somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এই হত্যার দায় আমাদের নিতে হবে

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৩:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লাশের মিছিলে নাম লেখাতে হলো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে । অধ্যাপক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যার দায় ইতোমধ্যে ই স্বীকার করে নিয়েছে উগ্রবাদি জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) ।বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠীর ইন্টারনেটভিত্তিক তৎপরতা নজরদারিতে যুক্ত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওয়েবসাইট " সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপের " এক টুইটের বরাত দিয়ে ভারতের সংবাদ সংস্থা পিটিআই আমাদের এমন তথ্য জানায় । আইএস নিয়ন্ত্রণাধীন " আমাক সংবাদ সংস্থা " এর বাংলা ভার্সনে ও ব্রেকিং নিউজে সুস্পষ্ট ভাবে লিখে দিয়েছে " বাংলাদেশের রাজশাহী শহরে দাওলাতুল ইসলামের সৈনিকগন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপককে হত্যা করেন, সে নাস্তিকতাবাদের দিকে লোকদের আহবান করতো " । ইতোমধ্যে আমাদের আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী ও হত্যার ধরন দেখে অনুমান করে নিয়েছেন যে হত্যাকাণ্ডে কোনো না কোন জঙ্গি গোষ্ঠী জড়িত।অধ্যাপক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যা নিয়ে বলতে গেলে মনে পরে যায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর গত পহেলা বৈশাখের গণভবনে আওয়ামী লীগ দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বক্তৃতার কথা ।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঐ বক্তবে বলেছিলেন " মুক্তচিন্তার নামে অন্যের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া ‘ফ্যাশন’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ধর্মের বিরুদ্ধে কেউ কিছু লিখলেই তারা হয়ে যান মুক্তচিন্তার অধিকারী। এখানে মুক্তচিন্তা দেখি না। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত বিকৃত রুচির পরিচয়। আমার ধর্ম আমি পালন করি। আমার ধর্ম সম্পর্কে কেউ যদি নোংরা কথা লেখেন, তা আমরা কেন বরদাস্ত করব ? " মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হয়তো তার বক্তব্যে যথার্থ ই ঠিক বলেছেন । কারো অনুভূতিতে আঘাত দেয়াটা কখনো ই যুক্তি সংগত না আর এটা মানা ও যায় । তবে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী কিছুটা বিরক্তির ভংগিতে এমন কথা গুলি বলেছিলেন । আমার কাছে মনে হয় মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর এমন বিরক্তির ভংগি কেন জানি কিছুটা হলে ও খুনিদের উৎসাহিত করেছে । হয়তো সেই উৎসাহর থেকে ই জঙ্গি গোষ্ঠি অধ্যাপক রেজাউল করিমকে হত্যা করেছে ।

আমার জানা মতে অধ্যাপক রেজাউল করিম কোনো ব্লগে ব্লগিং করতে না বা ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ছিল না তিনি লিখতেন তবে ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক লেখা নয় তিনি লিখতেন কবিতা, ছোটগল্প আর চলচ্চিত্র রিভিউ । তিনি কোন কোন পত্রিকায় লিখতেন তা আমি তেমন জানি না তবে তিনি নিজেই " কোমলগান্ধ্যার " নামে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাহিত্য ও সংস্কৃতিবিষয়ক পত্রিকা সম্পাদনা করতেন।সেই সাথে তিনি ভালো সেতার ও বাজাতেন ‘সুন্দরম’ ও ‘অরণী’ নামে দুইটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের উপদেষ্টা ছিলেন।সব কিছু মিলে আমি বলতে পারি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে বিষয় নিয়ে দেশে ধর্মীয় জঙ্গিগোষ্ঠি হত্যা চালাচ্ছে বলে ধরনা করেছিলেন তার কোনটাতে ই পরেন না অধ্যাপক রেজাউল করিম । এর আগে ও ২০১৪ সালের ১৫ নভেম্বর দুপুরে খুন হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এ কে এম শফিউল ইসলাম। তখন জঙ্গি সংগঠন আনসার উল্লাহ বাংলা টিম এ হত্যাকাণ্ডের দায় ও স্বীকার করে নিয়েছিল ।

