জাহান্নামের সাপ ও বিচ্ছু্
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, জাহান্নামে বড়ো ঘাড় বিশিষ্ট উটের ন্যায় সাপ আছে। সে সাপগুলো এমন বিষাক্ত ও ভয়ংকর যে, যদি একবার কাউকে দংশন করে তবে চল্লিশ বত্সর পর্যন্ত তার বিষের ক্রিয়া থাকবে। আর জাহান্নামে কাঠ বহনকারী খচ্চরের ন্যায় বিচ্ছু আছে। সেগুলো যদি একবার কাউকে দংশন করে তবে চল্লিশ বত্সর পর্যন্ত তার দংশন জ্বালা সে (জাহান্নামী) অনুভব করবে। (আহমদ)
আল্লাহ ও রাসূলের অস্বীকারকারীদের জন্য জাহান্নাম
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
(এতো সব নিদর্শন সত্ত্বেও) যারা তাদের স্রষ্টাকে অস্বীকার করেছে, তাদের জন্যে রয়েছে জাহান্নামের (কঠোরতম) শাস্তি; জাহান্নাম কতোই না নিকৃষ্টতম স্থান ! (সূরা আল মূলকঃ আয়াত ৬)
যারা কুফুরী করেছে এবং এই কাফের অবস্থায়ই মৃত্যু বরণ করেছে, তাদের ওপর আলাহর অভিশাপ, ফেরেশতাদের অভিশাপ, (সর্বোপরি) অভিশাপ সমগ্র মানবকুলের, (এই অভিশপ্ত অবস্থা নিয়েই) এরা সেখানে চিরদিন থাকবে, শাস্তির মাত্রা এদের ওপর থেকে (বিন্দুমাত্রও) কম করা হবে না, তাদের কোনো রকম অবকাশও দেয়া হবে না। (সূরা আল বাকারাঃ আয়াত ১৬১-১৬২)
কাফেরদের (পাকড়াও করার) জন্যে আমি শেকল, বেড়ি ও (শাস্তির জন্যে) আগুনের লেলিহান শিখার ব্যবস্থা করে রেখেছি। (সূরা আদ্ দাহরঃ আয়াত ৪)
অন্যত্র বলা হয়েছে, যারা কুফুরী করবে তাদের জান্নাতে যাওয়া ততোখানি অসম্ভব যতোখানি অসম্ভব সুঁচের ছিদ্রের ভিতর দিয়ে উট প্রবেশ করা। আল কোরআনে বলা হয়েছে,
অবশ্যই যারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে এবং দম্ভভরে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, তাদের জন্যে কখনো (রহমতভরা) আসমানের দুয়ার খুলে দেয়া হবে না, যতোক্ষণ পর্যন্ত একটি সুঁচের ছিদ্রপথ দিয়ে একটি উট প্রবেশ করতে না পারবে, ততোক্ষণ পর্যন্ত এরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না; আমি এভাবেই অপরাধীদের প্রতিফল দিয়ে থাকি। (সেদিন) তাদের জন্যে (নীচের) বিছানাও হবে জাহান্নামের, (আবার জাহান্নামই হবে) তাদের ওপরের আচ্ছাদন, এভাবেই যালেমদের আমি প্রতিফল দিয়ে থাকি। (সূরা আল আ'রাফঃ আয়াত ৪০-৪১)
জ্বিন, মানুষ ও পাথর জাহান্নামের ইন্ধন হবে
বস্তুত বহু সংখ্যক মানুষ ও জ্বিন (আছে, যাদের) আমি জাহান্নামের জন্যেই পয়দা করেছি, তাদের কাছে যদিও (বুঝার মতো) দিল আছে, কিন্তু তা দিয়ে তারা চিন্তা করে না, তাদের কাছে (দেখার মতো) চোখ থাকলেও তারা তা দিয়ে (সত্য) দেখে না, আবার তাদের কাছে (শোনার মতো) কান আছে, কিন্তু তারা সে কান দিয়ে (সত্য কথা) শোনে না; (আসলে) এরা হচ্ছে জন্তু-জানোয়ারের মতো, বরং (কোনো কোনো ক্ষেত্রে) তাদের চাইতেও এরা বেশী বিভ্রান্ত; এসব মানুষেরা (দারুণ) উদাসীন। (সূরা আল আ'রাফঃ আয়াত ১৭৯)
সূরা আল বাকারায় বলা হয়েছে,
... তোমরা (দোযখের) সেই কঠিন আগুনকে ভয় করো, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, (আল্লাহ তায়ালাকে) যারা অস্বীকার করে তাদের জন্যেই (এটা) প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। (সূরা আল বাকারাঃ আয়াত ২৪)
সূরা আত তাহরীমে শুধু ভয় করার কথাই বলা হয়নি বরং বাঁচার কার্যকরী পথ অনুসন্ধানের কথা বলা হয়েছে। বলা হচ্ছে,
হে ঈমানদার লোকেরা, তোমরা নিজেদের ও নিজেদের পরিবার পরিজনদের (জাহান্নামের সেই কঠিন) আগুন থেকে বাঁচাও, যার জ্বালানী হবে মানুষ আর পাথর, (সে) জাহান্নামের (প্রহরা যাদের) ওপর (অর্পিত), সেসব ফেরেশতা সবাই হচ্ছে নির্মম ও কঠোর, তারা (দন্ডাদেশ জারি করার ব্যাপারে) আল্লাহর কোনো আদেশই অমান্য করবে না, তারা তাই করবে যা তাদের করার জন্যে আদেশ করা হবে। (সূরা আত তাহরীমঃ আয়াত ৬)
এখন প্রশ্ন হতে পারে মানুষ ও জ্বীনকে জ্বালানো হবে এটা যুক্তিসংগত। কারণ তাদেরকে জ্ঞান-বুদ্ধি দিয়েছেন এবং তার প্রয়োগের স্বাধীনতাও দিয়েছেন কিন্তু পাথরতো জড়ো পদার্থ, তাদেরকে কেন পুড়ানো হবে?
এর উত্তর হচ্ছে, দু'টি কারণে পাথরকে পোড়ানো হবে।
একঃ যেহেতু মুশরিকরা পাথরের মূর্তি তৈরী করে তার পূজা-অর্চনা করে এবং বলে যে, এরা আমাদেরকে সেদিন সুপারিশ করে বাঁচিয়ে দেবে। তাই তাদেরকে দেখিয়ে দেখিয়ে তাদের সাথেই সে সব পাথরের মূর্তিগুলোকে পুড়ানো হবে। যেনো মুশরিকগণ বুঝতে পারে ঐ সব পাথর নিজেকে রক্ষা করার সামর্থ পর্যন্ত রাখেনা কাজেই কি করে তাদের মুক্তির জন্য সুপারিশ করতে পারে।
দুইঃ আগুনে পাথর পুড়ালে আগুনের তাপমাত্রা আরও বহুগুণ বেড়ে যায়। তাই যেহেতু কাফেরদেরকে কঠিন শাস্তি দেয়াই আলাহর ফায়সালা তাই আগুনের তাপমাত্রা বাড়ানোর জন্য পাথর পুড়ানো হবে। (এ ব্যাপারে আলাহ তায়ালাই ভালো জানেন)
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ডিসেম্বর, ২০০৭ রাত ১২:০৫