কিছু দিন পর পর এই দেশে একটা না একটা বড় দুর্ঘটনা ঘটবেই। হয় শত শত মানুষ নিয়ে বিল্ডিং ধসে পড়বে নয়তো আগুনে পুড়ে ছাই হবে অসহায়রা। আমরা যারা 'সৌভাগ্যবান', যারা বেঁচে আছি এই সব থেকে এখনও- এমন দুর্ঘটনায় দু একদিন শোক করবো, তুমুল আলোচনা করব, তারপর ভুলে যাব কিংবা আরও একটি দুর্ঘটনা নিয়ে আলোড়িত হয়ে উঠবো। অবধারিতভাবে এটা নিজেই ভিকটিম হওয়ার প্রতীক্ষা।
এই দুষ্টচক্র থেকে এই অভাগা দেশটার, এই অভাগা মানুষগুলোর পরিত্রাণ কি কখনোই হবে না?
যে প্রশ্নটা এখন উত্থাপন করলাম সেটা আজকে নতুন নয়, এই দুষ্টচক্রটারই অংশ।
প্রবল দুঃখ, হতাশা আর ক্ষোভ ছাড়া মানবসৃষ্ট বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে আমাদের আর কোন হাতিয়ার যেন নেই। যা কিছু প্রতিক্রিয়া সব ঘটনা ঘটে যাবার পরই। ঘটনা না ঘটার জন্য সতর্কবাণীগুলো সবসময় ড্যাম কেয়ার করে সবাই। এটাই হয়ে গেছে স্বাভাবিক। আপনার সতর্কতা অন্যের চোখে হবে হাস্যকর।
বেপরোয়া বাস চালাচ্ছে ড্রাইভার? দেখবেন যাত্রী জানালা দিয়ে মাথা বের করে উত্তাল হাওয়া উপভোগ করছে। কিংবা স্বস্তি উপভোগ করছে এই ভেবে যে গন্তব্যে তাড়াতাড়ি পৌঁছানো যাবে। সেটা যে অন্তিম গন্তব্য হয়ে যেতে পারে তা থোড়াই কেয়ার করে।
গার্মেন্ট ফ্যাক্টরির জরুরি নির্গমন পথগুলো বন্ধ? কেন খামোখা চিন্তা করবে কেউ? অত সহজে তো আগুন ধরবে না। তারচেয়ে এখন ফ্যাক্টরি থেকে পোশাক পাচারের পথ রুদ্ধ করা গেছে- এটাই কি বড় ব্যাপার নয়? দুচারটা পোশাকের বিপরীতে আগুনে ঝলসে যেতে পারে এমন কয়েকশ শরীরের বিনিময়ে ধরা হয় বাজি ।
বিল্ডিংয়ে ফাটল ধরেছে? এটা মজার ব্যাপার না? আলো-হাওয়ার যাতায়াতের সুবিধা হলো। বেশ দেখেছ, এবার কাজে ফিরে যাও। এত সহজে কিছু হবে না। কিন্তু কাজ যদি না কর এখন বেতন না পেয়ে না খেয়ে মরবে যে! বাঁচতে হলে এই রিস্কটুকু নিতেই হবে। হুম... বাঁচতে হলে... বাঁচতে হলে...।
হায় বেঁচে থাকা! বাঁচা হয়ে ওঠে বাঁচাও বাঁচাও তীব্র চিৎকার!