সাম্প্রতি গনজাগরন কর্মী ও অনলাইন এ্যাকটিভিষ্ট নাজিমুদ্দিন সামাদ হত্যার পর ও আমাদের মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাহেবের নজর ছিল ব্লগারদের লেখার দিকে তিনি তখন বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন "ব্লগে নাজিম আপত্তিজনক লেখা লিখেছে কিনা তা দেখার প্রয়োজন আছে " । তার মানে আমাদের সরকারে কর্তাব্যাক্তিদের ধারনা টা এমন যে ব্লগে ধর্ম নিয়ে উস্কানি মূলক লেখার কারনেই ইসলামিক জঙ্গিরা আমাদের দেশে হত্যার উল্লাসে মেতে উঠেছে । ধরে নিলাম অভিজিৎ-নিলয়-রাজীব-দীপন-বাবু , নাজিম এরা না হয় ধর্মীয় উস্কানি মূলক লেখার কারণে বা লেখা প্রকাশের কারনে উগ্র জঙ্গিদের চাপাতির কোপে খুন হয়েছে । মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী ,খিজির হায়াত খান ,তাবেলা সিজার , হোশি কুনিও , যগেশ্বর রায় কিংবা তরুণ দত্ত তারা তো কেউ আর ধর্ম নিয়ে কটুক্তি করেন কোন ব্লগ বা ফেইসবুকে ও লিখেন নি তার পর ও কেন ঐ একই গোষ্ঠির হাতে জীবন দিতে হলো তাদের ? কেন ই বা তাজিয়া মিছিল বা কান্তজিউর মন্দিরের রাসমেলা বোমা হামলা হলো ?

আমাদের সরকারের কর্তাব্যক্তি সহ আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্তাব্যাক্তিরা বার বার ই বলে আসছেন যে আমাদের দেশে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) এর কোন অস্তিত্ব ই নেই কিন্তু পক্ষান্তরে আইএস ও বার বার বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম পরিচালনার অভিপ্রায় ব্যক্ত করে আসছে । সম্প্রতি আইএস এর মুখপত্র হিসেবে পরিচিত পত্রিকা " দাবিক " এর চলতি রজব মাসের সংখ্যায় তারা তাদেরবাংলাদেশ শাখার প্রধানের নাম প্রকাশ সেই সাথে বাংলাদেশে তাদের পরিচালিত বিভিন্ন অপারেশনের স্বার্থকতার ও বর্ননা দেন । আমাদের সরকারের কর্তাব্যক্তিরা বলছেন আইএস নেই আর একের পর এক অঘটন ঘটিয়ে আইএস বা তাদের সহযোগিদের দায় স্বীকার আমাদের সাধারন মানুষের মনের ভিতর কেমন জানি একটা তালগোল পেচানো অবস্হার জন্ম দিয়েছে । স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন আসে সরকরের এমন লুকোচুরি খেলার কারন কি ?

