somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

★মুভি রিভিউ★ অ্যাপোক্যালিপ্টো: দি প্যাশন অফ দি মায়া

১৫ ই জুন, ২০০৮ দুপুর ১২:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মুভির প্রথম মিনিট থেকেই গতিময় অ্যাপোক্যালিপ্টো। হলিউডের আর দশটা মুভির চেয়ে অনন্য এই মুভির প্লট। ডিরেক্টর মেল গিবসনের আকণ্ঠ প্রশংসা না করে পারা যায় না। পুরো দুই ঘণ্টা ১৮ মিনিট সবকিছু ভুলে গিয়ে বসে থাকতে হবে সিটে। এমনই সাসপেন্স প্রতিটি মুহূর্তে।

ছয়শো বছর আগের মায়া সভ্যতার পটভূমিতে নির্মিত মেল গিবসনের অ্যাপোক্যালিপ্টো অনেক কারণেই একটি ইন্টারেস্টিং মুভি। প্রথম কারণ এটি মায়ান ভাষায় নির্মিত। মুভির প্রয়োজনে মায়ান ভাষা রপ্ত করে ফেলেছিলেন মেল গিবসন- এমনই ডিরেক্টর তিনি। মুভির ভাষা মায়ান হলেও ইংরেজি সাব টাইটেল থাকায় বুঝতে অসুবিধে হয় না মোটেও। যদিও আমেরিকানরা সাব টাইটেল পছন্দ করেন না। তবে ভাষা মায়ান হওয়ায় বেস্ট ফিল্ম নট ইন দি ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ ক্যাটাগরিতে BAFTA অ্যাওয়ার্ড নমিনেশন পেয়েছিল অ্যাপোক্যালিপ্টো। তাছাড়া ডিরেক্টর একজন মুভমেন্ট টিচারও নিয়োগ করেছিলেন যিনি সবার বডি ল্যাঙ্গুয়েজের দিকে নজর রাখতেন।

মুভিতে স্প্যানিশ অভিযাত্রীরা পৌঁছানোর আগে মেক্সিকোর জঙ্গলে মায়ানদের জীবন যাপনের খণ্ড চিত্র দেখিয়েছেন গিবসন। মুভির শুটিংও হয়েছিল মেক্সিকোতে।

গোড়াপত্তনের পর ৮০০ শতাব্দীতে মায়া সভ্যতা পূর্ণ বিকশিতে হয়েছিল। কিন্তু ১০০০ শতাব্দীর কিছু আগে থেকে ক্রমাবনতি শুরু হয় এই সভ্যতার। অ্যাপোক্যালিপ্টোর কাহিনী ১৫০০ সালের। তখন মায়া সভ্যতা বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে। পুরোহিতরা ঘোষণা করেন টিকে থাকতে হলে আরও মন্দির তৈরী করতে হবে, দিতে হবে নরবলি। সে জন্যই রাজার অনুচররা জঙ্গলের এক ছোট্ট গ্রামে হামলা চালিয়ে ধরে আনে জাগুয়ার প ( রুডি ইয়ং ব্লাড) ও তার সঙ্গীদের । তবে ধরা পড়ার আগে প তার প্রেগন্যান্ট স্ত্রী সেভেন ( ডানিয়া হার্ননাডেজ) ও ছোট ছেলেটিকে একটি গভীর গর্তে লুকিয়ে ফেলতে পেরেছিল। বন্দী প ও তার সঙ্গীরা দীর্ঘ ও যন্ত্রণাদায়ক যাত্রার পর শহরে পৌঁছে বুঝতে পারে তাদের বলি দেয়া হবে। অবশ্য বলি দেয়া চলছে আগে থেকেই। পিরামিডের শীর্ষদেশ থেকে জল্লাদের এক কোপেই ধড় থেকে বিচ্ছিন্ন একের পর মাথা অসংখ্য ধাপ পেরিয়ে জড় হচ্ছে পিরামিডের পাদদেশে। সে এক বীভৎস দৃশ্য ! চোখের সামনে প-য়ের সঙ্গী এই দৃশ্যের চরিত্র হওয়ার পর এবার খোদ প-য়ের বলি হওয়ার পালা। মুভির ট্যাগ লাইন ফুটে ওঠে এখানে- হোয়েন দি এন্ড কামস, নট এভরিওয়ান ইজ রেডি টু গো। আশ্চর্যভাবে বেঁচে যায় জাগুয়ার প। তাকে যখন বলি দেয়া হচ্ছিল ঠিক সেই সময় পূর্ণগ্রাস সূর্য গ্রহণের জন্য চারদিক অন্ধকার হয়ে যায়। বিজ্ঞ পুরোহিত বলেন, নরবলিতে ঈশ্বর ইতিমধ্যেই তুষ্ট হয়ে গেছেন। বন্দিদের ছেড়ে দেয়া যেতে পারে। প ও তার সঙ্গীরা পালিয়ে যাবার সুযোগ পেলেও, প্রায় সবাই রাজার দুষ্ট অনুচরদের তীর আর বল্লমের খোঁচায় মারা যায়। কিন্তু প কোন মতে পালালেন, কারণ তিনি মরতে নারাজ। তাই তো প্রায় ১৭০ ফুট উঁচু জলপ্রপাত থেকে ঝাঁপ দিতে তার এতটুকুও ভয় করলো না। কিন্তু রাজার অনুচররাও কম যায় না। তারপরও তারা প-য়ের পিছু ছাড়েনি। গভীর জঙ্গলে চলতে থাকে ধাওয়া আর লুকোচুরি। দর্শকদের নিশ্বাস ভুলে যাবার পালা। এরপর কিভাবে প বাঁচলেন, বৃষ্টির পানিতে টইটম্বুর গর্ত থেকে সন্তান ও সদ্য প্রসবী স্ত্রীকে উদ্ধার করলেন সেটা স্রেফ দেখার বিষয়।

