সময়টা ছিল মে ২০১৮ইং। আমি অফিসের কাজে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ। সেখানে গিয়েই জানতে পারলাম নিকটেই আছে গান্ধী আগ্রম। লোভটা সামলাতে পারলাম না। একদিন অফিসের কাজ শেষ করে আমার সহকর্মী শাহ আলম ভাইকে নিয়ে চলে যাই স্থানটি দেখার জন্য।
নোয়াখালী সদর (মাইজদী কোর্ট) থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে সুনাইমুড়ি উপজেলার জয়াগ বাজারের পূর্ব দিকে গান্ধী আশ্রম ট্রাস্ট অবস্থিত। ১৯৪৭ সালের ২৯ জানুয়ারী মানবতাবাদী মহান নেতা মহাত্মা গান্ধী শান্তি, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও অহিংসা প্রতিষ্ঠার জন্য দাঙ্গা বিক্ষুব্ধ বর্তমান নোয়াখালী জেলার সুনাইমুড়ি উপজেলার জয়াগ গ্রামে আগমন করেন। সেখানে এই মহান নেতা তখনকার জমিদার নোয়াখালীর প্রথম ব্যারিস্টার ও দানবীর হেমন্ত কুমার ঘোষের আমন্ত্রনে তার বাড়িতে উঠেন। মহাত্মা গান্ধীর প্রদর্শিত পথ ধরে হেমন্ত কুমার ঘোষ তার সকল সম্পত্তি জনকল্যাণে দান করেন এবং তারই মহানুভবতায় প্রতিষ্ঠিত হয় ‘গান্ধী আশ্রম ট্রাস্ট’। যা মানবতার সেবায় নিয়োজিত একটি প্রতিষ্ঠান।
বাস থেকে নেমে প্রথমে জয়াগ বাজারের ভিতর ঢুকে গেলাম, লোকদের জিজ্ঞাসা করতেই দেখিয়ে দিল বাজার থেকে সামন্য উত্তর দিকে দু’টি পুকুরের মাঝখান দিয়ে চলে যাওয়া একটি পথটি।
গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টের মূল ফটক
ভিতরে ঢুকতেই চোখে পরে আশ্রমের সংক্ষিপ্ত বিবরণী।
আশ্রমের সংক্ষিপ্ত বিবরণী
আরো ভিতরে ঢুকে দেখতে পেলাম একে একে কুঁটির শিল্প, তাঁত শিল্প প্রদর্শণী ও বিক্রয় কার্যক্রম। এরিয়াটা মোটামুটি বড় হলেও কার্যক্রম ছোট পরিসরেই হচ্ছে। স্থানটির উত্তর ভিটায় দো’তলা একটি ঘর, যেটি ছিল হেমন্ত কুমার ঘোষের থাকার ঘর। সেটি বর্তমানে গান্ধী জাদুঘর হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। গান্ধী জাদুঘরে নোয়াখালীতে অবস্থানকালীন সময়ে গান্ধীজির ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্র স্থান পেয়েছে। পূর্বদিকে আরও একটি দু’তলা ঘর আছে, যেখানে মূলত: ট্রাস্টের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ট্রাস্টের কার্যক্রমের মধ্যে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন (Micro Credit) উল্লেখ যোগ্য। তাছাড়া কুঁটির শিল্প, হস্ত শিল্প সহ আরো বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। গান্ধী জাদুঘরের সামনে নির্মিত হচ্ছে নান্দনিক মহাত্মা গান্ধীর ভাস্কর্য।
নির্মাণাধীন মহাত্মা গান্ধী ভাস্কর্যে
পুরো বাড়িটি গাছ-পালায় ভরা। খালি জায়গা চোখেই পরে না। বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রয়েছে সেখানে। যেমন একটি গাছ যায় যার ফল বড় আকারের বেলের মতো দেখতে। ফলগুলোর গায়ে ধারণ করে আছে কিশোর-কিশোরির ভালবাসার ক্ষত চিহ্ন।
পুরো এলাকা জুড়ে রয়েছে মহাত্মা গান্ধীর বিভিন্ন বাণী। যা বাঁশের খুঁটির সাহয্যে বিভিন্ন জায়গায় টানিয়ে দেয়া হয়েছে।
জায়গাটা ঘুরে আসতে পেরে ভাল লাগলো। গান্ধী আশ্রমের ছোট একটি ভিডিও দিলাম।
ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১১:১৭