ব্যাপারটা এমন না যে, আজ মা দিবস বলে আমি এইটা লিখছি।আসলে আমি জানতাম না আজ মা দিবস,লেখাটা লিখব বলে ঠিক করেছিলাম গত কালকে, আমার মার সাথে ফোনে কথা বলার পর থেকে মনে হয়েছিলো, নিজের ভিতরের এই প্রতিক্রিয়াটা লিখে রাখা দরকার। আজ সকালে ফেসবুকে দেখলাম কেউ মার ছবি দিয়েছে, কেউ মা কে শুভেচ্ছা জানিয়ে বার্তা লিখেছে, তখন আমি চিন্তা করেছিলাম,লেখাটা ফেসবুকেই লিখে দিব, দিলাম না, কারন আমার মা ফেসবুক তো দুরের কথা মুঠোফোন পর্যন্ত ব্যাবহার এ পারদর্শী না।লেখাটা লিখলে অন্তত পোষ্ট করে মা কে পাঠান যাবে,তাই অনেক দ্বিধাদন্দ্বের অবসান ঘটিয়ে লিখতে বসলাম।
ছোটবেলা থেকে অভিভাবক হিসেবে শুধু মা কে দেখেছি, দেখেছি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রুটিন মেনে কাজ করে যেতে, আমার মা কর্মব্যাস্ত,আমি মা ভক্ত ছেলে বরাবর,আমার সবকিছুতেই মার ছাপ আছে,তারপরও আমি তার মত হতে পারিনি যেমন, একটা শরীরের ছায়ার আকৃতি শরীরের মত হলেও তা শরীর হয় না। মার ইচ্ছা ছিলো আমি আজীবন মার কাছে থাকি, কিন্তু শিক্ষাজীবন শেষ করে নিজের বাড়ি, আমার চিরচেনা শহর ছাড়তে হল,মা বলেছিল ‘কি দরকার যাওয়ার?দেখনা,এইখানে কিছু করা যায় কিনা?’। ঐখানে কিছুই করা যায়নি, বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময়,এক অদ্ভুত অনুভূতি হয়েছিলো মনের ভেতর, আমি বুঝতে পেড়েছিলাম, আমার আর একেবারে ফেরা হবে না , আমি মার কাছে থেকে দূরে চলে যাচ্ছি, হলোও তাই, প্রথমে একটু দূরে,তারপর আরও দুরে,জানি না আর কতদুরে যেতে হবে।
গতকালকে ফোন দিলাম মাকে ছুটির দিন দেখে, মা ফোন ধরে বলল ‘আমি কলেজে ব্যাস্ত, সন্ধ্যার পরে ফোন দে’। সন্ধ্যায় ফোন দিলাম,কথায় কথায় মা বলল যে তার মন খারাপ, কারন জানতে চেয়ে জানলাম,তার আগামী মাস থেকে অবসর শুরু, শুনে আমারও মনটা খারাপ হয়ে গেল, মা দুঃখ করে বলল ‘তুই ঢাকাতে থাকলে তোর বাড়িতে গিয়ে থাকতাম’, আমি বললাম ‘ব্যাপার না, তুমি এখানে চলে আসো’, মাও বলল ‘হা তাই করব,আমি তোর ঐখানে চলে আসবো।’ এই পর্যন্তই।
আমি ভালো করে জানি মা কোনদিন আসবে না এইখানে, এও জানি আমি যদি ঢাকাতে থাকতাম মা আমার বাড়িতেও থাকত না, আমি জানি মা কোনদিন তার নিজের হাতে গড়া ‘আমাদের বাড়িটা’ ছেড়ে কোথাও যাবেনা।নিজের ভেতরে একটা অপরাধবোধ জন্ম নিয়েছিলো সেইদিন,তাই মা কে শুধু বলতে চেয়েছিলাম,
‘আমাদের চাওয়া আর পাওয়ার মাঝখানে একটা দেয়াল আছে,
এর একদিকে থাকে চাওয়া,আর একদিকে পাওয়া।
মুখ্য সমস্যা হল দেয়ালটা স্বচ্ছ কাঁচের’
-১১/০৫/২০১৪,কাজাং।