মুভির কাস্ট ছিল অসাধারণ। বেশীর ভাগ আর্টিস্ট এই প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছেন। জাগুয়ার পা-য়ের চরিত্রে রুডি ইয়ং ব্লাডের অভিনয় মুগ্ধ করার মতো। ১৭০ ফিট জলপ্রপাত থেকে ঝাঁপ দেয়ার দৃশ্যে কোন স্ট্যান্টম্যানের সাহায্যে নেননি রুডি। প্রায় পনেরো তলা বাড়ী থেকে তিনি নিজেই ঝাঁপ দিয়েছিলেন। পরে সেই দৃশ্য জলপ্রপাতের সঙ্গে জুড়ে দেয়া হয়েছে। প-য়ের ওয়াইফের ভূমিকায় ডালিয়া হার্নানডেজের অ্যাপিয়ারেন্সও দারুণ ছিল। তবে পানির নীচে তার জীবিত সন্তান জন্মদানের পসিবিলিটি নিয়ে কিছুটা বিতর্ক আছে। অবশ্য মুভিতে হিষ্টোরিকাল এলিমেন্ট ও টাইমলাইন না মানার জন্য মেল গিবসন যথেষ্ট সমালোচিত হয়েছেন। যেমন মুভির শেষ পাঁচ মিনিটে দেখানো হয়ে স্প্যানিশদের আগমন। অথচ স্প্যানিশরা এসেছিল আরও পরে। তাছাড়া সূর্য গ্রহণের দৃশ্যটিও সায়েন্টিফিক ছিল না। সূর্য গ্রহণ হয় নিউ মুন দ্বারা অথচ দেখানো হয়েছে সূর্য গ্রহণ হয়েছে ফুল মুনে। সূর্যগ্রহণের সময় সীমাটাও ছিল একেবারে বেখাপ্পা। কয়েক ঘণ্টার সূর্য গ্রহণ মাত্র কয়েক সেকেন্ডেই ঘটিয়ে ফেলেছেন মেল গিবসন। মুভির শুরুতে এডিটিং-এ একটু দুর্বলতা আছে। তবে পুরো মুভির ভিজুয়াল এফেক্ট ও স্কোরিং অনবদ্য। মিউজিকের দায়িত্ব ছিলেন জেমস হর্নার। মুভির রাইটার মেল গিবসন ও কো-রাইটার ফরহাদ সাফিনিয়া মায়াদের চালচিত্রকে মুভির প্লটের কেন্দ্রবিন্দু করেন নি। তাই এই মুভিকে একটি এক্সাইটিং চেজ মুভিও বলা যায়। সম্ভবত প্যাশন অফ দি ক্রাইস্ট খ্যাত ডিরেক্টর মেল গিবসন তার ভায়োলেন্স প্রিয়তা থেকে বের হতে পারছেন না। যদিও মেল গিবসন মায়ানদের শিকার পদ্ধতি, ঘর, জীবনযাত্রা, বিচিত্র পোশাক, চুলের স্টাইল, ট্যাটু, অস্ত্র, ধর্মীয় বিশ্বাস ইত্যাদি মুভিতে চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন। সব কিছু বিবেচনা করে বলা যায় অ্যাপোক্যালিপ্টো একটি মাস্ট সি মুভি।

২০০৬ সালের ৮ ডিসেম্বরে রিলিজ পাওয়া ডিরেক্টর মেল গিবসনের অ্যাপোক্যালিপ্টো ৪০,০০০,০০ ডলার ব্যয় নির্মিত। মুভিটি সারা বিশ্বে আয় করেছে ১২০, ১৭৫, ২০০ ডলার। অ্যাপোক্যালিপ্টো ২০০৭ সালের অস্কারে তিনটি ক্যাটেগরিতে নমিনেশন পেয়েছে। ক্যাটেগরি তিনটি হচ্ছে- বেষ্ট অ্যাচিভমেন্ট ইন মেকআপ, বেষ্ট অ্যাচিভমেন্ট ইন সাউন্ড এডিটিং এবং বেষ্ট অ্যাচিভমেন্ট ইন সাউন্ড মিক্সিং।

খুব কম মুভিই আছে যা এই রিভিউয়ারকে দ্বিতীয়বার দেখার জন্য আকর্ষণ করেছে। অ্যাপোক্যালিপ্টো সেই শর্ট লিস্টের একটি মুভি। মুভি প্রেমীদের জন্য মেল গিবসনের এন্টারটেইনমেন্ট প্যাকেজ অ্যাপোক্যালিপ্টো ।

রেটিং: ★★★★½ (৪.৫/৫)
রেটিং ভাষা: প্রায় ক্লাসিক/ডোন্ট মিস
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:২৭
২৮টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×