somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"র- নগরের বাঁশিওয়ালি"..... (থিম- হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার,চেষ্টা অন্য কিছু বলার ;))

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এক আশ্চর্য সুন্দর শহর। নাম তার ‘র- নগর’।
শহরের পশ্চিমে বয়ে গেছে শাড়ীর আঁচলের মতো ঝলমলে এক নদী। নাম তার ‘ওল্ড রিভার’।
শহর সুন্দর হলেও কিছু মানুষের কারনে শহরটা বেশ ভয়ানক একটা জায়গায় পরিনত হয়ে গিয়েছিলো।
কারনটা ছিলো ই.টি-
শহরে ই.টি’র সংখ্যা এতোটাই বেড়ে গিয়েছিলো যে, মেয়েরা ঘর থেকে বের হতে পারতো না। একা বের হওয়ার কথা তো কল্পনাও করতে পারতো না। পুরো ‘র- নগর’ ছেয়ে গিয়েছিলো ছোট- বড় নানা ধরনের ই.টি’তে। তার কিছুটা নমুনা এরকম-








কারোই কিছু করার ছিলো না। সমাজের উচ্চ ব্যাক্তিবর্গরা মেয়রের অফিসে এ নিয়ে মিটিং বসালো। কেউই বুঝতে পারছিলো না- কিভাবে তারা এই ঝামেলা থেকে মুক্ত করবে প্রিয় শহরকে।

কি করলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়...
সবাই মনে মনে চাচ্ছিলো এমন কোন চমৎকার হোক, যাতে করে শহরের সবগুলো ই.টি একসাথে কোথাও গায়েব হয়ে যায়।
কিন্তু কিভাবে তা সম্ভব? কিভাবে?

----- ঠিক এমন সময়......
মেয়রের অফিসের দরজায় দু’বার ‘ঠক ঠক’- শব্দ হলো।
দরজা খোলা হলো।
সবার চোখ আঁটকিয়ে গেলো দরজার দিকে।
দরজায় দাঁড়িয়ে আছে একটি মেয়ে। গায়ে মখমলের তৈরি বিশাল আলখেল্লা, শুধু চোখজোড়া দেখা যাচ্ছে। গাড় নীল চোখ, কোমর অব্দি সোনালী চুল। আর হাতে-
অসম্ভব সুন্দর বিশাল এক বাঁশি। মেয়েটার মধ্যে এমন কিছু ছিলো যা সেখানে উপস্থিত পুরুষদেরকে পাগল করে তুলছিলো। সবাই এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো তার দিকে। কথা বলতেও ভুলে গেলো।

মেয়েটি বুঝতে পারলো। এরপর সে কথা বলা শুরু করলো।
মেয়েটি বললো, সে ‘র-নগরের’ এই ঝামেলার কথা শুনেছে এবং ই.টি-দের হাত থেকে শহরকে রক্ষা করার জন্যই সে এসেছে।
কথাটা শুনে সবাই খুশিতে আত্মহারা। মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি পেয়ে কেউ আর একটা কথাও বাড়ালো না। সবাই এক বাক্যে বলল, যতো দ্রুত সম্ভব আমাদের মুক্ত করো এ ঝামেলা থেকে। কিন্তু তুমিও তো একটা মেয়ে, কিভাবে এ সমস্যার সমাধান করবে?
মেয়েটি রহস্যের হাঁসি হেঁসে বলল- আমার এই বাঁশি, সাধারন কোন বাঁশি নয়। এতে অনেক ধরনের সুর খেলা করে। আমি এ বিপদ থেকে আপনাদের মুক্ত করতে পারবো তবে, এর জন্য আমাকে বেশ মোটা অঙ্কের টাকা দিতে হবে।
মেয়র বললো- যতো টাকা চাইবে, দেবো। টাকা পয়সা আমাদের জন্য কোন ব্যাপার না। তুমি শুধু আমাদেরকে এই ঝামেলা থেকে মুক্ত করো, ব্যাস।

মেয়েটি বললো- ঠিক আছে।
এরপর সে ঘুরে দাঁড়িয়ে ঠোঁটের কাছে তুলে নিলো আজব বাঁশিটি। মুখের নেকাবটি সরিয়ে নিয়ে শুরু করলো বাজানো। যারা সে মায়াবী চেহারা দেখলো- স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে গেলো। অমন সুন্দর চেহারা কেউ আগে কখনও দেখেনি।

