ভারত দেশটাকে বড়ই অপছন্দ। উপমহাদেশে এদের মাতব্বরির আঁচ বিদেশের মাটিতেও টের পাওয়া যায়। এক সময় এদের অর্থনিতি, সংস্কৃতি বা ইতিহাস প্রায় অনেকাংশেই আমাদের সাথে একই পর্যায়ে থাকলেও, সাম্প্রতিক কালে বাংলাদেশীদের এরা আর মানুষই মনে করে না। আমরা যেন এদের কাছে প্রায় উপজাতির পর্যায়ে।
বহুযুগ আগেই হিন্দি গান ছবি দেখা বন্ধ করেছি। এক ইন্ডিয়ান ছেলে খুব ভাব নিয়ে শাহরুখ খানের গল্প করতে আসলে বলেছি, শাহরুখ খান আবার কে, আফগানিস্থানী নাকি? সেই ছেলেতো অবাক। জার্মানরাও নাকি এই লোককে চেনে। আমি ভাবলেশহীন মুখে বলি, সরি, এই বেটার নামও শুনি নাই। সাকিবকে অকারনে সাইড লাইনে বসিয়ে রাখার পর থেকে আইপিএলও আর দেখি না। (এই বছর শুনছি আর তাকে ফাও ফাও বসিয়ে রাখতে পারছে না, সাকিবই নাকি এখন কলকাতার সেরা পারফর্মার)।
ভারতে নাকি নির্বাচন হয়ে গেল, সেই খবরই রাখি নাই। তবে মোদি এসেছে, বিজেপির নামে ধর্মান্ধতার উত্থান হল বলে -এইসব রব শুনে কৌতূহল বসত একটু নির্বাচন নিয়ে পড়াশোনা করলাম। ভারতে কে জিতল কে গো-হারা হারল -এই নিয়ে বিন্দুমাত্র উৎসাহ পেলাম না। তবে দুইটা ব্যাপার আমাকে নাড়া দিয়েছে।
প্রথমত, ভারতে পরপর সম্ভবত দুইবার সরকারি দলের অধীনে নির্বাচনে বিরোধী দল ক্ষমতা জিতে নিল। তাও আবার নিরঙ্কুশ ভাবে। নির্বাচনে এক আধটু কারচুপি ছিল নিশ্চয়ই, কিন্তু সেখানে বিরোধী দল সরকারি দলের অধীনে নির্বাচন করেও ক্ষমতায় আসতে পারছে। এটা গনতন্ত্রের বিকাশের জন্য বড়ই আনন্দের কথা।
দ্বিতীয়ত, রাহুল গান্ধী, যে কিন মুলত মা দাদার নাম ভাঙ্গিয়ে রাজনিতি করছে, তার দলের ভরাডুবি হচ্ছে। মোদি নাকি একসময় চা বিক্রি করত। সে ভাল বা মন্দ, অথবা ধর্মান্ধ যাই হোক না কেন, সে নিজেকে প্রায় শুন্য থেকে রাজার আসনে নিয়ে আসতে পেরেছে। ভারতের রাজনীতি শুন্য থেকেও রাজা হবার পথ বাতলে দিচ্ছে। আর কি চাই, তাহলে ভাল ছেলেমেয়েরা ক্যারিয়ার করার জন্য সবাই আমেরিকায় যাবে না বা ক্রিকেটার হতে পারাকেই জীবনের সবচেয়ে বড় গন্তব্য ভাববে না। বরং ভাল, সৎ এবং মেধাবী ছেলেমেয়েরা ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হবার পাশাপাশি ভাল রাজনীতিবিদও হতে চাইবে।
ভারত গোল্লায় যাক। ভাবছি শুধু, আমাদের দেশে যদি এই দুইটা জিনিস আমরা নিশ্চিত করতে পারতাম! তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফরকার বুঝি না, সরকারি দল বিরোধী দল মানি না। অন্তত নির্বাচন যার অধীনেই হোক না কেন, সেটা যেন নির্বাচনের ফলাফলকে নির্ধারন না করে দেয়। আমাদের দেশে এখনও পর্যন্ত লিগ বা বিএনপির অধীনে (এরশাদের সময় তো হয় নাই-ই...) বিরোধি দল ক্ষমতায় জিততে পারে নাই। এভাবে আর কতদিন চলবে!
একই সাথে, জয় বা তারিকের মতন অপটু রাজনীতিবিদরা কোন ধরনের যোগ্যতা প্রমাণ না করেই তাদের মা জননীদের হাত ধরে পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতার উৎস হয়ে যাচ্ছে। এদের আর অন্য যোগ্যতা না থাকুক, নতুন বংশধর পয়দা করতে সক্ষম -এমন প্রমাণ তারা এর মধ্যেই দিয়েছে। সুতরাং আমাদের রাজনীতিতে তৃণমূল থেকে যোগ্য নেতা জন্ম নেবার পথ অদূর ভবিষ্যতেও বন্ধ থাকছে, যতদিন না আমরা তারেক বা জয়দেরকে ইতিহাসের আস্তাকুড়ে ছুঁড়ে দিতে না পারছি।
ভারত এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের থেকে, আমি ভারতকে দেখতে পারি আর না পারি। নিজের নাক কেটে ভারতের অগ্রযাত্রা বন্ধ করা আমার উদ্দেশ্য নয়। তবে সারাদিন হলিউড ছবি, হিন্দি গান আর সিরিয়াল অথবা আইপিএল বাদ দিয়ে যদি গণতন্ত্রের এই সামান্য দুইটি শিক্ষা এদের কাছ থেকে আমরা অনুকরন করতে পারতাম, তাহলে একদম মন্দ হতো না বৈকি!
#আদনান_সাদেক