somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যে কারণে পিতামাতার সাথে যৌথ পরিবারে থাকতে চায় না সন্তানেরা

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৮:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শারমিন আকতারঃ
ইসলামের দৃষ্টিতে পরিবার সমাজের ভিত্তিমূল। হিন্দু ধর্ম মতে, পরিবার হচ্ছে একটি মন্দিরের মতো, যেখানে দেবতা স্বরূপ বাবা-মা বাস করে। প্রতিটি পরিবারই একজন মানুষের শিক্ষা-দীক্ষার প্রথম বিদ্যাপীঠ। ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে একটি শিশু তার পরিবার থেকেই সামাজিক জীব হিসেবে তৈরি হয়। সামাজিক আচার আচরণ, পরিবারের সবার প্রতি পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধ, হাসি আনন্দ দু:খ ভাগাভাগি করার মধ্য দিয়ে দৃঢ় মানবিক বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার গুণাবলি শিখে থাকে। যে কারণে পরিবারকে সমাজের মৌলিক ভিত্তি হিসেবে গণ্য করা হয়। সুশৃঙ্খল জীবন যাপনে পরিবারের কোন বিকল্প নেই। চার অক্ষরের এই “পরিবার” শব্দটির অর্থ অসীম। সামাজিক ঐক্য এবং পারস্পারিক নির্ভরতা পরিবারের মূলমন্ত্র।
বাঙালী সমাজের এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী একান্নবর্তী পরিবারের অস্তিত্ব এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। পরিবারগুলো প্রতিনিয়ত ভেঙ্গে খানখান হয়ে যাচ্ছে। তৈরি হচ্ছে একক পরিবার । কী গ্রামে কী শহরে সব সমাজে একই অবস্থা। বিশেষ করে শহরে এখন একান্নবর্তী পরিবার নেই বললেই চলে। গ্রামে এখনও কিছুটা আছে, তবে সেটিও ভাঙ্গন পর্যায়ে। বর্তমান সমাজে সন্তানরা কি কারণে বাবা-মার সাথে যৌথ পরিবারে থাকতে চায় না তার কিছু বাস্তব কারণ তুলে ধরার চেষ্টা করছি-