সেই ৫ মে ২০১৩ এর পর থেকে বর্তমান আওয়ামী জোট সরকারের ভয়ের কারন ছিল আল্লামা শফি ও তার সংগঠন হেফাজতে ইসলাম । রেলের জমি সহ নানা উপহার সামগ্রী দিয়ে সরকার কিছুটা হলেও আল্লামা শফি ও তার সংগঠন হেফাজতে ইসলামকে আয়ত্তে আনতে সক্ষম হয়েছে ইতোমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর গুন-গান গেয়ে বিবৃতি ও দিয়েছে আল্লামা শফি । এতে হয়তো সাময়িক ভাবে দেশের ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ট মানুষদের আস্তা কুড়াতে সক্ষম ও হচ্ছে সরকার । তবে ধর্মনিরপেক্ষ আওয়ামীজোট সরকারকে অবশ্যই ভাবতে হবে যে ডাষ্টবিলের ঢাকনা বন্ধ করে রাখলেই কিন্তু দূর্গন্ধ চাপা দিয়ে রাখা যায় না । আমাদের দেশের বর্তমান উন্নয়নের ঈর্ষনীয় অবস্হা বিশ্বের অনেক উন্নত দেশ ই সহ্য করতে পারছে না । উন্নয়নের এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হলে উগ্রবাদি ধর্মীয় জঙ্গি সংগঠন গুলিকে নির্মূল বা নিয়ন্ত্রনের বিকল্প নেই । আমাদের দেশের মানুষেরা মনে প্রানে ধর্মকে ভালবাসে আর এই সুযোগ কে কাজে লাগিয়ে ধর্মীয় উগ্রবাদী সংগঠকেরা নিজেদের বিষ বৃক্ষের বীজ রোপন করছে সাধারন ধর্মপ্রাণ মানুষে মাঝে । সরকারের অসাবধানতা বা লুকোচুরি খেলার কারনেই জঙ্গিবাদের বিষবৃক্ষ আজ ডাল-পালা মেলে আকরে ধরেছে সমগ্র জাতিকে ।জঙ্গিবাদের অপশক্তির কাছে হারতে বসেছে আমাদের মাহন মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা অস্তিত্ব সংকটের মুখে আজ আমাদের জাতি সত্ত্বা । সরকারকে নিজের ইমেজ ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা রক্ষার জন্য ধর্মীয় উগ্রজঙ্গিবাদ নিয়ে আমাদের সাধারন মানুষের সাথে লুকোচুরি খেলা এবং ধর্মীয় উগ্র জঙ্গিবাদের মদদ দাতাদের পশ্রয় দেয়া কতটা যুক্তি সংগত সেটাই আজ বড় প্রশ্ন ? তাই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তথা আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য সরকারকে অবশ্যই ধর্মীয় উগ্রজঙ্গিবাদ নিয়ে দেশের মানুষের সাঠে লুকোচুরি করে নয় ববং দেশবাসীকে সাথে নিয়ে এই আপশক্তির হাত থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করতে হবে ।


সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১২:৩৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন পড়বেন, ফিকাহ জানবেন ও মানবেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:০০



সূরাঃ ৯৬ আলাক, ১ নং থেকে ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১। পাঠ কর, তোমার রবের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন
২।সৃষ্টি করেছেন মানুষকে ‘আলাক’ হতে
৩। পাঠ কর, তোমার রব মহামহিমাম্বিত
৪। যিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

মত প্রকাশ মানে সহমত।

লিখেছেন অনুপম বলছি, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৭

আওয়ামী লীগ আমলে সমাজের একটা অংশের অভিযোগ ছিলো, তাদের নাকি মত প্রকাশের স্বাধীনতা নাই। যদিও, এই কথাটাও তারা প্রকাশ্যে বলতে পারতেন, লিখে অথবা টকশো তে।

এখন রা জা কারের আমলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্নমর্যাদা!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৩

রেহমান সোবহান একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তার বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার। রেহমান সাহেব এমন একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন যা খুব নির্জন এলাকায় অবস্থিত এবং সেখানে যাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাঁঠালের আমসত্ত্ব

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

কাঁঠালের কি আমসত্ত্ব হয় ? হয় ভাই এ দেশে সবই হয়। কুটিল বুদ্ধি , বাগ্মিতা আর কিছু জারি জুরি জানলে আপনি সহজেই কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানাতে পারবেন।
কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানানের জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। অ্যাকসিডেন্ট আরও বাড়বে

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



এরকম সুন্দরী বালিকাকে ট্র্যাফিক দায়িত্বে দিলে চালকদের মাথা ঘুরে আরেক গাড়ির সাথে লাগিয়ে দিয়ে পুরো রাস্তাই বন্দ হয়ে যাবে ।
...বাকিটুকু পড়ুন

×