১. মনের আকর্ষণ ও পরিশ্রমের সাথে কারবার করবে, নিজের জীবিকা নিজ হাতেই কামাবে, কারো উপর বোঝা হবে না।
একবার রাসূল (সাঃ) এর দরবারে এক আনসারী সাহাবী এসে ভিক্ষে চাইল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমার ঘরে কি কোন আসবাবপত্র আছে? সাহাবী বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! শুধু দু’টো জিনিস আছে। তার একটি চটের বিছানা, যা আমি গায়েও দিই এবং আমার বিছানাও, আর একটি পানির গ্লাস। তিনি বললেন, এ দুটি জিনিসই আমার নিকট নিয়ে এসো। সাহাবী উহা নিয়ে হাজির হলেন। তিনি উভয়টি নিলামে দু’দিরহামে বিক্রি করে এক দিরহাম তাকে দিয়ে বললেন এ দিরহাম দিয়ে পরিবারস্থ লোকদের জন্য কিছু খাদ্যদ্রব্য কিনে দিয়ে এসো। আর এক দিরহাম দিয়ে একটি কুড়াল কিনে নিয়ে এসো। অতঃপর তিনি নিজ হাতে কুড়ালে হাতল লাগিয়ে দিয়ে বললেন, যাও জঙ্গলে গিয়ে কাঠ কেটে আন এবং তা বাজারে নিয়ে বিক্রি কর, পনের দিন পর এসে আমার কাছে অবস্থা জানাবে। পনের দিন পর ঐ সাহাবী হাজির হলেন, তখন তিনি দশ দিরহাম তহবিল করেছিলেন। একথা শুনে রাসূল (সাঃ) অত্যন্ত খুশ হলেন এবং বললেন, এ পরিশ্রমের উপার্জন তোমার জন্য কতই না উত্তম যে, তুমি মানুষের নিকট থেকে ভিক্ষা করতে আর কিয়ামতের দিন তোমার চেহারায় ভিক্ষার কলংক লেগে থাকতো।
২. শক্ত হয়ে দৃঢ়তার সাথে উপার্জন করবে, বেশী বেশী উপার্জন করবে, যেন মানুষের নিকট ঋণী না থাক। রাসূল (সাঃ) কে একবার সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সব চাইতে উত্তম উপার্জন কোনটি? তিনি বললেন, নিজ হাতে উপার্জন এবং যে কারবারে মিথ্যা ও খেয়ানত না হয়”। হযরত আবু কোলবাহ (রাঃ) বলতেন, বাজারে ধৈর্য্যের সাথে কারবার কর। তুমি দীনের উপর শক্তভাবে স্থির থাকতে পারবে ও লোকদের থেকে মুক্ত থাকবে।
৩. ব্যবসায় উন্নতি লাভ করার জন্য সর্বদা সত্য কথা বলবে, মিথ্যা শপথ করবেনা।
রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা সেই ব্যক্তির সাথে কথা বলবেন না, তার দিকে মুখ তুলে দেখবেন না, তাকে পাক পবিত্র করে বেহেশতে দাখিল করবেন না, যে মিথ্যা শপথ খেয়ে খেয়ে নিজের কারবারর উন্নতিলাভ করতে চেষ্টা করে।
(মুসলিম)
৪. ব্যবসায়ে দীনদারী ও আমানতদারী অবলম্বন করবে, আর কাউকে কখনো খারাপ মাল দিয়ে নিজের হালাল উপার্জনকে হারাম করবে না। রাসূলাল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ “সত্যবাদী ও আমানতদারী ব্যবসায়ী কিয়অমতের দিন নবী, সিদ্দিক ও শহীদদের সঙ্গী হবে।
(তিরমিযি)
৫. খরিদ্দারকে ভাল জিনিস সরবরাহ করতে চেষ্টা করবে, যে নিশ্চিন্ত নয় যে তা ভাল না খারাপ- তা কখনো কোন খরিদ্দারকে দেবে না আর কোন খরিদ্দার যদি পরামর্শ চায় তাহলে তাকে ঠিক পরামশ দেবে।
৬. খরিদ্দারদেরকে নিজের বিশ্বস্ততায় আনতে চেষ্টা করবে যেন সে হিতাকাঙ্খী মনে করে, তার উপর নির্ভর করে এবং তার পরিপূর্ণ বিশ্বাস হয় যে, সে তার নিকট কখনো প্রতারিত হবে না।
রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি হালাল উপার্জনের ওপর জীবন নির্বাহ করেছে, আমার সুন্নতের উপর আমল করেছে, আমার নির্দ্দেশিত পথে চলেছে এবং লোকদেরকে নিজের দুষ্টামী থেকে নিরাপদ রেখেছে তা হলে এ ব্যক্তি জান্নাতী”। সাহাবীগণ আরজ করলেন ইয়া রাসূলাল্লাহ! এ যুগে এমন লোক তো অনেক আছে। তিনি বললেন, “আমার পরেও এরূপ লোক থাকবে”।