১) সন্তানের স্বার্থপরতা এবং আত্মকেন্দ্রিকতাঃ
কোন মানুষ পরিবারে একটু বড় হলে কিংবা বিয়ে করার পর সন্তান হলেই তার ভবিষ্যতের কথা ভেবে যৌথ পরিবার থেকে আলাদা হয়ে নতুন একটি ছোট্ট পরিবারের জন্ম দিচ্ছেন প্রায় সবাই। স্বার্থপর এই পৃথিবীতে আমরা চরম মাত্রায় স্বার্থপর হয়ে উঠছি । আমাদের বিবেক, আবেগ সব কিছুই কেমন যেন নিথর হয়ে গেছে । বাবা-মার সাথে বেঈমানি, স্বার্থপরতা করতে আমাদের এতোটুকু বাধে না । তাই তো বাবা-মাকে পিছনে ফেলে আমরা এগিয়ে যেতে চাই সামনে, আরও বহুদুর ।
বাবা মার পিছনে অর্থ খরচ করা থেকে নিজেদের বিরত রাখার জন্যই অনেক সময় কিছু কিছু সন্তান বাবা মার সাথে খারাপ ব্যবহার করে আলাদা হবার চেষ্টা করে থাকে। বাবা-মা তাদের প্রয়োজনে সন্তানের কাছে কিছু চাইলে তারা তাল বাহানা করে । হিন্দী ‘ভাগবান’ ছবিতে দেখেছিলাম বাবা অমিতাভ বচ্চনের চশমা ভেঙ্গে গেলে ছেলেকে সেটা ঠিক করে আনতে বললে ছেলে জবাব দেয় হাতে টাকা নাই সামনে মাসে ঠিক করে এনে দেবে । অযথা বাবা মাকে মিথ্যে অজুহাতে এড়িয়ে চলতে চায় সন্তানেরা । এই ছবিতেই দেখা যায় বাবা-মাকে নিজেদের সাথে রাখবে না বলে বাবা- মাকে আলাদা আলাদা ছেলের বাসায় ছয় মাস করে রাখার প্রস্তাব দেয় । এক ছেলের বাসায় বাবা ছয় মাস থাকবে আর এক ছেলের বাসায় মা ছয় মাস থাকবে । তারা এমনটা সিদ্ধান্ত নেয় এই কারণে যেন এই বাবা-মা নিজেদের মধ্যের এই বিচ্ছেদ বেদনা সহ্য না করতে পেরে তারা ছেলেদের বাসায় না থাকে । এই ভগবান ছবিতে অমিতাভ বলেছেন “সন্তানেরা বাবা-মাকে উপরে উঠার সিঁড়ি না ভেবে তাদেরকে গাছের শেকড়ের মতো ভাবা উচিৎ।” যা তাদেরকে সব সময়ই জীবন যাপনের রসদ জোগাবে । তিনি আরও বলেন “ যে বাবা মা সন্তানদের প্রথম কদম ফেলতে সাহায্য করে সেই সন্তান কেন সেই বাবা মাকে শেষ কদম ফেলতে সহায়তা করে না? ”
সবাইকে পিছনে ফেলে একা নিজে বড় হতে চায় সবাই । অন্যের পিছনে টাকা নষ্ট না করে নিজের ইনকামে নিজে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে চায় অধিকাংশ সন্তান । বাবা-মার পিছনে অর্থ ব্যয়টাকে এক ধরণের অপচয় ভাবে ।

২) কর্মজীবী নারী ও পুরুষের সংখ্যা বৃদ্ধিঃ
আধুনিক সামাজিক ব্যবস্থার প্রসার, অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা এবং সংখ্যানুপাতিক হারে জীবিকার তারতম্য ঘটতে থাকায় যৌথ পরিবারগুলো ভেঙে যাচ্ছে বলে মনে করেন বাংলাদেশের সমাজ বিজ্ঞানীরা । জীবন ও জীবিকার তাগিদেই আগের মতো ভাই-ভাই এক সঙ্গে বসবাস করেন না। বাবা-মার সাথে গ্রামে বসবাস করতে পারছেন না ছেলেরা । এমনকি এই ঢাকা শহরে একই বিল্ডিংয়ে পাশাপাশি ফ্লাটে থাকলেও কথা বা সামাজিক রীতির আদান প্রদান হয় খুবই কম। কারণ সবায় তার চাকুরী ও পেশা নিয়ে এতো ব্যস্ত প্রতিবেশী কই বাবা-মারই খোঁজ খবর ঠিক মতো নিতে পারে না ।

