যারা ভূতে বিশ্বাস করেন না, বা করতে চান না তাদেরকে আজকে আরেকটা সত্য ঘটনা শুনাব-
আমাদের বাজারেই রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির একটি ছোট কম্যুউনিটি সেবা কেন্দ্র আছে, যাকে আমরা রেডক্রস বলেই ডাকতাম। সেখানে দুইটি মহিলা মিডওয়াইফ ছিলো যারা রোগীদের দেখাশোনা করতো। এদের মধ্যে একজনকে দেখতে আমার কাছে কেমন জানি অদ্ভুদ টাইপের লাগত। উনার হাসিটা খুবই বিশ্রী, ইয়া বড় বড় দাঁত বের করে হাসতো। আবার কথাও বলতো খুবই জোড়ে জোড়ে। আমি উনাকে দেখলেই এড়িয়ে চলতাম। উনারা আবার প্রায়ই আমাদের বাসায় আসতো।
একদিন রাতে উনারা দুইজন আমাদের বাসায় আসলো। আম্মাকে বলছে আপা পূর্ণিমাতো তাই চলে আসলাম। আম্মার সাথে তুমুল গল্প জুড়ে দিলো। রাত্র বারটার দিকে আম্মা আমাকে ডেকে বললো, উনারাতো যাবেনা তুমি গিয়ে রাত্রে রেডক্রসে থেকে যাও। সাথে কাউকে নিয়ে যেয়ো। সেদিন আবার আব্বা বাসায় ছিলোনা।
আমি আবার রেডক্রসে যেতে ভয় পেতাম। প্রায়ই শুনতাম ঐ জায়গায় অমুক রোগী মারা গেছে, তমুক মৃত্যুর প্রহর গুনছে, আবার রোগীদের মৃত্যু আর্তনাধও আমাকে ঐ জায়গা থেকে দূরে রাখতো। তবুও আমি আম্মাকে না বলতে পারিনি। একটা টর্চ লাইট নিয়ে বাজারে এসে আমার সাথে থাকার মতো কাউকে খুঁজছি। কিন্তু কাউকেই দেখলাম না। তাই একলা একলাই চলে গেলাম রেডক্রসে।
তখন আমাদের এলাকায় বিদ্যুত যায়নি। জেনারেটরই বড়সা, সেটাও আবার রাত দশটায় বন্ধ হয়ে যায়। বিছানাটা সুন্দর করে ঝেড়ে পরিষ্কার করার জন্য একটা মোমবাতি জ্বালালাম। বিছানাটা ঝাড়তে যাবো দেখি বিছানায় একগুচ্ছ কালো চুল পড়ে আছে। ভাবলাম উনাদেরই কারো হয়তো মেকিং চুল। সেটাকে টেবিলের এক কোণে রেখে দিলাম।
প্রস্সাব করার খুব দরকার। কিন্তু আমি জানিনা বাথরুমটা কোনদিকে আছে। মোমবাতি নিয়ে বাথরুম খোঁজছি। খুঁজতে খুঁজতে হঠাৎ অপারেশন রুমে চলে আসলাম। সাদা দুইটি ঝুলানো এপ্রোন দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম। তারপরও সাহস করে ভিতরে ঢুকে পড়লাম। মনে হলো স্ট্রেচার থেকে কেউ একজন লাফ দিয়ে চোখের আড়াল হয়ে গেলো। তখন সত্যি সত্যি অনেক ভয় পেয়ে গেলাম। তারাতারি ঐ রুম থেকে বের হয়ে এসে দরজার সিটকারী মেরে দিলাম। প্রস্সাব না করেই এসে শুয়ে পড়লাম।
ঘুমানোর চেষ্টা করছি। সাথে সাথে মনে মনে সূরা-কালাম পড়ছি। কখন যে ঘুমিয়ে পরেছি খেয়াল নেই।
মাঝ রাতে হঠাৎ করে একটা খচখছানি আওয়াজে ঘুম ভেঙ্গে গেলো। আওয়াজটা হলো বিড়ালের টিনের বেরার মাঝে নখ দিয়ে খামছানোর মত। আমি চুপ করে শুয়ে রইলাম। শব্দের আওয়াজটা বুঝার চেষ্টা করছি এবং সাথে উৎসটাও। হঠাৎ আমার চোখ পড়লো আমার মাথার উপর একটা তক্তার মাঝে। আবছা আবছা অন্ধকারে বুঝা যাচ্ছে কিছু একটা ঝুলে ঝুলে নড়ছে আর সেখান থেকেই আওয়াজটা আসছে।
আমি ভয়ে ভয়ে হাত দিয়ে টর্চ লাইট টি খুঁজছি। এমন সময় আমার ঘরের দরজায় জোড়ে জোড়ে আওয়াজ আমাকে ডাকছে। আম্মার কন্ঠ না? আমি দৌড়ে গিয়ে দরজা খুললাম। আম্মা আমাকে জড়িয়ে ধরলো। জিজ্ঞেস করলো সব ঠিকতো। পিছনে তাকিয়ে দেখি ঐ দুইজন মিডওয়াইফ দাঁড়িয়ে আছি। উনারা হাসছে আর আম্মাকে বলছে আপা এগিয়ে দিয়ে আসতে হবে নাকি একা একা যেতে পারবেন।
আম্মা কিছু না বলে আমার হাত ধরে বললো এসো। আমি আম্মার সাথে সাথে হাটতেছি আর ভাবছি তক্তার মাঝে কি ঝুলছিলো? আর কেনইবা এতো রাতে আম্মা ছুটে আসলো? আর কেনইবা ঐ মহিলাদের হাসি মাখা প্রশ্নে আম্মা কিছু বললোনা?
চলবে.................