ইহুদি, খ্রিস্টান, হিন্দু, মুশরিক, নাস্তিক তথা তাবৎ কাফিরগোষ্ঠী ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে। কিন্তু কেন? কেউ কারও বিরোধিতা তখনই করে, যখন তার স্বার্থে আঘাত লাগে। তাহলে, কি এমন স্বার্থ কাফিরদের রয়েছে, যে তারা ইসলামকে মানতে পারছে না, আর অন্য কেউ ইসলাম মানুক, সেটাও মানতে পারছে না। আগে কাফিরদের বিরোধিতা ও ষড়যন্ত্রের নমুনা জেনে নেই।
কাফিরেরা কিভাবে ইসলামের বিরোধিতা করে যাচ্ছেঃ
১) মিথ্যা দোষ চাপানোঃ যে কোন সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব, দাপট সেই সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষের অবস্থার উপর নির্ভরশীল। যদি মুসলমানদেরকে ‘রেড মার্ক’ দিয়ে চিহ্নিত করা যায়, তাহলেই ইসলামকেও একই কাতারে ফেলা সম্ভব (নাউযুবিল্লাহ)। এটাই ছিল কাফিরদের ষড়যন্ত্র। ‘নাইন ইলেভেন’ এর সাজানো নাটক সেই ষড়যন্ত্রের একধাপ।
২) মুনাফিক দল তৈরীঃ কিন্তু এক সাজানো নাটক সেটা মুসলমানদের উপর চাপিয়ে দিল কিভাবে? এক্ষেত্রে মূল ষড়যন্ত্র হল, কাফিরদের প্রশিক্ষিত দলকে মুসলমান সাজিয়ে এমন কিছু করানো, যাতে সেটার মাধ্যমে মুসলমানদের দোষারোপ করা যায়। {আপনাদের মনে আছে কি, ব্রেইভিক যখন নরওয়েতে গণহত্যা করল, তার আগে একটি বিল্ডিংয়ে বিস্ফোরণ হয়েছিল, সেটার দায়ভার আবার একটি মুসলিম নামধারী ‘সন্ত্রাসী দল’ নিয়েছিল। অথচ, পরবর্তীতে জানা গেল যে, সেই বিস্ফোরণের পিছনেও ব্রেইভিকের হাত ছিল। তাহলে, প্রশ্ন হচ্ছে যে, যে ‘মুসলিম নাম সম্বলিত সন্ত্রাসী দল’ বিস্ফোরণের দায়ভার নিয়েছিল- সেটা কি কোন মুসলিম সংগঠন ছিল, নাকি ষড়যন্ত্রকারী দল।}
৩) মুসলিম দেশ দখলঃ ইংরেজদের কথাই বলি, আর আমেরিকানদের কথাই বলি, ষড়যন্ত্র হল-যদি কোন দেশের শাসনক্ষমতা কেড়ে নেওয়া যায়, তখন দেশের নাগরিকদের সহজেই ইচ্ছেমত পরিচালিত করা যায়। তাই মুসলিম দেশ দখল কাফিরদের অন্যতম প্রধান ষড়যন্ত্র। আফগানিস্তান, ইরাক, ফিলিস্তিন, বসনিয়া, চেচনিয়া, পাকিস্তানসহ সকল মুসলিম দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রই তার প্রমাণ। কিন্তু ষড়যন্ত্র তাদের ব্যর্থ, তখন ঈর্ষায় আঙ্গুল কামড়ানো ছাড়া কি আর করা। সময় এখন কাফিরদের দেশ দখল করার।
৪) মুসলিম গণহত্যাঃ কাফিরদের সংখ্যা তো বাড়ছে না, তাহলে পারসেন্টেজে জিততে চাইলে তো মুসলিমদের সংখ্যা কমাতে হবে। তাই সভা-সেমিনারে মানবতাবাদের লেকচার দিয়ে মুসলমানদেরকে লাখে লাখে শহীদ করা কাফিরদের এক নিকৃষ্টতম ও জঘন্যতম ষড়যন্ত্র। অচিরেই তার বদলা পাবে কাফিরেরা ইনশাআল্লাহ। Click This Link