৩) বউ-শাশুড়ির চিরন্তন দ্বন্দ্বঃ
আমি এ দেশের প্রতিটি নারীকে শ্রদ্ধার আসনে রেখেই বলতে চাই, এই ভাঙ্গনটি ঘটছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বউ শাশুড়ির দ্বন্দ্বের কারণে । যে নারীটি ছেলের বউ হয়ে আসছেন তিনি তাঁর শাশুড়িকে নিজের মায়ের দৃষ্টিতে দেখতে পারছেন না। স্বামীর মা তথা শাশুড়ি হিসেবে দেখছেন। আবার অন্যদিকে শাশুড়িও ছেলের বউকে নিজের মেয়ের দৃষ্টিতে দেখতে পারছেন না। দেখছেন ছেলের বউ হিসেবে। যার পরিণতি হচ্ছে বউ শাশুড়ির চিরন্তন দ্বন্দ্ব । এই চিরন্তন দ্বন্দ্ব থেকে মুক্তি পাবার জন্য বাবা মার সাথে যৌথ পরিবারে থাকতে চায়না সন্তানেরা । এখনকার একক পরিবার । বাংলার চিরাচরিত বউ-শাশুড়ির যুদ্ধ অতীতের যৌথ পরিবারেও ছিল। বউ-শাশুড়ির এই যুদ্ধকে উপজীব্য করে এদেশে অনেক চলচ্চিত্র ও নাটক অসংখ্য দর্শকের বিনোদনের খোরাকও জুগিয়েছে। নায়িকা শাবনুর ও রিনা খান যথাক্রমে বউ ও শাশুড়ির চরিত্রে অভিনিত ছবি “বউ শাশুড়ির যুদ্ধ”। ছোট বেলায় ছবিটি দেখেছিলাম । ঐ সময় গ্রামীণ এলাকায় এই ছবি বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল । শুধু চলচিত্র কেন কলকাতার অধিকাংশ সিরিয়ালে দেখানো হয় ছেলের বউ নয়তো শাশুড়ির নোংরা কুটচাল ।
আগেও বউ শাশুড়ির দ্বন্দ্ব যে ছিল না তা না । আগের যুগে বউরা শাশুড়িকে তোয়াজ করে চলতো । এখন তো সেই ধারা কিছুটা উল্টে গেছে । ছেলে ভাল ইনকাম ওয়ালা হলে শাশুড়িকেই ছেলের বউকে তোয়াজ করে চলতে হয় কোন কোন ক্ষেত্রে ।

৪) স্বনির্ভরতা বৃদ্ধিঃ
তখনকার পরিবারের প্রত্যেকে কোন না কোনভাবে একে অপরের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। এখন সেই নির্ভরতা নেই বললেই চলে। ছেলে স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে কিছু না কিছু একটা করছে। আবার ছেলের বউও কোন না কোন পেশায় যুক্ত থাকছে কিংবা ছেলের বউ যুক্ত না থাকলেও আগের যুগের মতো নির্ভরশীল নয়। যার কারণে সেই বউ-শাশুড়ির যুদ্ধ করার চাইতে আলাদা হয়ে যাওয়াকেই শ্রেয় মনে করছেন। স্বনির্ভরতা ও আত্ননির্ভরশীলতা মানুষকে যেমন স্বচ্ছ্বল ও স্বাবলম্বী করে তুলছে অন্যদিকে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আত্মিক বন্ধন নষ্ট করে দিচ্ছে ।

৫) অতি মাত্রায় স্বাধীনচেতা মনোভাবঃ
আমাদের সমাজে এক সময় যৌথ পরিবার প্রথা ছিল । একেকটি পরিবারে ১৫ জন, ২০ জন এমনকি ৪০ জন পর্যন্ত সদস্য ছিল । এই পরিবারে সাধারণত একজন কর্তা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতো । আর সবাই বিনা বাক্য ব্যয়ে তা মেনে নিত । আমি ছোট বেলায় দেখেছি আমাদের গ্রামে একটা যৌথ পরিবার ছিল যেখানে ৩৯-৪১ জন সদস্য ছিল, এটা আমাদের গ্রামের সব চেয়ে বড় যৌথ পরিবার । দাদা-দাদি, চাচা-চাচি, অবিবাহিত ফুফু, ভাই-বোন সবাই একসাথে একই পরিবারে একই হাড়ির খাবার খেয়ে দিন যাপন করতো । এই পরিবারের তিন ছেলে ছিল শিক্ষক, দুই ছেলে ছিল কেরানী এবং আর তিন ছেলে ছিল কৃষক । চাকুরীর বেতন বা ইনকামের লেভেলে কিছুটা পার্থক্য হলেও তাদের বাবার কারণে সবাই একই পরিবারে একই সাথে থাকতো । কিন্তু যেই তাদের বাবা মারা যায় ঐ পরিবার ভেঙ্গে আটটি একক পরিবার গড়ে উঠে । এই ভাবে কিন্তু কালের পরিক্রমায় এসব যৌথ পরিবার প্রথা আমাদের সমাজ থেকে উঠে যাচ্ছে । এখন তিন সদস্য, চার সদস্য সর্বচ্চো পাঁচ- ছয় জন নিয়ে একক পরিবারের সংসার । ভাই-বোন, ভাইয়ের স্ত্রী কি নিজের পরিবারে বাবা-মাকেই দেখতে চায় না পরিবারের কর্তা সন্তানেরা । সবাই নিজের মতো স্বাধীন ভাবে বাচতে চায় । বাসায় আজকে মাছ না মাংস রান্না হবে তার জন্য বউ শাশুড়ির আদেশ শুনতে বা পরামর্শ নিতে নারাজ । মাছ হোক, মাংস হোক, ভর্তা হোক, ভাজি হোক সে একাই সিদ্ধান্ত নিতে চায় । অন্যদিকে ছেলেও বাবার সাথে কোন বিষয়ে পরামর্শ করতে চায় না বা বাবার সিদ্ধান্ত মেনে নিতে আগ্রহী না । সন্তানদের অতি মাত্রায় স্বাধীনচেতা মনোভাব বাবা মার সাথে যৌথ পরিবারে থাকতে বাঁধার সৃষ্টি করে ।

