গোলাম মওলা রনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে পটুয়াখালীর একটি আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তরুণ এই সংসদ সদস্য ব্যাপক আলোচনায় এসেছেন নিজ দলের অনেক মন্ত্রীর কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে। সম্প্রতি দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত তার একটি সাক্ষাৎকারের পদ্মা সেতু সম্পর্কিত একটি অংশ তুলে ধরা হলো.....
কালের কণ্ঠ : এবার আসি বিশ্বব্যাংক ও পদ্মা সেতু প্রকল্পে। আপনি কি মনে করেন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন করবে? এ সরকারের সময়ে কি পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হবে?
গোলাম মওলা রনি : বিশ্বব্যাংক নিয়ে আমার তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে। প্রধানমন্ত্রী সংসদে ভাষণে একবার বললেন, পদ্মা সেতু নিজেদের অর্থে করব। আবার বললেন, রেল সেতু বাদ দিয়ে পদ্মা সেতু করব। আমি এ কথাটির জন্য তাঁকে সালাম জানাই। আজ থেকে তিন বছর আগে এ বিষয়ে সংসদে যে মিটিং হয়েছিল, সেখানে বলেছিলাম, বিশ্বব্যাংক এই সরকারের আমলে টাকা দেবে না। পদ্মা সেতু তৈরি তো দূরের কথা, আপনারা একটা খুঁটিও গাড়তে পারবেন না এই সরকারের আমলে। পারলে নিজেদের অর্থায়নে করুন। প্রধানমন্ত্রীকে বোঝান। কারণ যেসব কাগজপত্র আদান-প্রদান হয়েছে, তা পড়ে এটা আমার মনে হয়েছে। সেখানে তৎকালীন সচিব ও যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনও ছিলেন।
এই পদ্মা সেতুটির সঙ্গে যদি রেল সেতু করেন তাহলে ব্যয় দাঁড়াবে ১২ হাজার কোটি টাকা। এই বারো হাজার কোটি থেকে ব্যয় বাড়তে বাড়তে এটা হয়েছে এখন ২৬ হাজার কোটি টাকা। পদ্মা সেতুর যে আট মাস দেরি হলো, তাতে আরো দুই হাজার কোটি টাকা বেড়ে গেছে। আর যদি আপনি শুধু সড়ক সেতু করেন তাহলে আট থেকে দশ হাজার কোটি টাকায় হয়ে যাবে। আমরা ২০ হাজার কোটি বাড়তি খরচ করে রেল সেতু করছি; কিন্তু আগামী ২০ বছরেও কিন্তু রেল চালু করতে পারব না। কারণ রেল চালু করতে হলে রেললাইনের পেছনেসহ অন্যান্য খরচ হবে আরো ৬০ হাজার কোটি টাকা। যেখানে আমরা ২৫-৩০ হাজার কোটি টাকা জোগাড় করতে পারি না, কিভাবে ৬০ হাজার কোটি টাকা জোগাড় করব? ফলে এই রেল সেতুতে তখন আপনাকে বাচ্চাদের খেলনা চালাতে হবে। এটা পড়ে থাকবে।
বিশ্বব্যাংকের ফিরে আসা নিয়ে সরকার ভয়াবহ বিব্রত হবে। বিশ্বব্যাংক দুর্নীতি দমন কমিশনের সঙ্গে বসবে। তারপর বড় বড় কর্তাদের মিডিয়ার সামনে এনে পর্যুদস্ত করবে। দেখবেন তখন সরকারের কাপড়চোপড়ও থাকবে না। তখন না পারবে গিলতে, না পারবে ঠেলতে। তখন যদি সরকার কোনোভাবে কিছু বলে, তাহলে বিশ্বব্যাংক বলবে, দুর্নীতি তদন্তে সহায়তা না করায় আমরা গেলাম।
বিশ্বব্যাংকের খপ্পরে যারা একবার পড়েছে, তাদের সব কিছু গেছে। হয় আপনাকে শেষ করে দেবে, নতুবা একদম কুকুরের মতো মাথা নত করে প্রভুর সামনে থাকবেন। আমরা ভিক্ষুকদের সঙ্গে যেমন আচরণ করি, বিশ্বব্যাংকও আমাদের সঙ্গে সে রকম আচরণ করে।
কোটি কোটি মাথাকে বিকিয়ে দিয়ে আমাদের পদ্মা সেতু দরকার কি না, তা ভাবতে হবে।
চুয়াত্তর সালে বিশ্বব্যাংক ও আমেরিকার কবলে পড়ে কিন্তু দুর্ভিক্ষ হয়েছিল বাংলাদেশে। আমরা আবার সেদিকে যাচ্ছি।