somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যদি এ সমাজ কোন শিক্ষাই না দিত, তবে কোন পথে তার যাত্রা হত??? - একটি জীবন দর্শন

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ৮:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নতুন এক শিশু সে জন্ম নিল। পৃথিবীর বুকে ধীরে ধীরে সে বেড়ে উঠছে। পৃথিবীতে তার আপন বলে কিছুই নাই। একদিন সে খেয়াল করল যে, সে ক্ষুধা অনুভূত করছে। ক্ষুধা নিবারণের জন্য সে অনেক কিছুই মুখে দেওয়ার চেষ্টা করল, কিন্তু সব খেতে পারছে না। কিছু একটা পেল যা খেতে ভাল লাগছে। সেটা দিয়ে তার ক্ষুধা মিটল। খাবারের পাশাপাশি সে মলত্যাগেরও প্রয়োজন অনুভব করছে। কিন্তু আবারো তার ক্ষুধা লাগছে। সে এবারো অন্য খাবার দিয়ে ক্ষুধা মিটাল। এভাবে সে খাবারের একটা লিস্ট তৈরী করল। সে বুঝতে পারল, পৃথিবীতে তার একটাই মাত্র পিছুটান। সেটা হল- ক্ষুধা। ক্ষুধা নিবারণ ও মলত্যাগের মাধ্যমে সে আমরণ বেঁচে থাকতে পারে।

=@={কিন্তু তার মনে প্রশ্ন, শুধুই কি ক্ষুধা নিবারণের জন্য পৃথিবীতে আছি}=@=

কিন্তু দিনে খাবার খুজলেও সে রাতে ক্লান্ত, তার চোখ বুজে গেল। সে ঘুম ভাঙ্গলে সে তার ঘুমন্ত অবস্থায় নিরাপত্তার প্রয়োজন বোধ করল। তাই সে নিরাপদ স্থানে ঘর বানানোর চিন্তা করল।

সে তার আশেপাশে অনেক মানুষ দেখতে পায়। কিন্তু প্রাকৃতিকভাবেই সে লজ্জিত বোধ করতে থাকে। ফলে সে তার গুপ্তাঙ্গ আচ্ছাদন করার প্রয়োজন বোধ করে। আবার সে ঠান্ডায় শরীর আবৃত করার প্রয়োজন বোধ করে। কিন্তু শরীর আবৃত করাকেই তার ভাল লেগে যায়। এভাবে সে বস্ত্রের প্রয়োজন বোধ করে।

ঝড়-বৃষ্টি, প্রাকৃতিক দুর্যোগে সে নিজেকে অসহায় মনে করল। সে কারও সাহায্যের আশায় সমাজে ফিরে গিয়ে সামাজিক জীবনের প্রয়োজন অনুভব করল। এভাবেই সামাজিকতার সূত্রপাত হল। সামাজিকতা সাহস যুগাতে পারে, কিন্তু বিপদ থেকে উদ্ধার করতে পারে না। ফলে মানুষ ধারণাবশতঃ সেই প্রভাবশালীর আরাধনা, পূজা করতে থাকে। এভাবে মুশরিকদের ধর্মের সূত্রপাত।

সমাজের মানুষের সাথে ভাব বিনিময় করা অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়ল। তাই ভাষার প্রয়োজন অনুভূত হল।

একদিন সে ঘুম ভাঙ্গলে অসুস্থতার কারণে খুব দুর্বল অনুভব করে। সমাজের অন্য মানুষেরা তার সুস্থতার জন্য বিভিন্ন গাছ-গাছালি তাকে খাওয়াতে লাগল। অনেক চেষ্টা বৃথা গেল। কিন্তু একদিন হঠাত কিছু একটা খাওয়ার পর সে সুস্থ হল। পরবর্তীতে কারও সেই রোগ হলে সেটাই করা হল এবং সুস্থ হল। ফলে অসুস্থতায় চিকিৎসার আবিষ্কার হল এবং অভিজ্ঞতা সংরক্ষণের মাধ্যমে চিকিৎসা বিজ্ঞানের উদ্ভব হল।

