রাষ্ট্রে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চাওয়াটা মুসলমানদের ধর্মীয় অধিকার। তাই ধর্মনিরপেক্ষতার কথা তারা শুনবে কেন?
মুসলমানদের পবিত্র গ্রন্থে রাষ্ট্রে ইসলাম প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে ইসলামিক রাষ্ট্রে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সম্প্রীতিপূর্ণ সহাবস্থানের কথা।
এই সব না হয় ঠিক আছে। কিন্তু এই কাজ আর যা-ই হোক জামায়াত-শিবিরের মতো উগ্রপন্থীদেরকে দিয়ে হবে না। ইসলাম থেকে বহু ক্রোশ দূরে সরে যাওয়া এই দলটি আদতে ইসলামিক সেন্টিমেন্ট বেচে খাচ্ছে। এরা রাষ্ট্রের দখলে গেলে যে কি হবে তা আনিস ভাইয়ের (আনিসুল হক) 'অন্ধকারের একশ বছর' উপন্যাসটা পড়লেই কল্পনা করা যায়।
জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা গুরু আবুল আলা মওদুদী ইসলামের অনেক বিষয়ের অপব্যাখ্যা করেছেন। এরা নবীজিকে ততোটা মর্যাদার চোখে দেখে না যতোটা সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা দেখে থাকে। জামায়াত কর্তৃক ইসলামের বিভিন্ন ভ্রান্ত ব্যাখ্যার কথা ইন্টারনেটে সার্চ দিলে বা অন্যান্য ইসলামিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে কথা বললেই জানতে পারবেন।
আওয়ামী লীগ ও বামদের চেয়েও ঐ ইসলামিক সংগঠনগুলো জামায়াত-শিবিরের সবচেয়ে কড়া সমালোচনা করে থাকে। তাই তো যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতাদের ফাঁসির দাবিতে বিভিন্ন ইসলামী সংগঠনের আলেম-ওলামারা সংহতি জানাচ্ছেন। জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের দাবিতেও তারা কণ্ঠ মেলাচ্ছেন।
এখন প্রশ্ন হলো, "বাহাত্তরের সংবিধান পুনর্বহাল করতে হবে!" বা "ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি আইন করে নিষিদ্ধ কর!" - এই শ্লোগানগুলো যদি শাহবাগ আন্দোলন তথা সারা দেশে (বিশেষত চট্টগ্রামে) চলা আন্দোলনে হঠাৎ হঠাৎ শোনা যেতে থাকে তবে কি সেই ইসলামিক দলগুলোর সংহতি আর থাকবে? গ্রাম বাংলার সাধারণ মুসলমানদের সমর্থন কি আর পাব? অন্য ধর্মের সংগঠনগুলোর প্রতিক্রিয়াও বা কি হবে?
এখানে গণদাবী হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি, জাশি নিষিদ্ধকরণ। বাহাত্তরের সংবিধান পুনর্বহাল বা ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবিগুলো গণবিচ্ছিন্ন দাবি। সাধারণ আন্দোলনকারীদের সিংহভাগের এই ভুঁইফোঁড় দাবিগুলো সম্পর্কে কোন ধারণা নেই। "রাজাকারের ফাঁসি চাই!" বা "জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি আইন করে নিষিদ্ধ কর!" - শ্লোগানগুলোর ভেতর হঠাৎ করে কিছু গণবিচ্ছিন্ন শ্লোগান যদি ঢুকিয়ে দেয়া হয়, তবে তো শ্লোগানের ঝড়ো গতির ভিতরে উটকো শ্লোগানগুলোর প্রতিধ্বনি হতেই পারে। তাই বলে জনমানুষের দাবি হয়ে যায় না! মূল গণদাবীর বাইরে কোন রাজনৈতিক দলের এই জনবিচ্ছিন্ন এজেন্ডাগুলো যদি চালনা করে দেয়া হয় তবে তা রীতিমত প্রহসন হয়ে যাবে! শপথ বাক্যে, শ্লোগানে, ব্যানারে, ফেস্টুনে কোন দলীয় বা ব্যক্তিগত মতাদর্শ ঢুকিয়ে দেয়া খুবই ভয়ঙ্কর কথা!
এই তুঙ্গস্পর্শী আন্দোলন আমাদের সবার বহু কষ্টের ফসল। কেউ কেউ উড়ে এসে জুড়ে বসে এই ফসল নিজ ঘরে তুলে নিয়ে যেতে চাচ্ছে। লাভের গুঁড় খাওয়ার জন্য জেঁকে বসেছে। এই সুবিধাবাদীদের থেকে আন্দোলনরত সহযোদ্ধারা সাবধান! কোনভাবেই এই আন্দোলনকে ক্ষতিগ্রস্ত/প্রশ্নবিদ্ধ করতে দেয়া যাবে না!
যারা এই কাজগুলো করছেন, দয়া করে এমন রাজাকারি করবেন না! যেহেতু আপনারা প্রাণপণে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চান তাই ব্যক্তিগত ও দলীয় দাবি ও স্বার্থগুলো এখন এক পাশে সরিয়ে রাখুন। অধিকার যেহেতু আপনাদেরও আছে তাই পরে না হয় ওসব নিয়ে আন্দোলন করুন। কিন্তু এখন এক ঢিলে দুই তিন পাখি মারার ধান্দা বাদ দিন! যে কাজে সবাই যূথবদ্ধ হয়েছি সে কাজটাই আগে আদায় করি। এই একতা কোনভাবে নষ্ট হলে কাউকে ছেড়ে কথা বলবো না!
চামে কেউ কেউ হিরো সাজছে, না হয় সাজুক। কাজ আদায়টা আসল। কিন্তু হিরোগিরি দেখাতে গিয়ে কেউ যেন ক্রিমিনালে পরিণত না হয়। যে কারণে, যে আবেগে, যে চেতনা নিয়ে, যে দাবিতে সবাই একসাথে আছি, সেটা সর্বদা উপলব্ধিতে রেখে এগোতে হবে। কোনভাবেই অন্যথা হওয়া যাবে না!
পা-চাটা, ছা-পোষা বুদ্ধিজীবী/নেতাদের হাতে মাইক তুলে দিবেন না! কোন রাজনৈতিক দল বা এজেন্ডার দালালি করবেন না! কামলা খাটবো আমরা আর আসর লুটতে আসবে ভণ্ড-লুটেরারা? তা হবে না! শ্লোগানে, দাবিতে, শপথে দয়া করে কোন রাজাকারি করবেন না!
জয় বাংলা! জয় জনতা!
পুনশ্চ: জয় বাংলা মানে বাংলাদেশ। জয় বাংলা মানে আওয়ামী লীগ না! জয় বাংলা কোন দল বা কারও বাপের সম্পত্তি না!
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:১৯