বাঁশি বাঁজাতে বাঁজাতে সে এগিয়ে যেতে লাগলো সামনের দিকে। সমস্ত 'র- নগর' ভেসে গেলো বাঁশির মায়াবী সুরে। সবাই অবাক হয়ে লক্ষ্য করলো, মেয়েটির পিছনে পিছনে মন্ত্রমুগ্ধের মতো হাঁটছে বেশ কিছু বখাটে যুবক। কোন অদৃশ্য শক্তি যেন তাদেরকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে কোথাও। সবাই বুঝতে পারলো, বাঁশির শব্দ দিয়ে মেয়েটি তাদেরকে সম্মোহন করে ফেলেছে। কারও চোখের পলক পড়ছে না। তারা আচ্ছন্নের মতো হাঁটছে তো হাঁটছেই।
কিন্তু কোথায়!
একসময় বখাটেদের দল ভারী হলো। একে একে দলে যোগ দিতে লাগলো 'র- নগরের' সমস্ত ই.টি। বিশাল এক বাহিনী নিয়ে মেয়েটি এগিয়ে যেতে লাগলো ওল্ড রিভারের দক্ষিন প্রান্তে, শহরের শেষ সীমানায়। যেখানে রয়েছে গভীর এক খাঁদ। 'র- নগরের' সবাই যেটাকে মৃত্যু- খাঁদ নামেই চেনে।
মেয়েটি বাঁশি বাজাতে বাজাতে খাদের একদম সামনে যেয়ে থেমে গেলো। তবে বাঁশির আওয়াজ থামলো না।
সবাই অবাক হয়ে লক্ষ্য করলো, টপাটপ করে একের পর এক 'ই. টি' পড়ে যেতে লাগলো গভীর খাঁদে।


বাতাস ভারী হয়ে গেলো তাদের আর্ত- চিৎকারে। কিন্তু কেউ এগিয়ে এলো না। সবাই যে যার জায়গায় জমে গেলো। তারা বুঝতে পারছিলো তাদের চোখের সামনে কি ঘটছে। একসময় সমস্ত ই. টি তাদের প্রান হারালো মৃত্যু- ফাঁদে। একজনও বাকি রইলো না।

ঘটনার বেশ কিছুক্ষন পর সবাই স্বাভাবিক চেতনায় ফিরে এলো। সবার মাঝে দেখা গেলো মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ কেউ দুঃখ করলো, কেউবা খুশিতে গান গাওয়া শুরু করে দিলো। তবে বেশীরভাগ মানুষই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।
ঘটনার পর রহস্যময় মেয়েটি উপস্থিত হলো মেয়রের অফিসে। মেয়রের মুখ ভারী। কোন কথা বলছে না। মেয়েটি বলল- আমার কাজ শেষ, শর্ত অনুযায়ী আমার পারিশ্রমিক দিন এবার। মেয়র শুকনো মুখে বলল - কতো টাকা চাও তুমি?
- শর্ত ছিলো , আমি যতো টাকা চাইবো ততো টাকাই আপনারা দেবেন। তো, আমাকে ২ কোটি টাকা দিন।
মেয়র আঁতকে উঠে বললো- বলে কি? ২ কোটি টাকা? টাকা কি গাছে ধরে নাকি?
আর তুমি যে কাজ করেছো সেটা তো জনকল্যাণমূলক একটা কাজ। এরজন্য এতো টাকা চাইছো কেনো?
মেয়েটি বললো- দেখুন, এই কাজটা আমি এমনিতেই করে দিতাম। টাকা চাইতাম না। তবে টাকাটা আমার দরকার কারন এই টাকা আমি আপনাদের ভালোর জন্যই ব্যায় করবো।

মেয়র আর কথা বাড়ালো না। হ্যামিলনের বাশিওয়ালার কাহিনীটা তার জানা ছিলো। মনে ভয় হলো এই মেয়েটিও যদি সেরকম কিছু করে বসে!
চুপচাপ টাকা বের করে দিলো মেয়র।
মেয়েটি চলে যাওয়ার আগে কৌতূহল বশত মেয়র জিজ্ঞেস করলো-
কি কাজে তুমি এই টাকা ব্যায় করবে তা কি জানতে পারি?
মেয়েটি হাসিমুখে বললো- নিশ্চয়ই জানতে পারেন। আপনাদের এই শহরে এমন কিছু মেয়ে আছে যারা বেশ অসভ্য পোশাকে চলাফেরা করে। বলছিনা সবাই, কিছু মেয়ে। আর এই কিছু মেয়ের কারনেই বেশীরভাগ মেয়ে হয়তো টিজিং-এর শিকার হয়। তাই তাদের জন্য কিছু সভ্য পোশাক কিনবো; যেনো আমাকে আবার আসতে না হয়...

মেয়র বুঝতে পারলো মেয়েটার কথা। এরপর মেয়েটি বিদায় নিয়ে চলে গেলো।

টীকা-
'র- নগর'= রোমিও নগর
'ই.টি'= ইভ টিজার

বিঃদ্রঃ- উপরোক্ত গল্পটি প্রতীকী এবং কাল্পনিক। বাস্তবের কোন কিছুর সাথে এর মিল নেই।
--------------------------------------- :) -------------------------------------
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:১১
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×