৬) ছেলে সন্তানের আবেগ ও অনুভূতিহীনতাঃ
সব পরিবারেই সাধারণত বিয়ের পর মেয়ে সন্তানেরা স্বামীর সংসারে চলে যায় । রয়ে যায় শুধু ছেলে সন্তান । তাও যদি সে ছেলে সন্তান নিজের এলাকায় চাকুরী করে বা চাকুরী না করে থাকে । সামাজিক নানা কারণে বাবা-মা মেয়ে জামাইয়ের বাসায় থাকতে চায় না বা থাকতে পারে না ।
প্রকৃতিগত ভাবে ছেলেরা মেয়েদের তুলনায় আত্মকেন্দ্রিক, অনুভূতিহীন হয়ে থাকে । নিজের ক্যারিয়ারের বাইরে অন্য কোন চিন্তা তাদের মনকে কম নাড়া দেয় । একটা পরিবারের যদি দুই ভাইবোন বাইরে পড়াশুনা করতে চলে যায় তাহলে ছাত্র জীবনেই দেখা যায়্ ছেলে তার বাবা-মার সাথে দেখা করার জন্য বছরে যত বার বাসায় আসে মেয়ে তার চেয়ে দ্বিগুণ বা তিনগুণ পরিমাণ বেশি বার বাসায় আসে বাবা-মার সাথে দেখা করার জন্য ।বিজ্ঞানের গবেষণায় এটা প্রমানিত হয়েছে যে ছেলরা মেয়েদের চেয়ে কম আবেগহীন হয়ে থাকে । অন্যের দুঃখ, অনুভূতি তাদেরকে কম নাড়া দেয় । আর ছেলে সন্তানের এই কম আবেগহীনতাই ছেলে সন্তান কর্তৃক পিতামাতার প্রতি দুর্ব্যবহার আরও বারিয়ে দেয়, আত্মকেন্দ্রিক হতে রসদ যোগায় । ছেলেরা হয়তো এর জন্য নিজেদের স্ত্রীকে দায়ী করবে । বলবে স্ত্রীর কারণে, সংসারে শান্তি রক্ষার জন্য আমাকে বাবা মাকে ত্যাগ করতে হয়েছে । তাদেরকে আমি বলতে চাই যে বাবা মা ত্রিশটি বছর আপনাকে নিঃস্বার্থ ভাবে লালন-পালন করলো, নিজে না খেয়ে আপনাকে খাইয়েছে, নিজে না পরে আপনাকে পরিয়েছে সেই বাবা মাকে একটা স্ত্রী যে আপনার জীবনে মাত্র দুই-তিন বছর বা আর কিছু বছর আগে এসেছে তার কথা দুরে ঠেলে দিবেন? আমি ছাত্র জীবনে সম্ভবত প্রথম আলোতে এক নিঃসঙ্গ বাবার কষ্টের কাহিনীর উপর একটা আর্টিকেল পড়েছিলাম –
‘যেখানে এক বাবা তার দুই ছেলেকে অনেক যত্ন করে মানুষ করেছেন । তাদের শিক্ষিত করেছেন । একজন দেশের বাইরে চলে গেছে এবং আর একজন দেশে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হয়েছে । কিন্তু দুই ছেলের কেউ বাবার তেমন খোঁজ নেয় না । তিনি বাসায় নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করেন কারণ তার স্ত্রীও কয়েক বছর আগে মারা গেছেন । তিনি প্রতিবেশী অনেক বাবার মেয়েদেরকে বাবার খোঁজ খবর নিতে দেখেন । তখন তিনি অনেক কষ্টে আক্ষেপ করে বলেন “পৃথিবীতে যেন এমন কোন বাবা না থাকে যার মেয়ে সন্তান নাই ।”
আমি আবার ছেলের বউদের উদ্দেশ্যেও বলতে চাই । আপনি তো আপনার বাবা মাকে অনেক ভালবাসেন । তাদের জন্য জীবন দিয়ে দিতে পারেন । তাদের জন্য আপনি নানা দায়িত্ব পালন করছেন । নিজে চাকুরী করলে স্বামীকে বলে বা না বলে গোপনে বাবা মার চাহিদা পূরণ করছেন, আর চাকুরী না করলে স্বামীর সংসার থেকেই অল্প কিছু দিচ্ছেন বাবা-মাকে । তাহলে সেই একই দায়িত্ব পালনে আপনি আপনার স্বামীকে বাঁধা দিচ্ছেন কেন? শশুর শাশুড়িকে বাবা-মার মতো ভাল না বাসতে পারুন আপনার স্বামীকে সন্তান হিসাবে তার দায়িত্ব পালনে বাঁধা দিবেন না । আপনার বাবা-মার যেমন আপনি ছাড়া কেউ নাই তেমন তো আপনার স্বামীর বাবা-মারও সে ছাড়া কেউ নাই ।

