যদি কাওকে জিগেস করা যায়, ধর্ষণের জন্য কি কি কারণ হতে পারে?
অধিকাংশ পুরুষেরা উত্তর দিবেন, ধর্ষণের এর জন্য মেয়েরা দায়ি। ( হাতের সব আঙ্গুল সমান না)
কেনো? কিভাবে?
উত্তরটা হবে - আজ কাল মেয়েরা যে ভাবে চলাফেরা করে সেটাই রেভুলেশন।
আমি পর পর ২ বার বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বিভাগীয় পর্যায় গেছি। তো ফাষ্ট স্টেপ থেকে বিভাগীয় পর্যায় যেতে কয়েকবার ছিলো নাড়ী নির্যাতন প্রসঙ্গ।
তখন দেখেছি বিপক্ষে যারা বলতেন - মেক্সিমাম সময় এই এক কথায় বলা হত - মেয়েদের পোষাক-আসাক।
সেটা মঞ্চ বা জীবন রঙ্গ লিলার মঞ্চ এই হোক।
আসলে এই তুলোনা টার যুক্তি কতটুকু?
একবারও নিজেদের নজর আর মনের কু-চেতনাকে দায়ি করেন না তারা।
যুক্তিবাদিরা উদাহরণ দিবেন- ধরুন ২ টা পাত্রে কিছু খাবার রাখলেন, একটা পাত্রের খাবার ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখলেন অন্যটা খোলা রাখলেন।
কিছুক্ষন পর দেখবেন যে পাত্রটি ঢাকনা বাদে উন্মুক্ত ছিলো সেটাতে মাছি মশা বসে ছারখার। অন্য যেটি ঢাকা সেটি তে কোন প্রকার মাছি মশা কাছেই যায় নি।
এ থেকে আমরা কি বুঝি"?
বুঝি পর্দা করলে কোন মেয়েই ধর্ষিত হয় না।
যারা বে পরয়া ভাবে চলা ফেরা করে তারাই বেশি ধর্ষিত হয়।
কোয়েশ্চেন ইজ- কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনু কে কেন ধর্ষণ ও অমানষিক নির্যাতন করা হলো?
সোহাগী জাহান তনু নিশ্চয় বেপরয়া ভাবে চলাফেরা করতেন না।
তনুর সাবজেক্ট এই মুহর্তে বাদ। গতবছর, আমার এলাকায় এক মেয়েকে রেপ করে মেরে আত্যহত্যা বলে চালিয়ে দিয়েছে। ঐ মেয়েটার চেহারা আমি কখনে দেখেছি বলে মনে পড়ে না।
কারণ অলয়েজ বোরকা পরত ইভেন ওর সহপাঠীরাও কখনো ওর চেহারা দেখে নি।
সুতরাং - পর্দা করলে ধর্ষিত হয় না এই গ্যারান্টি আপনাকে কে দিয়েছে?
এবার আমার যুক্তি দেখায় একটু- ওহ হ্যাঁ আগে আমার একটা ঘটনা বলি।
আমি একটা মেয়েকে ধর্ষণ করেছি !
অবাক হচ্ছেন? আরে দাদা আমি অনেকটা সরল সহজ মানুষ। যে কোন কথা বমি করতে একটুও আটকায় না।
এইতো গত বছর- কুয়াকাটা গেছিলাম টুরে। সন্ধ্যার পর সুমদ্র সৈকতে বসে বসে সিগেরেট খাচ্ছিলাম একা বসে। ভালো লাগছিলো না কিছু।
মাথায় কি জানি সব আজগুবি চিন্তা ভাবনা আসছিলো।
একটা সময় কোন একুটা মেয়ের কান্না কন্ঠে শুনতে পেলাম ; বাঁচান আমাকে ভাই।
পিছন ফিরতেই দেখি একটা ১৯-২০ বছরে মেয়ে। জামাটা ছেঁড়া । বুকে ওরনা নেই। কি খারাপ অবস্থা।
পিছনেই দেখি ৩/৪ জন ছুটে আসছে, বিষয়টা দেখে আমি একটু ঘাবড়ে গেলাম। মেয়েটা আমার পিছনে এসে আমার বাম হাত শক্ত করে ধরে বললো;
ভাই বাঁচান আমাকে। ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।
ওই লোক গুলা ছুরি হাতে বললো - সর শালা ঝামেলা করিস না।
আমিও বললাম ভাই ওরে যা খুশি তাই করেন , প্লিজ আমাকে কিছু বলেন না। আমি গেলাম ।
আমার পাশ থেকে মেয়েটাকে টেনে হেঁচড়ে নিয়ে গেলো মেয়েটাকে।
কিন্তু আমার একটুও অনুশোচনা হয় নি। এখন ও না।
তারপর?
