড়ো কোন প্রাণীকে ইচ্ছেমতো যে কোন শাস্তি দেয়া যায়। ঠিক তেমনিভাবে আল্লাহ্ও পাপীদেরকে আকার আকৃতি বৃদ্ধি করে দেবেন, যেনো আল্লাহর শাস্তি পুরোপুরি ভোগ করতে পারে।
জাহান্নামীদের চোখের পানি
হযরত আনাস (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
হে মানুষ ! তোমরা কাঁদো। যদি পারো তবে কান্নার চেষ্টা করো। কেননা জাহান্নামীরা জাহান্নামে বসে এতো বেশী কাঁদবে যে, তাদের গন্ডদ্বয়ে নালার সৃষ্টি হবে। কাঁদতে কাঁদতে তাদের চোখের পানি শেষ হয়ে যাবে। অবশেষে রক্ত ঝড়তে থাকবে এবং ক্ষত বিক্ষত হয়ে যাবে। এতো অধিক পরিমাণে পানি ও রক্ত প্রবাহিত হবে যে, তাতে নৌকা ছেড়ে দিলে অনায়াসে তা চলতে থাকবে। (শরহে সুন্নাহ)
গায়ের চামড়া পরিবর্তন করে জ্বালানো হবে
যারা আমার আয়াতসমূহ অস্বীকার করেছে তাদের আমি অচিরেই জাহান্নামের আগুনে পুড়িয়ে দেবো, অতঃপর (পুড়ে যখন) তাদের দেহের চামড়া গলে যাবে তখন আমি তার বদলে নতুন চামড়া বানিয়ে দেবো, যাতে করে তারা আযাব ভোগ করতে পারে, অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা মহাপরাক্রমশালী, বিজ্ঞ কুশলী। (সূরা আন নেসাঃ আয়াত ৫৬)
চামড়া পরিবর্তন করা হচ্ছে এবং পুড়ে যাচ্ছে, পুনরায় আবার তা তৈরী হচ্ছে এ অনুভূতি কখনো জাহান্নামীদের থাকবে না। কেননা (পৃথিবীতে) যদি কোন বস্তু প্রতি সেকেন্ডে দশবার পর্যন্ত পরিবর্তন হয় তবে তা আমরা উপলদ্ধি করতে পারি। কিন্তু কোন বস্তু যদি প্রতি সেকেন্ডে দশবারের বেশী পরিবর্তন হয় তবে তা আমরা উপলব্ধি করতে পারিনা। বরং ঐ বস্তুকে স্থির দেখি। যেমন বিদ্যুত এর বাতি। বিদ্যুৎ প্রতি সেকেন্ডে পঞ্চাশ বার দিক পরিবর্তন করে অর্থাৎ একটি বাতি প্রতি সেকেন্ডে পঞ্চাশ বার নিভে এবং জ্বলে। কিন্তু আমরা সব সময় বাতি জ্বলা অবস্থায় দেখি, কারণ যেহেতু সেকেন্ডে দশবারের বেশী দিক পরিবর্তন হচ্ছে তাই আমরা বাতিকে স্থির দেখি। তদ্রূপ জাহান্নামীদেরকে প্রতি সেকেন্ডে কয়েকশবার চামড়া পরিবর্তন করা হবে কিন্তু জাহান্নামীরা মনে করবে, সেই পুরানো চামড়াই শরীরে আছে এবং তা অবিরাম পুড়ে চলছে।