৭) জেনারেশন গ্যাপঃ
জেনারেশন গ্যাপের কারণে বাবা-মার সাথে মতের বা চিন্তাধারার মিল না হওয়ায় অনেক সময় বিরাট সমস্যা দেখা দেয় । বাবা-মার কাছে যা সঠিক মনে হয় ছেলে বা ছেলের বউয়ের কাছে তা সঠিক মনে নাও হতে পারে । যেমন ছেলে তার পুত্র, স্ত্রী- কন্যাকে অবাধ স্বাধীনতা দিয়ে ফেলে । যেটা হয়তো বাবা-মার কাছে মনে হয় এটা ঠিক না এর ফলে পুত্র ও কন্যা সন্তান বখে যেতে পারে।
আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় ছেলের ঘরে নতুন সন্তান জন্ম নিলে ছেলের বউয়ের কাছে মনে হয় বাবুর গায়ে জনসন লোসন মাখানো সঠিক কাজ, আর ছেলের মার কাছে মনে হয় খাঁটি সরিষার তেল ডলে ডলে নাতির গায়ে ম্যাসেজ করাটা সঠিক কাজ । দুজনের মাঝে এই নিয়ে একটা মন কষাকষি তৈরি হতে পারে । জেনারেশন গ্যাপ এর কারণে এরকম ছোট খাট নানা বিষয়ে মতের অমিলের কারণে সন্তানেরা বাবা-মার সাথে থাকতে আগ্রহী হয় না । এ ছাড়াও দেখা যায় যে সন্তানদের মাঝে সহনশীলতার বেশ অভাব । যার কারণে বাবা মার সাথে না থেকে একক পরিবার গড়ে তোলে ।