৫) ইসলামী আইনের বিরুদ্ধাচরণঃ ইসলামী আইন-কানুন, আদেশ-নির্দেশের অহেতুক বিরোধিতা করা কাফিরদের আরেক ষড়যন্ত্র, যাতে মুসলমান ইসলাম পালন করতে না পারে। ফ্রান্সে নিকাব পড়ার বিরোধিতা তার এক উদাহরণ। ব্রিটিশরা যখন এসেছিল, তারা দাড়ি রাখলে জরিমানা করত, ভাল চাকরি দিত না ইত্যাদি ইত্যাদি। ফলে ভাল চাকরির লোভে মুসলমানেরা ইসলামের তর্জ-তরীকা ছেড়ে দিল। এভাবে এক প্রজন্ম যখন ইসলামের আমল ছেড়ে দিল, তারা পরবর্তী প্রজন্মকে সেই আমলের শিক্ষা দেয় নি। এভাবে ইসলামের অনুসরণকে সমূলে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র ছিল কাফিরদের। এক-দুই প্রজন্ম বেদ্বিনী শিখে গেলে, ব্রিটিশরা ফাসিকদের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে চলে যায়, যাদের মধ্যে ইসলামের আর নাম-নিশানা ছিল না।
৬) মুসলিম ঐক্য বিনষ্টঃ সারা পৃথিবীতে মুসলমানেরা যাতে এক কাতারে থাকতে না পারে, সেজন্য কাফিরেরা মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ বাড়ানোর ব্যাপারে অত্যন্ত সচেতন। একতা বিনষ্টের ব্যাপারে খিলাফত ধ্বংস করে দেওয়া-কাফিরদের অন্যতম সফল ষড়যন্ত্র।
৭) ইসলামী জজবা, চেতনা ধ্বংসঃ যদি ইসলামের প্রতি প্রবল টান নিঃশেষ করে দেওয়া যায়, তবে রূহবিহীন নিথর দেহের মত মুসলিম সমাজকে হেচকা টানেই ফেলে দেওয়া সম্ভব- এটা কাফিরদের অন্যতম ষড়যন্ত্র। তাই মুসলমানদের মধ্যে যাতে জজবা তৈরী হতে না পারে, সেজন্য ইসলামী শিক্ষার চর্চাকে কাফিরেরা বন্ধ করে দিতে চায়। বাংলাদেশের সিলেবাস থেকে ‘ইসলামী শিক্ষা’ তুলে দেওয়ার হীন চেষ্টা সেই ষড়যন্ত্রেরই এক ধাপ। ব্রিটিশরা যখন এসেছিল, তারাও এ উপমহাদেশের মক্তবগুলো বন্ধ করে দেয়ার ষড়যন্ত্র করেছিল।
৮) মুসলিম যুবক ও নারীদের বিপথগামী করাঃ কাফিরদের আরেকটি ষড়যন্ত্র হল- মুসলিম যুবকদের ধ্যান-ধারণা, চাল-চলনকে নিয়ন্ত্রণ করে কাফিরদের অনুরূপ করা। মুভি, সিনেমা, নাটক, গান-বাজনা, খেলাধুলা ইত্যাদি হাবিজাবি বিষয়গুলোর মাধ্যমে কাফিরেরা তাদের এই ষড়যন্ত্রকে সফল করে তুলছে। নারীদের বেপর্দা করানো-কাফিরদের অন্যতম প্রধান ষড়যন্ত্র। যে নারী পর্দার তোয়াক্কা করে না, সে নিজেই লা’নতপ্রাপ্ত হয়ে ইসলাম বিমুখ হয়ে যায়। ফলে তার মাধ্যম দিয়ে তার সন্তান ও স্বামীকে ঘায়েল করা সম্ভব-এমনটিই কাফিরদের ষড়যন্ত্র।
৯) মিডিয়া নিয়ন্ত্রণঃ আমি আপনাকে দেখছি না, আপনিও আমাকে দেখছেন না, শুনছেন না। কিন্তু আমিও মিডিয়ার কথা শুনি, আপনিও শুনেন। তাহলে আপনাকে আমাকে সকল মুসলমানকে নিয়ন্ত্রণ করার অন্যতম মোক্ষম হাতিয়ার ‘মিডিয়া’কে ব্যবহার করে মুসলিম বিশ্বকে হাতের মুঠোয় পরিচালিত করা কাফিরদের আরেক ষড়যন্ত্র।
১০) মুসলিম দেশের শাসকদের নিয়ন্ত্রণঃ মুসলিম দেশের শাসকদের নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে মুসলমানদেরকে দমিয়ে রাখা ও নিয়ন্ত্রণ করা কাফিরদের আরেক ষড়যন্ত্র। মুসলিম শাসকেরা ধর্মের মুহব্বতের চেয়ে ক্ষমতার লোভ দ্বারা বেশি প্রভাবিত। এছাড়া অনেকগুলো কাফির দেশের একসাথে হুমকির ফলে মুসলিম শাসকেরা পুরো বিলাই বনে যায়। কিন্তু মুসলিম শাসকেরা যদি মুসলিম স্বার্থে সকল মুসলিম শাসক ঐক্যবদ্ধ হয়ে সিদ্ধান্ত নিত, তাহলে আমেরিকা, ইসরাইল, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, ইংল্যান্ডের আর টাইম থাকত!!!
