জীবনদা ডাক দেওয়ার সাথে সাথেই চারদিকে শব্দ হতে শুরু হলো। পোড়া মানুষের গন্ধে বমি উদ্বেগ হলো। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়েই সামনে তাকাতেই দেখি সর্বশরীর পোড়া একটি মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। ভয়ে পিছনের দিকে সরে আসতেই কার সাথে যেনো ধাক্কা লাগলো। তাকিয়েই চিৎকার করে উঠলাম। দেখি গলার উপর থেকে পুরা মুখটা জলসে গেছে। বাকি সবকিছু ঠিক আছে। চিৎকার করে আমি দৌড়ানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু চারদিকেই দেখি অর্ধপুড়া মৃত মানুষের ভীর আমাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। বুঝতে পারলাম জীবনের শেষ প্রান্তে এসে দাঁড়িয়ে আছি। নিজেকে আর ধরে রাখতে পারছিলামনা। এমন সময় জীবনদার ডাকে সম্বিত ফিরে ফেলাম।
তাকিয়ে আৎকে উঠলাম। জীবনদার চেহাড়াও দেখি অর্ধপুড়া। কন্ঠ না বুঝলে হয়তো জীবনদাকে চিনতেই পারতামনা। জীবনদা বলতে শুরু করলো - এইখানে যাদেরকে তুমি দেখছো সবাই মারা গেছে। অনেককেই তুমি চিনতে। এ হলো গোপাল...... ও হলো.........।
আমার চোখ কপালে উঠলো।
জীবনদা আবার বলতে শুরু করলো। এখানে যারা এসেছে তাদের কারো সৎকারই ঠিক মতো হয়নি। তাই তাদের আত্নার এ বিদ্রোহ।
গোপাল জীবনদার কথা কেড়ে নিলো। বললো- আমি যেদিন মারা গেলাম সেদিন ছিলো অমাবস্যা। বিকেল থেকেই গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছিলো। সন্ধার ঠিক আগ মুহুর্ত্তে হঠাৎ করে বুকে প্রচন্ড চাপ দিলো। কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই নাক-মুখ দিয়ে রক্ত আসা শুরু হলো। সবাই সন্তস্ত ভাবে দৌড়াতে শুরু করলো। আমি বুঝতে পারলাম প্রাণ বায়ুটা চলে যাবে। সবার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই একসময় মারা গেলাম। শুরু হলো কান্নাকাটি। কান্নার সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে লাগলো শো শো ঝড় আর বৃষ্টি। এর মাঝে কেউ কেউ আমার সৎকার নিয়ে ব্যস্থ হয়ে গেলো। খড়ি, ঘি, ঠাকুর সবাই রেডি। ঝড়-বৃষ্টিটা একটু কমতেই আমাকে শশানে নিয়ে যাওয়া হলো। আমার মুখে আগুন দেওয়া হলো। দাউ দাউ করে জ্বলে উঠতেই যেনো আর প্রকৃতির সহ্য হলোনা এই দাহন করার ক্ষমতা। আবার শুরু হলো তুমুল ঝড়-বৃষ্টি। ঠাকুরের ইশারায় আমাকে আমার আত্নীয়রা সৎকার শেষ না করেই নদীতে ছুঁড়ে ফেললো। কি দোষ ছিলো আমার? আমার মৃত শরীরের? আমার আত্নীয়রা কি পারতোনা আরেকটু অপেক্ষা করতে?
বৃদ্ধ কে যেনো একজন খুক খুক করে কেশে উঠলো। বলতে লাগলো আমি যেদিন মারা গেলাম সেদিন ছিলো পূর্ণিমা। প্রচন্ড গরম। আমাকে চিতায় শুয়ে যখন মুখে আগুন দিয়ে দিলো অল্পতেই আমার সারা শরীর পুরে গেলো। বৃদ্ধ মানুষ শরীরে মাংসই বা কি আছে? কিন্তু হাড়গুলো যেনো কিছুতেই পুড়ছিলোনা। শেষে আমাকেও না পুড়িয়ে ফেলা দিলো নদীতে।
আরেকজন কি যেনো বলতে চাইলো? জীবনদা থামিয়ে দিয়ে বললো তুমি চলে যাও। আমাদের মিশন শেষ হয়েছে। আর কখনও ফিরে আসবোনা...........................
ভূত নিয়ে ভূতানি (আমার ভূতবেলা) - ১
ভূত নিয়ে ভূতানি (আমার ভূতবেলা) - ২
ভূত নিয়ে ভূতানি (আমার ভূতবেলা) - ৩
ভূত নিয়ে ভূতানি (আমার ভূতবেলা) - ৪