৮) সন্তানকে সম্পদ এবং বাবা-মাকে আপদ মনে করাঃ
আমাদের পরিবারগুলোতে সাধারণত দেখা যায় যে সন্তান বাবা-মারা যেন এই কারণে লালন-পালন করছে যে বড় হলে সে তাদের দেখে রাখবে, বংশের মুখ উজ্জল করবে । নিজের সমস্ত উপার্জন কাজে লাগিয়ে সন্তানকে মানুষ করার প্রতিযোগিতায় যেন নেমে গেছে সবাই । প্রতিবেশী বা অন্যান্যদের সন্তানের চেয়ে আমার সন্তান কিভাবে বেশি ভাল রেজাল্ট করবে? কিভাবে ভাল জায়গায় চান্স পাবে? কিভাবে সে প্রতিষ্ঠিত হবে? এই চিন্তা সবাইকে এমন আচ্ছন্ন করে রাখে যে বাবা-মার দিকে একটু নজর দেয়ার সময় যেন কারও নেই ।বিষয়টা যেন এমন বাবা-মার পিছনে এখন বিনিয়োগ করে কি লাভ? সে তো এখন সম্পূর্ণ মাত্রায় আনপ্রোডাক্টিভ । কিন্তু আমি প্রতিটি ছেলে-মেয়েকে বলতে চাই যে সন্তানকে আপনি প্রোডাক্টিভ ভেবে শুধু তাকে নিয়েই ব্যস্ত থাকছেন;বাবা-মার দিকে খেয়াল রাখছেন না মনে রাখবেন আপনার সন্তানের কাছে আপনার বাবা-মার মতো আপনিও কালের পরিক্রমায় আনপ্রোডাক্টিভ হয়ে যাবেন । তাই সন্তানের পাশাপাশি বাবা-মার প্রতিও সুনজর দেয়া উচিৎ ।

আমাদের মহান সৃষ্টিকর্তা আমাদেরকে বাবা-মার জন্য দোয়া করতে কোরআনে একটি দোয়া শিখিয়েছেন “রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বা ইয়ানিস ছাগিরা” অর্থাৎ “হে প্রভু আমাদের বাবা মাকে সে অবস্থায় রাখুন তারা আমদের ছোট বেলায় আমাদেরকে যেভাবে রেখেছিল ।” আমাদের শৈশবে বাবা-মা আমাদেরকে যেভাবে রেখেছিলেন এই দোয়া শুধু আল্লাহ আমাদেরকে মুখে মুখে আওড়াতে বলেছেন এমন না এটাকে বাস্তব জীবনে প্রতিফলিত করার জন্য নানা ভাবে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন কোরআনের বিভিন্ন জায়গায় । অর্থাৎ বাবা মা আমাদেরকে শৈশবে যেভাবে রেখেছিলেন সন্তান হিসাবে আমাদের দায়িত্ব তাদেরকে সেভাবে আদরে আহলাদে রাখা । আমাদের সব স্বার্থপরতা, আত্মকেন্দ্রিকতা ও বিভেদ ভুলে আমাদের উচিৎ আমাদের এই দোয়ার বাস্তবায়ন করা । শুধু সৃষ্টিকর্তার আদেশ বলে না দায়িত্বশীলতা এবং মানবিক মূল্যবোধের কারণেও আমাদের বাবা-মার পাশে থাকা উচিৎ ।

লেখকঃ সম্পাদক, মহীয়সী (http://www.mohioshi.com ), নারী বিষয়ক প্রথম গঠনমূলক বাংলা নিউজ পোর্টাল



সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৮:০৩
৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৬

আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সংস্কারের জন্য টাকার অভাব হবে না, ড. ইউনূসকে ইইউ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউর রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এবং সফররত এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক পাওলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২



বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×