১১) মুসলমানদের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টিঃ মারামারি, কাটাকাটি, বিবাদ সৃষ্টি করে মুসলমানদেরকে অস্থিরতার মধ্যে রাখা কাফিরদের আরেক ষড়যন্ত্র। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে ব্যাঙ্গাত্মক মুভি, কার্টুন, লেখালেখি তারই একটা অংশ। ওরা চায় মুসলমানকে কষ্ট দিতে। হয়ত বা পারছে, কিন্তু ইটের পরিবর্তে পাটকেলের ভয় করছে না।
১২) মুসলিম আদর্শ চুরি, অতঃপর বিনষ্ট এবং কাফিরদের আদর্শ প্রতিষ্ঠাঃ হালাকু খানের বাগদাদ আক্রমণ বা ফারডিনান্ডের স্পেন আক্রমণের পর জ্ঞান-বিজ্ঞানে মুসলমানদের আবিষ্কারগুলো চুরি করে পরবর্তীতে নিজেদের নামে চালিয়ে দেয় কাফিরেরা। আর মুসলমানদের থেকে চুরি করে নিজেদের আদর্শ স্থাপন করা কাফিরদের আরেক ষড়যন্ত্র। জ্ঞান-বিজ্ঞানের সকল শাখায় তাই মুসলমানদের নাম নিশানা আজ খুঁজে পাওয়া দুর্লভ, যা কিনা কাফিরদের ষড়যন্ত্রেরই ফলাফল। প্রমাণস্বরূপ, ১২০০ শতাব্দীর পূর্বে কাফিরদের কোন বিজ্ঞানী খুঁজে পাওয়া যায় না, সেটা নিউটনই বলুন, আর আইনস্টাইনই বলুন। কিন্তু সে সময় মুসলমান বিজ্ঞানী অহরহ ছিল। এভাবেই কাফিরেরা তাদের মধ্যে আদর্শ স্থাপন করার হীন চেষ্টার মাধ্যমে মুসলমান জাতিকে তাদের দিকে রুজু রাখতে চায়, তাদের অনুসরণ করাতে চায়, তাদের সান্নিধ্যে রাখতে চায়; যাতে তাদের সান্নিধ্যে এসে মুসলমানের ঈমান বিনষ্ট হয়ে যায় (নাউযুবিল্লাহ)।
সকল ষড়যন্ত্র নজরদারি করার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে গোয়েন্দা ও মুনাফিক দল রেখেছে কাফিরেরা। অপরদিকে কাফিরেরা মুসলমানদের সকল আক্রমণ, সকল প্রচেষ্টার মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত। তাই ফাঁদ পেতে মুসলমানদেরকে ফুসলাচ্ছে যেন মুসলমানেরা এগিয়ে গিয়ে সেই ফাঁদে পড়ে। কিন্তু, কাফিরদের জানা নেই যে, সুনামি আসলে তার ঢেউ বাঁধ দিয়ে ঠেকানো যায় না। অচিরেই কাফিরের দল এই সত্য অনুধাবন করতে পারবে ইনশাআল্লাহ।
[বিঃদ্রঃ কাফিরদের ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় মুসলমানদের পরিকল্পনা কোথায়? ষড়যন্ত্র মাথায় রেখে পরিকল্পনা করতে হয়। গোপনীয়তা বজায় রাখুন।]
কাফিরদের বিরোধিতার কারণঃ
১) ইসলাম মনগড়া অন্য সকল ধর্ম ও নাস্তিকতাকে অসাড় প্রমাণ করে দিয়েছে। ফলে নিজেদের অস্তিত্বই যখন বিপন্ন, তখন বিরোধিতাই স্বাভাবিক। কিন্তু যে নিজ অস্তিত্বের চেয়ে সত্যকে প্রাধান্য দেয়, সে মুসলমান হতে বাধ্য।
২) মানুষ বন্দিত্বের পরিবর্তে মুক্ত বিচরণকেই ভালবাসে। কিন্তু, একজনের মুক্ত বিচরণ অপরের বন্দিত্বের কারণ হতে পারে। তাই, কিছুটা বাধ্যবাধকতা সবারই থাকা দরকার, যা ইসলামে ন্যায়ের ভিত্তিতে নির্দেশিত হয়েছে। সেটাই যারা অপছন্দ করে, তারা ইসলামকে মেনে নিতে পারছে না।
৩) কাফিরেরা মদ খেয়ে নেশা মেটায়, খেলাধুলা করে এক মানসিক প্রশান্তি পায়, পরনারী ভোগে পৈশাচিক মজা পায়, পরসম্পত্তি লুন্ঠনে ধনী হতে চায়। কিন্তু ইসলাম যখন তাদের এতসব আনন্দ ভোগকে নিষিদ্ধ করে দেয়, তখন নেশাগ্রতস্থ কাফিরেরা কি করে ইসলামকে মেনে নিবে!
৪) ইসলামের অবস্থান শয়তানের অপকর্মের বিরুদ্ধে। যেসব বেকুব শয়তানের চেলা হয়ে গেছে, সাগরিদ হয়ে গেছে, তারা কি করে ইসলামকে মেনে নিবে!
মূলতঃ লোভ, হিংসা, অহংকার, আমিত্ব, অজ্ঞতা, অন্ধভক্তি এই সকল কারণে কাফিরেরা ইসলামের বিরোধিতা করে থাকে।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১১:০১