রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী হিসেবে প্রায়ই আমাকে বেশ কিছু প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় দেশের চলমান সহিংসতা নিয়ে , সফলতা নিয়ে ব্যর্থতা নিয়ে । বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম দিকে এই সব বিতর্কে স্বত:স্ফূর্তভাবে অংশগ্রহন করলেও এখন আর তা করতে ইচ্ছে করে না । তবুও দীর্ঘ দিনের চেপে রাখা অব্যক্ত আর্তনাদ গুলো বার বার সংকেত দিচিছলো বাইরে আসার জন্য তার ফল স্বরুপ এই কামসুত্র ।।
যখনি আমি আমার চিন্তাকে মানবতার স্বপক্ষে কিংবা গণতন্ত্র নিয়ে ভাবতে শুরু করি কিংবা চলমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় ভাবি তখনি শাসক গোষ্ঠী আমাকে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী শক্তি ভাবতে শুরু করে । রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি তখন আমাকে তাদের বন্ধু ভাবতে শুরু করে । তাহলে আমি কে ? আমি একজন মিথ্যাবাদী , আমি দেশদ্রোহী , আমি বহিরাগত শক্তি । এমতাবস্থা প্লেটোর উক্তি মনে করা ছাড়া আর কি করতে পারি ।-?
মানুষের মধ্যে যদি কারো মিথ্যা বলার অধিকার থাকে তবে সে অধিকার কেবল রাষ্ট্রের শাসক বর্গের থাকতে পারে । শাসক শত্রুর মোকাবেলায় কিংবা নাগরিকদের শাসনের ক্ষেত্রে মিথ্যার আশ্রয় গ্রহন করতে পারবে । তবে শাসকের সঙ্গে মিথ্যা বলার অধিকার শাসিতের থাকতে পারে না ।-(প্লেটো)
রাষ্ট্রযন্ত্র চালিত রাখার স্বার্থে রাষ্ট্রের এই আচরণ কে আমি সমর্থন করি নেতিবাচক প্রয়োগ হিসেবে । তবে সেটি জনস্বার্থে ব্যবহার কতটা যুক্তিযুক্ত তা নিয়ে দ্বিমত থাকতে পারে ।
দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে উভয় রাজনৈতিক দলের অবস্থান জাতি আজ স্বচক্ষে দেখেতেছে । শুধু তাই নয় হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে । আজ যারা নিজেদের গণতন্ত্রের রক্ষক হিসেবে দাবি করছেন জাতি তাদের ইতিহাস জানে না কিংবা যারা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য রাষ্ট্রযন্ত্রকে অস্থিতীশীল করার চেষ্টা চালাচ্ছে তাদের ইতিহাস কি মানুষ জানে না । তবে কেন এই প্রহসন ? কোটি মানুষের কন্ঠে আজ একই প্রশ্ন ? কেন সাধারণ মানুষ ?
এ প্রসঙ্গে বিভিন্ন যুক্তি থাকতে পারে তবে আমি আমার চিন্তার বিষয়টি বলতে পারি ;
“প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার অধিকারী যদি জনগণ হয় ; তবে তাদের কে নির্যাতনের শিকার হতেই হবে । গণতন্ত্র হলো জনগণের জন্য, জনগণের দ্বারা : সব কিছই আপনার জন্য আপনার দ্বারা যন্ত্রনা কি আরেক জন ভোগ করবে ” আপাত দৃষ্টিতে বিষয়টি উগ্রবাদী মনে হলেও আমি এর সাথে একমত । বিষয়টি যদি ব্যাখ্যা করতে যাই তবে হয়তো ২-৩ হাজার শব্দের প্রয়োজন হতে পারে । আর এই প্রজাদের নিয়ন্ত্রনের জন্য যে সংবিধান তা দিল্লিকা লাড্ডু ছাড়া আমার কাছে কিছুই মনে হয়নি -জনগণ একে গ্রহন করলেও পস্তায় না করলেও আরো পস্তায় ।
এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে রাষ্ট্র ইচ্ছা করলেই আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করতে পারে , আমাকে চরিত্রহীন প্রমান করতে পারে সে ক্ষমতাই আমি রাষ্ট্রকে দিয়েছি ।। রাষ্ট্রের সঙ্গে জনতার এটি একটি অলিখিত চুক্তি ।
আমি কিভাবে সেই অধিকার দাবি করি ; যার জন্য আমি কোন কর্তব্য পালন করিনি । ভোটের দিন ঘরে বসে থাকি , রানা প্লাজা কিংবা তাজরিন গামেন্টস এর আর্তনাদ আমার কর্ণ কুহরে প্রবেশ করে না ঠিকই তবে বিরোধী দলের ককটেলের আওয়াজ ঠিকই আমার কানে আসে । বার্ণ ইউনিটের সেই আহাজারি আমার কানে আর আসে না কিভাবে আসবে আমি এখন পাশ্চাত্য জলসায় মগ্ন । প্রশ্ন ফাসের বিরোধিতা করার করার মতো আমি এত বড় আহম্মক নাই কারণ আমার সন্তানেরা এ দেশে পড়াশোনা করে না । আমি টক শোতে যেয়ে বিরোধি দলের সমালোচনা করি কারণ দলীয় কর্মী হিসেবে , কৃষক গণি মিঞার ফসল অবরোধে বিক্রি না হলেও আমার কিছু যায় আসে না । আমার বোন তো পাবলিক বাসে করে হরতাল অবরোধের মধ্যে ইডেনে ক্লাস করতে যায় না । যারা এই হরতাল অবরোধের মধ্যে চলাচল করে তাদের তো পুরে মরতেই হবে । কারণ এ হরতাল এ অবরোধ গণতন্ত্র রক্ষার জন্য ; মানুষ হত্যাও এখানে হালাল ।
আমি আসলে কি ? আমি কি এইভাবে চিন্তা করার জন্য জন্মেছি ? মাঝে মাঝে মনে হয় আমি আসলে বুদ্ধি বেশ্যা না হলে কিভাবে আমি এমন কাজ করতে পারলাম এমন ভাবে ভাবতে পারলাম । মাঝে মাঝে ভাবি আমি কিভাবে বুদ্ধি বেশ্যা হলাম -মনে হয় আমার শিক্ষা ব্যবস্থাই আমাকে বেশ্যা বানিয়েছে আমাকে শিখেয়েছে কিভাবে স্বাধীনতা বিরোধীদের স্বপক্ষে কথা বলতে হয় । কিভাবে বিরোধী দলকে নির্মূল করতে হয় । আমার পরিবেশ আমাকে শিখেয়েছে বেশ্যায়ন কিভাবে একটি জাতিকে বিভিন্ন মতবাদে সংঘর্ষের দিকে নিয়ে যায় । শিক্ষাযন্ত্র কিভাবে বুদ্ধিববেশ্যা প্রসব করছে তা আর নতুন করে ব্যাখ্যা করার দরকার নাই ।।
যদিও এই লেখা কোন রাষ্ট্রনায়ক পড়বে না তা সত্বেও আমার দৃঢ় বিশ্বাস আমার প্রশ্নের জবাব গণতন্ত্র এর রক্ষক দের কাছে নাই কারণ আমি ক্ষুধার্ত । ক্ষুধার্ত মানুষের কাছে গণতন্ত্র অর্থহীন , আমি জানি না প্রবৃদ্ধি কি , মাথাপিছু আয় কত মার্কিন ডলার তা আমার বোধগম্য নয় । তোমার গণতন্ত্র কি পারবে আমার দুই বেলা দুই মুঠো ভাতের নিশ্চয়তা ,কিংবা আমার স্বাভাবিক মৃত্যু ; আমার মানসম্মত শিক্ষার নিশ্চয়তা কিংবা সরকারী হাসপাতালের বারান্দায় আমার মায়ের যন্ত্রনায় কাতরানোর উপশম করতে ; জানি তুমি পারবে না ; তুমি আরো অনেক কিছুই করতে পারবেনা আমার মতো ক্ষুধার্তদের জন্য ,
হে গণতন্ত্র তুমি প্রতিনিয়ত ধর্ষণ করে চলছ আমার মতো ক্ষুধার্তদের, যারা তোমার ভোগের জন্য যুগে যুগে নিজেকে উতসর্গ করে চলছে হাসিমুখে , তোমার কামনা ও বাসনার কাছে আমরা আজ পরাস্ত তবু জয়গান গাই কারণ আমি যে অসহায় , আমি যে ক্ষুধার্ত ।।।