আমি তখন কলেজে পড়ি। প্রতিদিন প্রায় অনেক রাত পর্যন্ত পড়তাম। আমি থাকতাম মা'র ঘরটার ঠিক পাশের ঘরটায়। খুপি বাতি জ্বালিয়ে পড়তাম। তাই সবসময় সাথে ম্যাচ থাকতো। সেদিনও পড়তে পড়তে বেশ রাত হয়ে গেলো। জানালা ফাঁক দিয়ে জোছনা দেখা যাচ্ছে। প্রাকৃতিক ডাকে জন্য বের হলাম। পশ্চিমের আকাশের দিকে হেলে পড়েছে চাঁদটি। চাদেঁর আলোতে মায়াবী আলোয় ঝিকমিক করছে সামনের পুকুর ঘাটটি। পুকুরটি হলো আমার বাল্যবন্ধু সুবলের। সুবল মারা গেছে পুকুরটিতে পড়ে। কেউ কেউ বলে পুকুরের পানিতে ডুবিয়ে মেরে ফেলেছে সুবলকে। সুবলের কথা বড্ড মনে পড়ছে।
পুকুরের মাঝখানটায় চাঁদটার দিকে স্থির হয়ে তাকিয়ে আছি। হঠাৎ..... তাকিয়ে দেখি পুকুরের মাঝখানটায় যেখানে চাঁদটা হাসছে সেখানে কালো আধাঁরের মতো কি যেনো চাদঁটাকে জড়িয়ে ধরলো, গিলে ফেলতে চাইছে চাঁদটাকে। ভয়ে শরীর জমে গেলো মনে হচ্ছে। আকাশের ঠিক পশ্চিমের পাশটায় তাকিয়ে দেখি চাদঁ এবং মেঘের লুকোচুরি খেলা চলছে। মনে মনে হাসলাম নিজের বোকামী দেখে। না কালকে বেশ বৃষ্টি হবে মনে হচ্ছে। বড় করে মেঘ জমেছে আকাশে। চারদিকে কিছুটা অন্ধকার ছেয়ে গেছে। ঘরে চলে আসলাম।
বাতি নিভিয়ে শুয়ে পড়লাম। আমি যে বিছানায় থাকি সেটা কোনভাবেই বিছানা বলা চলে না। দুইটা তক্তা কোনভাবে বাশেঁর সাথে বেঁধে থাকি। খুব সাবধানে থাকি যাতে করে পড়ে না যায়। কখনযে ঘুমিয়ে পড়লাম বুঝতে পারিনি।
হঠাৎ করে গভীর রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলো কারো গাঁয়ে গাঁ লেগে। আমি বুঝতে পারলাম কেউ একজন আমার সাথে শুয়ে আছে। আশ্চর্য হয়ে গেলাম। যেখানে আমি একা শুতেই কষ্ট হয় সেখানে আরেকজন কিভাবে শুইলো? তাছাড়া এতো রাতে কে আমার সাথে শুইবে আমাকে না বলে? পাগলীটার কথা মনে পড়ে গেলো। আমাদের এলাকায় একটা পাগলী ছিলো যে গভীর রাতে ঘরে উঠে পড়তো। সেই পাগলীনাতো। ভাবতে ভাবতে ভয়ে ঘাম এসে পড়লো। আমি ধীরে ধীরে বালিশের নিচে হাত নিয়ে ম্যাচটি বের করে আনলাম। চোখের পলকে বিছানা থেকে লাফ দিয়ে নেমে বাতিটি ধরিয়ে ফেললাম। যা দেখলাম তা অবিশ্বাস্য! দরজার বাইরে থেকে একগুচ্ছ চুল মেয়েটির মাথা পর্যন্ত। ভয়ে মুখ দিয়ে কোন কথায় বের হচ্ছেনা। তবুও ক্ষীণ কন্ঠে সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে বললাম কে? মেয়েটি মাথাটাকে ঝাকিয়ে উঠে বসলো। দেখলাম চুলো গুলো ঝাকিতে মেয়েটির কোলের উপরে এসে পড়লো। আমি মেয়েটির মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম মেয়েটি দু দাঁত বের করে হাসছে। সাথে সাথেই আমি বাতির উপর ঢলে পড়লাম।
যখন হুশ হলো দেখি আমার মা এবং আমার ভগ্নিপতি আমার পাশে বসে আছে। আমি আমার ভগ্নিপতিকে দেখে হবাক হলাম। উনি আমাকে দেখে বললো, উনি নাকি বেতন আনতে নেত্রকোনার ধোবাউড়া গেছিলো। সেখানে রাত ১ টার দিকে শুনেছে অমুক গ্রামের অমুকের বিছানায় নাকি ভূত শুয়ে ছিলো। তারপর সে সাইকেলে আসতে আসতে সাড়ে তিনটা বেজে গেছে। মাকে ডেকে তুলে আমার ঘরে গিয়ে দেখে সত্যি সত্যি আমি মাটিতে পড়ে আছি। আমি অবাক হলাম এইভেবে যে আমি যখন শুয়েছি তখনতো দুইটা বাজে তাহলে উনি একটায় শুনলেন কিভাবে?
[বি.দ্র.- এই ঘটনাটি আমি আমার প্রাইভেট টিউটরের কাছ থেকে শুনেছিলাম। হুবুও এখানে তুলে ধরেছি।]