somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ সাইকোপ্যাথের ছাঁয়া/শারমিন আক্‌তার

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ৮:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাইকোপ্যাথের ছাঁয়া
শারমিন আক্‌তার
নাবিলার বিয়ের পর তিন বছর কেঁটে গেল । স্টুডেন্ট লাইফেই বিয়ে হওয়ায় সংসার, পড়াশুনা সব মিলিয়ে বেশ চাপেই ছিল সে। বাবার আর্থিক সংকট ও মায়ের অসুস্থতার জন্য পড়া শেষ হওয়ার কয়েক বছর আগেই বিয়ের পিড়িতে বসতে হয়েছিল তাকে । ওর মায়ের খুব ইচ্ছা মেয়ের জামাই দেখেবে । তাই তাড়াহুড়ো করেই কোনমতে ধার-দেনা করে তাকে বিয়ে দিতে হয়েছিল । কিন্তু তার মা আল্লাহর রহমতে এখন মুটামুটি সুস্থতার সাথেই দিন পার করছে । অকারণে মেয়েটাকে বিয়ে দিয়েছিল সে সময় এত তাড়াহুড়ো করে। বেশ ভাল স্টুডেন্ট ছিল নাবিলা । রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্সের স্টুডেন্ট ছিল সে । গত বছরই এম. এস–সি. শেষ করল কোনমতে । আবার পড়া শেষ হতে না হতেই কোল জুড়ে এল এক ফুঁটফুঁটে সোনা মনি । সোনামনির বয়স এখন পাঁচ মাস ।
নাবিলা আজকে সকালে হঠাৎ স্বামীকে বলল
-তুমি আমাকে চার-পাঁচ হাজার টাকা দিতে পারবে ?
-এতগুলো টাকা? কি করবে তুমি এতটাকা?
-না মানে ।
লজ্জায় সংকুচিত হয়ে যাচ্ছিল নাবিলা । সে বলতে পারছে না কেন তার এত টাকা দরকার ।
তার স্বামীও আর কিছু বলল না । সোজা অফিসে যেতে উদ্দ্যত হল । নাবিলা এবার অনুনয়ের দৃষ্টিতে স্বামীর দিকে তাকিয়ে বলল
-কিছু বলছো না যে । দিতে পারবা না চার হাজার টাকা ?
-এতগুলো টাকা কি করবা তুমি?
-আমি কিছু করবো না । আব্বাকে দিব । গত মাসে সুদের উপর ধার করে আম্মার চিকিৎসা করাইছিল । লোকটা চাপ দিচ্ছে অনেক । অনেক অপমান করে নাকি গেছে । যদি দিতে চার হাজার টাকা । খুব উপকার হত ।
¯স্বামীর কাছ থেকে বাবা মার জন্য চাইতে নাবিলার খুব লজ্জা করে । তাছাড়া শশুর-শাশুড়ীর জন্য খরচ করার মানুসিকতাও তেমন একটা নেই তার স্বামীর । তাই বলার সাহস পায়না নাবিলা। আজ বিয়ের পর দ্বিতীয় বারের মত বাবার জন্য স্বামীর কাছে হাত পাতলো সে ।
-ধার দাওনা পি­জ ।
-ধার ।
একটু যেন শিথিল হল নাবিলার স্বামী।
-কবে পরিশোধ করবে ?
-কবে? তা তো শোনা হয়নি ।
-শুনিও সামনে মাসে দিতে পারবে নাকি ?
-সামনে মাসে?
-হ্যা আমি একটু ক্রাইসিসে আছি । টি.এ.,ডি.এ বিল পাচ্ছিনা ঠিক মত কয়েক মাসে থেকে ।
-তাই । তোমারও সমস্যা ।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল নাবিলা । তারপর কন্ঠে এবার কিছুটা ঝাঁজালো ভাব এনে বলতে লাগলো
-গত মাসে কাজের মেয়ের বাবাকে দুই হাজার টাকা ধার দিলে। আমাকে কালকেই বললে বলে দিতে তাদের টাকা পরিশোধ করতে হবেনা । অথচ আমার বাবাকে ধার দিতে না দিতেই পরিশোধের তারিখ শুনতে চাচ্ছো ? কি আশ্চর্য্য ব্যাপার !
নাবিলার স্বামী কিছুটা থতমত খেয়ে গেল ।
-তার মাসের টাকা থেকে কেঁটে নেব ।
-কিভাবে কেঁটে নিবে ? মাসে মাসে তো তার নামে খোলা ডি.পি.এস. এ জমা হচ্ছে এক হাজার করে । তার উপর যখনই তার বাবা আসে তার হাতে দেয় হয় পাঁচ-সাতশো টাকা । কজের মেয়ে সংসারের কাজ করলে পেমেন্ট পায় । আমি কি কোন কাজ করি না ? আমি কি একটা টাকাও পেতে পারি না?
কাঁতর কন্ঠে কথাগুলো বলল নাবিলা ।