সে তার আশেপাশে অনেক মানুষ দেখে, কিন্তু মেয়েদের দিকে দৃষ্টি পড়লে তার কেমন যেন অন্যরকম অনুভূতি শুরু হয়। এটা স্বেচ্ছায় নয়, বরং প্রাকৃতিকভাবেই তার এ অনুভূতির আবির্ভাব। সে প্রয়োজন বোধ করে নারীর সান্নিধ্য। এভাবেই তার বিয়ের আয়োজন হল। বিয়ের পর তার সন্তান হল এবং সে সন্তানের প্রতি মায়া অনুভব করতে লাগল। তার অভিজ্ঞতা একাকীত্বতা থেকে শুরু হলেও, তার সন্তানের অভিজ্ঞতা সামাজিকতা থেকে শুরু।

=@={ কিন্তু তার মনে প্রশ্ন, নারীদের সাথে মিলনে সন্তান জন্ম হয়। এবং নারীদের প্রতি দৃষ্টি পড়লেই অন্যরকম অনুভূতি সৃষ্টি হয়। এখানে আমার এ দেহ তো নারী-পুরুষ চেনে না। তাহলে সে কেন এমন একজনের প্রতি আকৃষ্ট হয় যার সাথে মিলনে সন্তান জন্মায়। এখানে তো আমার হাত নেই, তাহলে কার হাত রয়েছে?}=@=

একজন ব্যক্তির পক্ষে সকল প্রয়োজন পূরণ করা দুষ্কর হয়ে পড়ল। সমাজের মধ্যে শ্রম বন্টনের প্রয়োজন দেখা দিল। ফলে মাঝি, তাতী, কৃষি কাজ, পশু পালন বিভিন্ন পেশায় বিভিন্ন জন নিয়োজিত হল এবং নিজেরা পণ্য বিনিময় করা শুরু করল। কিন্তু, মাছের বিনিময়ে গরু নেওয়া বেমানান হয়ে যায়, ফলে মূল্য-নির্ধারনের প্রয়োজন দেখা দিল। পণ্য বিনিময় করার ক্ষেত্রে উভয়েরই তাদের পরষ্পরের পণ্যের চাহিদা থাকতে হবে, কিন্তু এটা সব সময়ই সম্ভব নয়। ফলে মূল্য নির্ধারণ ও মুদ্রার প্রয়োজন অনুভূত হয়।

বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন ফসলের হিসাব করার জন্য ঋতুর হিসাব শুরু হল। বছরের হিসাব করা হল। বিভিন্ন ঘটনাকে স্মরণ করার জন্য ক্যালেন্ডার আবিষ্কৃত হল।

সমাজে সবাই একসাথে এক গোত্রে মিলে বসবাস করতে থাকে। কিন্তু গোত্রের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে নেতার প্রয়োজন অনুভূত হয়। নেতা গোত্রের বিভিন্ন কাজ সমাধা করে। কিন্তু সবাইকে সংঘবদ্ধ করে সুষ্টুভাবে পরিচালনা করার জন্য শাসনব্যাবস্থার প্রয়োজন অনুভব করে।

গোত্রের নেতা গোত্রের প্রাধান্য বিস্তার করার চেষ্টা করে। ফলে অন্য গোত্রের সাথে দ্বন্দ্ব-বিরোধ-মারামারি শুরু হয়। তারা কে কাকে কিভাবে ঘায়েল করবে, সেজন্য অস্ত্র উদ্ভাবন করল।

যুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য সৈন্যবাহিনী তৈরী করা হল।


সমাজে যে শৃংখলা গড়ে উঠেছে, খুব সহজেই যাতে নতুন নতুন শিশুরা সেসব শিখতে পারে, সেজন্য শিক্ষা ব্যবস্থার প্রচলন হল।

