ট্রিং ট্রিং। বেশ কিছুক্ষণ ধরেই বাজছিল ফোনটা। আজ অফিস থেকে একটু তাড়াতাড়িই ফিরেছিলাম। বিকেলের মিষ্টি রোদে তাই একটু হাটতে বের হলাম। হাটতে হাটতে কিছুটা অন্যমনষ্ক হয়ে পড়ায় খেয়াল করিনি ফোনের শব্দ। পকেট থেকে বের করে রিসিভ করতে তাই একটু দেরি হয়ে গেল।
-"হ্যালো।"
-"কি ব্যাপার! ফোন ধরনা কেন? কতক্ষণ থেকে ফোন দিচ্ছি।"
-"সরি। খেয়াল করিনি।"
-"তা তো খেয়াল করবেই না। এখন তো আমায় মনেই পড়ে না। চাকরিটা পাওয়ার পর থেকে তো একদম চেঞ্জ। ভুলেই গেছ আমাকে। ফোন দিলে ফোন ধরনা, মেসেজ দিলে রিপ্লাই দাও না....."
ওপাশে ওর রেগে যাওয়া কন্ঠস্বরের গরম ঝাঝ বেশ ভালভাবেই টের পেলাম। কথা সে কিছুমাত্র ভুল বলেনি। ইদানীং চাকরিটা পাওয়ার পর থেকে ব্যস্ততা খুব বেড়ে গেছে। ওকে আর আগের মত সময় দেয়া হয়ে ওঠে না। আগে মাসে অন্তত দু-তিনবার তার সাথে কোথাও না কোথাও বের হওয়া হত।পকেটের মানিব্যাগটা ফাকা হলেও কোন না কোনভাবে তার জন্য তিনটা গোলাপ নিয়ে হাজির হতাম তার বাসার সামনের কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে। ফোন দিতেই সে দৌড়ে বারান্দায় চলে আসত। আমায় দেখেই চোখভরা আনন্দ নিয়ে তার সেই অসাধারণ হাসিটা দিত। এরপর কিছুক্ষণের মধ্যেই নিচে ছুটে চলে আসত। অবশ্য কিছুটা রাখ-ঢাক করেই দেখা করতে হত আমাদের। পরিবারকে লুকিয়ে চুরিয়েই দেখা করতাম আমরা।
আর আজ? কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গেছে সবকিছু। এতটা ব্যস্ত হয়ে পড়ব ভাবিনি।
-"....কি হল? কিছু বলছনা যে? চুপ হয়ে গেলে কেন?"
ধমকটা কানে যেতেই বাস্তবে ফিরলাম।
-"হুম। হ্যা, বল। শুনছি।"
-"কই তুমি?" গলার ঝাঝ কিছুটা কমেছে।
-"এইত। একটু হাটতে বের হয়েছিলাম। আজ অফিস থেকে তাড়াতাড়ি ফিরলাম তো। তাই হাতে কিছুটা সময় পেলাম। গত কটা দিন অফিসে কাজের খুব চাপ ছিল। তাই তোমাকে আর ফোন দেয়া হয়নি গো।"
-"ইটস ওকে। তা একদিন সময় বের কর না। কোথাও ঘুরে আসি। কতদিন তোমায় দেখিনি। এই শুক্রবারেই চল।" আবদারের সুরে বলল সে।
-"বাড়ি যেতে হবে। বাড়িতে কিছু কাজ ছিল।"
-"হ্যা। কাজ তো থাকবেই। এখানে কাজ, ওখানে কাজ। বাড়িতে কাজ, অফিসে কাজ। কাজই তো এখন সব। আমি কিছুই না। এখন আমাকে দেবার মত পাচটা মিনিট সময় হয়না তোমার।"
-"নাগো। একদম তা নয়। তোমাকে দেখতে আসলেই খুব ইচ্ছা করে। কিন্তু কি করব বলত? কাজগুলো খুব জরুরি। নয় সত্যিই...." অভিমান ভাঙানোর চেষ্টা করলাম।
-"বুঝি। সব বুঝি। যাই হোক, যেদিন দেখা করবে সেদিন কিন্তু আমার গুনে গুনে ১২টা গোলাপ চাই।"
-"১২টা? কেন? সব সময় তো ৩টা দেই।" অবাক হয়ে জানতে চাইলাম।
-"কারণ ইতিমধ্যেই তুমি আমাকে তিনবার দেখা করার কথা বলে দেখা করনি। আসনি। ফাকি দিয়েছ। তাই ৯টা গোলাপ এক্সট্রা।"
-"হাহাহা।"
-"হয়েছে। থাক। আর ভেটকি মারতে হবে না। তা, পকেটে টাকা পয়সা কিছু আছে? নাকি আগের মতই ধার-দেনা করে গোলাপ কিনতে হবে?"
-"ছি! কি যে বল না তুমি! চাকরি করি এখন। কিছুটা হলেও রেসপেক্ট দাও।"
-"কি যে আমার চাকরিওয়ালা! তার আবার রেসপেক্ট!"
-"উফ! তোমার সাথে আর পারা গেল না বাবা।"
-"আমার সাথে পারতে তোমাকে হবেও না। তো, বাসায় যাবে কখন? নাকি বাইরে টইটই করার প্ল্যান?"
-"উহু। এখন বাসায় যাব না।"
-"বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতে চলল যে। কোথায় তুমি এখন? কি করছ কি?"
-"ফুলের দোকানে। ফুল কিনছি। গুনে গুনে ১২টা।"
ওপাশের হাসি মুখটা বাস্তবে দেখতে না পেলেও কল্পনায় দেখতে পাওয়া তার হাসিটা কিন্তু স্বর্গীয়। অসাধারণ।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১১:২৩