-আমি কি তোমাকে দিই না ? যা খাইতে চাও, পরতে চাও এনে দিই না আমি?
-শুধু খাইলে পরলেই সব শেষ হয়ে যায় ? আর কিছুই লাগে না? নিজের বাবা-মাকে কিছু দিতে ইচ্ছে করে না ? কাজের মেয়েই তো তার বাবা-মার জন্য অনেক করছে । আর আমি ? শুধু সাক্ষী গোপাল হয়ে বাবা-মার কষ্ট দেখে যাচ্ছি ।
কিছু করতে পারি না । দিতেও পারি না । আমার কি ইচ্ছে করে না বাবা-মাকে দিতে । চার-পাঁচশো টাকা করে যদি দিতে পারতাম তাও শান্তি পেতাম । বাবা-মারও কষ্ট কিছুটা কমতো ।
-সেটা চাকুরী করে দিও । আমি তোমাকে পড়াবো । তারপর তোমার জন্য কাজের মেয়েকে মাসে এক হাজার করে টাকা দিব । আর পারবো না আমি । তোমার ভাইয়েরা কি করে ? তারা দিতে পারে না তোমার বাবা মাকে? আমার বাবা-মা যখন বেঁচে ছিল তখন তো আমার বোনেরা আব্বা-অম্মাকে দেয় নি । ভাইয়া আর আমিই আব্বা-আম্মার চিকিৎসা থেকে শুরু করে সব খরচ চালিয়েছি ।
-কাজের মেয়ে তো মেয়ে । সে কিভাবে দিতে পারে ?
-কাজের মেয়ের সাথে নিজেকে তুলনা করছো?
-তুলনা করছি না । তার মতও হতে পারলে অনেক নিজেকে অনেক ধন্য মনে করতাম। বাবা-মার পাশে দাড়াতে পারতাম ।
-হও কাজের মেয়ে ।
চলে গেল নাবিলার স্বামী । নাবিলা আর কিছু বলল না । কি বা বলার আছে তার ? খুব চাকুরী করতে ইচ্ছে করে তার । কিন্তু স্টুডেন্ট লাইফে বিয়ে তারপর পড়া শেষ হতে না হতেই বাচ্চা আসলো কোলে । চাকুরীর জন্য পড়ার সুযোগই তো তার হয়নি । চাকুরী পাবে কি করে ? প্রাইভেট জবের জন্য ভাইবা দিতে চায় । কিন্তু তার স্বামী প্রাইভেট জব করতে দিবে না । তাই আর সে জন্যও ট্রাই করা হয় না । কলেজে লেকচারার পদে ঢুকতে তার খুব ইচ্ছে করে । কিন্তু সে জন্য ঘুষ লাগবে । ঘুষ দেবে কে? স্বামীর একটাই কথা চাকুরীতে কোন ঘুষ দিতে সে পারবে না । নিজ যোগ্যতাই চাকুরী পেতে হবে । এত শর্ত সাপেক্ষে তার সামনে এখন আর দুটি পথ খোলা । ব্যাংকের জব ও সরকারী জব । এই দুটো জব তো এত সহজ না । বই লেজ ধরে পড়ে থাকতে হবে সারাক্ষণ । সে সময় কোথায় নাবিলার হাতে । পড়ার সময়ও ভালভাবে পায় না সে ।
নাবিলা এবার রাগে-দুঃখে নিজের মাথায় বাড়ী দিতে লাগলো । যোগ্যতা থাকতেও চাকুরী না পাওয়ার কষ্ট । ক্ষমতা থাকার পরও বাবা-মাকে সাহায্য করতে না পারার অক্ষমতা দিন দিন তাকে যেন অস্বাভাবিকতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে । তার ভিতরে মাঝেই মাঝেই খুঁজে পাওয়া যায় সাইকোপ্যাথের ছাঁয়া ।সংসারে মেয়েরা এভাবেই যিম্মি হয়ে থেকে অথবা কোন কোন মেয়ে স্বামীকেই যিম্মি করে রেখে অস্বাভাবিক ও অমানবিক জীবন যাপন করছে । আর পুরুষরাও বর্তমানে কেমন যেন জাতহীন জাতিতে পরিনত হয়েছে । স্ত্রী শক্ত ও স্বামী নিয়ন্ত্রণে চৌকস হলে তার দাস হয়ে থাকে । আর নরম ও সরল হলে তার ভগবান হয়ে বসে ।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৬

আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সংস্কারের জন্য টাকার অভাব হবে না, ড. ইউনূসকে ইইউ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউর রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এবং সফররত এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক পাওলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২



বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×