সকল প্রয়োজন পূরণ হতে লাগল। এরপর মানুষের অভিজ্ঞতা মানুষকে উন্নত সভ্যতার দিকে ধাবিত করল। তারা রোবট তৈরী করল, স্বয়ংক্রিয় মেশিন তৈরী করল, উদ্ভিদ ও প্রাণীর নকল তৈরী করল, জীবদেহের সকল উপাদান তৈরী করতে পারল। কিন্তু তারা এক জায়গায় গিয়ে আটকে গেল-সেটা হল প্রাণের অস্তিত্ব।

=@={তাই সেই মানুষের মনে প্রশ্ন, আধুনিক সভ্যতা নকল প্রাণীদেহ তৈরী করতে পারলেও তাতে প্রাণ দিতে পারল না। এর অর্থ, প্রকৃতির নিয়মে আমরা মানুষসহ কোন প্রাণের অস্তিত্ব আসে নি। বরং এ প্রাণের একজন খলিক্ব রয়েছেন, আর তিনি হচ্ছেন আল্লাহ পাক।}=@=

সেই ব্যক্তি যখন একজন সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ পাকে বিশ্বাস করল, তখন সে একদিন জানতে পারল যে, আল্লাহ পাক যুগে যুগে নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম পাঠান উনার ইবাদত শিক্ষা দেওয়ার জন্য। তখন সে তার যুগের নবীর কাছে ইসলাম গ্রহণ করল। সে তখন বুঝতে পারল, সমাজ সময়ের সাথে তার নিজের গতিতে এগিয়েছে। কিন্তু, সেই সমাজে এমন কিছু প্রচলিত যা মানুষের জন্য, সভ্যতার জন্য হুমকিস্বরূপ, যেসব বিষয় আল্লাহ পাক মানুষকে নিষেধ করেছেন। কিন্তু সমাজের মানুষগুলো সেগুলো না মানায় তারা ধ্বংসের দিকে ধাবমান। সে যখন এই সত্য অনুধাবন করতে পারল, সে তখন ঈমান লাভ করতে পারায় আল্লাহ পাকের শুকরিয়া আদায় করল।

এভাবেই সমাজ আজ এতদূর গড়িয়েছে। কিন্তু শুধু ক্ষুধা নিবারণ করলেই আমরা পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে পারি। তাহলে কেন এত কিছু? আমরা আজ রাজত্ব বা সম্মানের পিছনে ছুটছি, শুধু কি আমি এক মানুষ আরেক মানুষের সাথে প্রতিযোগিতার জন্য। একবার চিন্তা করুন তো, আজ এক বিঘা মাটি পেতে মরিয়া আছেন; কিন্তু যদি এমন হত যে সারা দুনিয়া ফাকা। আপনাকে বলা হল, যেখানে খুশি বাস কর, চাষাবাদ কর, যা খুশি তাই কর। তাহলে কি এক বিঘা মাটির কোন মূল্য থাকবে আপনার কাছে? আবার ১০ টা, ২০টা, ১০০টা প্রাসাদ আপনাকে দেওয়া হল, আপনার কোন অভাব নেই; কিন্তু কোন প্রজা আপনার গোলামী করে না। তাহলে এই প্রাসাদের কি মূল্য আছে আপনার কাছে। মূলতঃ আমরা দুনিয়ার পিছনে ছুটছি শুধুই মানুষকে দেখানোর জন্য, মানুষের সাথে প্রতিযোগিতার জন্য, অন্য মানুষকে নিজের গোলাম বানানোর জন্য।

এ দুনিয়ার মোহ ত্যাগ করা জরুরী। এক আল্লাহ পাকের ইবাদতে মগ্ন হতে চাই।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ৮:৩৪
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সত্যি বলছি, চাইবো না

লিখেছেন নওরিন হোসেন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:০৮



সত্যি বলছি, এভাবে আর চাইবো না।
ধূসর মরুর বুকের তপ্ত বালির শপথ ,
বালির গভীরে অবহেলায় লুকানো মৃত পথিকের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কি 'কিংস পার্টি' গঠনের চেষ্টা করছেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:১০


শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকেই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামক সংগঠন টি রাজনৈতিক দল গঠন করবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা চলছেই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্থান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্থান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×