"মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা বিদেশি বন্ধুদের সম্মাননা দেওয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই হঠাৎ কিছু লোক এটাকে ইস্যু করেছে। হইচই করার উদ্দেশ্যটা আমরা জানি৷ জামায়াত যেমন আমাদের স্বাধীনতাকে সমর্থন করে না, এটাও তেমন একটা বিষয়৷ দেশে একটি কথা প্রচলিত আছে যে, মায়ের গয়না বানালেও স্বর্ণকার সেখান থেকে একটু সোনা চুরি করে। বিদেশি বন্ধুদের দেওয়া ক্রেস্টে সোনা কতটুকু ছিল, সেটা বড় কথা নয়। ওনাদের এনেছি এবং সম্মান দিয়েছি, এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ৷"
উপরের কথাগুলো বিদেশি বন্ধুদের দেওয়া সোনার ক্রেস্টে সোনা না থাকার অভিযোগের উত্তরে গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে আমাদের ‘সুযোগ্য’ প্রধানমন্ত্রী ‘বঙ্গকন্যা’ শেখ হাসিনার।
কথাগুলো এমন যে, কোন মা তার চোর-কুলাঙ্গার সন্তানের চুরির ব্যাপারে সমর্থন করে পাশের বাড়ির খালা আম্মার সাথে ঝগড়া করে যাচ্ছেন।
তবে একটা কথা না বললেই নয়, মুক্তিযুদ্ধের সহযাত্রীদের সম্মাননা দেওয়ার সঙ্গে জাতীয় আবেগ, জাতির মান-সম্মান জড়িত। সেখানে আমাদের বিদেশি বন্ধুদের দেয়া সম্মাননায় ভেজাল দেয়া হয়েছে। এমতাবস্থায় দায়মুক্তির জন্য যাদের সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, তাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করা উচিত। একই সঙ্গে অপরাধীদের বিচার করা উচিত। অথচ ‘দেশমাতা’ চোরদের পক্ষেই পক্ষান্তরে সাফাই গাইলেন।
নতুন করে হাজির হলো ফরমালিন তত্ত্ব। তিনি বললেন, "পাঁচ জানুয়ারির নির্বাচনে না গিয়ে তিনি পচেছেন। এখন আমরা বিএনপিকে ফরমালিন দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছি।" না জানি রাজনীতির এই ফরমালিন কতোদিন খেতে হয়।
বাদ গেল না আদালত। আইনজীবী তামজিদা মিলার ভাষ্যমতে শেখ হাসিনা বলেন, "র্যা বের তিন কর্মকর্তাকে আদালত গ্রেপ্তারের নির্দেশ কেন দিল, এটা আমার বোধগম্য নয়। এসময় ‘জজ সাহেবদের’ কাছে তথ্য-প্রমাণ চাওয়ার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ কিভাবে র্যাবের তিনজনকে গ্রেপ্তারে অর্ডার দেয়। ওই জজ সাহেবের কাছে নিশ্চয়ই তথ্য আছে। দুই জাজের কাছে তথ্য থাকলে দিন। তদন্তে সহায়তা করুন।”
এসময় তিনি আরো বলেন, "ওই বেঞ্চের জজ সাহেবরাই তদন্ত করবেন। তারাই বিচার করবেন। এ বক্তব্যের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "আমি কি ভয় পাই? এগুলো কি আদালত অবমাননা হবে, এটা কোনো বিষয় নয়, আমি পরোয়া করি না। আমার কথা কঠোর হয়ে যাচ্ছে? বাস্তব কথা কঠোরই হয়।"
এসব গেল আমাদের প্রধানমন্ত্রীয় সাহসিকতা, তথা 'চাপা'র জোরের কথা। তাইলে প্রশ্ন কাজের জোর কেমন?
আমাগো বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মিজানুর পিচকা মিয়ানমার সীমান্তরক্ষীর গুলিতে লাশ হইয়া গেল। তাহার গলিত লাশ ফেরত আসিল তিনদিন পরে। তবুও চেতনাদণ্ডধারীদের ঘুম ভাঙ্গিল না। একবারও কেহ বলিলো না ওরে বাছাধন মিয়ানমার ভালো হইয়া যাও। বাঙালিরা রক্তের বদলা নিতে জানে। বেচারা মিজানুর, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন বাবা ল্যান্স কর্পোরাল আবদুল হাফিজ মোল্লা। সীমান্ত রক্ষায় শহীদ হলেন নিজেই।
নতজানু পররাষ্ট্রনীতি আর কত অবমাননা দেখলে আমরা জাগবো জানা নেই। তবে সর্বশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে লড়তে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে ‘বার্মিজ ইউনাইটেড আর্মড ইউনিট’ (বিইউএইউ)। তারা কক্সবাজারের টেকনাফ উপকূলের অদূরে বাংলাদেশি জলসীমার কাছে বঙ্গোপসাগরে তিনটি যুদ্ধজাহাজও মোতায়েন করেছে !! আরকতক্ষণ হাত গুটিয়ে বসে থাকবো জানি না।
[বুধবার (২৮ মে) দুপুরে ২০ সদস্যের একটি দল টহলে গেলে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি) আকস্মিক বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিজিবির টহল দলের ওপর গুলি চালায়। এ সময় মিজানুর রহমান গুলিবিদ্ধ হলে বিজিপি সদস্যরা তাকে মিয়ানমারে নিয়ে যায়। পরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপে শনিবার সন্ধ্যায় দুই দেশের পতাকা বৈঠকের পর নিহত বিজিবি সদস্য মিজানুর রহমানের লাশ বাংলাদেশে ফেরত দেয় বিজিপি।]
আমরা বার বার ভুলিয়া যাই তাই মিজানুররা এসে কড়া নেড়ে যায়। ওপারে বসে সাগর-রুনি, বিশ্বজিৎ, গুম-খুন হওয়ারা, ফেলানিরা অপেক্ষায় থাকে আমাদের....। তাজরীন, আর নাড়াচাড়ার কারণে ধসে যাওয়া রানা প্লাজার রানারা আরামখানায় বসে বসে বেনসন ফুকায়। পদ্মা সেতু- ডিজিটাল বাংলাদেশ উপহাস করে আমাদের। মেঘনা-শীতলক্ষ্যায় ভেসে ওসে আমার ভাই-বোনদের লাশ। কাজেই চেতনাদণ্ডে তৈল মর্দন না করে, অন্তত সত্যকে সত্য আর মিথ্যাকে মিথ্যা বলার সময় এসেছে। আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে...
বি:দ্র: এখানে লেখা কোন কথাই আমার নয়। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ি লেখা