ওরা মেয়েটাকে হায়নার মত ছিড়ে উপভোগ করলো। পরে লাশটা মেবি সাগরে ফেলেছে।
পরে হিসেব করে দেখলাম , ঐ ধর্ষণ টা আমিই করেছি সেদিন। কারণ আমি কাপুষের মত দাঁড়িয়ে দেখেছি, মেয়েটাকে নিয়ে গেছিলো আমি কিছু বলিনি। সুতরাং ধর্ষণটা আমিই করেছি, ওরা করেনি।
এরকম হরমশই ঘটে চলেছে। ঘটবেও। কারণ সমাজের নিতিনির্ধারকেরা এমন আইন নির্ধারণ করেছেন , যে খানে মুল অপরাধির কোন শাস্তি হয় না। বরং এরা বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায়।
এবার মুল কথায় আসি ;
ঐ মেয়েটার ধর্ষণের জন্য আমি নিজেই দায়ি। তবে এতটুকু বলতে পারবো বুক ফুলিয়ে , সোহাগী জাহান তনু ও অন্যান্য যত মেয়েরা আজ পর্যন্ত ধর্ষিত হয়েছে ( যেটার বিচার হয়নি)
সব ধর্ষনের জন্য বাংলাদেশের সব বিচারপতি, মন্ত্রি, সবাই সমান ভাবে দ্বায়ী। কারণ অপরাধিরা ঘুরছে বুক ফুলিয়ে, । ক্ষমতার অপব্যহার করে রেহায় পেয়ে যাচ্ছে।
এবার আসি যুক্তি বাদিদের কথায়, আচ্ছা তুলনা করুন বর্তমান বিশ্বে ধরুন - ইংল্যন্ড এ বছরে কতটা মেয়ে ধর্ষিত হয়?
গত বছরের রিপর্টে দেখা যায় মাত্র ৭% মেয়ে। আর আমাদের দেশের গড় হিসাবে ২০% এর উপরে। প্রশ্ন হলো ওদের এত কম কেনো?
উত্তর সুষ্ট বিচার। কঠোর শাস্তি। সেটা আমাদের দেশে নেই ।
ইংল্যান্ড এর মেয়েরা কিভাবে চলে নিশ্চয় জানা আছে? সুতরাং পর্দা যুক্তি খাটে না সব জায়গায়।
যদি দেশে কঠোর বিচার ব্যবস্থা থাকতো , দেখবেন এমনিতেই ৫০ ভাগ ধর্ষণ কমে গেছে।
ধর্ষন করার আগে ধর্ষকের ৭ বার ভাবতে হবে করবো কি করবো না,।
তবে হ্যাঁ পর্দা করাটাও কিছুটা কমাবে এই পাপের কাজ থেকে । কিন্তু তাঁর আগে ছেলেদের নজর নত না হলে কখনই সম্ভব না।
আমরা ছেলেরা নিজেরা যতদিন না পারবো মেয়েদেরকে সন্মানের চোখে দেখতে ততদিন না এই সমস্যার সমাধান হবে।
কারণ ধর্ষণ ছেলেরাই করে কোন মেয়ে করে না।
সোহাগী জাহান তনু বিচার চাইবো না। কারণ এর বিচার কখন ও হবে না।
এতটুকু বলবো , সময় এসেছে প্রতিবাদের।
(বিঃদ্রঃ আমার ধর্ষনের গল্পটা কাল্পনিক )
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১:৫৪