(তিরমিযি)
৭. সময়ের প্রতি খেয়াল রাখবে, সময়মত দোকানে পৌঁছে ধৈর্য্যের সাথে অপেক্ষা করবে।
রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ “জীবিকার অন্বেষণ এবং হালাল উপার্জনের জন্য ভোরে উঠে যাও। কেননা ভোরের কাজ সমূহ অধিক বরকতপূর্ণ হয়”।
৮. নিজেও পরিশ্রম করবে আর কর্মচারীদেরকেও পরিশ্রমে অভ্যস্ত করে তুলবে। অবশ্য কর্মচারীদের কাছ থেকে অধিকার, উদারতা ও সহনশীলতার সাথে কাজ আদায় করবে। তাদের সাথে নম্রতা ও প্রশস্ততা মূলক ব্যবহার করবে, কথায় রাগ করা ও সন্দেহ করা থেকে বিরত থাকবে।
রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তাআলা ঐ জাতিকে পবিত্র করবেন না, যারা প্রতিবেশী ও দুর্বলদের অধিকার প্রদান করে না”।
৯. খরিদ্দারদের সাথে সর্বদা নম্র ব্যবহার করবে আর কর্জ প্রার্থীদের সাথে কটু কথা বলবে না, তাদেরকে নিরাশও করবে না এবং তাদের তাগাদায়ও কঠোরতা অবলম্বন করবে না।
রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তাআলা সে ব্যক্তির উপর দয়া করুন। যে ব্যক্তি কেনাবেচা ও তাগাদায় নম্রতা ও সদাচার ও ভদ্রতা অবলম্বন করে”
রাসূল (সাঃ) এও বলেছেনঃ যে ব্যক্তি এ আকাঙ্খা রাখে যে, আল্লাহ তাআলা তাকে কিয়ামতের দিন দুঃখ ও অস্থিরতা থেকে রক্ষা করুন তাহলে তার উচিত অসচ্ছল ও অভাবগ্রস্থ ঋণ গ্রহীতাকে সমঙ দেয়া অথবা তার উপর থেকে ঋণের বোঝা রহিত করা।
১০. মালের কোন দোষ গোপন করা যাবে না। মালের দোষের কথা খরিদ্দারকে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেবে এবং খরিদ্দারকে ধোকা দেবে না। একবার রাসূল (সাঃ) এক শস্য ভাণ্ডারের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন, তিনি স্তুপের মধ্যে নিজের হাত ঢুকালেন তখন আঙ্গুলে কিছুটা ভিজা অনুভব হলো। তিনি শস্যের মালিককে জিজ্ঞেস করলেন, এ কি? দোকানদার বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এই স্তুপের উপর বৃষ্টি হয়েছিল। রাসূল (সাঃ) বললেনঃ তবে তুমি ভিজা শস্যগুলো কেন উপরে রাখনি? তাহলে লোকেরা দেখতে পেতো। যে ব্যক্তি ধোকা দেয় তার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই।
১১. মূল্য বাড়ার প্রতীক্ষায় গুদামজাত করে রেখে আল্লাহর সৃষ্টিক অস্থির করা থেকে কঠোরভাবে বিরত থাকবে।
রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ “গুদামজাতকারী পাপী”। অন্য এক স্থানে তিনি বলেছেনঃ “গুদাম জাতকারী কত খারাপ লোক যে আল্লাহ যকন সস্তা করে দেন তখন সে দুঃখে অস্থির হয়ে যায়। আর যখন মূল্য বেড়ে যায় তখন সে খুশী হয়ে যায়।
(মেশকাত)
১২. খরিদ্দার তার অধিকার দেবে। মাপে সততার প্রতি গুরুত্ব প্রদান করবে, লেনদেনও একইভাবে করবে।
রাসূল (সাঃ) ওজনকারী ব্যবসায়ীদের সাবধান করে বলেছেন “তোমাকে এম দু’টি কাজে দায়িত্বশীল করে দেয়া হয়েছে যার দরুন তোমাদের অতীত জাতিসমূহ ধ্বংস হয়েছে”।
পবিত্র কোরআনে আছে-
যারা ওজনে কম দেয় তাদের জন্য ধ্বংস! যারা ওজন করে নেবার সময় পুরোপুরি নেয়, আর যখন তাদেরকে ওজন করে দেয় তখন কম দেয়। তারা কি জানেনা যে, তা নিশ্চয়ই পুনরুত্থিত হবে। এক মহান দিনে, সেদিন সৃষ্টিকূলের প্রতিটি প্রাণী মহান আল্লাহর দরবারে দাঁড়াবে।
(সূরায়ে মুতাফফীক্বীন ১৩)
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০১৬ দুপুর ১২:১০